প্যারোটেট
প্যারোট (Parrot)
প্যারোট বা টিয়া পাখি Psittaciformes বর্গের অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ৩৯৩টি বিভিন্ন প্রজাতির প্যারোট রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি ছোট আকারের, যেমন পিজিন টিয়া, আবার কিছু প্রজাতি বেশ বড়, যেমন ম্যাকাও। প্যারোটগুলি তাদের উজ্জ্বল রং, শক্তিশালী বাঁকানো ঠোঁট এবং কথা বলার ক্ষমতা নকল করার জন্য পরিচিত। এই পাখিগুলো মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বসবাস করে। এদের খাদ্য তালিকায় বীজ, ফল, কন্দ এবং পোকামাকড় অন্তর্ভুক্ত।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য
প্যারোটদের সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল তাদের শক্তিশালী, বাঁকানো ঠোঁট। এই ঠোঁট তাদের বীজ ভাঙতে, ফল খেতে এবং গাছে চড়তে সাহায্য করে। এদের জিভ মাংসল এবং নমনীয়, যা খাবার ধরতে সহায়ক। প্যারোটদের পায়ে চারটি আঙুল থাকে, যার মধ্যে দুটি সামনের দিকে এবং দুটি পিছনের দিকে থাকে। এই গঠন তাদের শাখা-প্রশাখা ধরতে এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সুবিধা দেয়।
প্যারোটদের পালক সাধারণত উজ্জ্বল রঙের হয়, যেমন লাল, নীল, সবুজ, হলুদ এবং ধূসর। কিছু প্রজাতির প্যারোটের পালকে একাধিক রং দেখা যায়। এদের পালকগুলি ঘন এবং জলরোধী, যা তাদের পরিবেশের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে সাহায্য করে।
| বৈশিষ্ট্য | বিবরণ | ||||||||
| ঠোঁট | শক্তিশালী, বাঁকানো, বীজ ভাঙার জন্য উপযুক্ত | পা | চারটি আঙুল (২টি সামনে, ২টি পিছনে) | পালক | উজ্জ্বল রঙের, ঘন এবং জলরোধী | আকার | প্রজাতিভেদে ভিন্ন (ছোট থেকে বড়) | গড় আয়ু | প্রজাতিভেদে ভিন্ন (১৫-৮০ বছর) |
আবাসস্থল এবং বিতরণ
প্যারোট মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বসবাস করে। এদের আবাসস্থল আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। বিভিন্ন প্রজাতির প্যারোট বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে বসবাস করতে পছন্দ করে। কিছু প্রজাতি ঘন জঙ্গলে বাস করে, আবার কিছু প্রজাতি খোলা তৃণভূমিতে বা পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করে।
- অস্ট্রেলিয়া-তে বিভিন্ন প্রজাতির প্যারোট দেখা যায়, যেমন ককাটেল এবং বাডজিগার।
- আফ্রিকাতে আফ্রিকান গ্রে প্যারোট অন্যতম পরিচিত প্রজাতি।
- দক্ষিণ আমেরিকা ম্যাকাও এবং অ্যামাজন প্যারোটের আবাসস্থল।
- এশিয়াতে রেইনবো লোরিকেট এবং অন্যান্য ছোট আকারের প্যারোট দেখা যায়।
আচরণ এবং জীবনধারা
প্যারোটরা সাধারণত সামাজিক পাখি এবং তারা দলবদ্ধভাবে বসবাস করতে পছন্দ করে। বন্য পরিবেশে, প্যারোটরা বিশাল ঝাঁক তৈরি করে যা কয়েকশ পাখি পর্যন্ত হতে পারে। এরা দিনের বেলা সক্রিয় থাকে এবং খাবার খোঁজার জন্য উড়ে বেড়ায়।
প্যারোটরা তাদের বুদ্ধিমত্তার জন্য পরিচিত। এরা সহজেই মানুষের কথা নকল করতে পারে এবং বিভিন্ন কৌশল শিখতে সক্ষম। এদের মস্তিষ্কের গঠন অন্যান্য পাখির তুলনায় জটিল, যা তাদের শেখার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
প্যারোটরা সাধারণত একগামী হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সঙ্গীর সাথে জীবনভর সম্পর্ক বজায় রাখে। স্ত্রী প্যারোট ডিম পাড়ে এবং পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ই ডিমে তা দেয় ও বাচ্চাদের লালন-পালন করে।
খাদ্য এবং পুষ্টি
প্যারোটদের খাদ্যতালিকা মূলত বীজ, ফল, কন্দ এবং পোকামাকড়ের উপর নির্ভরশীল। কিছু প্রজাতি ফুলের মধু এবং রসও খায়। বন্য পরিবেশে, এরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খুঁজে নেয়, কিন্তু পোষা প্যারোটদের সুষম খাদ্য সরবরাহ করা জরুরি।
প্যারোটদের খাদ্যে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের সঠিক পরিমাণ থাকতে হয়। ভিটামিন এ, ডি৩, ই এবং বি কমপ্লেক্স তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
| খাদ্য উপাদান | উপকারিতা | ||||||||
| বীজ | শক্তি সরবরাহ করে | ফল | ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ | কন্দ | ফাইবার সরবরাহ করে | পোকামাকড় | প্রোটিনের উৎস | মধু | প্রাকৃতিক মিষ্টি ও শক্তি সরবরাহ করে |
প্রজনন
প্যারোটরা সাধারণত বসন্তকালে প্রজনন করে। স্ত্রী প্যারোট গাছের কোটরে বা পাথরের ফাটলে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা প্রজাতিভেদে ভিন্ন হয়, সাধারণত ২-৮টি ডিম পাড়া হয়। ডিমগুলি প্রায় ১৮-৩০ দিনের মধ্যে ফোটে।
ডিম ফোটার পর, বাচ্চা প্যারোটরা সম্পূর্ণভাবে তাদের পিতামাতার উপর নির্ভরশীল থাকে। বাবা-মা তাদের খাওয়ানো এবং রক্ষা করার দায়িত্ব নেয়। বাচ্চা প্যারোটরা প্রায় ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে উড়তে শেখে এবং ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।
যোগাযোগ
প্যারোটরা বিভিন্ন ধরনের শব্দ এবং অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। এরা চিৎকার, শিষ, কিচিরমিচির এবং অন্যান্য শব্দ ব্যবহার করে একে অপরের সাথে বার্তা আদান প্রদান করে। কিছু প্রজাতি মানুষের কথা এবং অন্যান্য শব্দ নকল করতে পারদর্শী।
প্যারোটরা তাদের পালকের রং এবং অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও নিজেদের আবেগ প্রকাশ করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন তারা খুশি হয়, তখন তাদের পালক ফুলিয়ে তোলে এবং মাথা নাড়ায়।
সংরক্ষণ অবস্থা
প্যারোটের অনেক প্রজাতি বর্তমানে বিপন্ন বা সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এদের সংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ হল আবাসস্থল ধ্বংস, অবৈধ শিকার এবং পোষা পাখির চাহিদা। বনভূমি ধ্বংসের কারণে প্যারোটদের খাবার এবং বাসস্থানের অভাব দেখা দিয়েছে।
প্যারোটদের সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে:
- আবাসস্থল রক্ষা করা এবং পুনরুদ্ধার করা।
- অবৈধ শিকার বন্ধ করা।
- প্যারোটের প্রজনন এবং লালন-পালন কর্মসূচি পরিচালনা করা।
- জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
IUCN (International Union for Conservation of Nature) প্যারোটের বিভিন্ন প্রজাতির সংরক্ষণের অবস্থা মূল্যায়ন করে এবং সংরক্ষণের জন্য সুপারিশ প্রদান করে।
প্যারোট এবং মানুষ
প্যারোটরা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের কাছে জনপ্রিয় পোষা প্রাণী। এদের সুন্দর রং, আকর্ষণীয় আচরণ এবং কথা বলার ক্ষমতা নকল করার திறন মানুষকে আকৃষ্ট করে। তবে, প্যারোটকে পোষা করার আগে তাদের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা জরুরি।
প্যারোটদের একটি বড় খাঁচা, প্রচুর খেলনা, এবং নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগের প্রয়োজন। এদের সুষম খাদ্য সরবরাহ করা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করাও জরুরি। অবহেলা করলে এরা মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারে।
প্যারোটদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব, এবং তারা বিভিন্ন কৌশল শিখতে সক্ষম। এদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ধৈর্য এবং ইতিবাচক reinforcement পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
বিভিন্ন প্রজাতির প্যারোট
- **ম্যাকাও (Macaw):** সবচেয়ে বড় এবং উজ্জ্বল রঙের প্যারোট প্রজাতি। এদের মধ্যে স্ক্যারলেট ম্যাকাও, ব্লু-এন্ড-গোল্ড ম্যাকাও উল্লেখযোগ্য।
- **ককাটেল (Cockatiel):** ছোট আকারের প্যারোট, যা অস্ট্রেলিয়াতে পাওয়া যায়। এরা শান্ত স্বভাবের এবং সহজেই পোষ মানে।
- **বাডজিগার (Budgerigar):** বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পোষা পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এরা ছোট এবং বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে।
- **আফ্রিকান গ্রে প্যারোট (African Grey Parrot):** অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং কথা বলার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রজাতি।
- **অ্যামাজন প্যারোট (Amazon Parrot):** দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসকারী এই প্রজাতিটি তাদের উজ্জ্বল সবুজ পালকের জন্য পরিচিত।
- **রেইনবো লোরিকেট (Rainbow Lorikeet):** অস্ট্রেলিয়ার একটি সুন্দর এবং রঙিন প্যারোট প্রজাতি।
| প্রজাতি | বাসস্থান | বৈশিষ্ট্য | |||||||||||||||
| ম্যাকাও | দক্ষিণ আমেরিকা | বড়, উজ্জ্বল রঙের | ককাটেল | অস্ট্রেলিয়া | ছোট, শান্ত স্বভাবের | বাডজিগার | অস্ট্রেলিয়া | ছোট, বিভিন্ন রঙের | আফ্রিকান গ্রে প্যারোট | আফ্রিকা | বুদ্ধিমান, কথা বলায় পারদর্শী | অ্যামাজন প্যারোট | দক্ষিণ আমেরিকা | সবুজ পালকের | রেইনবো লোরিকেট | অস্ট্রেলিয়া | সুন্দর ও রঙিন |
প্যারোটের স্বাস্থ্য সমস্যা
প্যারোটরা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। এদের মধ্যে কিছু সাধারণ সমস্যা হল:
- **Psittacosis:** একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে।
- **Feather plucking:** পালক তোলার অভ্যাস, যা মানসিক চাপ বা পুষ্টির অভাবের কারণে হতে পারে।
- **Beak and nail overgrowth:** ঠোঁট এবং নখের অতিরিক্ত বৃদ্ধি, যা নিয়মিত ছাঁটাই করা প্রয়োজন।
- **Aspergillosis:** একটি ছত্রাক সংক্রমণ, যা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে।
প্যারোটের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিয়মিত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার
প্যারোট একটি আকর্ষণীয় এবং বুদ্ধিমান পাখি। এদের সৌন্দর্য, সামাজিক আচরণ এবং কথা বলার ক্ষমতা মানুষকে মুগ্ধ করে। তবে, প্যারোটকে পোষা করার আগে তাদের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা জরুরি। এদের সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
পশুচিকিৎসা পাখি সংরক্ষণ জীববিজ্ঞান আবাসস্থল IUCN বন্যপ্রাণী পোষা প্রাণী প্যারোট প্রজনন প্যারোটের খাদ্য প্যারোটের আচরণ ঠোঁট পালক সামাজিক পাখি টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগ অর্থনীতি পরিবেশ জীববৈচিত্র্য
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
