Extreme programming

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং (Extreme Programming)

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং (XP) একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট পদ্ধতি যা ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে কেন্ট বেক, ওয়ার্ড ক Cunningham এবং রন জেফফ্রিজ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। এটি এজাইল সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট পদ্ধতির একটি অংশ। এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং মূলত ছোট দলগুলোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তা দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। এই পদ্ধতিতে গ্রাহকের সন্তুষ্টি এবং দ্রুত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়।

মূল ধারণা

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং কতগুলি মূল ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত। এই ধারণাগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং একটি সমন্বিত কাঠামো তৈরি করে। নিচে কয়েকটি মূল ধারণা আলোচনা করা হলো:

সরলতা (Simplicity): এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং-এর মূল ভিত্তি হলো সরলতা। এখানে শুধুমাত্র বর্তমানের জন্য প্রয়োজনীয় ফাংশনগুলো তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য অতিরিক্ত জটিলতা যোগ করা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। ওয়াইএজিআই (You Aren't Gonna Need It) নীতি অনুসরণ করে অপ্রয়োজনীয় কোড লেখা থেকে বিরত থাকতে হয়।

যোগাযোগ (Communication): ডেভেলপারদের মধ্যে এবং ডেভেলপার ও গ্রাহকের মধ্যে নিয়মিত ও স্পষ্ট যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভুল বোঝাবুঝি কমাতে এবং সঠিক পণ্য তৈরি করতে সাহায্য করে। পেয়ার প্রোগ্রামিং এবং দৈনিক স্ট্যান্ড-আপ মিটিং যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

ফিডব্যাক (Feedback): খুব অল্প সময়ের মধ্যে গ্রাহকের কাছ থেকে ফিডব্যাক নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী পরিবর্তন করা এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি নিশ্চিত করে যে ডেভেলপমেন্ট সঠিক পথে চলছে। ইউনিট টেস্টিং এবং অ্যাকসেপ্টেন্স টেস্টিং ফিডব্যাক পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

সাহস (Courage): পরিবর্তনের জন্য সাহসী হওয়া এবং পুরনো কোড পরিবর্তন বা বাতিল করতে দ্বিধা না করা এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি সিস্টেমকে সরল এবং আধুনিক রাখতে সাহায্য করে।

সম্মান (Respect): দলের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং সহযোগিতা থাকা জরুরি। একে অপরের কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং একসাথে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করা প্রয়োজন।

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং-এর অনুশীলন

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং-এ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অনুশীলন রয়েছে যা এই পদ্ধতির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন আলোচনা করা হলো:

পেয়ার প্রোগ্রামিং (Pair Programming): এই পদ্ধতিতে দুইজন প্রোগ্রামার একসাথে একটি কম্পিউটারে কাজ করেন। একজন কোড লেখেন এবং অন্যজন কোড পর্যালোচনা করেন। এটি কোডের গুণগত মান বাড়াতে এবং ভুলত্রুটি কমাতে সহায়ক।

টেস্ট- driven ডেভেলপমেন্ট (Test-Driven Development - TDD): এই পদ্ধতিতে কোড লেখার আগে ইউনিট টেস্ট লেখা হয়। প্রথমে টেস্ট লেখা এবং তারপর সেই টেস্ট পাস করার জন্য কোড লেখা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে কোডটি সঠিকভাবে কাজ করছে। ইউনিট টেস্টিং এর মাধ্যমে কোডের প্রতিটি অংশ পরীক্ষা করা যায়।

কন্টিনিউয়াস ইন্টিগ্রেশন (Continuous Integration): কোড পরিবর্তনের সাথে সাথে তা নিয়মিতভাবে ইন্টিগ্রেট এবং টেস্ট করা হয়। এটি ইন্টিগ্রেশন সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে সাহায্য করে।

ছোট রিলিজ (Small Releases): অল্প সময়ের মধ্যে গ্রাহকের কাছে ছোট ছোট রিলিজ দেওয়া হয়। এর ফলে গ্রাহকের ফিডব্যাক দ্রুত পাওয়া যায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়।

সিম্পল ডিজাইন (Simple Design): সবসময় সবচেয়ে সরল ডিজাইন ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়। অপ্রয়োজনীয় জটিলতা এড়িয়ে যাওয়া হয়।

রিফ্যাক্টরিং (Refactoring): কোডের কার্যকারিতা ঠিক রেখে অভ্যন্তরীণ কাঠামো উন্নত করার প্রক্রিয়াকে রিফ্যাক্টরিং বলে। এটি কোডকে আরও সহজবোধ্য এবং রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য করে তোলে।

কোডিং স্ট্যান্ডার্ড (Coding Standards): দলের সকল সদস্যের জন্য একটি নির্দিষ্ট কোডিং স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা হয়। এটি কোডের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

কালেক্টিভ কোড ওনারশিপ (Collective Code Ownership): দলের যেকোনো সদস্য যেকোনো কোড পরিবর্তন করতে পারেন। এটি জ্ঞানের শেয়ারিং এবং কোডের গুণগত মান উন্নয়নে সাহায্য করে।

মেটাফোর (Metaphor): সিস্টেমের একটি সাধারণ রূপক বা মেটাফোর তৈরি করা হয়, যা সিস্টেমের কাঠামো বুঝতে সাহায্য করে।

সাস্টেইনেবল পেস (Sustainable Pace): দলের সদস্যদের অতিরিক্ত কাজের চাপ দেওয়া হয় না। একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদী কাজের পরিবেশ তৈরি করা হয়।

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং এর সুবিধা

উচ্চ গুণমান সম্পন্ন কোড: পেয়ার প্রোগ্রামিং এবং টেস্ট-driven ডেভেলপমেন্টের কারণে কোডের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
দ্রুত প্রতিক্রিয়া: ছোট রিলিজ এবং গ্রাহকের কাছ থেকে দ্রুত ফিডব্যাক পাওয়ার সুযোগ থাকায় পরিবর্তনগুলো দ্রুত করা যায়।
ঝুঁকি হ্রাস: ক্রমাগত টেস্টিং এবং ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে ঝুঁকির পরিমাণ কমানো যায়।
গ্রাহকের সন্তুষ্টি: গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত পরিবর্তন করার সুযোগ থাকায় গ্রাহকের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়।
টিমওয়ার্কের উন্নতি: পেয়ার প্রোগ্রামিং এবং সম্মিলিত কোড মালিকানার কারণে টিমের সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং এর অসুবিধা

সময়সাপেক্ষ: পেয়ার প্রোগ্রামিং এবং ক্রমাগত টেস্টিংয়ের কারণে ডেভেলপমেন্টের সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে।
ডকুমেন্টেশনের অভাব: এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং-এ ডকুমেন্টেশনের উপর কম জোর দেওয়া হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
অভিজ্ঞ ডেভেলপার প্রয়োজন: এই পদ্ধতিটি সফলভাবে প্রয়োগ করার জন্য অভিজ্ঞ ডেভেলপারদের প্রয়োজন।
গ্রাহকের সম্পৃক্ততা: গ্রাহককে ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়ার সাথে সবসময় যুক্ত থাকতে হয়, যা সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে।
ছোট দলের জন্য উপযুক্ত: এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং সাধারণত ছোট দলের জন্য বেশি উপযোগী, বড় প্রকল্পের জন্য এটি প্রয়োগ করা কঠিন হতে পারে।

অন্যান্য পদ্ধতির সাথে তুলনা

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং অন্যান্য এজাইল পদ্ধতি যেমন স্ক্রাম (Scrum) এবং কানবান (Kanban) এর সাথে সম্পর্কিত। স্ক্রাম একটি কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি, যেখানে স্প্রিন্ট এবং নির্দিষ্ট ভূমিকা থাকে। কানবান একটি ভিজ্যুয়াল সিস্টেম যা কাজের অগ্রগতি ট্র্যাক করে। এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং এই পদ্ধতিগুলোর চেয়েও বেশি নমনীয় এবং টেকনিক্যাল অনুশীলনের উপর বেশি জোর দেয়।

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং বনাম অন্যান্য পদ্ধতি
এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং \| স্ক্রাম \| কানবান \|	টেকনিক্যাল এক্সেলেন্স এবং পরিবর্তন \| দলবদ্ধ সহযোগিতা এবং পুনরাবৃত্তি \| কাজের প্রবাহ এবং ধারাবাহিক ডেলিভারি \|	কম কাঠামোবদ্ধ \| কাঠামোবদ্ধ (স্প্রিন্ট, ভূমিকা) \| খুব কম কাঠামোবদ্ধ \|	উচ্চ \| মাঝারি \| কম \|	কম \| মাঝারি \| কম \|	খুব দ্রুত \| দ্রুত \| মাঝারি \|

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং ব্যবহারের ক্ষেত্র

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং সেইসব প্রকল্পের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত, যেখানে:

প্রয়োজনীয়তা প্রায়শই পরিবর্তিত হয়।
ছোট দল কাজ করে।
উচ্চ মানের কোড প্রয়োজন।
দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং ডেলিভারি প্রয়োজন।

যেমন - ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ছোট আকারের এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশন এবং নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সময় এই পদ্ধতি বিশেষভাবে উপযোগী।

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং-এর ভবিষ্যৎ

এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং এখনও অনেক সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টিমের কাছে একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। সময়ের সাথে সাথে, এটি অন্যান্য এজাইল পদ্ধতির সাথে মিশে গিয়ে আরও উন্নত হয়েছে। বর্তমানে, ডেভOps (Development and Operations) এবং কন্টিনিউয়াস ডেলিভারি (Continuous Delivery) এর সাথে এক্সট্রিম প্রোগ্রামিং-এর ধারণাগুলো একত্রিত করে ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরও জানতে

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ