মূল্যAction ট্রেডিং
মূল্যAction ট্রেডিং
মূল্যAction ট্রেডিং হল টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে শুধুমাত্র মূল্যের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখানে কোনো প্রকার নির্দেশক (Indicator) ব্যবহার করা হয় না। এই পদ্ধতিতে, একজন ট্রেডার বাজারের প্রবণতা (Trend), সমর্থন (Support) এবং প্রতিরোধ (Resistance) স্তরগুলো চিহ্নিত করে ট্রেড করেন।
মূল্যAction ট্রেডিংয়ের মূল ধারণা
মূল্যAction ট্রেডিংয়ের ভিত্তি হলো বাজারের ভাষা বোঝা। মূল্য চার্টে যে প্যাটার্ন তৈরি হয়, তা বাজারের সেন্টিমেন্ট এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দেয়। নিচে কয়েকটি মূল ধারণা আলোচনা করা হলো:
১. প্রবণতা (Trend):
- আপট্রেন্ড (Uptrend): যখন মূল্য ক্রমাগত উপরে উঠছে, তখন তাকে আপট্রেন্ড বলে। - ডাউনট্রেন্ড (Downtrend): যখন মূল্য ক্রমাগত নিচে নামছে, তখন তাকে ডাউনট্রেন্ড বলে। - সাইডওয়েজ ট্রেন্ড (Sideways Trend): যখন মূল্য একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করছে, তখন তাকে সাইডওয়েজ ট্রেন্ড বলে। ট্রেন্ড লাইন ব্যবহার করে এই প্রবণতাগুলো চিহ্নিত করা যায়।
২. সমর্থন এবং প্রতিরোধ (Support and Resistance):
- সমর্থন স্তর (Support Level): এটি সেই মূল্যস্তর, যেখানে সাধারণত কেনার চাপ বেশি থাকে এবং মূল্য নিচে নামতে বাধা পায়। - প্রতিরোধ স্তর (Resistance Level): এটি সেই মূল্যস্তর, যেখানে সাধারণত বিক্রির চাপ বেশি থাকে এবং মূল্য উপরে উঠতে বাধা পায়। এই স্তরগুলো চার্ট প্যাটার্ন বিশ্লেষণের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হয়।
৩. ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Patterns):
- ক্যান্ডেলস্টিক হলো মূল্য চার্টের একটি মৌলিক উপাদান। প্রতিটি ক্যান্ডেলস্টিক একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে মূল্যের সর্বোচ্চ, সর্বনিম্ন, খোলা এবং বন্ধ হওয়া মূল্য নির্দেশ করে। - বিভিন্ন ধরনের ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, যেমন - ডজি (Doji), হ্যামার (Hammer), শুটিং স্টার (Shooting Star), এনগালফিং প্যাটার্ন (Engulfing Pattern) ইত্যাদি বাজারের সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে সংকেত দেয়।
৪. চার্ট প্যাটার্ন (Chart Patterns):
- হেড অ্যান্ড শোল্ডারস (Head and Shoulders): এটি একটি রিভার্সাল প্যাটার্ন, যা আপট্রেন্ডের শেষে দেখা যায় এবং ডাউনট্রেন্ডের পূর্বাভাস দেয়। - ডাবল টপ (Double Top): এটিও একটি রিভার্সাল প্যাটার্ন, যা আপট্রেন্ডের শেষে দেখা যায়। - ডাবল বটম (Double Bottom): এটি একটি রিভার্সাল প্যাটার্ন, যা ডাউনট্রেন্ডের শেষে দেখা যায় এবং আপট্রেন্ডের পূর্বাভাস দেয়। - ত্রিভুজ প্যাটার্ন (Triangle Pattern): এই প্যাটার্নগুলো বাজারের একত্রীকরণ এবং পরবর্তী breakout নির্দেশ করে।
মূল্যAction ট্রেডিংয়ের কৌশল
মূল্যAction ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু জনপ্রিয় কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. পিন বার (Pin Bar) কৌশল:
- পিন বার হলো একটি ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, যার একটি লম্বা শ্যাডো (Shadow) থাকে এবং এটি সমর্থন বা প্রতিরোধ স্তরের কাছাকাছি গঠিত হয়। - বুলিশ পিন বার (Bullish Pin Bar): যখন পিন বারটি সমর্থন স্তরের উপরে গঠিত হয়, তখন এটি কেনার সংকেত দেয়। - বিয়ারিশ পিন বার (Bearish Pin Bar): যখন পিন বারটি প্রতিরোধ স্তরের নিচে গঠিত হয়, তখন এটি বিক্রির সংকেত দেয়।
২. ইনসাইড বার (Inside Bar) কৌশল:
- ইনসাইড বার হলো একটি ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, যা আগের ক্যান্ডেলস্টিকের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকে। - এই প্যাটার্ন বাজারের একত্রীকরণ (Consolidation) নির্দেশ করে এবং একটি breakout-এর সম্ভাবনা তৈরি করে।
৩. ব্রেকআউট (Breakout) কৌশল:
- ব্রেকআউট হলো যখন মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন বা প্রতিরোধ স্তর ভেদ করে যায়। - ব্রেকআউট সাধারণত উচ্চ ভলিউম (Volume) সহ ঘটে এবং একটি নতুন প্রবণতার শুরু নির্দেশ করে।
৪. রিভার্সাল প্যাটার্ন (Reversal Pattern) কৌশল:
- রিভার্সাল প্যাটার্নগুলো বর্তমান প্রবণতার বিপরীত দিকে পরিবর্তনের সংকেত দেয়। - হেড অ্যান্ড শোল্ডারস, ডাবল টপ, ডাবল বটম ইত্যাদি রিভার্সাল প্যাটার্নের উদাহরণ।
বাইনারি অপশনে মূল্যAction ট্রেডিং
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে মূল্যAction ট্রেডিংয়ের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ট্রেডাররা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে একটি সম্পদের মূল্য বাড়বে নাকি কমবে, তা অনুমান করে ট্রেড করেন। মূল্যAction ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে এই অনুমান আরও নির্ভুল করা সম্ভব।
১. স্বল্পমেয়াদী ট্রেডিং (Short-term Trading):
- বাইনারি অপশনে স্বল্পমেয়াদী ট্রেডিংয়ের জন্য ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন এবং ইনসাইড বার কৌশলগুলো খুব উপযোগী। - উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি ৫ মিনিটের চার্টে বুলিশ এনগালফিং প্যাটার্ন তৈরি হয়, তবে কল অপশন (Call Option) কেনা যেতে পারে।
২. দীর্ঘমেয়াদী ট্রেডিং (Long-term Trading):
- দীর্ঘমেয়াদী ট্রেডিংয়ের জন্য ট্রেন্ড লাইন এবং চার্ট প্যাটার্নগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। - যদি একটি দৈনিক চার্টে হেড অ্যান্ড শোল্ডারস প্যাটার্ন তৈরি হয়, তবে পুট অপশন (Put Option) কেনা যেতে পারে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management)
মূল্যAction ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো:
১. স্টপ লস (Stop Loss):
- স্টপ লস হলো একটি নির্দিষ্ট মূল্যস্তর, যেখানে ট্রেডটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় যদি মূল্য আপনার পূর্বাভাসের বিপরীতে যায়। - স্টপ লস ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যায়।
২. পজিশন সাইজিং (Position Sizing):
- পজিশন সাইজিং হলো আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের কত শতাংশ আপনি একটি ট্রেডে বিনিয়োগ করবেন, তা নির্ধারণ করা। - সাধারণত, প্রতিটি ট্রেডে আপনার অ্যাকাউন্টের ২-৫% এর বেশি বিনিয়োগ করা উচিত নয়।
৩. আবেগ নিয়ন্ত্রণ (Emotion Control):
- ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভয় বা লোভের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। - একটি সুনির্দিষ্ট ট্রেডিং পরিকল্পনা অনুসরণ করে ট্রেড করলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
১. ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়কালে একটি সম্পদের কতগুলো শেয়ার বা কন্ট্রাক্ট কেনাবেচা হয়েছে তার পরিমাণ। উচ্চ ভলিউম সাধারণত একটি শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে।
২. ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট হলো সমর্থন এবং প্রতিরোধ স্তরগুলো চিহ্নিত করার একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি।
৩. Elliott Wave Theory: এই তত্ত্ব অনুসারে, বাজারের মূল্য একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে ওঠানামা করে, যা Elliott Wave নামে পরিচিত।
৪. বাজারেরSentiment: বাজারের সামগ্রিক মনোভাব বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। বুলিশ (Bullish) মার্কেট হলো যেখানে কেনার চাপ বেশি, এবং বিয়ারিশ (Bearish) মার্কেট হলো যেখানে বিক্রির চাপ বেশি।
উপসংহার
মূল্যAction ট্রেডিং একটি শক্তিশালী ট্রেডিং পদ্ধতি, যা বাজারের ভাষা বুঝতে এবং সঠিক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিতে, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের অন্যান্য উপাদানের সাথে সমন্বয় করে ট্রেড করলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে। তবে, এটি মনে রাখা উচিত যে ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি থাকে, তাই যথাযথ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি।
আরও জানতে:
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- চার্ট প্রকারভেদ
- ট্রেডিং মনোবিজ্ঞান
- অর্থ ব্যবস্থাপনা
- ঝুঁকি এবং পুরস্কার
- বাইনারি অপশন প্ল্যাটফর্ম
- ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট
- ট্রেন্ড ফলোয়িং
- রিভার্সাল ট্রেডিং
- ব্রেকআউট ট্রেডিং
- ডে ট্রেডিং
- সুইং ট্রেডিং
- পজিশন ট্রেডিং
- অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার
- ফরেক্স ট্রেডিং
- স্টক মার্কেট
- ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং
- কমোডিটি ট্রেডিং
- ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ
- ইন্ট্রাডে ট্রেডিং
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
