ভূমিহীন কৃষক
ভূমিহীন কৃষক
ভূমিকা ভূমিহীন কৃষক বলতে সেই সকল কৃষককে বোঝায়, যাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। তারা মূলত অন্যের জমিতে বর্গচাষী, ভূমিহীন মজুর অথবা sharecropper হিসেবে কাজ করে। কৃষি অর্থনীতি-র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ভূমিহীন কৃষকরা। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। ভূমিহীন কৃষকদের জীবনযাত্রা প্রায়শই দারিদ্র্য, শোষণ এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এই নিবন্ধে ভূমিহীন কৃষকদের পরিচয়, কারণ, সমস্যা, এবং তাদের উন্নয়নের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভূমিহীন কৃষকের পরিচয় ভূমিহীন কৃষক সমাজের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল একটি অংশ। এদের কোনো নিজস্ব জমি না থাকায়, জীবনধারণের জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। এই কৃষকদের কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:
- জমির অভাব: এদের কোনো নিজস্ব কৃষি জমি থাকে না।
- নির্ভরশীলতা: অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।
- দারিদ্র্য: সাধারণত এরা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।
- সামাজিক দুর্বলতা: সমাজে এদের অবস্থান দুর্বল এবং প্রায়শই শোষণের শিকার হয়।
- ঋণগ্রস্ততা: অভাবের কারণে প্রায়শই ঋণগ্রস্ত থাকে।
ভূমিহীন কৃষকের কারণ ভূমিহীন কৃষকের উদ্ভবের পেছনে বেশ কিছু ঐতিহাসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
- জমিদার প্রথা: জমিদার প্রথা ভূমিহীন কৃষকের অন্যতম প্রধান কারণ। ব্রিটিশ শাসনামলে এই প্রথা কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে ভূমিহীন করে ফেলেছিল।
- জমি একত্রীকরণ: জমি একত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় অনেক ছোট কৃষক তাদের জমি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়ে।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি: জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জমির উপর চাপ বাড়ে এবং অনেক কৃষক জমিহীন হয়ে যায়।
- ঋণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ঋণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি কৃষকদের জমি হারাতে বাধ্য করে।
- সামাজিক বৈষম্য: সামাজিক বৈষম্য এবং দুর্বল ভূমি সংস্কার ব্যবস্থা ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
- শিল্পায়ন ও নগরায়ণ: শিল্পায়ন ও নগরায়ণ-এর ফলে কৃষি জমি শিল্প ও আবাসন প্রকল্পের জন্য ব্যবহৃত হওয়ায় অনেক কৃষক জমি হারায়।
ভূমিহীন কৃষকদের সমস্যা ভূমিহীন কৃষকরা অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাদের কয়েকটি প্রধান সমস্যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- জীবনের অনিশ্চয়তা: যেহেতু তাদের নিজস্ব জমি নেই, তাই কাজের সুযোগ এবং আয়ের উৎস সবসময় নিশ্চিত থাকে না।
- দারিদ্র্য ও অপুষ্টি: কম আয় এবং কাজের অনিশ্চয়তার কারণে তারা প্রায়শই দারিদ্র্য ও অপুষ্টির শিকার হয়।
- শোষণ: মহাজন এবং জমিদারদের দ্বারা প্রায়শই তারা শোষিত হয়।
- ঋণগ্রস্ততা: অভাবের কারণে তারা উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয় এবং ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে আরও ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে।
- শিক্ষার অভাব: দারিদ্র্যের কারণে তাদের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ সীমিত থাকে।
- স্বাস্থ্যসেবার অভাব: দরিদ্র হওয়ার কারণে তারা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
- সামাজিক নিরাপত্তা অভাব: ভূমিহীন কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।
- বাসস্থানের অভাব: অনেক ভূমিহীন কৃষকের নিজস্ব বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকে না।
ভূমিহীন কৃষকদের প্রকারভেদ ভূমিহীন কৃষকদের বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যা তাদের কাজের ধরন এবং মালিকানার উপর ভিত্তি করে গঠিত। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:
- বর্গচাষী: বর্গচাষীরা অন্যের জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসল বা অর্থের বিনিময়ে চাষাবাদ করে।
- ভূমিহীন মজুর: এরা অন্যের জমিতে দৈনিক বা সাপ্তাহিক মজুরির বিনিময়ে কাজ করে।
- Sharecropper: এরা জমির মালিকের সাথে ফসলের ভাগাভাগির চুক্তিতে কাজ করে।
- স্থায়ী শ্রমিক: কিছু ভূমিহীন কৃষক জমির মালিকের সাথে স্থায়ীভাবে কাজের চুক্তিতে আবদ্ধ থাকে।
- seasonal worker: এরা নির্দিষ্ট সময়ে, যেমন ফসল তোলার সময় কাজ করে।
ভূমিহীন কৃষকদের উন্নয়নের উপায় ভূমিহীন কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় আলোচনা করা হলো:
- ভূমি সংস্কার: ভূমি সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে জমি বিতরণ করা যেতে পারে।
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি: কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন করা যেতে পারে।
- ঋণ প্রদান: ভূমিহীন কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা যেতে পারে, যাতে তারা তাদের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে।
- শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: ভূমিহীন কৃষকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ও কৃষি প্রশিক্ষণর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
- স্বাস্থ্যসেবা: তাদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা উচিত।
- সামাজিক নিরাপত্তা: ভূমিহীন কৃষকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক প্রকল্প চালু করা যেতে পারে, যেমন খাদ্য নিরাপত্তা, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি।
- আত্ম-সহায়ক গোষ্ঠী: ভূমিহীন কৃষকদের আত্ম-সহায়ক গোষ্ঠী (Self-Help Group) গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।
- সরকারি সহায়তা: সরকার ভূমিহীন কৃষকদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে।
- ন্যূনতম মজুরি: ভূমিহীন কৃষকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা উচিত, যাতে তারা ন্যায্য পারিশ্রমিক পায়।
- কৃষি প্রযুক্তি: তাদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, যাতে তারা উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং ভূমিহীন কৃষকের সম্পর্ক (সরাসরি সম্পর্ক নেই, তবে অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো) যদিও বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং ভূমিহীন কৃষকের মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এদের কিছু সংযোগ স্থাপন করা যেতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক বাজার। ভূমিহীন কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বাজারে অংশগ্রহণ করতে পারে না। তবে, যদি ভূমিহীন কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত হয়, তবে তারা বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের কথা বিবেচনা করতে পারে। কিন্তু এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং তাদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই, ভূমিহীন কৃষকদের জন্য বাইনারি অপশন ট্রেডিং উপযুক্ত নয়। তাদের জন্য প্রয়োজন স্থিতিশীল এবং নিরাপদ আয়য়ের উৎস তৈরি করা।
টেবিল: ভূমিহীন কৃষকদের সমস্যা ও সমাধান
| সমস্যা |!-| সমাধান | ভূমি সংস্কার, জমি বিতরণ | | কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ঋণ প্রদান | | ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতকরণ, আইনি সহায়তা | | সহজ শর্তে ঋণ, ঋণ মওকুফ | | শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি | | বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা | | সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প | | বাসস্থানের ব্যবস্থা | |
উপসংহার ভূমিহীন কৃষক বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের সমস্যার সমাধান এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। ভূমি সংস্কার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ভূমিহীন কৃষকদের একটি উন্নত জীবন দেওয়া সম্ভব। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা এবং সমাজের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের এই বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
আরও দেখুন
- কৃষি
- দারিদ্র্য
- অর্থনীতি
- ভূমি আইন
- গ্রামীণ অর্থনীতি
- ঋণ
- বর্গাচাষ
- মহাজন
- ভূমিহীনতা
- কৃষি শ্রমিক
- কৃষি উন্নয়ন
- খাদ্য নিরাপত্তা
- সামাজিক বৈষম্য
- জনসংখ্যা
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ
- শিল্পায়ন
- নগরায়ণ
- আত্ম-সহায়ক গোষ্ঠী
- ন্যূনতম মজুরি
- আর্থিক বাজার
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
