ফ্রান্সিস গ্যালটন

ফ্রান্সিস গ্যালটন (১৮২২-১৯১১) ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী, পরিসংখ্যানবিদ, নৃতত্ত্ববিদ এবং ইউজেনিক্স-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি চার্লস ডারউইন-এর চাচাতো ভাই ছিলেন এবং ডারউইনের বিবর্তনবাদের ধারণায় প্রভাবিত হয়েছিলেন। গ্যালটন মানুষের বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব এবং বংশগতির উপর বিস্তর গবেষণা করেন এবং পরিসংখ্যানের নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তাঁর কাজ মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান এবং জীনতত্ত্ব সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

ফ্রান্সিস গ্যালটন ১৮২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন স্যার ফ্রান্সিস গ্যালটন, যিনি ছিলেন একজন ব্যাংকার এবং উদ্ভাবক। মাতা অ্যামেলিয়া ছিলেন বিখ্যাত গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম রোয়ানের কন্যা। গ্যালটন প্রথমে বাড়িতেই শিক্ষা লাভ করেন এবং পরবর্তীতে ট্রিনিটি কলেজ, কেমব্রিজ-এ পড়াশোনা করেন। তিনি প্রথমে গণিত নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও পরে চিকিৎসাবিদ্যা এবং এরপর নৃতত্ত্বের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৮৪৪ সালে তিনি কেমব্রিজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

পেশাগত জীবন ও গবেষণা

গ্যালটনের কর্মজীবন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত ছিল। তিনি একজন স্ব-শিক্ষিত বিজ্ঞানী ছিলেন এবং কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন না। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্রগুলো হলো:

==আবহাওয়া বিজ্ঞান==: গ্যালটন ১৮৬১ সালে ‘মেটেওরোলজিক্যাল অফিস’-এর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং সমবায় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি এন্টিসাইক্লোন এবং বায়ুপ্রবাহ নিয়ে গবেষণা করেন এবং আবহাওয়ার মানচিত্র তৈরি করেন।

==নৃবিজ্ঞান ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণা==: গ্যালটন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি ১৮৬৯ সালে ‘ট্র্যাভেলস ইন আমেরিকা’ নামে একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি আমেরিকার স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি মানুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্য যেমন – উচ্চতা, মাথার আকার, চোখের রং ইত্যাদি পরিমাপ করে পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ করেন।

==মানসিক ক্ষমতা ও বংশগতি==: গ্যালটন মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য মানসিক ক্ষমতা বংশগতভাবে কীভাবে সঞ্চারিত হয়, তা নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি মনে করতেন, বুদ্ধি একটি বংশগত বৈশিষ্ট্য এবং এটি পরিমাপ করা সম্ভব। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তিনি বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা (Intelligence test) উদ্ভাবন করেন।

==ইউজেনিক্স==: গ্যালটন ১৮৮৩ সালে ‘ইউজেনিক্স’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। ইউজেনিক্স হলো মানবজাতির গুণগত মান উন্নয়নের একটি বিতর্কিত ধারণা। গ্যালটন বিশ্বাস করতেন যে, সমাজের দুর্বল এবং অযোগ্য ব্যক্তিদের প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করে মানবজাতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব। এই ধারণা পরবর্তীতে অনেক সমালোচিত হয়েছে এবং জাতিগত বিভাজন ও বৈষম্য সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

==ফিঙ্গারপ্রিন্ট==: গ্যালটন ১৮৯২ সালে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টস’ নামে একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি আঙ্গুলের ছাপ সনাক্তকরণের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে, প্রতিটি মানুষের আঙুলের ছাপ স্বতন্ত্র এবং এটি অপরাধী শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

গ্যালটনের পরিসংখ্যানিক অবদান

ফ্রান্সিস গ্যালটন পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি correlation (সহসম্বন্ধ) এবং regression (রিগ্রেশন) এর ধারণা প্রবর্তন করেন।

==Correlation (সহসম্বন্ধ)==: গ্যালটন দুটি চলকের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য সহসম্বন্ধের ধারণাটি উদ্ভাবন করেন। তিনি দেখান যে, দুটি চলক কীভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, তা পরিসংখ্যানিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, তিনি পিতা ও পুত্রের উচ্চতার মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে পান।

==Regression (রিগ্রেশন)==: গ্যালটন রিগ্রেশন বিশ্লেষণের ভিত্তি স্থাপন করেন। রিগ্রেশন হলো একটি পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি, যা একটি চলকের মান অন্য চলকের মানের উপর ভিত্তি করে অনুমান করতে ব্যবহৃত হয়।

তিনি আরও standard deviation (স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন) এবং bell curve (বেল কার্ভ) এর ধারণা জনপ্রিয় করেন।

ফ্রান্সিস গ্যালটনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ
বছর	কাজ	বিবরণ
১৮৬১	মেটেওরোলজিক্যাল অফিস	আবহাওয়া অফিসের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান
১৮৬৯	ট্র্যাভেলস ইন আমেরিকা	আমেরিকার স্থানীয় অধিবাসীদের উপর লেখা বই
১৮৮৩	ইউজেনিক্স	ইউজেনিক্স শব্দটির প্রথম ব্যবহার
১৮৯২	ফিঙ্গারপ্রিন্টস	আঙুলের ছাপ সনাক্তকরণের উপর বই
১৮৮৯	প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারের উপর পরীক্ষা	মানুষের বৈশিষ্ট্য বংশগতভাবে কিভাবে সঞ্চারিত হয় তার উপর গবেষণা

বিতর্ক এবং সমালোচনা

ফ্রান্সিস গ্যালটনের কাজ বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত হয়েছে। তাঁর ইউজেনিক্সের ধারণা বিশেষভাবে সমালোচিত হয়েছে, কারণ এটি জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব এবং বৈষম্যের ধারণাকে উৎসাহিত করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি ইউজেনিক্সের ধারণা ব্যবহার করে ইহুদি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালায়।

গ্যালটনের নৃতাত্ত্বিক গবেষণা পদ্ধতিও সমালোচিত হয়েছে, কারণ তিনি জাতিগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে সরলীকরণ করেছিলেন এবং পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্ক

ফ্রান্সিস গ্যালটনের পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি, যেমন স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন, রিগ্রেশন এবং কোরিলেশন, আধুনিক ফাইন্যান্সিয়াল মডেলিং এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে এই ধারণাগুলো ব্যবহার করে ট্রেডাররা সম্ভাব্য ফলাফল এবং ঝুঁকির মাত্রা মূল্যায়ন করতে পারে।

==স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন==: এটি একটি সম্পদের দামের অস্থিরতা পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। উচ্চ স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন মানে দামের ওঠানামা বেশি, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
==রিগ্রেশন বিশ্লেষণ==: এটি দুটি চলকের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে ব্যবহৃত হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, এটি কোনো সম্পদের দামের গতিবিধি এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক চলকের (যেমন – মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার) মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
==কোরিলেশন==: এটি দুটি সম্পদের দামের মধ্যে সম্পর্ক পরিমাপ করে। যদি দুটি সম্পদের মধ্যে উচ্চ কোরিলেশন থাকে, তবে একটির দাম বাড়লে অন্যটির দামও বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

এছাড়াও, গ্যালটনের গ্যালটনের সমস্যা (Galton's problem) নামক একটি ধারণা রয়েছে, যা ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন-এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

ফ্রান্সিস গ্যালটন ১৯১১ সালের ১৯ জানুয়ারি লন্ডনে মারা যান। তিনি বিজ্ঞান ও পরিসংখ্যানের জগতে এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর কাজ আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গ্যালটনের কাজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ