ক্রিটিক্যাল পাথ মেথড
ক্রিটিক্যাল পাথ মেথড
ক্রিটিক্যাল পাথ মেথড (CPM) একটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কৌশল। এটি কোনো প্রকল্পের কাজগুলো শুরু এবং শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতি প্রকল্পের সময়সূচী সংক্ষিপ্ত করতে, প্রকল্পের ক্রিটিক্যাল কার্যক্রম চিহ্নিত করতে এবং প্রকল্পের অগ্রগতি নিরীক্ষণ করতে সহায়ক। এটি মূলত জটিল এবং বৃহৎ আকারের প্রকল্পগুলির জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
সিপিএম-এর ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন নৌবাহিনী কর্তৃক একটি প্রকল্পের সময়সূচী নির্ধারণের জন্য এই পদ্ধতি প্রথম ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে, এটি নির্মাণ, প্রকৌশল, এবং অন্যান্য শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
সিপিএম-এর মূল ধারণা
সিপিএম মূলত একটি নেটওয়ার্ক ডায়াগ্রামের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই ডায়াগ্রামে প্রকল্পের প্রতিটি কাজকে একটি নোড (node) হিসেবে দেখানো হয় এবং কাজগুলোর মধ্যেকার সম্পর্কগুলোকে তীর (arrow) দ্বারা নির্দেশ করা হয়।
- কাজ (Activity): প্রকল্পের একটি নির্দিষ্ট অংশ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা।
- ইভেন্ট (Event): একটি কাজের শুরু বা শেষ।
- নির্ভরতা (Dependency): একটি কাজ শুরু করার আগে অন্য একটি কাজ শেষ করার প্রয়োজনীয়তা।
- ক্রিটিক্যাল পাথ (Critical Path): প্রকল্পের সময়কাল নির্ধারণ করে এমন কাজের ক্রম। এই পথের কোনো একটি কাজ দেরিতে শুরু হলে পুরো প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ নাও হতে পারে।
- ফ্লোট বা স্ল্যাক (Float or Slack): একটি কাজ দেরিতে শুরু হলেও প্রকল্পের সময়সূচীর উপর কোনো প্রভাব ফেলে না – এই অতিরিক্ত সময়কে ফ্লোট বা স্ল্যাক বলে।
সিপিএম কিভাবে কাজ করে?
সিপিএম ব্যবহারের মূল ধাপগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. কাজের তালিকা তৈরি করা: প্রথমে, প্রকল্পের সমস্ত কাজ চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। প্রতিটি কাজের প্রকৃতি এবং প্রয়োজনীয় সময়কাল উল্লেখ করতে হবে।
২. নির্ভরতা নির্ধারণ করা: এরপর, কাজগুলোর মধ্যেকার সম্পর্ক বা নির্ভরতা নির্ধারণ করতে হবে। কোন কাজগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল এবং কোন কাজগুলো সমান্তরালভাবে করা যেতে পারে, তা চিহ্নিত করতে হবে।
৩. নেটওয়ার্ক ডায়াগ্রাম তৈরি করা: কাজের তালিকা এবং নির্ভরতা অনুযায়ী একটি নেটওয়ার্ক ডায়াগ্রাম তৈরি করতে হবে। এই ডায়াগ্রামে প্রতিটি কাজকে একটি নোড এবং তাদের মধ্যেকার সম্পর্কগুলোকে তীর দ্বারা দেখানো হবে।
৪. ক্রিটিক্যাল পাথ বিশ্লেষণ: নেটওয়ার্ক ডায়াগ্রাম তৈরি করার পর, ক্রিটিক্যাল পাথ বিশ্লেষণ করতে হবে। ক্রিটিক্যাল পাথ হলো সেই পথ, যার কাজগুলোতে কোনো ফ্লোট বা স্ল্যাক থাকে না। অর্থাৎ, এই পথের কোনো একটি কাজ দেরিতে শুরু হলে পুরো প্রকল্পের সময়সূচী পিছিয়ে যাবে।
৫. সময়সূচী তৈরি করা: ক্রিটিক্যাল পাথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকল্পের জন্য একটি বাস্তবসম্মত সময়সূচী তৈরি করা যায়।
৬. পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ: প্রকল্পের কাজগুলো শুরু হওয়ার পর, নিয়মিতভাবে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সময়সূচী অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো বিচ্যুতি দেখা গেলে, দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ক্রিটিক্যাল পাথ নির্ণয়
ক্রিটিক্যাল পাথ নির্ণয় করার জন্য সাধারণত ফরওয়ার্ড পাস (Forward Pass) এবং ব্যাকওয়ার্ড পাস (Backward Pass) ব্যবহার করা হয়।
- ফরওয়ার্ড পাস: এই পদ্ধতিতে, প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজগুলোর সময়কাল যোগ করে প্রতিটি কাজের আর্লি স্টার্ট (Early Start) এবং আর্লি ফিনিশ (Early Finish) সময় নির্ধারণ করা হয়।
- ব্যাকওয়ার্ড পাস: এই পদ্ধতিতে, প্রকল্পের শেষ থেকে শুরু পর্যন্ত কাজগুলোর সময়কাল বিয়োগ করে প্রতিটি কাজের লেট স্টার্ট (Late Start) এবং লেট ফিনিশ (Late Finish) সময় নির্ধারণ করা হয়।
যে কাজগুলোর আর্লি স্টার্ট এবং লেট স্টার্ট সমান, এবং আর্লি ফিনিশ এবং লেট ফিনিশ সমান, সেই কাজগুলো ক্রিটিক্যাল পাথের অংশ।
| কাজ ! সময়কাল ! আর্লি স্টার্ট ! আর্লি ফিনিশ ! লেট স্টার্ট ! লেট ফিনিশ ! ফ্লোট | ||||||
|---|---|---|---|---|---|---|
| A | 3 দিন | 0 দিন | 3 দিন | 0 দিন | 3 দিন | 0 দিন |
| B | 2 দিন | 3 দিন | 5 দিন | 3 দিন | 5 দিন | 0 দিন |
| C | 4 দিন | 5 দিন | 9 দিন | 5 দিন | 9 দিন | 0 দিন |
| D | 2 দিন | 3 দিন | 5 দিন | 7 দিন | 9 দিন | 2 দিন |
| E | 3 দিন | 9 দিন | 12 দিন | 9 দিন | 12 দিন | 0 দিন |
উপরের উদাহরণে, A, B, C, এবং E কাজগুলো ক্রিটিক্যাল পাথের অংশ, কারণ এদের ফ্লোট 0 দিন।
সিপিএম-এর সুবিধা
- প্রকল্পের সময়সূচী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
- ক্রিটিক্যাল কার্যক্রমগুলো চিহ্নিত করা যায়, ফলে সেগুলোর উপর বিশেষ নজর রাখা যায়।
- প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
- সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটানো যায়।
- প্রকল্পের ঝুঁকি কমানো যায়।
- সময় এবং খরচ সাশ্রয় করা সম্ভব।
সিপিএম-এর অসুবিধা
- এটি একটি জটিল পদ্ধতি এবং এর জন্য দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন।
- প্রকল্পের কাজগুলোর মধ্যে নির্ভুল সম্পর্ক নির্ধারণ করা কঠিন হতে পারে।
- সময়সূচী পরিবর্তনের সাথে সাথে নেটওয়ার্ক ডায়াগ্রাম আপডেট করা প্রয়োজন।
- অনিশ্চিত ঘটনার (যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ) প্রভাব বিবেচনা করা কঠিন।
সিপিএম-এর ব্যবহারক্ষেত্র
সিপিএম বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে কিছু নিচে উল্লেখ করা হলো:
- নির্মাণ প্রকল্প: ভবন নির্মাণ, রাস্তা তৈরি, সেতু নির্মাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিপিএম ব্যবহার করা হয়।
- উৎপাদন শিল্প: পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সময়সূচী নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
- তথ্য প্রযুক্তি প্রকল্প: সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, এবং নেটওয়ার্ক স্থাপনের মতো প্রকল্পগুলোতে সিপিএম ব্যবহার করা হয়।
- রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প: বড় আকারের যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের সময়সূচী নির্ধারণের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
- গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প: নতুন পণ্য বা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সময়সূচী ব্যবস্থাপনার জন্য সিপিএম ব্যবহার করা হয়।
- ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট: বড় আকারের অনুষ্ঠান বা সম্মেলনের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
সিপিএম এবং অন্যান্য প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কৌশল
সিপিএম ছাড়াও আরও বিভিন্ন প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কৌশল রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হলো:
- গ্যান্ট চার্ট (Gantt Chart): এটি একটি বার চার্ট, যা প্রকল্পের কাজগুলো এবং তাদের সময়সূচী দেখায়। গ্যান্ট চার্ট
- পার্ট (PERT): এটি সিপিএম-এর মতো, তবে এটি কাজের সময়কাল সম্পর্কে অনিশ্চয়তা বিবেচনা করে। পার্ট
- ওয়ার্ক ব্রেকডাউন স্ট্রাকচার (WBS): এটি প্রকল্পের কাজগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে দেখায়। ওয়ার্ক ব্রেকডাউন স্ট্রাকচার
- স্ক্রাম (Scrum): এটি একটি অ্যাজাইল প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, যা ছোট ছোট দলে কাজ করে এবং দ্রুত পরিবর্তনに対応 করতে সাহায্য করে। স্ক্রাম
- কানবান (Kanban): এটি একটি ভিজ্যুয়াল ওয়ার্কফ্লো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, যা কাজের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে সাহায্য করে। কানবান
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সিপিএম-এর সম্পর্ক
যদিও সিপিএম মূলত প্রকল্প ব্যবস্থাপনার একটি কৌশল, তবে এর কিছু ধারণা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন:
- ঝুঁকি মূল্যায়ন: সিপিএম-এর মাধ্যমে প্রকল্পের ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হয়। একইভাবে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ট্রেড করার আগে ঝুঁকির মূল্যায়ন করা জরুরি।
- সময় ব্যবস্থাপনা: সিপিএম সময়সূচী তৈরি এবং মেনে চলতে সাহায্য করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, ট্রেডের সময়সীমা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা প্রয়োজন।
- সিদ্ধান্ত গ্রহণ: সিপিএম ক্রিটিক্যাল কার্যক্রম চিহ্নিত করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এও দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।
- ফ্লোট বা স্ল্যাক: সিপিএম-এ ফ্লোট বা স্ল্যাক হলো সেই সময় যা একটি কাজ দেরিতে শুরু হলেও প্রকল্পের সময়সূচীকে প্রভাবিত করে না। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, ফ্লোট বা স্ল্যাককে স্টপ-লস (Stop-Loss) অর্ডারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, যা সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দুটি কৌশল ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগগুলো চিহ্নিত করা যায়।
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: ঐতিহাসিক মূল্য এবং চার্ট প্যাটার্ন ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের শক্তি এবং দুর্বলতা বোঝা যায়।
অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কৌশল
- মানি ম্যানেজমেন্ট (Money Management): ট্রেডিং-এর মূলধন সঠিকভাবে পরিচালনা করা। মানি ম্যানেজমেন্ট
- রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (Risk Management): ট্রেডিং-এর ঝুঁকি কমানোর কৌশল। রিস্ক ম্যানেজমেন্ট
- ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis): অর্থনৈতিক সূচক এবং আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া। ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ
- চার্ট প্যাটার্ন (Chart Pattern): বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন চিহ্নিত করে ট্রেডিং সংকেত পাওয়া। চার্ট প্যাটার্ন
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern): ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা। ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): মূল্য ডেটার গড় ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা নির্ধারণ করা। মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (RSI):Relative Strength Index ব্যবহার করে বাজারের অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির অবস্থা নির্ণয় করা। আরএসআই
- এমএসিডি (MACD):Moving Average Convergence Divergence ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং মোমেন্টাম বোঝা। এমএসিডি
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচ্চি সংখ্যা ব্যবহার করে সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করা। ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- বোলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। বোলিঙ্গার ব্যান্ড
সিপিএম একটি শক্তিশালী প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কৌশল, যা প্রকল্পের সময়সূচী নির্ধারণ, ক্রিটিক্যাল কার্যক্রম চিহ্নিতকরণ এবং প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রেও এর কিছু ধারণা ব্যবহার করে ট্রেডিং সিদ্ধান্তকে আরও কার্যকর করা যেতে পারে।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
