পূর্ণ কর্মসংস্থান

ভূমিকা

পূর্ণ কর্মসংস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ধারণা। এটি এমন একটি পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে শ্রমশক্তির সবাই কাজ করতে ইচ্ছুক এবং সক্ষম, এবং তাদের জন্য কাজের সুযোগ বিদ্যমান। এর অর্থ এই নয় যে বেকারত্ব একেবারে শূন্য, তবে বেকারত্বের হার একটি স্বাভাবিক স্তরে থাকে, যা সাধারণত অর্থনীতির কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের কারণে হয়ে থাকে। এই নিবন্ধে, পূর্ণ কর্মসংস্থানের ধারণা, এর তাৎপর্য, পরিমাপ, প্রকারভেদ, এবং অর্জনের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

পূর্ণ কর্মসংস্থান কী?

পূর্ণ কর্মসংস্থান মানে এই নয় যে দেশের সকল নাগরিকের চাকরি আছে। এর অর্থ হলো, বাজারে উপলব্ধ কাজের সুযোগের সংখ্যা কাজের সন্ধানে থাকা মানুষের সংখ্যার সমান। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রায় ৪-৫% বেকারত্বের হার স্বাভাবিক। এই বেকারত্ব সাধারণত স্বেচ্ছায় চাকরি পরিবর্তন করা, নতুন কর্মীর সন্ধান, অথবা শ্রমিকদের দক্ষতা এবং কাজের সুযোগের মধ্যে অসামঞ্জস্যের কারণে হয়ে থাকে। এই হারকে স্বাভাবিক বেকারত্ব বলা হয়।

পূর্ণ কর্মসংস্থান অর্থনীতির একটি আদর্শ অবস্থা। বাস্তবে, এটি অর্জন করা কঠিন। কারণ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সংকট, চাহিদা হ্রাস, বা সরবরাহ সমস্যার কারণে কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পূর্ণ কর্মসংস্থানের তাৎপর্য

পূর্ণ কর্মসংস্থানের তাৎপর্য অনেক। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য আলোচনা করা হলো:

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: পূর্ণ কর্মসংস্থান মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি করে। যখন বেশি সংখ্যক মানুষ কাজ করে, তখন অর্থনীতির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।
জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: মানুষের আয় বৃদ্ধি পেলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
সামাজিক স্থিতিশীলতা: কর্মসংস্থান বাড়লে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। বেকারত্ব হতাশা ও অপরাধ প্রবণতা বাড়াতে পারে।
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি: বেশি সংখ্যক মানুষ আয়কর দিলে সরকারের রাজস্ব বাড়ে, যা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যায়।
দারিদ্র্য হ্রাস: কর্মসংস্থান দারিদ্র্য কমাতে সহায়ক।

পূর্ণ কর্মসংস্থান পরিমাপ

পূর্ণ কর্মসংস্থান পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বেকারত্বের হার। বেকারত্বের হার হলো শ্রমশক্তিতে থাকা কিন্তু কাজ না করা মানুষের শতকরা হার।

বেকারত্বের হারের প্রকারভেদ
প্রকার	বিবরণ
ঘর্ষণজনিত বেকারত্ব	সাময়িকভাবে চাকরি পরিবর্তন বা নতুন চাকরি খোঁজার কারণে সৃষ্ট বেকারত্ব।
কাঠামোগত বেকারত্ব	অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বেকারত্ব, যেখানে শ্রমিকদের দক্ষতা চাহিদার সাথে মেলে না।
চক্রীয় বেকারত্ব	অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সৃষ্ট বেকারত্ব।
ঋতুভিত্তিক বেকারত্ব	নির্দিষ্ট সময়ে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট বেকারত্ব।

এছাড়াও, কর্মসংস্থান হার, শ্রমশক্তি অংশগ্রহণ হার এবং চাকরির শূন্যপদ-এর মতো সূচকগুলিও ব্যবহার করা হয়।

পূর্ণ কর্মসংস্থানের প্রকারভেদ

পূর্ণ কর্মসংস্থানের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:

স্বেচ্ছাসেবী পূর্ণ কর্মসংস্থান: এই ক্ষেত্রে, শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় তাদের পছন্দের কাজ বেছে নেয় এবং বেকারত্বের হার স্বাভাবিক থাকে।
অনিচ্ছাকৃত পূর্ণ কর্মসংস্থান: এই ক্ষেত্রে, শ্রমিকরা কাজ করতে ইচ্ছুক কিন্তু উপযুক্ত কাজ খুঁজে পায় না। এটি অর্থনীতির দুর্বলতার কারণে হতে পারে।
গুণগত পূর্ণ কর্মসংস্থান: এখানে, শ্রমিকরা তাদের দক্ষতা এবং যোগ্যতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কাজ পায়।
সংখ্যাগত পূর্ণ কর্মসংস্থান: এই ক্ষেত্রে, সকলের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়, কিন্তু কাজের গুণগত মান সবসময় ভালো নাও হতে পারে।

পূর্ণ কর্মসংস্থান অর্জনের উপায়

পূর্ণ কর্মসংস্থান অর্জন করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হয়। নিচে কিছু উপায় আলোচনা করা হলো:

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। দক্ষতা উন্নয়ন কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায়।
বিনিয়োগ বৃদ্ধি: নতুন শিল্প স্থাপন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
চাহিদা বৃদ্ধি: মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়ে এবং উৎপাদন বাড়ে।
অবকাঠামো উন্নয়ন: রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে, যা ব্যবসার পরিবেশকে সহজ করে।
নীতি সহায়তা: সরকার ব্যবসা-বান্ধব নীতি গ্রহণ করবে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহিত করবে। শিল্পনীতি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উন্নয়ন: এসএমই খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্যতম উৎস। এই খাতকে সহায়তা করার জন্য ঋণ, প্রশিক্ষণ এবং বাজার সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।
কর্মসংস্থান বান্ধব প্রযুক্তি: এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে যা কর্মসংস্থান হরণ করে না, বরং নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং কর্মসংস্থান

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক উপকরণ। যদিও এটি কিছু মানুষের জন্য আয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারে, তবে এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে সরাসরি অবদান রাখে না। কিছু ব্রোকারেজ ফার্ম এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্কিত কাজ থাকতে পারে, তবে এই সংখ্যা সাধারণত খুব বেশি নয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের কিছু কৌশল:

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।

অর্থনৈতিক নীতি এবং কর্মসংস্থান

বিভিন্ন অর্থনৈতিক নীতি কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব ফেলে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নীতি আলোচনা করা হলো:

রাজকোষীয় নীতি: সরকারের ব্যয় এবং করের মাধ্যমে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার নীতি। সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করলে কর্মসংস্থান বাড়ে।
মুদ্রানীতি: কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার এবং অর্থের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। সুদের হার কম হলে বিনিয়োগ বাড়ে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
বাণিজ্য নীতি: আমদানি ও রপ্তানি নীতি কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব ফেলে। রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন বাড়ে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
শ্রম আইন: শ্রমিকদের অধিকার এবং কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শ্রম আইন প্রণয়ন করা হয়। যুগোপযোগী শ্রম আইন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হতে পারে।

ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান এবং প্রযুক্তি

প্রযুক্তি ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং, এবং অটোমেশন-এর কারণে কিছু কাজ বিলুপ্ত হতে পারে, তবে নতুন কাজের সুযোগও সৃষ্টি হবে। ভবিষ্যতের জন্য কর্মীদের নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যাতে তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

ভলিউম বিশ্লেষণের কৌশল:

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের সূচক:

উপসংহার

পূর্ণ কর্মসংস্থান একটি অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। যদিও এটি অর্জন করা কঠিন, তবে সঠিক নীতি এবং পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এবং বিশ্ব অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বজায় রাখতে হলে, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিনিয়োগ, এবং উদ্ভাবনের উপর জোর দিতে হবে।

অর্থনীতি বেকারত্ব শ্রমবাজার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতি রাজকোষীয় নীতি মুদ্রানীতি শিল্পনীতি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দক্ষতা উন্নয়ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মেশিন লার্নিং অটোমেশন মোট দেশজ উৎপাদন স্বাভাবিক বেকারত্ব কর্মসংস্থান হার শ্রমশক্তি অংশগ্রহণ হার চাকরির শূন্যপদ বাইনারি অপশন ট্রেডিং ট্রেন্ড অনুসরণ করা সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর মোমেন্টাম ট্রেডিং পিনি বার কৌশল বোলিঙ্গার ব্যান্ড অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) মানি ফ্লো ইনডেক্স (MFI) চাইকিন ভলিউম অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন মুভিং এভারেজ রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI) ম্যাকডি (MACD) ফিFibonacci Retracement স্টোকাস্টিক অসিলেটর

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ