যোগ দর্শন

ভূমিকা

যোগ দর্শন ভারতীয় দর্শনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। এটি প্রায় ২,৫০০ বছর আগে ভারতে উদ্ভূত হয়েছিল এবং সময়ের সাথে সাথে এর বিকাশ ঘটেছে। যোগ শব্দটি সংস্কৃত ‘যুজ’ ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘সংযুক্ত করা’ বা ‘একত্র করা’। যোগ দর্শনের মূল উদ্দেশ্য হল আত্মা ও পরমাত্মা-র মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা এবং মোক্ষ লাভ করা। এই দর্শন শুধু একটি আধ্যাত্মিক পথ নয়, এটি জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করার একটি বিজ্ঞানও বটে।

যোগ দর্শনের ইতিহাস

যোগ দর্শনের ইতিহাস বৈদিক যুগ থেকে শুরু। বৈদিক সাহিত্যে যোগের প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। উপনিষদ-গুলোতেও যোগের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে, পatanjalির যোগসূত্র (আনুমানিক ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) যোগ দর্শনকে একটি সুসংহত রূপ দেয়। এই গ্রন্থটি যোগ দর্শনের ভিত্তি স্থাপন করে এবং পরবর্তীকালে যোগাচার্যগণ এর উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেন।

পatanjalির পর বোধ্যান, ভাসুক প্রমুখ যোগাচার্যগণ এই দর্শনের ধারাকে প্রবাহিত রাখেন। মধ্যযুগে হঠযোগ এবং তন্ত্রযোগ-এর উদ্ভব হয়, যা যোগ সাধনার শারীরিক দিকগুলির উপর জোর দেয়। আধুনিক যুগে স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রী অরবিন্দ, এবং বি কে এস আয়ঙ্গার-এর মতো যোগগুরুগণ যোগ দর্শনকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছেন।

যোগ দর্শনের মূল ধারণা

যোগ দর্শনের মূল ধারণাগুলি হল:

**পুরুষ (Purusha):** পুরুষ হল শাশ্বত, অক্রিয়, এবং সাক্ষীস্বরূপ চৈতন্য। এটি দেহ, মন, এবং বুদ্ধির ঊর্ধ্বে অবস্থিত।
**প্রকৃতি (Prakriti):** প্রকৃতি হল জড়, সক্রিয়, এবং পরিবর্তনশীল। এটি তিনটি গুণের সমন্বয়ে গঠিত - সত্ত্ব, রজঃ, এবং তমঃ।
**চিত্ত (Chitta):** চিত্ত হল মনের সেই অংশ যা চিন্তা, অনুভূতি, এবং স্মৃতি ধারণ করে। এটি প্রকৃতির অংশ এবং পুরুষের সাথে যুক্ত হয়ে অহংবোধ তৈরি করে।
**অহংবোধ (Ahamkara):** অহংবোধ হল ‘আমি’ বা ‘আমার’ এই অনুভূতি। এটি পুরুষের আসক্তি ও বন্ধনের মূল কারণ।
**মোক্ষ (Moksha):** মোক্ষ হল জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি এবং পুরুষের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি।

যোগের প্রকারভেদ

যোগ দর্শন বিভিন্ন প্রকার যোগের কথা বলে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:

যোগের প্রকারভেদ
প্রকার	বৈশিষ্ট্য	হঠযোগ	শারীরিক অঙ্গভঙ্গি (আসন), শ্বাস-প্রশ্বাস (প্রাণায়াম), এবং পরিশোধন প্রক্রিয়া (শুদ্ধিকরণ) এর মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী করা। হঠযোগ প্রদীপিকা এই যোগের মূল গ্রন্থ।	রাজযোগ	মনকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে চিত্তের বিক্ষিপ্ততা দূর করে একাগ্রতা বৃদ্ধি করা। পatanjalির যোগসূত্র রাজযোগের মূল ভিত্তি।	কর্মযোগ	ফলের আশা না করে নিঃস্বার্থভাবে কর্ম করা। ভগবদগীতা কর্মযোগের আদর্শ গ্রন্থ।	ভক্তিযোগ	ঈশ্বর বা পরমাত্মার প্রতি প্রেম ও ভক্তি প্রদর্শন করা।	জ্ঞানযোগ	জ্ঞান ও বিচারশক্তির মাধ্যমে আত্মাকে উপলব্ধি করা।	তন্ত্রযোগ	শক্তির উপাসনা এবং আধ্যাত্মিক শক্তি জাগরণের মাধ্যমে মোক্ষ লাভ করা।

পatanjalির যোগসূত্র

পatanjalির যোগসূত্র যোগ দর্শনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এটি চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত:

**সমাধি পাদ:** যোগের সংজ্ঞা, সমাধি লাভের উপায়, এবং চিত্তের বিভিন্ন অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
**সাধনা পাদ:** যোগসাধনার বিভিন্ন পদ্ধতি, যেমন - যম, নীয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান, এবং সমাধি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
**বিভূতি পাদ:** যোগসাধনার ফলে অর্জিত অলৌকিক ক্ষমতা (সিদ্ধি) এবং তাদের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
** কৈবল্য পাদ:** মোক্ষ বা কৈবল্য লাভের স্বরূপ এবং পুরুষের মুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

যোগের আট অঙ্গ

যোগসাধনার আটটি অঙ্গ রয়েছে, যা একত্রে অষ্টাঙ্গ যোগ নামে পরিচিত। এই আটটি অঙ্গ হল:

1. **যম (Yama):** সামাজিক বিধি-নিষেধ, যেমন - অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য, এবং অপরিগ్రహ। 2. **নীয়ম (Niyama):** ব্যক্তিগত আত্ম-শুদ্ধি, যেমন - শৌচ, সন্তোষ, তপ, স্বাধ্যায়, এবং ঈশ্বরপ্রাণিধান। 3. **আসন (Asana):** যোগাসন, যা শরীরকে সুস্থ ও স্থিতিশীল করে। 4. **প্রাণায়াম (Pranayama):** শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ, যা মনকে শান্ত করে এবং প্রাণশক্তি বৃদ্ধি করে। 5. **প্রত্যাহার (Pratyahara):** পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বহির্বিষয় থেকে মনকে সরিয়ে আনা। 6. **ধারণা (Dharana):** কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মনকে স্থির করা। 7. **ধ্যান (Dhyana):** একটানা ধারণার অনুশীলন, যা মনের একাগ্রতা বৃদ্ধি করে। 8. **সমাধি (Samadhi):** পরমাত্মার সাথে আত্মার মিলন, যা যোগের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

যোগ দর্শনের প্রভাব

যোগ দর্শন ভারতীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এটি শুধু আধ্যাত্মিক সাধনার পথ নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সহায়ক। যোগাসনের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময় করা যায়। প্রাণায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায় এবং একাগ্রতা বৃদ্ধি করা যায়। ধ্যান অনুশীলনের মাধ্যমে আত্ম-উপলব্ধি ও শান্তি লাভ করা সম্ভব।

যোগ দর্শন আধুনিক বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বর্তমানে, বহু মানুষ যোগাসন, প্রাণায়াম, এবং ধ্যানের মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন করছেন। ইউরোপ, আমেরিকা, এবং অস্ট্রেলিয়া-র মতো দেশে যোগ কেন্দ্রগুলি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

যোগ এবং অন্যান্য দর্শন

যোগ দর্শন অন্যান্য ভারতীয় দর্শনগুলির সাথে সম্পর্কিত। এটি সাংখ্য দর্শন-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত, কারণ যোগ দর্শন সাংখ্য দর্শনের পুরুষ ও প্রকৃতির ধারণা গ্রহণ করেছে। উপনিষদ এবং বেদান্ত দর্শনের প্রভাবও যোগ দর্শনে দেখা যায়।

আধুনিক যোগের বিভিন্ন ধারা

আধুনিক যুগে যোগ বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

**আইয়েঙ্গার যোগ:** বি কে এস আয়ঙ্গার-এর উদ্ভাবিত এই যোগশৈলী আসনের সঠিক বিন্যাস এবং দীর্ঘ সময় ধরে ধরে রাখার উপর জোর দেয়।
**অ Ashtanga যোগ:** এই যোগশৈলী একটি নির্দিষ্ট ক্রমের মাধ্যমে অনুশীলন করা হয় এবং শারীরিক সক্ষমতার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
**বিপশ্যনা:** এই ধ্যান পদ্ধতি নিজের মন ও শরীরকে পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে সাহায্য করে।
**কুন্ডলিনি যোগ:** এই যোগশৈলী শরীরের সুপ্ত শক্তি (কুন্ডলিনি) জাগরণের উপর জোর দেয়।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

যোগ দর্শনের সাথে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ আধুনিক বিনিয়োগ এবং ট্রেডিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

**টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ:** ঐতিহাসিক মূল্য এবং ভলিউমের ডেটা ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়। চার্ট প্যাটার্ন, ট্রেন্ড লাইন, এবং ইন্ডিকেটর (যেমন - মুভিং এভারেজ, আরএসআই, এমএসিডি) এর মাধ্যমে বাজারের প্রবণতা বিশ্লেষণ করা হয়।
**ভলিউম বিশ্লেষণ:** ট্রেডিং ভলিউমের উপর ভিত্তি করে বাজারের শক্তি এবং দুর্বলতা মূল্যায়ন করা হয়। উচ্চ ভলিউম সাধারণত একটি শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে। অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) এবং ভলিউম প্রাইস ট্রেন্ড (VPT)-এর মতো সূচকগুলি ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

যোগ দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা

বর্তমান যুগে যোগ দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক জীবনযাত্রার জটিলতা, মানসিক চাপ, এবং অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে যোগ একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায়। যোগ শুধু শারীরিক সুস্থতা নয়, মানসিক শান্তি ও আত্ম-উপলব্ধি লাভেও সহায়ক।

উপসংহার

যোগ দর্শন একটি প্রাচীন এবং বিজ্ঞানসম্মত জীবনদর্শন। এটি মানব জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য - মোক্ষ লাভের পথ দেখায়। যোগসাধনার মাধ্যমে মানুষ শারীরিক, মানসিক, এবং আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত হতে পারে এবং একটি সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে।

যোগ, ধ্যান, প্রাণায়াম, আসন, পatanjali, যোগসূত্র, সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ, আত্মা, পরমাত্মা, মোক্ষ, বৈদিক যুগ, উপনিষদ, হঠযোগ, তন্ত্রযোগ, স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রী অরবিন্দ, বি কে এস আয়ঙ্গার, যম, নীয়ম, প্রত্যাহার, ধারণা, সমাধি, সাংখ্য দর্শন, বেদান্ত, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ, চার্ট প্যাটার্ন, ট্রেন্ড লাইন, মুভিং এভারেজ, আরএসআই, এমএসিডি, অন ব্যালেন্স ভলিউম, ভলিউম প্রাইস ট্রেন্ড

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ