ফ্রিডরিখ নিৎশে

ফ্রিডরিখ নিৎশে (১৮৪৪-১৯০০) উনিশ শতকের প্রভাবশালী জার্মান দার্শনিক। তিনি জ্ঞানতত্ত্ব, ধর্ম, নীতিশাস্ত্র, সাহিত্য, এবং সঙ্গীতের উপর গভীর প্রভাব ফেলে গেছেন। নিৎশের দর্শন মূলত বিদ্যাবাদ, ক্ষমতার ইচ্ছা, অতিরিক্ত মানব এবং অনিত্য পুনরাবৃত্তি-এর ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত। তার কাজের বৈশিষ্ট্য হলো ঐতিহ্যবাহী নৈতিক মূল্যবোধের সমালোচনা এবং নতুন মূল্যবোধ অনুসন্ধানের আহ্বান।

জীবন ও কর্ম

ফ্রিডরিখ উইলহেলম নিৎশে ১৮৪৪ সালের ১৫ অক্টোবর জার্মানির রকেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন লুথারান ধর্মযাজক। অল্প বয়সেই নিৎশে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। তিনি বোনে বিশ্ববিদ্যালয়ে clasical philology অধ্যয়ন করেন এবং ১৮৬৯ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে Basel বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।

শারীরিক দুর্বলতা নিৎশের জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। চোখের সমস্যা, মাইগ্রেন, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত জটিলতা তাকে প্রায়শই কষ্ট দিত। ১৮৭৯ সালে তিনি অধ্যাপনানা থেকে পদত্যাগ করেন এবং এরপর থেকে লেখালেখি ও দর্শনের গবেষণায় মনোনিবেশ করেন।

নিৎশের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে: দ্য बर्थ অফ ট্র্যাজেডি (১৮৭০), আনটাইমলি মেডিটেশনস (১৮৭৩-১৮৭৬), হিউম্যান, অল টু হিউম্যান (১৮৭৮), দ্য গে সায়েন্স (১৮৮২), Thus Spoke Zarathustra (১৮৮৩-১৮৮৫), Beyond Good and Evil (১৮৮৬), On the Genealogy of Morality (১৮৮৭), The Case of Wagner (১৮৮৮), Twilight of the Idols (১৮৮৯), এবং Ecce Homo (১৯০৮)।

১৯০০ সালের ২৫ আগস্ট নিৎশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় মারা যান।

দর্শনের মূল ধারণা

বিদ্যাবাদ (Nihilism):* নিৎশে বিদ্যাবাদকে পশ্চিমা সভ্যতার একটি সংকট হিসেবে দেখেছিলেন। তার মতে, ঈশ্বরের মৃত্যু এবং ঐতিহ্যবাহী নৈতিক মূল্যবোধের পতন মানুষের জীবনে অর্থহীনতা নিয়ে আসে। তবে, নিৎশে বিদ্যাবাদকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেননি; বরং তিনি এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখেছিলেন - পুরনো মূল্যবোধ ভেঙে ফেলে নতুন মূল্যবোধ তৈরি করার সুযোগ। বিদ্যাবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই নিবন্ধটি দেখুন।

ক্ষমতার ইচ্ছা (Will to Power):* নিৎশের মতে, ক্ষমতার ইচ্ছা হলো জীবনের মৌলিক চালিকা শক্তি। এটি কেবল আধিপত্য বা শাসনের আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং নিজের সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করা এবং ক্রমাগত নিজেকে অতিক্রম করার চেষ্টা। এটি জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সৃজনশীলতার উৎস। ক্ষমতার ইচ্ছার বিস্তারিত আলোচনা।

অতিরিক্ত মানব (Übermensch):* অতিরিক্ত মানব হলো নিৎশের দর্শনের একটি কেন্দ্রীয় ধারণা। এটি এমন একজন মানুষ, যে প্রচলিত নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে উঠে নিজের মূল্যবোধ তৈরি করে এবং নিজের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে। অতিরিক্ত মানব দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে নিজের সম্ভাবনাকে পূর্ণভাবে বিকশিত করে। অতিরিক্ত মানব সম্পর্কিত আরও তথ্য।

অনিত্য পুনরাবৃত্তি (Eternal Recurrence):* এই ধারণা অনুসারে, মহাবিশ্বের সবকিছু অনন্তকাল ধরে পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে, প্রতিটি মুহূর্ত অবিকল একই রূপে ফিরে আসবে। নিৎশে মনে করতেন, এই ধারণার মুখোমুখি হতে পারলে মানুষ জীবনের প্রতি আরও বেশি দায়িত্বশীল হবে এবং প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্বের সাথে বাঁচতে শিখবে। অনিত্য পুনরাবৃত্তির তাৎপর্য।

দৃষ্টিভঙ্গির ধারণা (Perspectivism):* নিৎশে মনে করতেন, সত্য হলো দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। কোনো পরম বা নিরপেক্ষ সত্য নেই। প্রতিটি মানুষের অভিজ্ঞতা এবং মূল্যবোধ তার সত্যকে আকার দেয়। দৃষ্টিভঙ্গির ধারণা।

নৈতিকতার সমালোচনা

নিৎশে প্রচলিত খ্রিস্টীয় নৈতিকতা এবং প্লেটোবাদ-এর কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি এই নৈতিকতাকে "দাস নৈতিকতা" হিসেবে অভিহিত করেন, যেখানে দুর্বলরা শক্তিশালীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মিথ্যা মূল্যবোধ তৈরি করে। তিনি "মাস্টার নৈতিকতা"-র কথা বলেন, যেখানে শক্তিশালীরা নিজেরাই তাদের মূল্যবোধ তৈরি করে এবং নিজেদের জীবনকে নিজেরাই পরিচালিত করে। নৈতিকতার ইতিহাস এবং নৈতিক আপেক্ষিকতা নিয়ে আরও জানতে এই লিঙ্কে যান।

শিল্পকলা ও সাহিত্য

নিৎশে শিল্পকলাকে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখতেন। তিনি ওয়াগনার-এর সঙ্গীতকে প্রথমে সমর্থন করলেও পরে তার সমালোচনা করেন। নিৎশের মতে, শিল্পকলা হলো ক্ষমতার ইচ্ছার প্রকাশ এবং এটি মানুষকে জীবনের গভীরতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। শিল্পকলার দর্শন এবং সাহিত্য সমালোচনা।

রাজনৈতিক প্রভাব

নিৎশের দর্শন বিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শকে প্রভাবিত করেছে। নাৎসি জার্মানি তার দর্শনকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করে, যদিও নিৎশে নিজে জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধী ছিলেন। রাজনৈতিক দর্শন এবং ইতিহাস।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে নিৎশের দর্শনের সম্পর্ক

যদিও ফ্রিডরিখ নিৎশের দর্শন সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে তার কিছু ধারণা ট্রেডারদের মানসিকতা এবং কৌশল তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।

ঝুঁকি গ্রহণ: নিৎশের 'ক্ষমতার ইচ্ছা' ধারণাটি ট্রেডারদের ঝুঁকি গ্রহণে উৎসাহিত করতে পারে। সফল ট্রেডাররা বাজারের অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকির সাথে পরিচিত থাকে এবং তাদের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকে।
নিজস্ব কৌশল তৈরি: নিৎশের 'অতিরিক্ত মানব' ধারণাটি ট্রেডারদের নিজস্ব কৌশল তৈরি করতে এবং অন্যের অন্ধভাবে অনুসরণ না করতে উৎসাহিত করে।
মানসিক স্থিতিশীলতা: 'অনিত্য পুনরাবৃত্তি' ধারণাটি ট্রেডারদের মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। ট্রেডিং-এ লাভ-ক্ষতি একটি স্বাভাবিক ঘটনা, এবং এটিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারা গুরুত্বপূর্ণ।
দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব: নিৎশের 'দৃষ্টিভঙ্গির ধারণা' অনুসারে, বাজারের বিশ্লেষণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করা উচিত। শুধুমাত্র একটিমাত্র সূচক বা কৌশলের উপর নির্ভর না করে বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিৎশের দর্শনে যেমন বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সত্যকে দেখার কথা বলা হয়েছে, তেমনি ভলিউম বিশ্লেষণও বাজারের বিভিন্ন দিক উন্মোচন করে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ট্রেডিং-এর একটি অপরিহার্য অংশ। নিৎশের দর্শন অনুযায়ী, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্বের সাথে বাঁচতে হয়, তেমনি ট্রেডিং-এ প্রতিটি ট্রেডকে সতর্কতার সাথে মূল্যায়ন করা উচিত।
মানসিক বাধা অতিক্রম: ট্রেডিংয়ের সময় মানসিক বাধা অতিক্রম করা জরুরি। নিৎশের 'অতিরিক্ত মানব' ধারণাটি এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে।
বাজারের পূর্বাভাস: বাজারের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। নিৎশের দর্শন অনুযায়ী, কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়, তাই সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয়।
ট্রেডিং সাইকোলজি: ট্রেডিং সাইকোলজি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিৎশের দর্শন ট্রেডারদের মানসিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ: ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ বাজারের মূল ভিত্তি বুঝতে সাহায্য করে।
টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর: টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়।
চার্ট প্যাটার্ন: চার্ট প্যাটার্নগুলো বাজারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা দেয়।
সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স: সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেলগুলো ট্রেডিং-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রেন্ড লাইন: ট্রেন্ড লাইন বাজারের গতিবিধি নির্ধারণ করে।
মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে বাজারের গড় গতিবিধি বোঝা যায়।
আরএসআই (RSI): আরএসআই একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক যা বাজারের অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির অবস্থা নির্দেশ করে।
এমএসিডি (MACD): এমএসিডি বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট: ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেলগুলো চিহ্নিত করা যায়।

উপসংহার

ফ্রিডরিখ নিৎশে ছিলেন একজন প্রভাবশালী দার্শনিক, যিনি তার গভীর চিন্তা ও লেখার মাধ্যমে আধুনিক চিন্তাধারাকে নতুন পথে চালিত করেছেন। তার দর্শন আজও বিতর্কিত, কিন্তু এটি মানুষের মন ও সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

দর্শন জার্মান সংস্কৃতি উনিশ শতক

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ