Put option
Put Option : একটি বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা
ফিনান্সিয়াল মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে অপশন অন্যতম। অপশন ট্রেডিংয়ের মধ্যে পুট অপশন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই নিবন্ধে, পুট অপশন কী, কীভাবে এটি কাজ করে, এর সুবিধা-অসুবিধা, ট্রেডিং কৌশল এবং ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে পুট অপশনের ধারণা বোঝা অত্যন্ত জরুরি।
পুট অপশন কী?
পুট অপশন হলো এমন একটি চুক্তি যা ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে কোনো সম্পদ (যেমন স্টক, কমোডিটি, কারেন্সি ইত্যাদি) বিক্রি করার অধিকার দেয়, কিন্তু কোনো বাধ্যবাধকতা দেয় না। এই অধিকারের জন্য ক্রেতা বিক্রেতাকে একটি প্রিমিয়াম পরিশোধ করে।
পুট অপশনের মূল উপাদান:
- স্ট্রাইক প্রাইস (Strike Price): যে নির্দিষ্ট মূল্যে সম্পদ বিক্রি করার অধিকার ক্রেতার থাকে।
- এক্স্পায়ারি ডেট (Expiry Date): যে তারিখের মধ্যে অপশনটি ব্যবহার করতে হবে।
- প্রিমিয়াম (Premium): অপশন কেনার জন্য ক্রেতা যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করে।
- আন্ডারলাইং অ্যাসেট (Underlying Asset): যে সম্পদটি অপশনের চুক্তির বিষয়বস্তু (যেমন: কোনো কোম্পানির শেয়ার)।
পুট অপশন কিভাবে কাজ করে?
পুট অপশন মূলত তখনই লাভজনক হয় যখন আন্ডারলাইং অ্যাসেটের দাম কমে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি একটি কোম্পানির শেয়ারের জন্য একটি পুট অপশন কিনেছেন, যার স্ট্রাইক প্রাইস ১০০ টাকা এবং এক্স্পায়ারি ডেট এক মাস পরে। আপনি এই অপশনটির জন্য প্রতি শেয়ার ৫ টাকা প্রিমিয়াম দিয়েছেন।
- যদি এক মাস পরে শেয়ারের দাম কমে ৮০ টাকায় নেমে আসে, তাহলে আপনি স্ট্রাইক প্রাইস ১০০ টাকায় আপনার শেয়ার বিক্রি করার অধিকার ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে আপনার লাভ হবে (১০০ - ৮০) - ৫ = ১৫ টাকা প্রতি শেয়ার।
- যদি শেয়ারের দাম ১০০ টাকার উপরে বেড়ে যায়, তাহলে আপনি অপশনটি ব্যবহার করবেন না এবং আপনার প্রিমিয়াম ৫ টাকা ক্ষতি হবে।
পুট অপশনের প্রকারভেদ
পুট অপশন সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
১. আমেরিকান পুট অপশন: এই অপশনটি এক্স্পায়ারি ডেটের আগে যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়। ২. ইউরোপিয়ান পুট অপশন: এই অপশনটি শুধুমাত্র এক্স্পায়ারি ডেটে ব্যবহার করা যায়।
পুট অপশন ট্রেডিংয়ের সুবিধা
- ঝুঁকি সীমিত: পুট অপশন কেনার ক্ষেত্রে আপনার ঝুঁকি প্রিমিয়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
- লাভের সম্ভাবনা: যদি সম্পদের দাম কমে যায়, তাহলে আপনি ভালো লাভ করতে পারেন।
- হেজিং (Hedging): পুট অপশন ব্যবহার করে আপনার পোর্টফোলিওকে বাজারের পতন থেকে রক্ষা করতে পারেন। এটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।
- কম বিনিয়োগ: শেয়ার কেনার চেয়ে অপশন কেনা অনেক কম খরচের বিষয়।
পুট অপশন ট্রেডিংয়ের অসুবিধা
- সময়সীমা: অপশনের একটি নির্দিষ্ট এক্স্পায়ারি ডেট থাকে, তাই সময়সীমার মধ্যে দাম কমতে না পারলে অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যায়।
- জটিলতা: অপশন ট্রেডিং তুলনামূলকভাবে জটিল এবং ভালোভাবে না বুঝলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
- প্রিমিয়ামের ক্ষয়: অপশন কেনার জন্য প্রিমিয়াম দিতে হয়, যা সময় সাথে সাথে কমতে থাকে (টাইম ডিকে - Time Decay)।
পুট অপশন ট্রেডিং কৌশল
পুট অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু জনপ্রিয় কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. প্রোটেক্টিভ পুট (Protective Put): আপনার কাছে থাকা শেয়ারের দাম কমে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য এই কৌশল ব্যবহার করা হয়। শেয়ারের সাথে একই সাথে পুট অপশন কেনা হয়।
২. কভারড পুট (Covered Put): আপনার কাছে থাকা শেয়ারের উপর পুট অপশন বিক্রি করা হয়। এর মাধ্যমে প্রিমিয়াম আয় করা যায়, তবে শেয়ারের দাম কমে গেলে শেয়ার বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা থাকে।
৩. স্ট্র্যাডল (Straddle): একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং এক্স্পায়ারি ডেটের একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন একসাথে কেনা বা বিক্রি করা হয়। এটি বাজারের বড় ধরনের মুভমেন্ট থেকে লাভবান হওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। স্ট্র্যাডল কৌশল
৪. স্ট্র্যাংগল (Strangle): স্ট্র্যাডলের মতো, তবে স্ট্রাইক প্রাইস ভিন্ন থাকে। একটি কম স্ট্রাইক প্রাইসের পুট এবং একটি বেশি স্ট্রাইক প্রাইসের কল অপশন একসাথে কেনা বা বিক্রি করা হয়। স্ট্র্যাংগল কৌশল
৫. বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করে এই কৌশল তৈরি করা হয়। এটি মাঝারি মানের মুভমেন্টের জন্য উপযুক্ত।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং পুট অপশন
পুট অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যা ব্যবহার করা যেতে পারে:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): দামের গতিবিধি বোঝার জন্য।
- আরএসআই (RSI - Relative Strength Index): ওভারবট ও ওভারসোল্ড অবস্থা জানার জন্য।
- এমএসিডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence): ট্রেন্ডের দিক এবং শক্তি নির্ধারণ করার জন্য।
- বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): দামের ভোলাটিলিটি (Volatility) পরিমাপ করার জন্য।
- ফিওনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল খুঁজে বের করার জন্য।
ভলিউম বিশ্লেষণ এবং পুট অপশন
ভলিউম বিশ্লেষণ অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল। ভলিউম বাড়লে সাধারণত একটি শক্তিশালী মুভমেন্টের সম্ভাবনা থাকে।
- অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV - On Balance Volume): দাম এবং ভলিউমের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করার জন্য।
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP - Volume Weighted Average Price): একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রেডিং ভলিউমের উপর ভিত্তি করে গড় মূল্য নির্ধারণ করার জন্য।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
পুট অপশন ট্রেডিংয়ের সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
- স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order) ব্যবহার করুন: আপনার ক্ষতি সীমিত করার জন্য।
- আপনার পোর্টফোলিওকে ডাইভারসিফাই (Diversify) করুন: বিভিন্ন অ্যাসেটে বিনিয়োগ করুন।
- ছোট আকারের পজিশন (Position) নিন: প্রথমে ছোট আকারের ট্রেড করে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।
- মার্কেটের নিউজ এবং ইভেন্ট সম্পর্কে অবগত থাকুন: যা আপনার ট্রেডিংকে প্রভাবিত করতে পারে।
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন: ট্রেডিংয়ের সময় আবেগপ্রবণ হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ পুট অপশন
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, পুট অপশন একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের দাম কমবে কিনা তার উপর বাজি ধরা হয়। যদি দাম কমে যায়, তাহলে আপনি লাভ করেন, অন্যথায় আপনার বিনিয়োগকৃত অর্থ হারাতে হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, রিটার্ন সাধারণত নির্দিষ্ট থাকে।
উপসংহার
পুট অপশন একটি শক্তিশালী ট্রেডিং টুল, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ভালো লাভ করা সম্ভব। তবে, এটি জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায়, ট্রেডিংয়ের আগে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। টেকনিক্যাল এবং ভলিউম বিশ্লেষণ, সেইসাথে সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করে আপনি আপনার ট্রেডিংয়ের সম্ভাবনা বাড়াতে পারেন।
আরও জানতে:
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
