বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা

বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা (Electrical conductivity) হলো কোনো পদার্থের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করার ক্ষমতা। অন্যভাবে বলা যায়, এটি একটি পদার্থের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিকcurrent সহজে প্রবাহিত হতে দেওয়ার পরিমাপ। এই পরিবাহিতা পদার্থের বৈশিষ্ট্য এবং এর ওপর অনেক বিষয়, যেমন - তাপমাত্রা, ভেজাভাব, এবং ভেজাল ইত্যাদির প্রভাব পড়ে।

পরিবাহিতার সংজ্ঞা ও একক

বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা (σ) হলো পরিবাহন ক্ষমতার (Conductance) বিপরীত রাশি। একে সাধারণত সিমেন্স প্রতি মিটার (Siemens per meter, S/m) এককে প্রকাশ করা হয়। পূর্বে এর একক ছিল মো/মিটার (mho/m)। পরিবাহিতা একটি ভৌত রাশি যা নির্দেশ করে কোনো উপাদান কত সহজে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে।

গণিতিকভাবে প্রকাশ করলে:

σ = 1/ρ

এখানে, σ হলো পরিবাহিতা এবং ρ হলো রোধ (resistivity)।

পরিবাহিতার প্রকারভেদ

বিভিন্ন পদার্থ বিভিন্ন পরিমাণে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। এই কারণে পরিবাহিতাকে কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:

পরিবাহী (Conductors): এই পদার্থগুলো খুব সহজেই বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। এদের রোধ ক্ষমতা খুব কম। উদাহরণ: তামা, রূপা, সোনা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি।
অর্ধপরিবাহী (Semiconductors): এই পদার্থগুলোর পরিবাহিতা পরিবাহী এবং অন্তরকের মাঝামাঝি। এদের পরিবাহিতা তাপমাত্রা এবং অন্যান্য বাহ্যিক কারণের ওপর নির্ভর করে। উদাহরণ: সিলিকন, জার্মেনিয়াম ইত্যাদি। ট্রানজিস্টর তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়।
অন্তরক (Insulators): এই পদার্থগুলো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে না বললেই চলে। এদের রোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। উদাহরণ: কাঁচ, প্লাস্টিক, রাবার, কাঠ ইত্যাদি।

পরিবাহিতা প্রভাবিত করার কারণসমূহ

বিভিন্ন কারণ পরিবাহিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:

তাপমাত্রা: সাধারণত, ধাতুর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বাড়লে পরিবাহিতা কমে যায়। কারণ তাপমাত্রা বাড়লে ধাতুর পরমাণুগুলোর কম্পন বৃদ্ধি পায়, যা ইলেকট্রণের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, অর্ধপরিবাহীর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বাড়লে পরিবাহিতা বাড়ে। কারণ তাপমাত্রা বাড়লে বেশি সংখ্যক ইলেকট্রন শক্তি লাভ করে পরিবাহী হিসেবে কাজ করতে পারে।
অশুচিতা (Impurities): পদার্থের মধ্যে ভেজাল মেশানো থাকলে পরিবাহিতা কমে যেতে পারে। ভেজাল পরমাণুগুলো ইলেকট্রনের প্রবাহে বাধা দেয়।
স্ফটিক গঠন (Crystal Structure): পদার্থের স্ফটিক গঠন পরিবাহিতার ওপর প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, একটি একক স্ফটিকের পরিবাহিতা বহু-স্ফটিকের চেয়ে বেশি।
চাপ (Pressure): কিছু পদার্থের ক্ষেত্রে চাপ বাড়লে পরিবাহিতা পরিবর্তিত হতে পারে।
আলো (Light): কিছু অর্ধপরিবাহীর পরিবাহিতা আলোর প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। এই ঘটনাকে ফটো কন্ডাকটিভিটি (photoconductivity) বলা হয়।

বিভিন্ন পদার্থের পরিবাহিতা

বিভিন্ন পদার্থের পরিবাহিতার মান ভিন্ন ভিন্ন হয়। নিচে একটি তালিকায় কয়েকটি সাধারণ পদার্থের পরিবাহিতা উল্লেখ করা হলো:

বিভিন্ন পদার্থের পরিবাহিতা
! পদার্থ	পরিবাহিতা (S/m)	Silver (রূপা)	6.30 × 10⁷	Copper (তামা)	5.96 × 10⁷	Gold (সোনা)	4.10 × 10⁷	Aluminum (অ্যালুমিনিয়াম)	3.77 × 10⁷	Iron (লোহা)	1.0 × 10⁷	Silicon (সিলিকন)	1.5 × 10⁻⁴ to 1.5 × 10³ (ডোপিং এর উপর নির্ভরশীল)	Germanium (জার্মেনিয়াম)	1.5 × 10⁻⁴ to 1.5 × 10³ (ডোপিং এর উপর নির্ভরশীল)	Glass (কাঁচ)	10⁻¹⁰ to 10⁻¹⁴	Rubber (রাবার)	10⁻¹³ to 10⁻¹⁶

পরিবাহিতার ব্যবহার

বৈদ্যুতিক পরিবাহিতার ব্যবহার ব্যাপক। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

বিদ্যুৎ পরিবহন: পরিবাহী তার এবং কেবল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহন করা হয়।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম: বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, যেমন - হিটার, লাইট বাল্ব, মোটর ইত্যাদি তৈরিতে পরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
ইলেকট্রনিক্স শিল্প: কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরিতে অর্ধপরিবাহী ব্যবহার করা হয়।
সেন্সর: পরিবাহিতা পরিবর্তনশীল অর্ধপরিবাহী ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সেন্সর তৈরি করা হয়, যা তাপমাত্রা, আলো, চাপ ইত্যাদি পরিমাপ করতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান: ইসিজি (ECG) এবং ইইজি (EEG) এর মতো চিকিৎসা সরঞ্জামগুলিতে পরিবাহিতা পরিমাপ করা হয়।

পরিবাহিতা পরিমাপের পদ্ধতি

বিভিন্ন উপায়ে বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা পরিমাপ করা যায়। নিচে কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

ওহমমিটার (Ohmmeter): ওহমমিটার ব্যবহার করে কোনো বস্তুর রোধ পরিমাপ করা হয়, যা থেকে পরিবাহিতা নির্ণয় করা যায়।
কেলভিন সেতু (Kelvin Bridge): এটি একটি নির্ভুল যন্ত্র যা অজানা রোধ পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয় এবং এর মাধ্যমে পরিবাহিতা নির্ণয় করা যায়।
চার-পয়েন্ট প্রোব পদ্ধতি (Four-Point Probe Method): এই পদ্ধতিটি সাধারণত অর্ধপরিবাহীর পরিবাহিতা পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়।
হোল-মোবিলিটি হল প্রভাব (Hall Effect): এই প্রভাব ব্যবহার করে পদার্থের চার্জ বাহকের ঘনত্ব এবং মোবিলিটি পরিমাপ করা যায়, যা থেকে পরিবাহিতা নির্ণয় করা সম্ভব।

যোগাযোগ এবং নেটওয়ার্কিং এ পরিবাহিতা

যোগাযোগ এবং নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায়, পরিবাহিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার এবং কেবলের গুণমান, সংকেত শক্তি এবং ডেটা ট্রান্সমিশন গতি এই বিষয়গুলোর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। উন্নত পরিবাহিতা সম্পন্ন তারগুলি সংকেত ক্ষয় কমিয়ে ডেটা ট্রান্সমিশনের নির্ভরযোগ্যতা বাড়ায়।

কোএক্সিয়াল কেবল (Coaxial Cable): এই ধরনের তারগুলি সাধারণত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির সংকেত পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এদের পরিবাহিতা সংকেতের গুণগত মান বজায় রাখতে সহায়ক।
ফাইবার অপটিক কেবল (Fiber Optic Cable): যদিও এটি বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়, তবে আলোর মাধ্যমে ডেটা পরিবহনে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
নেটওয়ার্ক টপোলজি (Network Topology): নেটওয়ার্কের নকশা এবং তারের বিন্যাস সংকেত পরিবহনের পথে পরিবাহিতার প্রভাব কমাতে সহায়ক।

ভলিউম বিশ্লেষণ এবং পরিবাহিতা

ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) একটি কৌশল যা কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি শেয়ার বা পণ্যের কেনাবেচার পরিমাণ বিশ্লেষণ করে বাজারের প্রবণতা নির্ধারণ করে। পরিবাহিতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বাজারের তরলতা (liquidity) নির্দেশ করে। উচ্চ পরিবাহিতা মানে বাজারে অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতা রয়েছে, যা দ্রুত মূল্য পরিবর্তনে সাহায্য করে।

অর্ডার ফ্লো (Order Flow): বাজারের অর্ডার ফ্লো বিশ্লেষণ করে পরিবাহিতার পরিবর্তন বোঝা যায়।
ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): এই সূচকটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভলিউম এবং মূল্যের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে।
অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): এই সূচকটি ভলিউমের পরিবর্তনের সাথে মূল্যের সম্পর্ক নির্ণয় করে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং পরিবাহিতা

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) হলো ঐতিহাসিক মূল্য এবং ভলিউম ডেটার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের মূল্য নির্ধারণের একটি পদ্ধতি। পরিবাহিতা এখানে সহায়ক হতে পারে, কারণ এটি বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য ব্রেকআউট (breakout) চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।

মুভিং এভারেজ (Moving Average): এই সূচকটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য দেখায় এবং পরিবাহিতার পরিবর্তন নির্দেশ করে।
রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (RSI): এই সূচকটি অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির পরিস্থিতি চিহ্নিত করে।
MACD (Moving Average Convergence Divergence): এই সূচকটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দেয়।
বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): এই সূচকটি মূল্যের পরিবর্তনশীলতা পরিমাপ করে এবং সম্ভাব্য ব্রেকআউট চিহ্নিত করে।
ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এই কৌশলটি সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর নির্ধারণ করে।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং পরিবাহিতা

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management) ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিবাহিতা বাজারের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। উচ্চ পরিবাহিতা সাধারণত উচ্চ ঝুঁকি নির্দেশ করে, কারণ দাম দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে।

স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order): এটি একটি নির্দিষ্ট মূল্যে পৌঁছালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড বন্ধ করার একটি নির্দেশ।
টেক প্রফিট অর্ডার (Take-Profit Order): এটি একটি নির্দিষ্ট মূল্যে পৌঁছালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড থেকে লাভ তোলার একটি নির্দেশ।
পজিশন সাইজিং (Position Sizing): এটি প্রতিটি ট্রেডে বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করে।
ডাইভারসিফিকেশন (Diversification): বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো যায়।

উপসংহার

বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌত রাশি যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এর ধারণা, প্রকারভেদ, এবং প্রভাবগুলো বোঝা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় অপরিহার্য। আধুনিক প্রযুক্তি এবং শিল্পে এর প্রয়োগ বাড়ছে, তাই এই বিষয়ে জ্ঞান রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ