মর্নিং স্টার ক্যান্ডেলস্টিক
মর্নিং স্টার ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
ভূমিকা
ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন হলো টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্যাটার্নগুলো বাজারের গতিবিধি বুঝতে এবং সম্ভাব্য ট্রেডিংয়ের সুযোগ সনাক্ত করতে সাহায্য করে। মর্নিং স্টার (Morning Star) হলো তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, যা ডাউনট্রেন্ড-এর শেষে দেখা যায় এবং আপট্রেন্ড-এর সূচনা হওয়ার পূর্বাভাস দেয়। এই প্যাটার্নটি বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন হিসেবে পরিচিত।
মর্নিং স্টার প্যাটার্ন-এর গঠন
মর্নিং স্টার প্যাটার্ন তিনটি ক্যান্ডেলস্টিক দিয়ে গঠিত হয়:
১. প্রথম ক্যান্ডেলস্টিক: এটি একটি বড় আকারের বিয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক হয়, যা ডাউনট্রেন্ডের ধারাবাহিকতা নির্দেশ করে। এই ক্যান্ডেলস্টিকটির বডি (body) লম্বা হয় এবং এটি পূর্ববর্তী ডাউনট্রেন্ডের দিকে নির্দেশ করে।
২. দ্বিতীয় ক্যান্ডেলস্টিক: এটি একটি ছোট আকারের ক্যান্ডেলস্টিক হয়, যার বডি প্রথম ক্যান্ডেলস্টিক থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট হয়। এই ক্যান্ডেলস্টিকটি বুলিশ বা বিয়ারিশ হতে পারে, তবে এর আকার ছোট হওয়া জরুরি। এটি বাজারের অনিশ্চয়তা বা দ্বিধা প্রকাশ করে। এটিকে ‘স্টার’ বলা হয়।
৩. তৃতীয় ক্যান্ডেলস্টিক: এটি একটি বড় আকারের বুলিশ ক্যান্ডেলস্টিক হয়, যা প্রথম ক্যান্ডেলস্টিকটিকে অতিক্রম করে উপরে উঠে যায়। এই ক্যান্ডেলস্টিকটি শক্তিশালী বাইং প্রেসার নির্দেশ করে এবং আপট্রেন্ডের সূচনা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে।
| বৈশিষ্ট্য | |
| বড় আকারের বিয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক | |
| ছোট আকারের ক্যান্ডেলস্টিক (বুলিশ বা বিয়ারিশ) | |
| বড় আকারের বুলিশ ক্যান্ডেলস্টিক | |
মর্নিং স্টার প্যাটার্ন কিভাবে কাজ করে?
মর্নিং স্টার প্যাটার্নটি মূলত বাজারের সেন্টিমেন্টের পরিবর্তন নির্দেশ করে। প্রথম বিয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিকটি ডাউনট্রেন্ডের শক্তি প্রদর্শন করে। এরপর ছোট আকারের দ্বিতীয় ক্যান্ডেলস্টিকটি বাজারের গতিতে একটি বিরতি বা দ্বিধা তৈরি করে, যা বিক্রেতাদের দুর্বলতা প্রকাশ করে। সবশেষে, বড় আকারের বুলিশ ক্যান্ডেলস্টিকটি ক্রেতাদের শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দেয় এবং আপট্রেন্ডের সূচনা করে।
এই প্যাটার্নটি সাধারণত দেখা যায় যখন শেয়ার বাজারে দীর্ঘমেয়াদী ডাউনট্রেন্ডের পর ক্রেতারা বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করে। দ্বিতীয় ক্যান্ডেলস্টিকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি ডাউনট্রেন্ডের গতিকে ধীর করে দেয় এবং সম্ভাব্য রিভার্সালের জন্য পথ তৈরি করে।
ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে মর্নিং স্টার প্যাটার্ন-এর ব্যবহার
মর্নিং স্টার প্যাটার্ন বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং অন্যান্য আর্থিক বাজারে ট্রেডিংয়ের সুযোগ তৈরি করে। এই প্যাটার্ন ব্যবহারের কিছু কৌশল নিচে দেওয়া হলো:
- এন্ট্রি পয়েন্ট: তৃতীয় ক্যান্ডেলস্টিকটি যখন প্রথম ক্যান্ডেলস্টিকটিকে অতিক্রম করে উপরে যায়, তখন ট্রেডাররা কল অপশন (Call Option) কিনতে পারেন।
- স্টপ লস: দ্বিতীয় ক্যান্ডেলস্টিকটির নিচে স্টপ লস সেট করা যেতে পারে, যাতে মার্কেট আপনার বিপরীতে গেলে আপনার ঝুঁকি সীমিত থাকে।
- টেক প্রফিট: সাধারণত, তৃতীয় ক্যান্ডেলস্টিকটির উচ্চতার দ্বিগুণ দূরত্বে টেক প্রফিট সেট করা যেতে পারে।
উদাহরণ
ধরা যাক, একটি স্টকের দাম लगातारভাবে কমছে। প্রথম ক্যান্ডেলস্টিকটি একটি বড় আকারের বিয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক, যা এই ডাউনট্রেন্ডের ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে। এরপর একটি ছোট আকারের ক্যান্ডেলস্টিক (দ্বিতীয় ক্যান্ডেলস্টিক) তৈরি হলো, যা বাজারের দ্বিধা প্রকাশ করছে। সবশেষে, একটি বড় আকারের বুলিশ ক্যান্ডেলস্টিক তৈরি হলো, যা প্রথম ক্যান্ডেলস্টিকটিকে অতিক্রম করে উপরে গেল। এই পরিস্থিতিতে, ট্রেডাররা কল অপশন কিনে লাভবান হতে পারেন।
| রঙ | আকার | |
| লাল | বড় | |
| সবুজ/লাল | ছোট | |
| সবুজ | বড় | |
মর্নিং স্টার প্যাটার্ন-এর সীমাবদ্ধতা
মর্নিং স্টার প্যাটার্ন একটি শক্তিশালী সংকেত হলেও, এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:
- ফলস সিগন্যাল: অনেক সময় এই প্যাটার্নটি ফলস সিগন্যাল দিতে পারে। তাই, অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (Technical Indicator) যেমন মুভিং এভারেজ (Moving Average), আরএসআই (RSI) এবং এমএসিডি (MACD) ব্যবহার করে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
- মার্কেট ভলাটিলিটি: মার্কেটে অতিরিক্ত ভলাটিলিটি (Volatility) থাকলে এই প্যাটার্নটি সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।
- কনফার্মেশন-এর অভাব: শুধুমাত্র মর্নিং স্টার প্যাটার্ন-এর উপর ভিত্তি করে ট্রেড করা উচিত নয়। আপট্রেন্ড নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও কিছু বুলিশ সংকেতের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।
অন্যান্য সম্পর্কিত ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
মর্নিং স্টার ছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন রয়েছে, যা ট্রেডারদের সাহায্য করতে পারে:
- ইভনিং স্টার (Evening Star): এটি মর্নিং স্টারের বিপরীত। এটি আপট্রেন্ডের শেষে দেখা যায় এবং ডাউনট্রেন্ডের পূর্বাভাস দেয়।
- হ্যামার (Hammer): এটি একটি বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন, যা ডাউনট্রেন্ডের শেষে দেখা যায়।
- ইনভার্টেড হ্যামার (Inverted Hammer): এটিও একটি বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন, যা ডাউনট্রেন্ডের শেষে দেখা যায়।
- বুলিশ এনগালফিং (Bullish Engulfing): এটি একটি বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন, যেখানে একটি বুলিশ ক্যান্ডেলস্টিক পূর্ববর্তী বিয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিকটিকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলে।
- বিয়ারিশ এনগালফিং (Bearish Engulfing): এটি একটি বিয়ারিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন, যেখানে একটি বিয়ারিশ ক্যান্ডেলস্টিক পূর্ববর্তী বুলিশ ক্যান্ডেলস্টিকটিকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলে।
ভলিউম বিশ্লেষণের ভূমিকা
ভলিউম (Volume) হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন-এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। মর্নিং স্টার প্যাটার্ন-এর ক্ষেত্রে, তৃতীয় বুলিশ ক্যান্ডেলস্টিকটি উচ্চ ভলিউমের সাথে গঠিত হওয়া উচিত। উচ্চ ভলিউম নির্দেশ করে যে ক্রেতারা শক্তিশালী এবং তারা বাজারকে উপরে নিয়ে যেতে সক্ষম।
যদি তৃতীয় ক্যান্ডেলস্টিকটি কম ভলিউমের সাথে গঠিত হয়, তবে এটি একটি দুর্বল সংকেত হতে পারে এবং রিভার্সাল (Reversal) নাও হতে পারে। তাই, ট্রেড করার আগে ভলিউম নিশ্চিত করা জরুরি।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management) ট্রেডিংয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মর্নিং স্টার প্যাটার্ন ব্যবহার করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত:
- স্টপ লস ব্যবহার করুন: সবসময় আপনার ট্রেডে স্টপ লস সেট করুন, যাতে মার্কেট আপনার বিপরীতে গেলে আপনার মূলধন সুরক্ষিত থাকে।
- পজিশন সাইজিং: আপনার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের উপর ভিত্তি করে পজিশন সাইজ নির্ধারণ করুন। কখনোই আপনার অ্যাকাউন্টের খুব বেশি অংশ একটি ট্রেডে বিনিয়োগ করবেন না।
- ডাইভারসিফিকেশন: আপনার পোর্টফোলিওকে ডাইভারসিফাই করুন, অর্থাৎ বিভিন্ন অ্যাসেটে বিনিয়োগ করুন। এতে আপনার ঝুঁকি কমবে।
- মানসিক শৃঙ্খলা: ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন এবং একটি সুনির্দিষ্ট ট্রেডিং প্ল্যান অনুসরণ করুন।
উপসংহার
মর্নিং স্টার ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন একটি শক্তিশালী বুলিশ রিভার্সাল সংকেত, যা ডাউনট্রেন্ডের শেষে দেখা যায়। এই প্যাটার্নটি ট্রেডারদের সম্ভাব্য ট্রেডিংয়ের সুযোগ সনাক্ত করতে সাহায্য করে। তবে, এই প্যাটার্ন ব্যবহারের আগে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং ভলিউম বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া উচিত। এছাড়াও, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়মাবলী অনুসরণ করে ট্রেড করলে ক্ষতির সম্ভাবনা কমানো যায়।
আরও জানতে:
- ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ফরেক্স ট্রেডিং
- স্টক মার্কেট
- ঝুঁকি এবং পুরস্কার
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার
- বুল মার্কেট
- বিয়ার মার্কেট
- ডাবল টপ
- ডাবল বটম
- হেড অ্যান্ড শোল্ডারস
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
- Elliott Wave Theory
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
