Wi-Fi কলিং
ওয়াই-ফাই কলিং
ওয়াই-ফাই কলিং (Wi-Fi Calling) হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা ব্যবহারকারীদের মোবাইল নেটওয়ার্কের কভারেজ ছাড়াই ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েস কল করতে এবং গ্রহণ করতে দেয়। এটি বিশেষভাবে সেই সব স্থানে উপযোগী যেখানে সেলুলার কভারেজ দুর্বল বা অনুপস্থিত, যেমন - বাড়ির ভেতরে, গ্রামীণ এলাকা অথবা আবদ্ধ স্থানে। এই প্রযুক্তিটি ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (VoIP) এর একটি রূপ, তবে এটি বিশেষভাবে মোবাইল অপারেটরদের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং মোবাইল ফোনের স্বাভাবিক কলিং অ্যাপের সাথে একত্রিত থাকে।
ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট ওয়াই-ফাই কলিংয়ের ধারণাটি প্রথম ২০০৭ সালে টি-মোবাইল (T-Mobile) দ্বারা প্রস্তাবিত হয়। প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের অভাবের কারণে এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন ছিল। তবে, 3GPP (Third Generation Partnership Project) এবং IEEE (Institute of Electrical and Electronics Engineers) এর মতো সংস্থাগুলোর নিরলস প্রচেষ্টায় ওয়াই-ফাই কলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা সম্ভব হয়। ২০১৪ সালে প্রথম ওয়াই-ফাই কলিং পরিষেবা চালু হয় এবং এরপর থেকে এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
কার্যকারিতা ওয়াই-ফাই কলিংয়ের মূল ধারণা হলো ভয়েস ডেটাকে ডেটা প্যাকেট-এ রূপান্তর করে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠানো এবং গ্রহণ করা। যখন একটি মোবাইল ফোন ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং সেলুলার কভারেজ দুর্বল বা অনুপস্থিত থাকে, তখন ফোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়াই-ফাই কলিং ব্যবহার করে কল স্থাপন করে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ব্যবহারকারীর জন্য স্বচ্ছ হয়, অর্থাৎ ব্যবহারকারী বুঝতে পারে না যে কলটি সেলুলার নেটওয়ার্কের পরিবর্তে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যাচ্ছে।
প্রযুক্তিগত দিক ওয়াই-ফাই কলিং বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কল স্থাপন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- VoLTE (Voice over LTE): এটি 4G LTE নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েস কল করার একটি প্রযুক্তি। ওয়াই-ফাই কলিং VoLTE-এর সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করে, যখন এলটিই কভারেজ দুর্বল থাকে।
- IMS (IP Multimedia Subsystem): এটি একটি আর্কিটেকচার যা আইপি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েস, ভিডিও এবং মেসেজিং পরিষেবা সরবরাহ করে। ওয়াই-ফাই কলিংয়ের জন্য IMS একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
- SIP (Session Initiation Protocol): এটি ভয়েস এবং ভিডিও সেশন স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত একটি সিগন্যালিং প্রোটোকল।
ওয়াই-ফাই কলিংয়ের সুবিধা
- উন্নত কভারেজ: ওয়াই-ফাই কলিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সেই সব স্থানেও ভয়েস কল করতে পারেন যেখানে সেলুলার কভারেজ দুর্বল বা নেই।
- খরচ সাশ্রয়: আন্তর্জাতিক রোমিংয়ের সময় ওয়াই-ফাই কলিং ব্যবহার করে খরচ কমানো সম্ভব। কারণ কলগুলো ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যায়, যা সাধারণত ডেটা ব্যবহারের খরচ হিসাবে গণ্য হয়।
- উচ্চ গুণমান: ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের স্থিতিশীলতা ভালো হলে ভয়েস কলের গুণমান উন্নত হয়।
- সহজ ব্যবহার: ওয়াই-ফাই কলিং ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীকে কোনো অতিরিক্ত অ্যাপ ইনস্টল করতে হয় না। এটি স্মার্টফোনের স্বাভাবিক কলিং অ্যাপের সাথে একত্রিত থাকে।
ওয়াই-ফাই কলিংয়ের অসুবিধা
- ওয়াই-ফাই নির্ভরতা: ওয়াই-ফাই কলিংয়ের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য ওয়াই-ফাই সংযোগের প্রয়োজন। দুর্বল ওয়াই-ফাই সংযোগের কারণে কলের গুণমান খারাপ হতে পারে বা কল ড্রপ হতে পারে।
- ডেটা ব্যবহার: ওয়াই-ফাই কলিংয়ের মাধ্যমে কল করলে ডেটা ব্যবহার হয়। যাদের ডেটা প্ল্যান সীমিত, তাদের জন্য এটি একটি সমস্যা হতে পারে।
- জরুরী কল: কিছু ক্ষেত্রে, ওয়াই-ফাই কলিংয়ের মাধ্যমে জরুরী কল (যেমন 911) করার সময় লোকেশন তথ্য সঠিকভাবে প্রেরণ করা নাও যেতে পারে।
বিভিন্ন অপারেটরের ওয়াই-ফাই কলিং পরিষেবা বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর বিভিন্ন নামে ওয়াই-ফাই কলিং পরিষেবা প্রদান করে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অপারেটরের পরিষেবা উল্লেখ করা হলো:
| অপারেটর | পরিষেবার নাম | উপলব্ধতা | রবি (Robi) | রবি ওয়াই-ফাই কলিং | বাংলাদেশ | গ্রামীণফোন (Grameenphone) | গ্রামীণফোন ওয়াই-ফাই কলিং | বাংলাদেশ | এয়ারটেল (Airtel) | এয়ারটেল ওয়াই-ফাই কলিং | বাংলাদেশ | টি-মোবাইল (T-Mobile) | Wi-Fi Calling | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ভারizon (Verizon) | Wi-Fi Calling | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | এটিঅ্যান্ডটি (AT&T) | Wi-Fi Calling | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ওয়াই-ফাই কলিং সেটআপ করার নিয়ম ওয়াই-ফাই কলিং সেটআপ করার নিয়ম সাধারণত মোবাইল ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের উপর নির্ভর করে। নিচে সাধারণভাবে অনুসরণ করার জন্য কিছু ধাপ উল্লেখ করা হলো:
1. সেটিংস খুলুন: আপনার স্মার্টফোনের সেটিংস অ্যাপ খুলুন। 2. নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট: "Network & Internet" অথবা "Connections" অপশনটি নির্বাচন করুন। 3. ওয়াই-ফাই কলিং: "Wi-Fi Calling" অপশনটি খুঁজুন এবং এটি চালু করুন। 4. নাম্বার যাচাই করুন: আপনার ফোন নম্বরটি ওয়াই-ফাই কলিংয়ের জন্য রেজিস্টার করা আছে কিনা, তা যাচাই করুন। যদি না থাকে, তবে রেজিস্টার করুন। 5. ওয়াই-ফাই সংযোগ: একটি স্থিতিশীল ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ স্থাপন করুন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ওয়াই-ফাই কলিংয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। 5G নেটওয়ার্কের বিস্তার এবং ওয়াই-ফাই 6 (Wi-Fi 6) এর মতো নতুন প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ওয়াই-ফাই কলিংয়ের গুণমান এবং নির্ভরযোগ্যতা আরও বাড়বে। ভবিষ্যতে, ওয়াই-ফাই কলিং আরও বেশি সংখ্যক ডিভাইস এবং পরিষেবাতে একত্রিত হবে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য আরও উন্নত যোগাযোগ অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। এছাড়া, IoT (Internet of Things) ডিভাইসগুলোর সাথে ওয়াই-ফাই কলিংয়ের সংযোগ স্থাপন করা হতে পারে, যা নতুন নতুন ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করবে।
ওয়াই-ফাই কলিং এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মধ্যে সম্পর্ক সরাসরি কোনো সম্পর্ক না থাকলেও, ওয়াই-ফাই কলিংয়ের নির্ভরযোগ্যতা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মতো অনলাইন আর্থিক লেনদেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ট্রেডারদের স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয়, যা ওয়াই-ফাই কলিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে, বিশেষ করে দুর্বল সেলুলার নেটওয়ার্কের এলাকায়। দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।
অতিরিক্ত তথ্য
- ওয়াই-ফাই কলিং এবং ভয়েস ওভার এলটিই (VoLTE): VoLTE হলো 4G এলটিই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েস কল করার প্রযুক্তি, যেখানে ওয়াই-ফাই কলিং ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। উভয় প্রযুক্তিই উচ্চ মানের ভয়েস কল সরবরাহ করে, তবে তাদের নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরতা ভিন্ন।
- ওয়াই-ফাই কলিং এবং ইমার্জেন্সি কল (Emergency calls): ওয়াই-ফাই কলিংয়ের মাধ্যমে ইমার্জেন্সি কল করার সময় সঠিক লোকেশন তথ্য প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ফোন এবং অপারেটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোকেশন তথ্য প্রেরণ করতে পারে, তবে ব্যবহারকারীর উচিত সেটিংস যাচাই করা।
- ওয়াই-ফাই কলিং এবং রোমিং (Roaming): ওয়াই-ফাই কলিং ব্যবহার করে রোমিং চার্জ কমানো সম্ভব, কারণ কলগুলো ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যায়।
উপসংহার ওয়াই-ফাই কলিং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি যা মোবাইল যোগাযোগের অভিজ্ঞতা উন্নত করে। দুর্বল সেলুলার কভারেজের সমস্যা সমাধান করে এবং খরচ সাশ্রয়ে সাহায্য করে। প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং অপারেটরদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ওয়াই-ফাই কলিং ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আরও দেখুন
- ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (VoIP)
- 4G LTE
- 5G
- ইন্টারনেট প্রোটোকল (IP)
- ডেটা প্যাকেট
- টি-মোবাইল
- গ্রামীণফোন
- রবি
- এয়ারটেল
- ভারizon
- এটিঅ্যান্ডটি
- 3GPP
- IEEE
- VoLTE
- IMS
- SIP
- IoT
- বাইনারি অপশন ট্রেডিং
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
