যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ
যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ
ভূমিকা যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (Department for International Development - DFID) ছিল যুক্তরাজ্য সরকারের একটি বিভাগ। এর কাজ ছিল দরিদ্র দেশগুলোতে দারিদ্র্য হ্রাস এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করা। এটি ২০ জুলাই ২০১৮ সালে বৈদেশিক, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয় (Foreign, Commonwealth & Development Office - FCDO)-এর সাথে একীভূত হওয়ার আগে যুক্তরাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রধান সংস্থা ছিল। DFID-এর বিলুপ্তি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসে।
প্রতিষ্ঠা ও বিবর্তন DFID প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে, যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক সহায়তা বিভিন্ন সরকারি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হত। ১৯৯৭ সালে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর, আন্তর্জাতিক উন্নয়নের জন্য একটি একক বিভাগ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, ১৯৯৭ সালের মে মাসে DFID প্রতিষ্ঠিত হয়। DFID প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বৈদেশিক সহায়তাকে আরও সুসংহত ও কার্যকর করা।
প্রতিষ্ঠার পর DFID দ্রুত তার কার্যক্রম প্রসারিত করে এবং দরিদ্র দেশগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প শুরু করে। DFID-এর কাজের ক্ষেত্রগুলির মধ্যে ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকার। DFID বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথেও সহযোগিতা করত, যেমন জাতিসংঘ এবং বিশ্ব ব্যাংক।
DFID-এর উদ্দেশ্য ও অগ্রাধিকার DFID-এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দারিদ্র্য হ্রাস করা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য DFID নিম্নলিখিত অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করত:
- শিক্ষা: DFID বিশ্বাস করত যে শিক্ষা দারিদ্র্য থেকে মুক্তির একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। তাই, সংস্থাটি দরিদ্র দেশগুলোতে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করত। শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে DFID বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা করত।
- স্বাস্থ্য: DFID দরিদ্র দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন এবং রোগের বিস্তার রোধ করার জন্য কাজ করত। সংস্থাটি এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া, এবং ক্ষয়রোগ-এর মতো রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার পাশাপাশি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির দিকেও মনোযোগ দিত।
- সুশাসন: DFID দরিদ্র দেশগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য কাজ করত। সংস্থাটি গণতন্ত্র, আইনের শাসন, এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিত।
- জলবায়ু পরিবর্তন: DFID দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে সহায়তা করত। সংস্থাটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং জলবায়ু সহনশীলতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করত।
- মানবাধিকার: DFID দরিদ্র দেশগুলোতে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য কাজ করত। সংস্থাটি নারী অধিকার, শিশু অধিকার, এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিত।
DFID-এর কার্যক্রম DFID বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করত। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান কার্যক্রম নিচে উল্লেখ করা হলো:
- সরাসরি সহায়তা: DFID দরিদ্র দেশগুলোর সরকারকে সরাসরি আর্থিক সহায়তা প্রদান করত। এই সহায়তা দরিদ্র দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে সাহায্য করত।
- প্রকল্প সহায়তা: DFID বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করত। এই প্রকল্পগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং মানবাধিকারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচালিত হত।
- প্রযুক্তিগত সহায়তা: DFID দরিদ্র দেশগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করত। এই সহায়তা দরিদ্র দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করত।
- নীতি সহায়তা: DFID দরিদ্র দেশগুলোর সরকারকে নীতি প্রণয়নে সহায়তা করত। এই সহায়তা দরিদ্র দেশগুলোকে আরও কার্যকর উন্নয়ন নীতি তৈরি করতে সাহায্য করত।
- গবেষণা ও উন্নয়ন: DFID উন্নয়ন সংক্রান্ত গবেষণা এবং উন্নয়নে বিনিয়োগ করত। এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোকে আরও কার্যকর করতে সাহায্য করত।
DFID-এর অর্থায়ন DFID যুক্তরাজ্যের জাতীয় আয়ের ০.৭% বৈদেশিক সহায়তার জন্য বরাদ্দ করত। এই অর্থায়ন বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোতে দেওয়া হত। DFID-এর অর্থায়ন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমেও পরিচালিত হত।
DFID-এর সমালোচনা DFID-এর কিছু সমালোচনাও ছিল। কিছু সমালোচকের মতে, DFID-এর সহায়তা দরিদ্র দেশগুলোতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারেনি। আবার কারো মতে, DFID-এর সহায়তা অনেক ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষ ছিল, যা দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ক্ষতিকর ছিল। এছাড়াও, সহায়তার বিতরণে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাবের অভিযোগও উঠেছিল।
| কার্যক্রম | বিবরণ | উদাহরণ |
| শিক্ষা সহায়তা | দরিদ্র দেশগুলোতে শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সুযোগ বৃদ্ধি। | প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ। |
| স্বাস্থ্য সহায়তা | স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও রোগের বিস্তার রোধ। | টিকাদান কর্মসূচি, স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন। |
| সুশাসন সহায়তা | সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ। | নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, বিচার বিভাগের সংস্কার। |
| জলবায়ু পরিবর্তন সহায়তা | জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা। | বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, খরা সহনশীল শস্যের চাষ। |
| মানবাধিকার সহায়তা | মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। | নারী অধিকারের জন্য প্রচারণা, শিশুশ্রম বন্ধের উদ্যোগ। |
বৈদেশিক, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয় (FCDO) ২০ জুলাই ২০১৮ সালে DFID, বৈদেশিক ও কমনওয়েলথ কার্যালয় (Foreign & Commonwealth Office - FCO)-এর সাথে একীভূত হয়ে বৈদেশিক, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয় (Foreign, Commonwealth & Development Office - FCDO) গঠিত হয়। এই একীভূতকরণের ফলে যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক নীতি এবং উন্নয়ন সহায়তার মধ্যে সমন্বয় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। FCDO এখন যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক স্বার্থ রক্ষা এবং দরিদ্র দেশগুলোতে উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য একক দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা।
FCDO-এর অধীনে, উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রম আরও সমন্বিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সংস্থাটি এখন কূটনীতি, নিরাপত্তা, এবং উন্নয়নের মধ্যে একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে।
DFID-এর উত্তরাধিকার DFID-এর বিলুপ্তি সত্ত্বেও, সংস্থাটির কাজের প্রভাব এখনও বিদ্যমান। DFID দরিদ্র দেশগুলোতে যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছে, সেগুলো এখনও চলছে এবং দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অবদান রাখছে। FCDO DFID-এর অনেক নীতি ও কার্যক্রমকে অব্যাহত রেখেছে, তবে একটি নতুন কাঠামোতে।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- উন্নয়ন অর্থনীতি: DFID উন্নয়ন অর্থনীতির নীতিগুলি অনুসরণ করত, যা দরিদ্র দেশগুলির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ছিল। উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা DFID দ্বারা পরিচালিত হত।
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: DFID-এর কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সহায়ক ছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং DFID-এর মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র ছিল।
- মানবিক সহায়তা: DFID প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা প্রদান করত। মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে DFID ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
- ক্ষুদ্রঋণ: DFID দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিতে সহায়তা করত, যা তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করত।
- কৃষি উন্নয়ন: DFID কৃষি উন্নয়নে বিনিয়োগ করত, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক ছিল। কৃষি উন্নয়ন ছিল DFID-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
- জেন্ডার সমতা: DFID জেন্ডার সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করত। জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে DFID বিভিন্ন পদক্ষেপ নিত।
- পানি ও স্যানিটেশন: DFID দরিদ্র দেশগুলোতে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করত। পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক প্রকল্পগুলি জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
উপসংহার যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (DFID) দরিদ্র দেশগুলোতে দারিদ্র্য হ্রাস এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। DFID-এর কাজের প্রভাব এখনও বিদ্যমান, এবং এর উত্তরাধিকার FCDO-এর মাধ্যমে অব্যাহত থাকবে। DFID-এর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, FCDO ভবিষ্যতে আরও কার্যকরভাবে দরিদ্র দেশগুলোতে সহায়তা করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
আরও দেখুন
- যুক্তরাজ্য
- দারিদ্র্য
- টেকসই উন্নয়ন
- জাতিসংঘ
- বিশ্ব ব্যাংক
- বৈদেশিক, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয়
- উন্নয়ন অর্থনীতি
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
- মানবিক সহায়তা
- ক্ষুদ্রঋণ
- কৃষি উন্নয়ন
- জেন্ডার সমতা
- পানি ও স্যানিটেশন
- সুশাসন
- জলবায়ু পরিবর্তন
- মানবাধিকার
- এইচআইভি/এইডস
- ম্যালেরিয়া
- ক্ষয়রোগ
- পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি
- জলবায়ু সহনশীলতা
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
