বাটারফ্লাই অপশন
বাটারফ্লাই অপশন ট্রেডিং কৌশল
বাটারফ্লাই অপশন একটি অপশন ট্রেডিং কৌশল যা সীমিত ঝুঁকি এবং সীমিত লাভের সম্ভাবনা প্রদান করে। এটি সাধারণত সেই বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত যারা বাজারের একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করেন। এই কৌশলটি তিনটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইস-এর অপশন ব্যবহার করে গঠিত হয়, যার মধ্যে একটি অপশন কেনা হয় এবং দুটি অপশন বিক্রি করা হয়।
কৌশলের গঠন
বাটারফ্লাই অপশন কৌশলটি নিম্নলিখিত উপায়ে গঠিত হয়:
১. একটি নিম্ন স্ট্রাইক প্রাইসের (K1) কল অপশন কেনা। ২. দুটি মধ্যম স্ট্রাইক প্রাইসের (K2) কল অপশন বিক্রি করা। এই স্ট্রাইক প্রাইসটি K1 এবং K3-এর মাঝামাঝি হতে হবে। ৩. একটি উচ্চ স্ট্রাইক প্রাইসের (K3) কল অপশন কেনা।
এখানে, K1 < K2 < K3 এবং K2 = (K1 + K3) / 2।
উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক একটি স্টকের বর্তমান মূল্য ৫০ টাকা। একজন বিনিয়োগকারী বাটারফ্লাই অপশন কৌশল তৈরি করতে পারেন নিম্নরূপ:
- K1 = ৪৫ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন কেনা।
- K2 = ৫০ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের দুটি কল অপশন বিক্রি করা।
- K3 = ৫৫ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল অপশন কেনা।
এই ক্ষেত্রে, যদি স্টকের দাম মেয়াদপূর্তিতে ৫০ টাকার কাছাকাছি থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারী লাভবান হবেন।
লাভের সম্ভাবনা
বাটারফ্লাই অপশন কৌশলের লাভের সম্ভাবনা সীমিত। সর্বোচ্চ লাভ হয় যখন মেয়াদপূর্তির তারিখে স্টকের দাম মধ্যম স্ট্রাইক প্রাইসের (K2) সমান হয়। লাভের পরিমাণ গণনা করা হয় এভাবে:
সর্বোচ্চ লাভ = K2 - K1 - নেট প্রিমিয়াম খরচ
এখানে, নেট প্রিমিয়াম খরচ হল কল অপশন কেনার খরচ এবং কল অপশন বিক্রি করে প্রাপ্ত প্রিমিয়ামের মধ্যে পার্থক্য।
ক্ষতির সম্ভাবনা
বাটারফ্লাই অপশন কৌশলের ক্ষতির সম্ভাবনাও সীমিত। সর্বোচ্চ ক্ষতি হয় যখন স্টকের দাম নিম্ন স্ট্রাইক প্রাইসের (K1) নিচে বা উচ্চ স্ট্রাইক প্রাইসের (K3) উপরে থাকে। ক্ষতির পরিমাণ গণনা করা হয় এভাবে:
সর্বোচ্চ ক্ষতি = নেট প্রিমিয়াম খরচ
ব্রেকইভেন পয়েন্ট
বাটারফ্লাই অপশন কৌশলের দুটি ব্রেকইভেন পয়েন্ট রয়েছে:
- নিম্ন ব্রেকইভেন পয়েন্ট = K1 + নেট প্রিমিয়াম খরচ
- উচ্চ ব্রেকইভেন পয়েন্ট = K3 - নেট প্রিমিয়াম খরচ
যদি মেয়াদপূর্তির তারিখে স্টকের দাম এই ব্রেকইভেন পয়েন্টগুলির মধ্যে থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারী কোনো লাভ বা ক্ষতি করবেন না।
কৌশলটি কখন ব্যবহার করা উচিত?
বাটারফ্লাই অপশন কৌশলটি নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা উচিত:
- যখন আপনি আশা করেন যে বাজারের দাম একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে স্থিতিশীল থাকবে।
- যখন আপনি সীমিত ঝুঁকি নিতে চান।
- যখন আপনি সীমিত লাভের সম্ভাবনা নিয়ে সন্তুষ্ট।
বাটারফ্লাই অপশন কৌশলটি টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং ভলিউম বিশ্লেষণ-এর মাধ্যমে বাজারের গতিবিধিPredict করার পরে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিভিন্ন প্রকার বাটারফ্লাই অপশন
বাটারফ্লাই অপশন কৌশল মূলত দুই ধরনের হতে পারে:
১. কল বাটারফ্লাই (Call Butterfly): এই কৌশলে শুধুমাত্র কল অপশন ব্যবহার করা হয়। উপরে একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
২. পুট বাটারফ্লাই (Put Butterfly): এই কৌশলে শুধুমাত্র পুট অপশন ব্যবহার করা হয়। পুট বাটারফ্লাই কৌশলটি কল বাটারফ্লাই কৌশলের মতোই, তবে এখানে কল অপশনের পরিবর্তে পুট অপশন ব্যবহার করা হয়।
| কৌশল | গঠন | লাভের সম্ভাবনা | ক্ষতির সম্ভাবনা | ব্রেকইভেন পয়েন্ট |
|---|---|---|---|---|
| কল বাটারফ্লাই | K1-এ কল কেনা, K2-এ দুটি কল বিক্রি করা, K3-এ কল কেনা (K1 < K2 < K3) | সীমিত, K2-এ সর্বোচ্চ | সীমিত, নেট প্রিমিয়াম খরচ | K1 + নেট প্রিমিয়াম খরচ এবং K3 - নেট প্রিমিয়াম খরচ |
| পুট বাটারফ্লাই | K1-এ পুট কেনা, K2-এ দুটি পুট বিক্রি করা, K3-এ পুট কেনা (K1 < K2 < K3) | সীমিত, K2-এ সর্বোচ্চ | সীমিত, নেট প্রিমিয়াম খরচ | K1 + নেট প্রিমিয়াম খরচ এবং K3 - নেট প্রিমিয়াম খরচ |
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
বাটারফ্লাই অপশন কৌশল ব্যবহার করার সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:
- কৌশলটি শুরু করার আগে আপনার ঝুঁকির সহনশীলতা মূল্যায়ন করুন।
- স্টক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
- সময়কাল বিবেচনা করুন।
- আপনার পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনুন।
- স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন।
অন্যান্য সম্পর্কিত অপশন কৌশল
বাটারফ্লাই অপশন কৌশলের সাথে সম্পর্কিত আরও কিছু অপশন কৌশল রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন:
- স্ট্র্যাডল (Straddle): এই কৌশলে একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদপূর্তির তারিখের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়।
- স্ট্র্যাঙ্গল (Strangle): এই কৌশলে বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইস এবং একই মেয়াদপূর্তির তারিখের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়।
- কন্ডর (Condor): এটি বাটারফ্লাইয়ের মতোই, তবে এখানে চারটি স্ট্রাইক প্রাইস ব্যবহার করা হয়।
- আয়রন কন্ডর (Iron Condor): এটি কন্ডরের একটি রূপ, যেখানে কল এবং পুট উভয় অপশন ব্যবহার করা হয়।
টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং বাটারফ্লাই অপশন
বাটারফ্লাই অপশন কৌশল ব্যবহারের সময় কিছু টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর সাহায্য করতে পারে:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি বাজারের প্রবণতা সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
- আরএসআই (Relative Strength Index): এটি বাজারের অতিরিক্ত কেনা বা অতিরিক্ত বিক্রির অবস্থা নির্দেশ করে।
- এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): এটি বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনের সংকেত দেয়।
- বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): এটি বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করতে সাহায্য করে।
ভলিউম বিশ্লেষণ এবং বাটারফ্লাই অপশন
ভলিউম বিশ্লেষণ বাটারফ্লাই অপশন কৌশল ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ ভলিউম সাধারণত শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে, যা কৌশলটির কার্যকারিতা প্রভাবিত করতে পারে।
- অন ব্যালেন্স ভলিউম (On Balance Volume): এটি ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে।
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (Volume Weighted Average Price): এটি ভলিউমের উপর ভিত্তি করে গড় মূল্য নির্ধারণ করে।
উপসংহার
বাটারফ্লাই অপশন একটি জটিল কিন্তু কার্যকর ট্রেডিং কৌশল। এটি সীমিত ঝুঁকি এবং সীমিত লাভের সুযোগ प्रदान করে। এই কৌশলটি ব্যবহার করার আগে বাজারের গতিবিধি, ঝুঁকির ব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সঠিক পরিকল্পনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে, বাটারফ্লাই অপশন কৌশল বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হতে পারে। ডেরিভেটিভস সম্পর্কে আরও জ্ঞান এই কৌশলটিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
