মোগল
মোগল সাম্রাজ্য
thumb|right|300px|মোগল সাম্রাজ্যের বিস্তার
মোগল সাম্রাজ্য (১৫২৬-১৮৫৭) ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য ছিল। এই সাম্রাজ্যটি বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রায় তিন শতাব্দী ধরে এই অঞ্চল শাসন করে। মোগলরা শুধু রাজনৈতিক শক্তিই ছিল না, বরং শিল্পকলা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং স্থাপত্যের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
উৎপত্তি ও প্রতিষ্ঠা
মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর ছিলেন টিমুর এবং চেঙ্গিস খান-এর বংশধর। তিনি ফারগানা উপত্যকায় (বর্তমান উজবেকিস্তান) জন্মগ্রহণ করেন এবং দিল্লি সালতানাতের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ-এ ইব্রাহিম লোদি-কে পরাজিত করে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বাবর ছিলেন একজন দক্ষ সামরিক কৌশলবিদ এবং সাহিত্যপ্রেমী। তার আত্মজীবনী বাবরনামা ফারসি ভাষায় লেখা, যা মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস জানার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
মোগল সাম্রাজ্যের বিস্তার
বাবরের পর হুমায়ুন সিংহাসনে বসেন, কিন্তু তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই শের শাহ সুরির কাছে পরাজিত হন এবং সাম্রাজ্যচ্যুত হন। প্রায় ১৫ বছর পর হুমায়ুন পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ-এ আদম খান সুর-কে পরাজিত করে পুনরায় সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন।
আকবর মোগল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্রাট ছিলেন। তিনি দীর্ঘকাল (১৫৫৬-১৬০৫) রাজত্ব করেন এবং সাম্রাজ্যকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। আকবর দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ-এ হেমু-কে পরাজিত করে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত মজবুত করেন। তিনি ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করেন, যা দিন-ই-ইলাহি নামে পরিচিত। আকবরের রাজস্ব ব্যবস্থা জাবতি নামে পরিচিত ছিল, যা ভূমি জরিপের মাধ্যমে রাজস্ব নির্ধারণ করত।
আকবরের পর জাহাঙ্গীর, শাহজাহান এবং অওরঙ্গজেব-এর শাসনকাল আসে। জাহাঙ্গীর শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তার সময়ে মোগল চিত্রকলার বিকাশ ঘটে। শাহজাহান বিখ্যাত তাজমহল নির্মাণ করেন, যা মোগল স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন কঠোর ধার্মিক এবং তিনি সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটানোর জন্য দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ করেন।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
মোগল সাম্রাজ্যের অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক। জাবতি ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূমি রাজস্ব সংগ্রহ করা হতো। মোগলরা বাণিজ্য এবং শিল্পকলারও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাদের সময়ে বস্ত্র, রেশম, মসলা এবং অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবসা বৃদ্ধি পায়। বেনি(পণ্য বিনিময়) এবং টাকা উভয়ই অর্থনৈতিক লেনদেনে ব্যবহৃত হতো।
ফরিদপুর এবং ঢাকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। মোগলরা ভারতবর্ষ থেকে ইউরোপ-এ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করত।
প্রশাসন
মোগল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত। সম্রাট ছিলেন সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ শাসক। সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন প্রদেশ-এ ভাগ করা হয়েছিল, এবং প্রতিটি প্রদেশের শাসনকর্তা ছিলেন সুবেদার। সুবেদারের অধীনে ছিলেন ফৌজদার, কাজি এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা। মোগল আইন অনুযায়ী সাম্রাজ্য পরিচালিত হতো।
আইন-ই-আকবরী আকবরের সময় প্রণীত একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন সংকলন।
সংস্কৃতি ও শিল্পকলা
মোগলরা শিল্পকলা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাদের সময়ে ফারসি, আরবি, তুর্কি এবং সংস্কৃত ভাষার মিশ্রণে উর্দু ভাষার উদ্ভব হয়। মোগল চিত্রकला, স্থাপত্য, সঙ্গীত এবং সাহিত্য বিশেষভাবে বিকশিত হয়।
- মোগল চিত্রकला: মোগল চিত্রकलाয় পারস্য এবং ভারতীয় শিল্পের সংমিশ্রণ দেখা যায়।
- মোগল স্থাপত্য: মোগল স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ তাজমহল, লালকেল্লা, ফতেপুর সিক্রি এবং আগ্রা দুর্গ।
- মোগল সঙ্গীত: মোগল সঙ্গীত ভারতীয় সঙ্গীতের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
- মোগল সাহিত্য: মোগল আমলে ফারসি ও উর্দু ভাষায় প্রচুর সাহিত্য রচিত হয়।
সাম্রাজ্যের পতন
অওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মোগল সাম্রাজ্যের দুর্বলতা শুরু হয়। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, আঞ্চলিক বিদ্রোহ এবং মারাঠা সাম্রাজ্যের উত্থান মোগল সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ-এ আহমেদ শাহ আবদালী-র কাছে মোগলদের পরাজয় সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত পতন ডেকে আনে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে মোগল সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ-এর পর মোগল সাম্রাজ্যের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।
মোগল সাম্রাজ্যের প্রভাব
মোগল সাম্রাজ্য ভারতীয় উপমহাদেশে গভীর প্রভাব ফেলে গেছে। তাদের প্রশাসনিক কাঠামো, আইন ব্যবস্থা, শিল্পকলা, সংস্কৃতি এবং ভাষার উপর আজও এর প্রভাব বিদ্যমান। মোগলরা ভারতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছিল এবং বাণিজ্য ও বাণিজ্যের নতুন পথ খুলে দিয়েছিল।
গুরুত্বপূর্ণ সম্রাটদের তালিকা
| ক্রমিক নং | সম্রাট | সময়কাল | |
| ১ | বাবর | ১৫২৬-১৫৩০ | |
| ২ | হুমায়ুন | ১৫৩০-১৫৪২ | |
| ৩ | শের শাহ সুরি (অস্থায়ী) | ১৫৪২-১৫৫৫ | |
| ৪ | হুমায়ুন (পুনরায়) | ১৫৫৫-১৫৫৬ | |
| ৫ | আকবর | ১৫৫৬-১৬০৫ | |
| ৬ | জাহাঙ্গীর | ১৬০৫-১৬২৭ | |
| ৭ | শাহজাহান | ১৬২৮-১৬৫८ | |
| ৮ | আওরঙ্গজেব | ১৬৫৮-১৭০৭ | |
| ৯ | বাহাদুর শাহ জাফর (শেষ মোগল সম্রাট) | ১৭০৭-১৮৫৭ |
আরও দেখুন
- দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্য
- মুঘল সাম্রাজ্যের সামরিক ইতিহাস
- মোগল স্থাপত্য
- উর্দু ভাষা
- বাবরনামা
- আইন-ই-আকবরী
- পানিপথের যুদ্ধ
- তাজমহল
- লালকেল্লা
- ফতেপুর সিক্রি
- আগ্রা দুর্গ
- মারাঠা সাম্রাজ্য
- ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
- সিপাহী বিদ্রোহ
- ভারতীয় অর্থনীতি
- ইসলামিক স্থাপত্য
- ফার্সি সাহিত্য
- ভারতীয় সংস্কৃতি
- মুঘল সাম্রাজ্যের সুবেদার
- জাবতি ব্যবস্থা
বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পর্কিত বিষয়াবলী (অন্তর্ভুক্ত করা হলো প্রাসঙ্গিকতার জন্য):
১. কॉल অপশন ২. পুট অপশন ৩. পেইআউট ৪. এক্সপিয়ারি টাইম ৫. টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস ৬. ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস ৭. ট্রেন্ড লাইন ৮. সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স ৯. মুভিং এভারেজ ১০. আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স) ১১. এমএসিডি (মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স) ১২. বলিঙ্গার ব্যান্ডস ১৩. ভলিউম অ্যানালাইসিস ১৪. চ্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ১৫. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ১৬. অর্থ ব্যবস্থাপনা ১৭. বাইনারি অপশন কৌশল ১৮. ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ১৯. ব্রোকার ২০. ডেমো অ্যাকাউন্ট
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
