পর্তুগিজ ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন

পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা

পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা (Portuguese Development Cooperation) পর্তুগালের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পর্তুগাল তার ঐতিহাসিক সম্পর্ক, ভাষাগত বন্ধন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে এই সহযোগিতা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই নিবন্ধে পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতার ইতিহাস, নীতি, অগ্রাধিকার ক্ষেত্র, কৌশল এবং কার্যকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ভূমিকা পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা মূলত উন্নয়নশীল দেশ এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। এটি পর্তুগালের পররাষ্ট্রনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে, দারিদ্র্য হ্রাস করতে এবং মানবাধিকারের উন্নতিতে অবদান রাখে।

ইতিহাস পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতার ইতিহাস ঔপনিবেশিক সময়ের পর থেকে শুরু হলেও, এর আধুনিক রূপটি ১৯৯০-এর দশকে বিশেষভাবে বিকশিত হয়েছে। পূর্বে, পর্তুগালের সহযোগিতা মূলত তার প্রাক্তন উপনিবেশগুলির (যেমন - আফ্রিকার অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, গিনি-বিসাউ, ক্যাবো ভার্দে, সাও টোমে ও প্রিন্সিপে, এবং পূর্ব তিমুর) মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে, বর্তমানে পর্তুগাল অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথেও সহযোগিতা করছে।

নীতির ভিত্তি পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা নিম্নলিখিত নীতিগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি:

• মালিকানা: সহযোগী দেশগুলির নিজস্ব উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং অগ্রাধিকারগুলিকে সম্মান করা এবং তাদের নেতৃত্বকে সমর্থন করা।
• সমতা: সহযোগী দেশগুলির সাথে পারস্পরিক সম্মান ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন করা।
• কার্যকারিতা: সহযোগিতার ফলাফল পরিমাপযোগ্য এবং টেকসই হওয়া।
• স্বচ্ছতা: সহযোগিতা কার্যক্রমের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখা।
• জবাবদিহিতা: সহযোগিতার জন্য দায়ী থাকা এবং নিয়মিত মূল্যায়ন করা।

অগ্রাধিকার ক্ষেত্র পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে অগ্রাধিকার দেয়:

• শিক্ষা: শিক্ষার প্রসার এবং গুণগত মান উন্নয়ন, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের উপর জোর দেওয়া হয়।
• স্বাস্থ্য: স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ, এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি করা।
• কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা: কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গ্রামীণ উন্নয়নে সহায়তা করা।
• জল ও স্যানিটেশন: পরিষ্কার জল সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি করা।
• সুশাসন ও মানবাধিকার: গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা, মানবাধিকার রক্ষা করা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
• পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন: পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা।
• অর্থনৈতিক উন্নয়ন: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME) এর উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বাণিজ্য প্রসারে সহায়তা করা।

কৌশল পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে তার লক্ষ্য অর্জন করে:

• দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা: পর্তুগাল সরাসরি সহযোগী দেশগুলির সাথে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।
• বহুপাক্ষিক সহযোগিতা: পর্তুগাল জাতিসংঘ (UN), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU), এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
• অ-সরকারি সংস্থা (NGO) এর সাথে সহযোগিতা: পর্তুগিজ সরকার বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অ-সরকারি সংস্থার সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে।
• ফিনান্সিয়াল সহযোগিতা: সহযোগী দেশগুলিকে ঋণ, অনুদান এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হয়।
• দক্ষতা বিনিময়: পর্তুগিজ বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদদের মাধ্যমে সহযোগী দেশগুলির কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন করা হয়।

কার্যকারিতা মূল্যায়ন পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতার কার্যকারিতা নিয়মিতভাবে মূল্যায়ন করা হয়। এই মূল্যায়নের মাধ্যমে কার্যক্রমের দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয় এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়:

• প্রভাব: সহযোগিতা কার্যক্রমের ফলে সহযোগী দেশগুলির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কতটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
• দক্ষতা: কার্যক্রমগুলি কতটা দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়েছে এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার হয়েছে কিনা।
• টেকসইতা: কার্যক্রমগুলির ফলাফল দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে সক্ষম কিনা।
• প্রাসঙ্গিকতা: কার্যক্রমগুলি সহযোগী দেশগুলির প্রয়োজন এবং অগ্রাধিকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা।

গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতার প্রধান অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে:

• সহযোগী দেশগুলির সরকার: সহযোগিতা কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহযোগী দেশগুলির সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• জাতিসংঘের সংস্থা: ইউএনডিপি, ইউএনআইসিইএফ, ডব্লিউএইচও এর মতো সংস্থাগুলির সাথে পর্তুগাল যৌথভাবে কাজ করে।
• ইউরোপীয় ইউনিয়ন: পর্তুগাল ইউরোপীয় ইউনিয়নের উন্নয়ন সহযোগিতা নীতি বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
• অ-সরকারি সংস্থা: বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অ-সরকারি সংস্থা পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
• পর্তুগিজ সংস্থা: পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা (Agência Portuguesa para o Desenvolvimento - APD) এই কার্যক্রমগুলির সমন্বয় করে।

পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতার চ্যালেঞ্জ পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়:

• সীমিত সম্পদ: পর্তুগালের অর্থনীতির আকার তুলনামূলকভাবে ছোট হওয়ায় উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য বরাদ্দকৃত সম্পদ সীমিত।
• রাজনৈতিক অস্থিরতা: সহযোগী দেশগুলিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সহযোগিতা কার্যক্রমের বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
• দুর্বল অবকাঠামো: অনেক উন্নয়নশীল দেশে দুর্বল অবকাঠামো (যেমন - রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহ, যোগাযোগ ব্যবস্থা) কার্যক্রমের অগ্রগতিকে ধীর করে দেয়।
• দুর্নীতি: সহযোগী দেশগুলিতে দুর্নীতির কারণে সহায়তার অর্থ অপচয় হতে পারে এবং কার্যক্রমের গুণগত মান হ্রাস পেতে পারে।
• জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নয়ন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও কার্যকর এবং টেকসই করার জন্য নিম্নলিখিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে:

• সহযোগিতার পরিধি বৃদ্ধি: নতুন উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে সহযোগিতা সম্পর্ক স্থাপন করা।
• উচ্চ অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ বাড়ানো।
• প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ব্যবহার বৃদ্ধি: উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও আধুনিক ও কার্যকরী করতে নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী ধারণা ব্যবহার করা।
• বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: উন্নয়ন সহযোগিতায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা।
• দক্ষতা উন্নয়ন: পর্তুগিজ উন্নয়ন কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং সহযোগী দেশগুলির কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা।
• মূল্যায়ন ব্যবস্থার উন্নতি: কার্যক্রমের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য আরও উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করা।

উপসংহার পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা উন্নয়নশীল দেশগুলির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্তুগাল তার সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি সক্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়নের মাধ্যমে, পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতা আরও কার্যকর এবং টেকসই হবে বলে আশা করা যায়।

আরও জানতে:

• দারিদ্র্য বিমোচন
• টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs)
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
• বৈদেশিক সাহায্য
• মানব উন্নয়ন
• জাতিসংঘেরMillennium Development Goals
• আফ্রিকার উন্নয়ন
• ইউরোপীয় ইউনিয়নের উন্নয়ন নীতি
• বিশ্ব ব্যাংক
• আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)
• রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
• সুশাসন
• দুর্নীতি দমন
• জলবায়ু পরিবর্তন
• পরিবেশ সংরক্ষণ
• শিক্ষার মান উন্নয়ন
• স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন
• কৃষি অর্থনীতি
• খাদ্য নিরাপত্তা
• জল সরবরাহ ও স্যানিটেশন

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য:

• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
• মুভিং এভারেজ
• আরএসআই (Relative Strength Index)
• এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence)
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
• ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP)
• অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV)
• স্টোকাস্টিক অসিলিটর
• বোলিঙ্গার ব্যান্ডস
• চার্ট প্যাটার্ন
• সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল
• ট্রেন্ড লাইন
• গ্যাপ অ্যানালাইসিস
• মার্কেট সেন্টিমেন্ট
• ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

পর্তুগিজ উন্নয়ন সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্র

ক্ষেত্র	বিবরণ
শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, এবং শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ। |
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ। |
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, এবং কৃষকদের সহায়তা। |
নিরাপদ জল সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন। |
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা। |
পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা। |

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ