ফিউচারস এবং অপশনস

ফিউচারস এবং অপশনস হল জটিল আর্থিক উপকরণ যা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে সাহায্য করে, যেমন – হেজিং, স্পেকুলেশন এবং আর্বিট্রেজ। এই দুটি ডেরিভেটিভস মার্কেট একে অপরের থেকে আলাদা হলেও এদের মধ্যে কিছু মৌলিক মিল রয়েছে। এই নিবন্ধে, ফিউচারস এবং অপশনসের মূল ধারণা, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, ট্রেডিং কৌশল, ঝুঁকি এবং সুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

ফিউচারস (Futures)

ফিউচারস হলো একটি চুক্তি যেখানে দুটি পক্ষ ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে কোনো সম্পদ (যেমন – পণ্য, মুদ্রা, স্টক ইনডেক্স) একটি পূর্বনির্ধারিত দামে কেনা বা বেচা করতে সম্মত হয়। ফিউচারস চুক্তি সাধারণত এক্সচেঞ্জ-এর মাধ্যমে লেনদেন করা হয়।

ফিউচারসের মূল বৈশিষ্ট্য

স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন: ফিউচারস চুক্তির আকার, গুণমান এবং ডেলিভারির তারিখ আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা থাকে।
লিকুইডিটি: ফিউচারস মার্কেটে সাধারণত উচ্চ লিকুইডিটি থাকে, যা সহজে চুক্তি কেনা বা বেচা করার সুযোগ দেয়।
মার্জিন: ফিউচারস ট্রেডিংয়ের জন্য পুরো চুক্তির মূল্য পরিশোধ করার প্রয়োজন হয় না; বিনিয়োগকারীকে কেবল মার্জিন অর্থ জমা দিতে হয়।
ডেলিভারি বা ক্যাশ সেটেলমেন্ট: চুক্তির মেয়াদ শেষে, সম্পদটির ডেলিভারি নেওয়া হতে পারে অথবা ক্যাশ সেটেলমেন্টের মাধ্যমে আর্থিক নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।

ফিউচারসের প্রকারভেদ

পণ্য ফিউচারস: সোনা, তেল, গম, ভুট্টা ইত্যাদি পণ্যের ফিউচারস।
আর্থিক ফিউচারস: স্টক ইনডেক্স (যেমন – S&P 500, ন্যাক, ডাউ জোনস) এবং সুদের হারের ফিউচারস।
মুদ্রা ফিউচারস: ইউএস ডলার, ইউরো, জাপানি ইয়েন ইত্যাদি মুদ্রার ফিউচারস।

ফিউচারস ট্রেডিং কৌশল

স্পেকুলেশন: দামের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করা।
হেজিং: ভবিষ্যতের দামের ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
আর্বিট্রেজ: বিভিন্ন মার্কেটে একই সম্পদের দামের পার্থক্য থেকে লাভ বের করা।

অপশনস (Options)

অপশনস হলো একটি চুক্তি যা ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দামে কোনো সম্পদ কেনা (কল অপশন) বা বেচা (পুট অপশন) করার অধিকার দেয়, কিন্তু বাধ্য করে না। অপশনস চুক্তিও সাধারণত এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়।

অপশনসের মূল বৈশিষ্ট্য

অধিকার, বাধ্যবাধকতা নয়: অপশনস ক্রেতাকে অধিকার দেয়, কিন্তু সম্পদটি কিনতে বা বেচতে বাধ্য করে না।
প্রিমিয়াম: অপশনস কেনার জন্য ক্রেতাকে বিক্রেতাকে একটি প্রিমিয়াম দিতে হয়।
মেয়াদ: প্রতিটি অপশনস চুক্তির একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে।
স্ট্রাইক প্রাইস: যে দামে সম্পদ কেনা বা বেচা যেতে পারে, সেটি হলো স্ট্রাইক প্রাইস।

অপশনসের প্রকারভেদ

কল অপশন: ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট দামে সম্পদ কেনার অধিকার দেয়।
পুট অপশন: ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট দামে সম্পদ বেচার অধিকার দেয়।
ইউরোপীয় অপশন: মেয়াদপূর্তির আগে সম্পদ কেনা বা বেচা করা যায় না।
আমেরিকান অপশন: মেয়াদপূর্তির আগে যেকোনো সময় সম্পদ কেনা বা বেচা করা যায়।

অপশনস ট্রেডিং কৌশল

কভারড কল: নিজের কাছে থাকা সম্পদ বিক্রি করার জন্য কল অপশন বিক্রি করা।
প্রোটেক্টিভ পুট: নিজের কাছে থাকা সম্পদের দাম কমে গেলে ক্ষতি থেকে বাঁচতে পুট অপশন কেনা।
স্ট্র্যাডল: একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদযুক্ত কল এবং পুট অপশন উভয়ই কেনা।
স্ট্র্যাঙ্গল: বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইস কিন্তু একই মেয়াদযুক্ত কল এবং পুট অপশন কেনা।

ফিউচারস এবং অপশনসের মধ্যে পার্থক্য

| বৈশিষ্ট্য | ফিউচারস | অপশনস | |---|---|---| | বাধ্যবাধকতা | ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই চুক্তিবদ্ধ | ক্রেতার অধিকার, বিক্রেতার বাধ্যবাধকতা | | প্রিমিয়াম | নেই | আছে | | ঝুঁকি | উচ্চ | সীমিত (ক্রেতার জন্য) | | লাভ | সীমাহীন | সীমিত (বিক্রেতার জন্য) | | ব্যবহার | হেজিং ও স্পেকুলেশন | হেজিং, স্পেকুলেশন ও আয় বৃদ্ধি |

ফিউচারস ট্রেডিং এবং অপশনস ট্রেডিং -এর মধ্যেকার এই পার্থক্যগুলো বিনিয়োগকারীদের তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক উপকরণ নির্বাচন করতে সাহায্য করে।

ফিউচারস এবং অপশনসের সুবিধা ও অসুবিধা

ফিউচারসের সুবিধা

উচ্চ লিকুইডিটি।
কম মার্জিন প্রয়োজন।
হেজিংয়ের সুযোগ।
স্পেকুলেশনের সুযোগ।

ফিউচারসের অসুবিধা

উচ্চ ঝুঁকি।
মার্জিন কলের সম্ভাবনা।
জটিল ট্রেডিং প্রক্রিয়া।

অপশনসের সুবিধা

সীমিত ঝুঁকি (ক্রেতার জন্য)।
বিভিন্ন ট্রেডিং কৌশল ব্যবহারের সুযোগ।
আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা।
হেজিংয়ের সুযোগ।

অপশনসের অসুবিধা

প্রিমিয়াম খরচ।
সময় ক্ষয় (টাইম ডিকে)।
জটিল মূল্য নির্ধারণ মডেল।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

ফিউচারস এবং অপশনস ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিনিয়োগকারীদের উচিত তাদের ঝুঁকি সহনশীলতা এবং আর্থিক লক্ষ্য অনুযায়ী ট্রেডিং কৌশল নির্বাচন করা।

স্টপ-লস অর্ডার: সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করার জন্য স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা উচিত।
ডাইভারসিফিকেশন: পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ যুক্ত করে ঝুঁকি কমানো যায়।
পজিশন সাইজিং: প্রতিটি ট্রেডে বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
মার্জিন ম্যানেজমেন্ট: মার্জিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং মার্জিন কল এড়াতে পর্যাপ্ত তহবিল রাখতে হবে।
বাজার বিশ্লেষণ: টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

ফিউচারস এবং অপশনসের ব্যবহারিক প্রয়োগ

কৃষি শিল্প: কৃষকরা তাদের পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ফিউচারস ব্যবহার করতে পারেন।
অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান: বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিও হেজ করতে এবং ঝুঁকি কমাতে অপশনস ব্যবহার করতে পারেন।
কোম্পানি: কোম্পানিগুলো তাদের কাঁচামালের দামের ঝুঁকি কমাতে ফিউচারস ব্যবহার করতে পারে।
ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী: ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা স্পেকুলেশন এবং আয় বৃদ্ধির জন্য ফিউচারস এবং অপশনস ব্যবহার করতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ

সময় মূল্য (Time Value): অপশনসের দামের একটি অংশ যা মেয়াদপূর্তির সাথে সাথে হ্রাস পায়।
অন্তর্নিহিত সম্পদ (Underlying Asset): যে সম্পদের উপর ভিত্তি করে ফিউচারস বা অপশনস চুক্তি তৈরি হয়।
এক্সপিরেশন ডেট (Expiration Date): অপশনস চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ।
ইন-দ্য-মানি (In-the-Money): কল অপশনের ক্ষেত্রে, যখন অন্তর্নিহিত সম্পদের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের চেয়ে বেশি থাকে। পুট অপশনের ক্ষেত্রে, যখন অন্তর্নিহিত সম্পদের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের চেয়ে কম থাকে।
আউট-অফ-দ্য-মানি (Out-of-the-Money): কল অপশনের ক্ষেত্রে, যখন অন্তর্নিহিত সম্পদের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের চেয়ে কম থাকে। পুট অপশনের ক্ষেত্রে, যখন অন্তর্নিহিত সম্পদের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের চেয়ে বেশি থাকে।
অ্যাট-দ্য-মানি (At-the-Money): যখন অন্তর্নিহিত সম্পদের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের সমান থাকে।

আরও কিছু কৌশল

আয়রন কন্ডোর (Iron Condor): চারটি অপশন ব্যবহার করে একটি নিরপেক্ষ বাজারের পরিস্থিতিতে লাভ করার কৌশল।
বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): তিনটি স্ট্রাইক প্রাইস ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট দামের আশেপাশে লাভ করার কৌশল।
ক্যালেন্ডার স্প্রেড (Calendar Spread): একই স্ট্রাইক প্রাইসের অপশন ব্যবহার করে বিভিন্ন মেয়াদ থেকে লাভ করার কৌশল।

এই কৌশলগুলো অভিজ্ঞ ট্রেডারদের জন্য উপযুক্ত এবং এদের প্রয়োগের আগে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।

উপসংহার

ফিউচারস এবং অপশনস উভয়ই শক্তিশালী আর্থিক উপকরণ, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হতে পারে। তবে, এই উপকরণগুলোর জটিলতা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। উপযুক্ত জ্ঞান, সঠিক কৌশল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফিউচারস এবং অপশনস মার্কেটে সফল হওয়া সম্ভব।

ডেরিভেটিভস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগ আর্থিক বাজার টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন মুভিং এভারেজ আরএসআই (RSI) এমএসিডি (MACD) ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) সময় সিরিজ বিশ্লেষণ পরিসংখ্যানিক আর্বিট্রেজ ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল অপশন গ্রিকস ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটি

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ