3GPP

3GPP: মোবাইল কমিউনিকেশন প্রযুক্তির চালিকাশক্তি

ভূমিকা 3GPP (3rd Generation Partnership Project) একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা মোবাইল টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির জন্য স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে। এটি মূলত GSM (Global System for Mobile Communications)-এর উন্নতির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এবং পরবর্তীতে 3G, 4G, 5G এবং এখন 6G পর্যন্ত প্রযুক্তির বিকাশে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই নিবন্ধে 3GPP-এর গঠন, কার্যক্রম, বিভিন্ন প্রজন্ম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

3GPP-এর গঠন ও ইতিহাস 3GPP ১৯৯৮ সালে গঠিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল GSM প্রযুক্তির পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি করা। ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড টেলিকমিউনিকেশন অর্গানাইজেশন (ETSI), জাপানি অ্যাসোসিয়েশন অফ রেডিও ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড বিজনেস (ARIB), কোরিয়ান স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অর্গানাইজেশন (TTA), এবং আমেরিকান টেলিকমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (ATIS) – এই চারটি আঞ্চলিক স্ট্যান্ডার্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (SDO) একত্রিত হয়ে 3GPP গঠন করে।

বর্তমানে, 3GPP-এর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশের মোবাইল অপারেটর, ডিভাইস প্রস্তুতকারক, চিপসেট ভেন্ডর এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই সংস্থাটি মূলত প্রযুক্তিগত স্পেসিফিকেশন তৈরি করে, যা বিশ্বব্যাপী মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ডিভাইস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

3GPP-এর কার্যক্রম 3GPP-এর কার্যক্রম মূলত তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত:

• স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন: 3GPP নতুন প্রযুক্তির জন্য স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে, যা ইন্টারঅপারেবিলিটি নিশ্চিত করে। এর মানে হলো, বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ক একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে।
• বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ: কোন নতুন বৈশিষ্ট্য বা ফাংশনালিটি যোগ করা হবে, তা নির্ধারণ করা হয়।
• রিলিজ ব্যবস্থাপনা: 3GPP বিভিন্ন রিলিজের মাধ্যমে নতুন স্ট্যান্ডার্ড প্রকাশ করে। প্রতিটি রিলিজ নতুন বৈশিষ্ট্য এবং উন্নতির সাথে আসে।

বিভিন্ন প্রজন্ম এবং প্রযুক্তি 3GPP বিভিন্ন প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছে। নিচে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

• 2G (GSM): 3GPP-এর যাত্রা শুরু হয় 2G প্রযুক্তি দিয়ে, যা GSM নামে পরিচিত। এটি মূলত ভয়েস কল এবং এসএমএস (Short Message Service)-এর জন্য ব্যবহৃত হতো। GSM ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবহার করে এবং এটি অ্যানালগ সিস্টেমের চেয়ে বেশি নিরাপদ ছিল।
• 3G (UMTS): 3G প্রযুক্তি, যা ইউনিভার্সাল মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম (UMTS) নামে পরিচিত, 2G-এর পরবর্তী প্রজন্ম। এটি ডেটা ট্রান্সমিশনের গতি অনেক বাড়িয়ে দেয় এবং ভিডিও কল, মোবাইল ইন্টারনেট এবং অন্যান্য ডেটা-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে।
• 4G (LTE): 4G প্রযুক্তি, যা লং টার্ম ইভোলিউশন (LTE) নামে পরিচিত, 3G-এর চেয়েও দ্রুত ডেটা ট্রান্সমিশন প্রদান করে। এটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, এইচডি ভিডিও স্ট্রিমিং, এবং অনলাইন গেমিং-এর জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। LTE-এর উন্নত সংস্করণ, যেমন LTE-Advanced, আরও বেশি গতি এবং দক্ষতা প্রদান করে।
• 5G (NR): 5G প্রযুক্তি, যা নিউ রেডিও (NR) নামে পরিচিত, বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে আধুনিক মোবাইল প্রযুক্তি। এটি অত্যন্ত দ্রুত গতি, কম ল্যাটেন্সি (latency) এবং বিশাল নেটওয়ার্ক ক্ষমতা প্রদান করে। 5G ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), অটোমেটেড ভেহিকেল, এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR)-এর মতো নতুন অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য অপরিহার্য। 5G NR-এর বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে, যেমন Non-Standalone (NSA) এবং Standalone (SA)।
• 6G: 3GPP বর্তমানে 6G প্রযুক্তির গবেষণা এবং উন্নয়নে কাজ করছে। 6G-এর লক্ষ্য হলো আরও দ্রুত গতি, আরও কম ল্যাটেন্সি এবং আরও উন্নত নেটওয়ার্ক ক্ষমতা প্রদান করা। এটি টেরাহertz ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ও মেশিন লার্নিং (ML)-এর সাথে সমন্বিত হবে।

3GPP রিলিজসমূহ 3GPP বিভিন্ন রিলিজের মাধ্যমে তার স্ট্যান্ডার্ডগুলো প্রকাশ করে। প্রতিটি রিলিজ নতুন বৈশিষ্ট্য এবং উন্নতি নিয়ে আসে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রিলিজের তালিকা দেওয়া হলো:

3GPP রিলিজসমূহ

বছর | মূল বৈশিষ্ট্য |

2000 | 3G UMTS-এর প্রথম রিলিজ |

2002 | HSDPA (High-Speed Downlink Packet Access) |

2004 | HSUPA (High-Speed Uplink Packet Access) |

2008 | HSPA+ (Evolved High-Speed Packet Access) |

2008 | LTE-এর প্রথম রিলিজ |

2009 | LTE-Advanced-এর ভিত্তি স্থাপন |

2011 | Carrier Aggregation এবং MIMO (Multiple-Input Multiple-Output) |

2013 | VoLTE (Voice over LTE) এবং Wi-Fi Calling |

2015 | আরও উন্নত LTE-Advanced বৈশিষ্ট্য |

2016 | 5G-এর প্রথম ধাপ |

2017 | 5G NR-এর ভিত্তি স্থাপন |

2018 | 5G NR-এর প্রথম সম্পূর্ণ স্ট্যান্ডার্ড |

2020 | 5G NR-এর উন্নত বৈশিষ্ট্য এবং নতুন অ্যাপ্লিকেশন |

2022 | 5G NR-এর আরও উন্নতি এবং 6G-এর গবেষণা শুরু |

2023 | 6G-এর প্রাথমিক স্ট্যান্ডার্ড এবং নতুন প্রযুক্তি |

5G প্রযুক্তির মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ

• eMBB (Enhanced Mobile Broadband): এটি 5G-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, যা দ্রুত ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড প্রদান করে।
• mMTC (Massive Machine-Type Communications): এটি অসংখ্য ডিভাইসকে একসাথে নেটওয়ার্কে সংযোগ করার ক্ষমতা প্রদান করে, যা IoT-এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
• URLLC (Ultra-Reliable Low Latency Communications): এটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং কম ল্যাটেন্সি যোগাযোগ নিশ্চিত করে, যা অটোমেটেড ভেহিকেল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশনের জন্য অপরিহার্য।
• নেটওয়ার্ক স্লাইসিং (Network Slicing): এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি ফিজিক্যাল নেটওয়ার্ককে একাধিক ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কে ভাগ করা যায়, যা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য কাস্টমাইজড সার্ভিস প্রদান করে।

6G প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা 6G প্রযুক্তি বর্তমানে গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি ভবিষ্যতে মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। 6G-এর কিছু সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্য হলো:

• টেরাহertz ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে আরও দ্রুত ডেটা ট্রান্সমিশন।
• আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML)-এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার উন্নতি।
• হলোগ্রাফিক কমিউনিকেশন এবং সেন্সরি ইন্টারনেট-এর মতো নতুন অ্যাপ্লিকেশনগুলোর সমর্থন।
• স্পেস-এয়ার নেটওয়ার্ক (Space-Air Network) এর মাধ্যমে কভারেজ বৃদ্ধি।

3GPP-এর চ্যালেঞ্জসমূহ 3GPP-কে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়, যেমন:

• বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো।
• নতুন প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ এবং সেগুলোকে স্ট্যান্ডার্ডে অন্তর্ভুক্ত করা।
• সাইবার নিরাপত্তা এবং ডেটা গোপনীয়তা নিশ্চিত করা।
• স্পেকট্রাম (Spectrum) ব্যবস্থাপনার জটিলতা।

উপসংহার 3GPP মোবাইল কমিউনিকেশন প্রযুক্তির উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিভিন্ন প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছে এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। 5G এবং 6G প্রযুক্তির মাধ্যমে 3GPP আমাদের জীবনযাত্রায় আরও বড় পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত।

আরও জানতে:

• মোবাইল যোগাযোগ
• ওয়্যারলেস প্রযুক্তি
• যোগাযোগ ব্যবস্থা
• নেটওয়ার্কিং
• ডেটা ট্রান্সমিশন

কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য লিঙ্ক:

• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
• মুভিং এভারেজ
• আরএসআই (RSI)
• MACD
• ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
• ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP)
• অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV)
• স্টোকাস্টিক অসিলেটর
• বোলিঙ্গার ব্যান্ডস
• ডনচিয়ান চ্যানেল
• ইচিএমোকু ক্লাউড
• প্যারাবোলিক এসএআর
• এলিয়ট ওয়েভ থিওরি
• গ্যাপ বিশ্লেষণ
• মূল্য প্যাটার্ন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ