NYSE

নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ

নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE)

নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE), যা "দ্য বিগ বোর্ড" নামেও পরিচিত, বিশ্বের বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে অবস্থিত। এই এক্সচেঞ্জটি কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনাবেচার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। NYSE শুধু একটি বাজার নয়, এটি মার্কিন অর্থনীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

NYSE-এর ইতিহাস

১৭৯২ সালেButtonwood Agreement নামক একটি চুক্তির মাধ্যমে NYSE-এর যাত্রা শুরু হয়। ২৩ জন ব্রোকার নিউ ইয়র্ক শহরের ওয়াল স্ট্রিটে একটি Buttonwood Tree-এর নিচে মিলিত হয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিটি ছিল একটি সুসংগঠিত সিকিউরিটিজ বাজারের প্রথম পদক্ষেপ। প্রথমদিকে, এটি একটি অনানুষ্ঠানিক বাজার ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

১৯০৭ সালের প্যানিক অফ ১৯০৭ NYSE-এর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল।
১৯২৯ সালের ওয়াল স্ট্রিট ক্র্যাশ NYSE-কে বড় ধরনের ধাক্কা দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর NYSE আবার ঘুরে দাঁড়ায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
২০ শতকের শেষভাগে, NYSE কম্পিউটারাইজেশন এবং ইলেকট্রনিক ট্রেডিং গ্রহণ করে আধুনিকীকরণ করা হয়।
২০০৭ সালে NYSE Euronext-এর সাথে যুক্ত হয়, যা এটিকে একটি আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ পরিণত করে।

NYSE কিভাবে কাজ করে?

NYSE একটি নিলাম-ভিত্তিক বাজার, যেখানে ক্রেতা এবং বিক্রেতারা তাদের অর্ডার জমা দেয়। এই অর্ডারগুলো একটি "স্পেশালিস্ট" দ্বারা পরিচালিত হয়, যিনি বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে কাজ করেন।

লিস্টিং (Listing): কোনো কোম্পানিকে NYSE-এ তালিকাভুক্ত হতে হলে কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এই মানদণ্ডগুলির মধ্যে রয়েছে আর্থিক স্থিতিশীলতা, পরিচালনা পর্ষদের যোগ্যতা এবং শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার।
ট্রেডিং প্রক্রিয়া: NYSE-এ ট্রেডিং সাধারণত ইলেকট্রনিকভাবে সম্পন্ন হয়। ব্রোকাররা তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য অর্ডার জমা দেয় এবং এক্সচেঞ্জের সিস্টেম সেই অর্ডারগুলো ম্যাচ করে।
বাজারের সময়: NYSE-এর সাধারণ ট্রেডিং সময় হলো সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল ৯:৩০ থেকে বিকাল ৪:০০ পর্যন্ত (ইস্টার্ন টাইম)।
ইন্ডেক্স: NYSE বিভিন্ন ধরনের বাজার সূচক প্রকাশ করে, যার মধ্যে Dow Jones Industrial Average (DJIA) সবচেয়ে পরিচিত।

NYSE-এর প্রকারভেদ

NYSE মূলত দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত:

নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE): এটি প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ, যেখানে বড় এবং প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনাবেচা হয়।
NYSE Arca: এটি একটি ইলেকট্রনিক এক্সচেঞ্জ, যেখানে ইটিএফ (Exchange Traded Funds) এবং অন্যান্য ডেরিভেটিভস-এর ট্রেডিং হয়।

NYSE-এর গুরুত্বপূর্ণ সূচক

NYSE বিভিন্ন সূচক প্রকাশ করে যা বাজারের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

Dow Jones Industrial Average (DJIA): এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো এবং বহুলভাবে পরিচিত বাজার সূচক। এই সূচকে ৩০টি বড় কোম্পানির শেয়ার অন্তর্ভুক্ত থাকে। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে এই সূচকের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
S&P 500: এটি স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস ৫০০ ইনডেক্স নামেও পরিচিত। এই সূচকে ৫০০টি বড় মার্কিন কোম্পানির শেয়ার অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং এটি বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতির একটি ভালো চিত্র দেয়। ভলিউম বিশ্লেষণ করে S&P 500 এর গতিবিধি বোঝা যায়।
NYSE Composite: এই সূচকে NYSE-এ তালিকাভুক্ত সমস্ত কোম্পানির শেয়ার অন্তর্ভুক্ত থাকে।

NYSE-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচক
বিবরণ \|	৩০টি বৃহৎ কোম্পানির শেয়ারের গড় \|	৫০০টি বৃহৎ কোম্পানির শেয়ারের গড় \|	NYSE-এ তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানির শেয়ারের গড় \|

বিনিয়োগের সুযোগ

NYSE বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সরবরাহ করে:

শেয়ার কেনাবেচা: বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করতে পারে।
ইটিএফ (ETF): এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডগুলি বিভিন্ন সেক্টর বা ইনডেক্সে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়।
ডেরিভেটিভস: ফিউচার এবং অপশন ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বাজারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
ডিভিডেন্ড: অনেক কোম্পানি তাদের লাভের অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের উৎস হতে পারে। ডিভিডেন্ড স্ট্র্যাটেজি বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং কৌশল

NYSE-এ সফল ট্রেডিংয়ের জন্য প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা জরুরি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:

ট্রেন্ড অনুসরণ: বাজারের ট্রেন্ড চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী ট্রেড করা।
সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল: সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করে কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নেওয়া। সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স কৌশলগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা।
আরএসআই (RSI): রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স ব্যবহার করে ওভারবট এবং ওভারসোল্ড অবস্থা নির্ণয় করা। আরএসআই একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।
এমএসিডি (MACD): মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স ব্যবহার করে ট্রেডিং সিগন্যাল তৈরি করা। এমএসিডি কৌশলটি বহুল ব্যবহৃত।
ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম-এর ওপর ভিত্তি করে বাজারের গতিবিধি বোঝা এবং ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া।
চार्ट প্যাটার্ন: বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন যেমন হেড অ্যান্ড শোল্ডারস, ডাবল টপ, ডাবল বটম ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা।

ঝুঁকি এবং সতর্কতা

NYSE-এ বিনিয়োগের কিছু ঝুঁকি রয়েছে যা বিনিয়োগকারীদের মনে রাখা উচিত:

বাজারের ঝুঁকি: বাজারের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগের মূল্য কমতে পারে।
কোম্পানির ঝুঁকি: কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে শেয়ারের মূল্য কমতে পারে।
তারল্য ঝুঁকি: কিছু শেয়ারের তারল্য কম থাকায় দ্রুত কেনাবেচা করা কঠিন হতে পারে।
আগ্রহের হারের ঝুঁকি: সুদের হার বাড়লে শেয়ারের দাম কমতে পারে।

বিনিয়োগ করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। প্রয়োজনে একজন আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া উচিত।

NYSE এবং অন্যান্য স্টক এক্সচেঞ্জ

NYSE বিশ্বের অন্যান্য স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে আছে। NASDAQ, London Stock Exchange, Tokyo Stock Exchange ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি এক্সচেঞ্জের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং নিয়মকানুন রয়েছে।

NYSE এবং অন্যান্য প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ
অবস্থান \| প্রধান বৈশিষ্ট্য \|	নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র \| বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ, বড় কোম্পানির তালিকা \|	নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র \| প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কেন্দ্র \|	লন্ডন, যুক্তরাজ্য \| ইউরোপের বৃহত্তম এক্সচেঞ্জ \|	টোকিও, জাপান \| এশিয়ার বৃহত্তম এক্সচেঞ্জ \|

NYSE-এর ভবিষ্যৎ

প্রযুক্তি এবং বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের সাথে সাথে NYSE-ও নিজেকে আধুনিকীকরণ করছে। ফিনটেক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রেডিং প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে NYSE আরও বেশি আন্তর্জাতিক এবং প্রযুক্তি-নির্ভর হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।

আরও জানার জন্য

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ