বিল উইলিয়ামস %R
বিল উইলিয়ামস %R
বিল উইলিয়ামস %R একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা মূলত মোমেন্টাম পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ‘রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স’ (RSI) এর মতোই কাজ করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি আরও সংবেদনশীল এবং দ্রুত সংকেত দিতে সক্ষম। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে এই ইন্ডিকেটরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এই নিবন্ধে বিল উইলিয়ামস %R এর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
সূচনা বিল উইলিয়ামস %R ইন্ডিকেটরটি ১৯৭০-এর দশকে বিল উইলিয়ামস তৈরি করেন। এটি মূলত একটি অসিলেটর, যা নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে শেয়ারের দামের ওঠানামা পরিমাপ করে। এই ইন্ডিকেটরটি -১০০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকে। সাধারণত, ৭০-এর উপরে %R মান নির্দেশ করে যে শেয়ারটি অতি কেনা (Overbought) অবস্থায় আছে, এবং ৩০-এর নিচে নির্দেশ করে যে শেয়ারটি অতি বিক্রি (Oversold) অবস্থায় আছে।
গণনা পদ্ধতি বিল উইলিয়ামস %R গণনা করার সূত্রটি নিম্নরূপ:
%R = -১০০ * (বর্তমান মূল্য - সর্বোচ্চ মূল্য) / (সর্বোচ্চ মূল্য - সর্বনিম্ন মূল্য)
এখানে,
- বর্তমান মূল্য (Current Price) হলো বর্তমান শেয়ারের দাম।
- সর্বোচ্চ মূল্য (Highest High) হলো নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম।
- সর্বনিম্ন মূল্য (Lowest Low) হলো নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সর্বনিম্ন দাম।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শেয়ারের বর্তমান দাম ৫০ টাকা হয়, এবং গত ১৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম ৬০ টাকা এবং সর্বনিম্ন দাম ৪০ টাকা হয়, তাহলে %R হবে:
%R = -১০০ * (৫০ - ৬০) / (৬০ - ৪০) = -১০০ * (-১০) / ২০ = ৫০
এই ক্ষেত্রে, %R এর মান ৫০, যা নিরপেক্ষ অবস্থান নির্দেশ করে।
বিল উইলিয়ামস %R এর ব্যাখ্যা
- অতি কেনা (Overbought) অবস্থা: যখন %R এর মান ৭০-এর উপরে যায়, তখন এটিকে অতি কেনা অবস্থা বলা হয়। এর মানে হলো শেয়ারটির দাম অনেক বেড়েছে এবং এটি সংশোধন (Correction) হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, এটি পুট অপশন (Put Option) কেনার সংকেত দিতে পারে। পুট অপশন হলো এমন একটি চুক্তি, যেখানে শেয়ারের দাম কমলে লাভ হয়।
- অতি বিক্রি (Oversold) অবস্থা: যখন %R এর মান ৩০-এর নিচে নামে, তখন এটিকে অতি বিক্রি অবস্থা বলা হয়। এর মানে হলো শেয়ারটির দাম অনেক কমে গেছে এবং এটি বাড়তে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, এটি কল অপশন (Call Option) কেনার সংকেত দিতে পারে। কল অপশন হলো এমন একটি চুক্তি, যেখানে শেয়ারের দাম বাড়লে লাভ হয়।
- নিরপেক্ষ অবস্থা: যখন %R এর মান ৩০ থেকে ৭০ এর মধ্যে থাকে, তখন এটিকে নিরপেক্ষ অবস্থা বলা হয়। এই ক্ষেত্রে, শেয়ারের দামের গতিবিধি সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না।
ট্রেডিং কৌশল বিল উইলিয়ামস %R ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু সাধারণ কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. ক্রসওভার কৌশল (Crossover Strategy): যখন %R লাইন ৩০-এর নিচে থেকে উপরে ক্রস করে, তখন এটি একটি কেনার সংকেত (Buy Signal) দেয়। এই ক্ষেত্রে, কল অপশন কেনা যেতে পারে। অন্যদিকে, যখন %R লাইন ৭০-এর উপরে থেকে নিচে ক্রস করে, তখন এটি একটি বিক্রির সংকেত (Sell Signal) দেয়। এই ক্ষেত্রে, পুট অপশন কেনা যেতে পারে।
২. ডাইভারজেন্স কৌশল (Divergence Strategy): ডাইভারজেন্স হলো যখন শেয়ারের দাম এবং %R ইন্ডিকেটরের মধ্যে বিপরীতমুখী প্রবণতা দেখা যায়।
- বুলিশ ডাইভারজেন্স (Bullish Divergence): যখন শেয়ারের দাম কমতে থাকে, কিন্তু %R লাইন বাড়তে থাকে, তখন এটিকে বুলিশ ডাইভারজেন্স বলা হয়। এটি শেয়ারের দাম বাড়ার পূর্বাভাস দেয়।
- বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স (Bearish Divergence): যখন শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে, কিন্তু %R লাইন কমতে থাকে, তখন এটিকে বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স বলা হয়। এটি শেয়ারের দাম কমার পূর্বাভাস দেয়।
৩. সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল (Support and Resistance Level): %R ইন্ডিকেটরকে সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেলের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করলে ট্রেডিংয়ের সংকেত আরও নিশ্চিত করা যায়। যদি %R ৩০-এর নিচে থাকে এবং একই সাথে শেয়ারের দাম একটি সাপোর্ট লেভেলে পৌঁছায়, তাহলে এটি একটি শক্তিশালী কেনার সংকেত হতে পারে।
অন্যান্য ইন্ডিকেটরের সাথে সমন্বয় বিল উইলিয়ামস %R ইন্ডিকেটরকে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করলে ট্রেডিংয়ের নির্ভুলতা বাড়ে। নিচে কয়েকটি ইন্ডিকেটরের উদাহরণ দেওয়া হলো:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে শেয়ারের দামের গড় গতিবিধি জানা যায়। %R এর সাথে মুভিং এভারেজ মিলিয়ে ব্যবহার করলে ট্রেডিংয়ের নিশ্চিততা বাড়ে।
- আরএসআই (RSI): %R এবং RSI উভয়ই মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর। এদের একসাথে ব্যবহার করে ওভারবট এবং ওভারসোল্ড অবস্থা আরও ভালোভাবে নির্ণয় করা যায়।
- এমএসিডি (MACD): MACD একটি ট্রেন্ড-ফলোয়িং মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর। %R এর সাথে MACD ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সুযোগগুলো আরও স্পষ্ট করা যায়।
- বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): বলিঙ্গার ব্যান্ডস ব্যবহার করে শেয়ারের দামের অস্থিরতা পরিমাপ করা যায়। %R এর সাথে বলিঙ্গার ব্যান্ডস ব্যবহার করে ব্রেকআউট এবং রিভার্সাল ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা যায়।
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স এরিয়া চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। %R এর সাথে ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই, বিল উইলিয়ামস %R ইন্ডিকেটর ব্যবহার করার সময় কিছু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল অনুসরণ করা উচিত:
- স্টপ লস (Stop Loss): ট্রেডিংয়ে স্টপ লস ব্যবহার করা উচিত, যাতে অপ্রত্যাশিত ক্ষতির হাত থেকে বাঁচা যায়।
- পজিশন সাইজিং (Position Sizing): আপনার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের উপর ভিত্তি করে পজিশন সাইজ নির্ধারণ করুন।
- ডাইভারসিফিকেশন (Diversification): বিভিন্ন অ্যাসেটে বিনিয়োগ করুন, যাতে কোনো একটি অ্যাসেটের ক্ষতির কারণে আপনার পুরো বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ (Emotional Control): ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ভয় বা লোভের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।
বিল উইলিয়ামস %R এর সীমাবদ্ধতা বিল উইলিয়ামস %R একটি কার্যকরী ইন্ডিকেটর হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:
- ফলস সিগন্যাল (False Signal): অনেক সময় %R ভুল সংকেত দিতে পারে, বিশেষ করে যখন বাজার অস্থির থাকে।
- ল্যাগিং ইন্ডিকেটর (Lagging Indicator): এটি একটি ল্যাগিং ইন্ডিকেটর, অর্থাৎ দামের পরিবর্তনের পরে এটি সংকেত দেয়।
- সাইডওয়েজ মার্কেট (Sideways Market): সাইডওয়েজ মার্কেটে %R সঠিকভাবে কাজ করে না, কারণ বাজারে কোনো স্পষ্ট ট্রেন্ড থাকে না।
উপসংহার বিল উইলিয়ামস %R একটি শক্তিশালী টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি মোমেন্টাম পরিমাপ করে এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। তবে, এই ইন্ডিকেটর ব্যবহারের সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য ইন্ডিকেটরের সাথে সমন্বয় করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এছাড়াও, বাজারের গতিবিধি এবং অর্থনীতির খবর সম্পর্কে সবসময় অবগত থাকা প্রয়োজন।
আরও জানতে:
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
- ফিনান্সিয়াল মার্কেট
- শেয়ার বাজার
- মোমেন্টাম ট্রেডিং
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- চার্ট প্যাটার্ন
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- বাইনারি অপশন বেসিক
- কল এবং পুট অপশন
- অপশন ট্রেডিং কৌশল
- বুলিশ এবং বিয়ারিশ ট্রেন্ড
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
- অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার
- ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস
- পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট
- ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম
- মার্জিন ট্রেডিং
- ডে ট্রেডিং
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
