বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচিতি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিBS) বাংলাদেশের সরকারি পরিসংখ্যান ব্যবস্থার প্রধান সংস্থা। এটি পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাংলাদেশ সরকার-এর অধীনে কাজ করে। এই সংস্থাটি দেশের আর্থ-সামাজিক এবং জনমিতিক সূচকগুলোর নির্ভরযোগ্য ও আন্তর্জাতিকভাবে তুলনীয় পরিসংখ্যান সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, বিশ্লেষণ এবং প্রকাশের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

প্রতিষ্ঠা ও পটভূমি

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পূর্বে, পূর্ব পাকিস্তানে পরিসংখ্যান কার্যক্রম পাকিস্তান পরিসংখ্যান ব্যুরো-এর মাধ্যমে পরিচালিত হতো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণের জন্য একটি স্বতন্ত্র পরিসংখ্যান ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যাত্রা শুরু করে। প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা।

বিBS-এর কার্যাবলী

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিভিন্ন ধরনের পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও প্রকাশ করে থাকে। এর প্রধান কার্যাবলীগুলো হলো:

জনগণনা ও গৃহগণনা: দেশের জনসংখ্যা, বাসগৃহ এবং জনমিতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা। সর্বশেষ জনগণনা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২১ সালে।
কৃষি শুমারি: কৃষিকাজ, শস্য উৎপাদন, কৃষি শ্রমিক এবং কৃষিজাত পণ্যের তথ্য সংগ্রহ করা।
শিল্প শুমারি: শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উৎপাদন ক্ষমতা, শ্রমিক এবং শিল্প উৎপাদনের তথ্য সংগ্রহ করা।
বাণিজ্য শুমারি: ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্য কার্যক্রম এবং বাণিজ্যিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা।
গৃহস্থালি আয়-ব্যয় জরিপ: দেশের জনগণের আয়, ব্যয়, ভোগ এবং জীবনযাত্রার মান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা।
শ্রমশক্তি জরিপ: দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা, employment এবং unemployment সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা।
মূল্য সূচক: ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) এবং উৎপাদন মূল্য সূচক (PPI) তৈরি করা, যা মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।
দারিদ্র্য মূল্যায়ন: দারিদ্র্যের মাত্রা এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের জন্য জরিপ পরিচালনা করা।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) সম্পর্কিত পরিসংখ্যান তৈরি করা।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে পরিসংখ্যান সংক্রান্ত সহায়তা প্রদান করা।
ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং রিপোর্টিং-এর মাধ্যমে তথ্যের উপস্থাপন করা।

সংগঠন কাঠামো

বিBS একটি সুসংগঠিত কাঠামো অনুসরণ করে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব। এরপর রয়েছে মহাপরিচালক যিনি ব্যুরোর দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ব্যুরোতে বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে, যেমন:

জনসংখ্যা পরিসংখ্যান বিভাগ
কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগ
শিল্প ও বাণিজ্য পরিসংখ্যান বিভাগ
জাতীয় হিসাব বিভাগ
পরিসংখ্যান পদ্ধতি বিভাগ
তথ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগ
প্রশিক্ষণ বিভাগ
প্রশাসন বিভাগ

এই বিভাগগুলো মাঠ পর্যায়ে জরিপ পরিচালনা এবং ডেটা সংগ্রহের জন্য পরিসংখ্যানকর্মী নিয়োগ করে।

গুরুত্বপূর্ণ জরিপ ও শুমারি

বিBS নিয়মিতভাবে বিভিন্ন জরিপ ও শুমারি পরিচালনা করে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ হলো:

Sample Registration System (SRS): এটি একটি চলমান জরিপ, যা জন্ম ও মৃত্যুর হার, উর্বরতা এবং শিশুমৃত্যু হার সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে।
Multiple Indicator Cluster Survey (MICS): শিশুদের এবং মহিলাদের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কিত বিভিন্ন সূচক পরিমাপের জন্য এই জরিপ করা হয়।
Demographic and Health Survey (DHS): এটি জনস্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে।
Labour Force Survey (LFS): কর্মসংস্থান, বেকারত্ব এবং শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হার সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করে।
Household Income and Expenditure Survey (HIES): জনগণের আয়, ব্যয় এবং জীবনযাত্রার মান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে।

জরিপ এবং শুমারির তালিকা
জরিপ/শুমারি	সময়কাল	উদ্দেশ্য
জনগণনা ও গৃহগণনা	১০ বছর অন্তর	জনসংখ্যার গণনা ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ		কৃষি শুমারি	৫ বছর অন্তর	কৃষি কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ		শিল্প শুমারি	৫ বছর অন্তর	শিল্প খাতের তথ্য সংগ্রহ		বাণিজ্য শুমারি	১০ বছর অন্তর	বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ		Household Income and Expenditure Survey (HIES)	প্রতি বছর	জনগণের আয় ও ব্যয়ের ধরণ জানা		Labour Force Survey (LFS)	প্রতি বছর	শ্রমশক্তির যোগান ও চাহিদা বিশ্লেষণ

পরিসংখ্যানের ব্যবহার

বিBS কর্তৃক প্রকাশিত পরিসংখ্যান দেশের নীতিনির্ধারক, পরিকল্পনাবিদ, গবেষক এবং উন্নয়নকর্মীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিসংখ্যানগুলো নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:

পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন।
বাজেট প্রণয়ন এবং fiscal policy নির্ধারণ।
দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি তৈরি ও মূল্যায়ন।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অন্যান্য সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি পরিকল্পনা।
বিভিন্ন সরকারি নীতি এবং প্রকল্পের কার্যকারিতা মূল্যায়ন।
বেসরকারি খাত বিনিয়োগের সুযোগ চিহ্নিতকরণ।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির প্রতিবেদন উপস্থাপন।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

বিBS পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো:

ডেটা গুণমান: নির্ভুল এবং নির্ভরযোগ্য ডেটা সংগ্রহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দক্ষ জনবলের অভাব: পরিসংখ্যানবিদ এবং ডেটা বিশ্লেষকের অভাব রয়েছে।
প্রযুক্তিগত দুর্বলতা: আধুনিক ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ প্রযুক্তির অভাব।
রাজনৈতিক চাপ: নিরপেক্ষভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ একটি সমস্যা হতে পারে।
অর্থায়ন: পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না থাকা।

তবে, বিBS-এর সামনে অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে। যেমন:

ডিজিটালাইজেশন: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার উন্নতি করা সম্ভব।
Capacity Building: পরিসংখ্যান কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে উন্নত statistical methods এবং প্রযুক্তি গ্রহণ করা।
ডেটা সুরক্ষা: সংগৃহীত ডেটার গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
Big Data এবং Data Mining: নতুন উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের জন্য বিগ ডেটা ও ডেটা মাইনিং কৌশল ব্যবহার করা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিBS ভবিষ্যতে পরিসংখ্যান ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

Automated Data Collection System: স্বয়ংক্রিয় ডেটা সংগ্রহ ব্যবস্থা চালু করা, যা ডেটা সংগ্রহের সময় এবং খরচ কমিয়ে আনবে।
Geographic Information System (GIS): জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে spatial data বিশ্লেষণ এবং মানচিত্র তৈরি করা।
Machine Learning এবং Artificial Intelligence: ডেটা বিশ্লেষণ এবং পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা।
Open Data Policy: সরকারি ডেটা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা, যাতে তারা নিজেরাই ডেটা বিশ্লেষণ করে নতুন insight পেতে পারে।
National Statistical System (NSS): দেশের সকল সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থাকে একটি সমন্বিত কাঠামোর অধীনে আনা।

এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং নীতি নির্ধারণে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ