ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (ইংরেজি: British East India Company) ছিল একটি ইংরেজি যৌথ-স্টক কোম্পানি। এটি ১৬০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রাথমিকভাবে এশিয়া, বিশেষ করে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন এবং শ্রীলঙ্কা-র সাথে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে। ধীরে ধীরে কোম্পানিটি রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করে এবং ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে। প্রায় ২৬০ বছর ধরে এটি ভারতীয় উপমহাদেশে আধিপত্য বিস্তার করে।

প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক বাণিজ্য

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যাত্রা শুরু হয় ১৬০০ সালে। রাণী প্রথম এলিজাবেথ কর্তৃক ১৬০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর একটি রাজকীয় সনদ প্রদানের মাধ্যমে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সনদের মাধ্যমে কোম্পানিকে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে বাণিজ্য করার একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে, কোম্পানি মশলা, রেশম এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ব্যবসার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

কোম্পানির প্রথম দিকের বাণিজ্য মূলত ইন্দোনেশিয়ার যাওয়া দ্বীপের মশলার উপর কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। ১৬১৩ সালে, কোম্পানি சூரতে (বর্তমান গুজরাট, ভারত) প্রথম স্থায়ী বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। এরপর মাদ্রাজ, বোম্বে ও কলকাতা-র মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে।

রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষদিকে, কোম্পানি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করে। মুঘল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়লে, কোম্পানি স্থানীয় শাসকদের সাথে চুক্তি করে বাণিজ্য সুবিধা লাভ করে। পলাশীর যুদ্ধ (১৭৫৭) কোম্পানির রাজনৈতিক ক্ষমতার উত্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভ-এর নেতৃত্বে কোম্পানি সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করে বেঙ্গলের নওয়াব হন। এর ফলে কোম্পানি বেঙ্গলের রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে।

এরপর কোম্পানি উত্তর ভারত এবং দক্ষিণ ভারত-এর বিভিন্ন অংশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে। মাইসোরের সাথে আঙ্গলো-মাইসর যুদ্ধ এবং মহারাষ্ট্রের সাথে আঙ্গলো-মহারাষ্ট্রীয় যুদ্ধ-এর মাধ্যমে কোম্পানি নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।

কোম্পানির প্রশাসন ও অর্থনীতি

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি জটিল প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করে। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ লন্ডনে অবস্থিত ছিল এবং তারা ভারতে তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসনকার্য চালাতো। গভर्नर-জেনারেল ছিলেন কোম্পানির প্রধান প্রতিনিধি, যিনি সামরিক ও বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত ক্ষমতা ভোগ করতেন।

কোম্পানির অর্থনীতি মূলত বাণিজ্য এবং রাজস্ব আদায়ের উপর নির্ভরশীল ছিল। কোম্পানি জমির রাজস্ব ব্যবস্থা পরিবর্তন করে এবং নতুন কর আরোপ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করত। এই রাজস্বের একটি অংশ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা হতো।

কোম্পানির সামরিক শক্তি

কোম্পানির রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ছিল। এই বাহিনী মূলত ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় সিপাহীদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। কোম্পানির সামরিক শক্তি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং তারা ভারতীয় রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধে জয়লাভ করে।

কোম্পানির সামরিক কৌশল এবং যুদ্ধতত্ত্ব সামরিক ইতিহাস-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর্ট অব ওয়ার (The Art of War) এর নীতিগুলি তারা প্রায়শই অনুসরণ করত।

কোম্পানির সমালোচনা ও বিদ্রোহ

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। কোম্পানির শোষণমূলক নীতি, অতিরিক্ত কর এবং সাংস্কৃতিক হস্তক্ষেপের কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ ছিল। স্যাটিসফ্যাকশন গ্যারান্টি, স্টপ-লস অর্ডার, এবং টেক প্রফিট অর্ডার এর মতো আধুনিক ট্রেডিং কৌশলগুলি সেই সময় ভারতে ছিল না, তাই সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ছিল খুবই কম।

এই অসন্তোষের ফলস্বরূপ, সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭) সংঘটিত হয়। এই বিদ্রোহ কোম্পানির শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয় এবং ব্রিটিশ সরকার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।

কোম্পানির বিলুপ্তি

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর, ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে কোম্পানি আর ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করার যোগ্য নয়। ১৮৫৮ সালে, ব্রিটিশ সরকার একটি আইন পাস করে কোম্পানির সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান হয় এবং ব্রিটিশ ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়।

অর্থনৈতিক প্রভাব

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থনৈতিক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।

শিল্প বিপ্লব-এর সময় কোম্পানি ইংল্যান্ডকে কাঁচামাল সরবরাহ করে এবং তৈরি পণ্য বিক্রির বাজার হিসেবে ব্যবহার করে।
কোম্পানির বাণিজ্য নীতি ভারতীয় অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। textiles শিল্প ধ্বংস হয়ে যায় এবং কৃষি অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে।
কোম্পানি প্রচুর সম্পদ ইংল্যান্ডে নিয়ে যায়, যা ভারতীয় অর্থনীতির উন্নয়নকে বাধা দেয়।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

কোম্পানির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবও ছিল উল্লেখযোগ্য।

কোম্পানি ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে, যা ভারতীয় সমাজের আধুনিকীকরণে সহায়ক হয়।
কোম্পানির শাসনামলে জাতিভেদ প্রথা এবং সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করার চেষ্টা করা হয়।
কোম্পানির সাংস্কৃতিক নীতি ভারতীয় সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব

রবার্ট ক্লাইভ : পলাশীর যুদ্ধের নায়ক এবং কোম্পানির প্রথম গভর্নর।
ওয়ারেন হেস্টিংস : প্রথম গভর্নর-জেনারেল।
লর্ড কর্নওয়ালিস : কোম্পানির প্রশাসনিক সংস্কারক।
লর্ড ওয়েলেসলি : অধীনস্থ মিত্রতা নীতি প্রবর্তক।
লর্ড ডালহৌসি : ডালহৌসির অন্তর্ভূক্তি নীতির প্রবর্তক।

টেবিল: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর-জেনারেলদের তালিকা

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর-জেনারেলদের তালিকা
নাম	কার্যকাল
রবার্ট ক্লাইভ	১৭৫৭-১৭৬৪
জর্জ গ্রেনভিল	১৭৬৪-১৭৬৭
ওয়ারেন হেস্টিংস	১৭৭২-১৭৮৮
লর্ড কর্নওয়ালিস	১৭৮৬-১৭৯৩
জন শোর	১৭৯৩-১৭৯৮
লর্ড ওয়েলেসলি	১৭৯৮-১৮০৫
লর্ড জর্জ বার্কলে	১৮০৫-১৮০৭
লর্ড মিন্টো	১৮০৭-১৮১৩
লর্ড অ্যামহার্স্ট	১৮১৩-১৮২৩
জন অ্যাডাম	১৮২৩-১৮২৭
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক	১৮২৭-১৮৩৩
লর্ড ডালহৌসি	১৮৪৯-১৮৫৬
লর্ড ক্যানিং	১৮৫৬-১৮৬২

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

যদিও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়ে আধুনিক বাইনারি অপশন ট্রেডিং ছিল না, তবে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মধ্যে ঝুঁকির ধারণা এবং লাভের সম্ভাবনার বিষয়টি বিদ্যমান ছিল। কোম্পানির ব্যবসায়ীরা জাহাজ প্রেরণ এবং পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ বাজারের গতিবিধি অনুমান করে বাজি ধরতেন। এটি অনেকটা বাইনারি অপশনের মতোই, যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি সম্পদের দাম বাড়বে বা কমবে সে বিষয়ে পূর্বাভাস দিতে হয়।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসায়ীরা তাদের ঝুঁকির পরিমাণ কমাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন, যা আধুনিক বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সাথে তুলনীয়।
সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ : তারা বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাজারের চাহিদা বিশ্লেষণ করে লাভের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করতেন।
ভলিউম বিশ্লেষণ : পণ্য ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তারা তাদের ট্রেডিং ভলিউম নির্ধারণ করতেন।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ : বাজারের গতিবিধি এবং ঐতিহাসিক ডেটা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা করতেন।
ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ : অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণগুলো বিবেচনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতেন।
মার্জিন কল : যদিও এই শব্দটি তখন প্রচলিত ছিল না, তবে ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগের সুরক্ষার জন্য অনুরূপ পদক্ষেপ নিতেন।
পিপিং : ছোট ছোট বাজি ধরে ঝুঁকি কমানোর কৌশল ব্যবহার করা হতো।
হেজিং : বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করা হতো।
ডাইভারসিফিকেশন : বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলিকে বিভিন্ন খাতে ছড়িয়ে দেওয়া হতো।
স্টপ-লস অর্ডার : ক্ষতির পরিমাণ সীমিত করার জন্য পূর্বনির্ধারিত মূল্য নির্ধারণ করা হতো।
টেক প্রফিট অর্ডার : লাভের একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হতো।
ব্রেকইভেন পয়েন্ট : বিনিয়োগের শুরুতে লাভের এবং ক্ষতির মধ্যে সমান হওয়ার বিন্দু নির্ধারণ করা হতো।
রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও : ঝুঁকি এবং লাভের অনুপাত মূল্যায়ন করা হতো।
টাইম ড decay : সময়ের সাথে সাথে চুক্তির মূল্যের পরিবর্তন বিবেচনা করা হতো।
ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটি : বাজারের প্রত্যাশা অনুযায়ী দামের ওঠানামা মূল্যায়ন করা হতো।

আরো দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ