PERT চার্ট

পার্ট চার্ট: প্রকল্প ব্যবস্থাপনার একটি অত্যাধুনিক কৌশল

ভূমিকা পার্ট (Program Evaluation and Review Technique) চার্ট একটি শক্তিশালী প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সরঞ্জাম। এটি কোনো প্রকল্পের কাজগুলিকে সময়মতো সম্পন্ন করার জন্য একটি ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা প্রদান করে। জটিল প্রকল্পগুলির পরিকল্পনা, সময়সূচী তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি বিশেষভাবে উপযোগী। এই নিবন্ধে, পার্ট চার্টের মূল ধারণা, নির্মাণ প্রক্রিয়া, সুবিধা, অসুবিধা এবং ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

পার্ট চার্টের ইতিহাস ১৯৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী "পোলাইরিস" নামক একটি ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ প্রকল্পের জন্য পার্ট চার্ট তৈরি করে। পরবর্তীতে এটি র‍্যান্ড কর্পোরেশন এবং নৌবাহিনী যৌথভাবে উন্নয়ন করে। মূলত, এটি ছিল জটিল প্রকল্পের সময়সূচী ব্যবস্থাপনার একটি নতুন পদ্ধতি। গ্যান্ট চার্ট এর মতো অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় এটি কাজের মধ্যেকার নির্ভরশীলতা এবং সময়সীমা নির্ধারণে অধিক কার্যকরী ছিল।

পার্ট চার্টের মূল উপাদান পার্ট চার্ট মূলত নিম্নলিখিত উপাদানগুলির সমন্বয়ে গঠিত:

• কার্যকলাপ (Activities): একটি প্রকল্পের প্রতিটি স্বতন্ত্র কাজকে একটি কার্যকলাপ হিসেবে গণ্য করা হয়।
• ঘটনা (Events): প্রতিটি কার্যকলাপের শুরু এবং শেষকে ঘটনা বলা হয়। এগুলো সাধারণত বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।
• নির্ভরশীলতা (Dependencies): একটি কার্যকলাপ শুরু করার আগে অন্য কার্যকলাপের সমাপ্তির প্রয়োজন হলে, তাদের মধ্যে নির্ভরশীলতা বিদ্যমান বলে ধরা হয়।
• সময় (Time): প্রতিটি কার্যকলাপ সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণ করা হয়। এই সময় সাধারণত তিনটি ভিন্ন অনুমান থেকে পাওয়া যায়:

   * আশাবাদী সময় (Optimistic Time - O): যদি সবকিছু ঠিকঠাক চলে, তাহলে সর্বনিম্ন কত সময়ে কাজটি সম্পন্ন করা যেতে পারে।
   *  pessimistic সময় (Pessimistic Time - P): যদি সবকিছু প্রতিকূল হয়, তাহলে সর্বোচ্চ কত সময়ে কাজটি সম্পন্ন হতে পারে।
   * সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় (Most Likely Time - M): স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কাজটি সম্পন্ন করতে কত সময় লাগতে পারে।

• ক্রিটিক্যাল পাথ (Critical Path): এটি হলো সেই পথ, যার কার্যকলাপগুলিতে সামান্য বিলম্ব হলে পুরো প্রকল্প নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

পার্ট চার্ট কিভাবে তৈরি করতে হয়? পার্ট চার্ট তৈরি করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করতে পারেন: ১. কার্যকলাপ চিহ্নিত করুন: প্রথমে প্রকল্পের সমস্ত কার্যকলাপ স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করুন। ২. কার্যকলাপের ক্রম নির্ধারণ করুন: কোন কাজগুলো আগে করতে হবে এবং কোনগুলো পরে, তা নির্ধারণ করুন। কাজের মধ্যেকার পারস্পরিক নির্ভরশীলতা চিহ্নিত করুন। ৩. সময় নির্ধারণ করুন: প্রতিটি কার্যকলাপের জন্য আশাবাদী, pessimistic এবং সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করুন। ৪. গড় সময় নির্ণয় করুন: নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করে প্রতিটি কার্যকলাপের গড় সময় নির্ণয় করুন:

  গড় সময় = (O + 4M + P) / 6

৫. পার্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করুন: কার্যকলাপ এবং ঘটনাগুলো একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করুন। প্রতিটি কার্যকলাপের শুরু এবং শেষ ঘটনা দিয়ে চিহ্নিত করুন। ৬. ক্রিটিক্যাল পাথ নির্ণয় করুন: নেটওয়ার্কের প্রতিটি পথের মোট সময় গণনা করুন। যে পথের সময় সবচেয়ে বেশি, সেটিই হলো ক্রিটিক্যাল পাথ। ৭. চার্ট তৈরি করুন: সংগৃহীত তথ্য ও নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে পার্ট চার্ট তৈরি করুন।

পার্ট চার্টের সুবিধা

• জটিলতা হ্রাস: এটি জটিল প্রকল্পগুলিকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে সহজ করে তোলে।
• সময় ব্যবস্থাপনার উন্নতি: প্রতিটি কার্যকলাপের সময়সীমা নির্ধারণ করে প্রকল্পের সময়সূচী উন্নত করতে সাহায্য করে।
• সম্পদ ব্যবস্থাপনা: প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ (যেমন কর্মী, সরঞ্জাম) সঠিকভাবে বরাদ্দ করতে সাহায্য করে।
• ঝুঁকি মূল্যায়ন: ক্রিটিক্যাল পাথ চিহ্নিত করার মাধ্যমে প্রকল্পের ঝুঁকির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা যায়।
• যোগাযোগের উন্নতি: প্রকল্পের সাথে জড়িত সকলের জন্য একটি স্পষ্ট চিত্র প্রদান করে, যা যোগাযোগের উন্নতি ঘটায়।
• কার্যকরী পরিকল্পনা: পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক এবং বাস্তবসম্মত সময়সীমা নির্ধারণে সাহায্য করে।

পার্ট চার্টের অসুবিধা

• নির্মাণে জটিলতা: বড় প্রকল্পের জন্য পার্ট চার্ট তৈরি করা সময়সাপেক্ষ এবং জটিল হতে পারে।
• সময় নির্ধারণের অনিশ্চয়তা: কার্যকলাপের সময় নির্ধারণে ত্রুটি থাকলে পুরো চার্ট ভুল হতে পারে।
• পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা: প্রকল্পের পরিবর্তনের সাথে সাথে চার্ট আপডেট করা কঠিন হতে পারে।
• অতিরিক্ত সরলীকরণ: বাস্তব পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে, যা পার্ট চার্টে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত নাও হতে পারে।
• সফটওয়্যার নির্ভরতা: জটিল পার্ট চার্ট তৈরি এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষায়িত সফটওয়্যার প্রয়োজন হতে পারে।

পার্ট চার্টের ব্যবহারিক প্রয়োগ পার্ট চার্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

• নির্মাণ প্রকল্প: ভবন নির্মাণ, রাস্তা তৈরি ইত্যাদি প্রকল্পে সময়সূচী এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য এটি খুবই উপযোগী।
• সফটওয়্যার উন্নয়ন: সফটওয়্যার তৈরির প্রতিটি ধাপের সময়সীমা নির্ধারণ এবং ক্রিটিক্যাল পাথ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
• উৎপাদন শিল্প: উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপের সময় নির্ধারণ এবং অপ্টিমাইজ করতে এটি ব্যবহার করা হয়।
• গবেষণা প্রকল্প: গবেষণার বিভিন্ন পর্যায় এবং সময়সীমা নির্ধারণে এটি ব্যবহৃত হয়।
• মার্কেটিং ক্যাম্পেইন: মার্কেটিং কার্যক্রমের সময়সূচী তৈরি এবং বাস্তবায়নে এটি সাহায্য করে।
• আর্থিক পরিকল্পনা : বাজেট তৈরি এবং আর্থিক লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা নির্ধারণে সহায়ক।

পার্ট চার্ট এবং অন্যান্য প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কৌশল পার্ট চার্ট অন্যান্য প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কৌশলের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:

পার্ট চার্ট এবং অন্যান্য কৌশল

−|

পার্ট চার্টের সাথে সম্পর্ক | আরও জানতে |

গ্যান্ট চার্ট একটি সরলরৈখিক উপস্থাপনা, যেখানে পার্ট চার্ট কাজের নির্ভরশীলতা দেখায়। | গ্যান্ট চার্ট |

পার্ট চার্ট এবং সিপিএম উভয়ই ক্রিটিক্যাল পাথ চিহ্নিত করে, তবে পার্ট চার্ট সময় নির্ধারণে অনিশ্চয়তা বিবেচনা করে। | ক্রিটিক্যাল পাথ মেথড |

কানবান কাজের প্রবাহ ব্যবস্থাপনার উপর জোর দেয়, যেখানে পার্ট চার্ট সময়সূচী এবং নির্ভরশীলতা নিয়ে কাজ করে। | কানবান |

স্ক্রাম একটি পুনরাবৃত্তিমূলক পদ্ধতি, যা ছোট ছোট অংশে কাজ সম্পন্ন করে, পার্ট চার্ট পুরো প্রকল্পের পরিকল্পনা করে। | স্ক্রাম |

পার্ট চার্ট প্রকল্পের ঝুঁকি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে, যা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার অংশ। | ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা |

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে পার্ট চার্টের সম্পর্ক যদিও পার্ট চার্ট মূলত প্রকল্প ব্যবস্থাপনার একটি কৌশল, তবে এর কিছু ধারণা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ প্রয়োগ করা যেতে পারে। বিশেষ করে, ট্রেডিংয়ের বিভিন্ন ধাপ (যেমন মার্কেট বিশ্লেষণ, ট্রেড নির্বাচন, ঝুঁকি মূল্যায়ন) একটি প্রকল্পের কার্যকলাপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রতিটি ধাপের সময়সীমা এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতা নির্ধারণ করে একটি ট্রেডিং পরিকল্পনা তৈরি করা যেতে পারে। এছাড়াও, সম্ভাব্য লাভ এবং ক্ষতির সময়সীমা নির্ধারণ করে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য পার্ট চার্টের ধারণা ব্যবহার করা যেতে পারে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ পার্ট চার্টের ধারণা ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সময় টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ-এর বিভিন্ন ধাপের সময়সীমা নির্ধারণ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, মুভিং এভারেজ, আরএসআই (RSI) এবং এমএসিডি (MACD) -এর মতো ইন্ডিকেটরগুলো বিশ্লেষণের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

কৌশলগত প্রয়োগ

• মার্টিংগেল কৌশল (Martingale Strategy): এই কৌশলে, প্রতিবার হারলে ট্রেডের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়। পার্ট চার্ট ব্যবহার করে ক্ষতির সময়সীমা এবং সম্ভাব্য লাভের সময়সীমা নির্ধারণ করা যায়। মার্টিংগেল কৌশল
• ফিবোনাচ্চি কৌশল (Fibonacci Strategy): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো চিহ্নিত করতে এবং ট্রেড এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ করতে পার্ট চার্ট সাহায্য করতে পারে। ফিবোনাচ্চি কৌশল
• ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল (Trend Following Strategy): বাজারের ট্রেন্ড অনুসরণ করে ট্রেড করার জন্য পার্ট চার্ট ব্যবহার করে সময়সীমা নির্ধারণ করা যায়। ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল
• ব্রেকআউট কৌশল (Breakout Strategy): গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেকআউট হওয়ার সময় ট্রেড করার জন্য পার্ট চার্ট ব্যবহার করে সঠিক সময় নির্ধারণ করা যায়। ব্রেকআউট কৌশল
• ভলিউম স্প্রেড বিশ্লেষণ (Volume Spread Analysis): ভলিউম স্প্রেড বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা এবং ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পার্ট চার্ট একটি সহায়ক টুল হতে পারে।

উপসংহার পার্ট চার্ট একটি শক্তিশালী প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কৌশল, যা জটিল প্রকল্পগুলির পরিকল্পনা, সময়সূচী তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত উপযোগী। যদিও এটি মূলত প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে, তবে এর ধারণাগুলি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে পার্ট চার্ট ব্যবহার করে যে কোনো প্রকল্পের সাফল্য নিশ্চিত করা সম্ভব।

প্রকল্প মূল্যায়ন সময় ব্যবস্থাপনা নেটওয়ার্ক ডায়াগ্রাম কার্যকলাপ ভিত্তিক বাজেট গুরুত্বপূর্ণ পথ বিশ্লেষণ প্রকল্পের সময়সূচী রিসোর্স অ্যালোকেশন ঝুঁকি বিশ্লেষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ যোগাযোগ পরিকল্পনা স্টেকহোল্ডার ব্যবস্থাপনা গুণমান নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প সমাপ্তি সফটওয়্যার প্রকল্প ব্যবস্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা মার্কেটিং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ফিনান্সিয়াল প্রকল্প ব্যবস্থাপনা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ