বিংশ শতাব্দী

বিংশ শতাব্দী মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। এই সময়কালে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি, সমাজ এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ, ঠান্ডা যুদ্ধ, উপনিবেশবাদের পতন এবং বিশ্বায়নের সূচনা এই শতাব্দীর প্রধান ঘটনা। এই নিবন্ধে বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো:

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) মানবসভ্যতাকে এক চরম সংকটের মধ্যে ফেলে দেয়। এই যুদ্ধের মূল কারণ ছিল সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ এবং সামরিক জোট। জার্মানি, অস্ট্রো-হাঙ্গেরি এবং অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির (ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়া, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) জয় হয়। এই যুদ্ধের ফলে জার্মানি ও অন্যান্য পরাজিত দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লিগ অফ নেশনস গঠিত হলেও তা বিশ্ব শান্তি রক্ষায় ব্যর্থ হয়। ১৯২৯ সালের মহামন্দা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫)-এর কারণ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি, ইতালি ও জাপানের অক্ষশক্তি মিত্রশক্তির (ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) কাছে পরাজিত হয়। এই যুদ্ধ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত, যেখানে প্রায় ৬ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে জাতিসংঘ গঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই সময়কালে উপনিবেশবাদ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অনেক দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ সহ আফ্রিকার অনেক দেশ এই সময় স্বাধীনতা অর্জন করে।

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ঠান্ডা যুদ্ধ (১৯৪7-১৯৯১) শুরু হয়, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পরস্পরবিরোধী আদর্শ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করে। এই সময়কালে কোরীয় যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং আফগান যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অবশেষে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান হয়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিংশ শতাব্দী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি দেখেছে। আলবার্ট আইনস্টাইন-এর আপেক্ষিকতা তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। অ্যান্টনি ফ্লেমিং-এর পেনিসিলিন আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব আনে। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল-এর টেলিফোন, গুগlielmo মার্কোনি-এর রেডিও এবং জন লগি Baird-এর টেলিভিশন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে।

১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম স্পুটনিক উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ যুগে প্রবেশ করে। এরপর অ্যাপোলো ১১ (১৯৬৯) মিশনে নীল আর্মস্ট্রং প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদে অবতরণ করেন। কম্পিউটারের আবিষ্কার ও উন্নয়ন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। মাইক্রোপ্রসেসরের উদ্ভাবন কম্পিউটারকে আরও ছোট ও শক্তিশালী করে তোলে।

অর্থনীতি ও বাণিজ্য

বিংশ শতাব্দীতে শিল্পায়ন দ্রুত প্রসারিত হয়। হেনরি ফোর্ড-এর ফোর্ডবাদ এবং টয়োটিজম উৎপাদন ব্যবস্থায় নতুনত্ব আনে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর উত্থান বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (WTO) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মকানুন তৈরি করে।

বিংশ শতাব্দীতে অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। তবে বিশ্বায়নের ফলে ধনী ও দরিদ্র দেশের মধ্যে বৈষম্যও বৃদ্ধি পায়।

সমাজ ও সংস্কৃতি

বিংশ শতাব্দীতে নারীবাদ আন্দোলন জোরদার হয় এবং নারীরা সমাজে অধিক অধিকার লাভ করে। জাতিগত অধিকার এবং মানবাধিকার আন্দোলনের ফলে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত হয়। শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে উন্নয়ন সাধিত হয়।

সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিংশ শতাব্দীতে আধুনিকতাবাদ এবং উত্তর-আধুনিকতাবাদ-এর প্রভাব দেখা যায়। চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, সাহিত্য এবং কলা নতুন রূপ লাভ করে। রক অ্যান্ড রোল, জ্যাজ, ব্লুজ এবং পপ মিউজিক জনপ্রিয় হয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর প্রেক্ষাপট

বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে, বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকে, ফিনান্সিয়াল মার্কেটে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সূচনা হয়। এটি মূলত একটি ভবিষ্যৎ বাজারের ধারণা, যেখানে বিনিয়োগকারীরা কোনো সম্পদের (যেমন: স্টক, কমোডিটি, মুদ্রা) দাম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়বে নাকি কমবে, সেই বিষয়ে বাজি ধরেন।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মূল বিষয়গুলো হলো:

কল অপশন (Call Option): দাম বাড়বে এমন ধারণা থাকলে এই অপশন কেনা হয়।
পুট অপশন (Put Option): দাম কমবে এমন ধারণা থাকলে এই অপশন কেনা হয়।
স্ট্রাইক প্রাইস (Strike Price): যে দামে অপশনটি কার্যকর হবে।
এক্সপায়ারি টাইম (Expiry Time): অপশনটি কত সময় পর শেষ হবে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস, ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস এবং ভলিউম অ্যানালাইসিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস: ঐতিহাসিক দামের ডেটা এবং চার্ট ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ দামের গতিবিধি прогнозировать করা। ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, মুভিং এভারেজ, আরএসআই (Relative Strength Index) ইত্যাদি টুল ব্যবহার করা হয়।
ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস: অর্থনৈতিক সূচক, রাজনৈতিক ঘটনা এবং কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করা।
ভলিউম অ্যানালাইসিস: ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা। অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) এবং ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) এর মতো ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয়।