পতঞ্জলি যোগ সূত্র

From binaryoption
Jump to navigation Jump to search
Баннер1

পতঞ্জলি যোগ সূত্র

ভূমিকা

পতঞ্জলি যোগ সূত্র হলো যোগ দর্শন-এর ভিত্তি। এটি খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দে পতঞ্জলি নামক একজন ঋষি দ্বারা সংকলিত হয়। এই সূত্রগুলি যোগ সাধনার একটি সুসংবদ্ধ কাঠামো প্রদান করে, যা মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে সমadhi বা পরম মুক্তি লাভের পথ দেখায়। এই গ্রন্থে যোগের আটটি অঙ্গ (অষ্টাঙ্গ যোগ) নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা চিত্ত-এর বিক্ষিপ্ততা দূর করে পুরুষপ্রকৃতি-এর মধ্যে পার্থক্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।

যোগ সূত্রের প্রেক্ষাপট

পতঞ্জলি যোগ সূত্র লেখার আগে যোগ দর্শন বিভিন্ন উপনিষদ, সাংখ্য দর্শন এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী শিক্ষায় বিদ্যমান ছিল। পতঞ্জলি এইগুলিকে একত্রিত করে একটি সুসংহত রূপ দেন। এই সূত্রগুলি শুধুমাত্র একটি আধ্যাত্মিক পথনির্দেশিকা নয়, এটি মানুষের মন ও শরীরের গঠন এবং তাদের কার্যকারিতা সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

সূত্রের গঠন

পতঞ্জলি যোগ সূত্র চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত:

  • সমাধি পাদ : এই অধ্যায়ে যোগের লক্ষ্য, চিত্ত-এর সংজ্ঞা এবং সমadhi লাভের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
  • সাধনা পাদ : এখানে যোগ সাধনার উপায়, যেমন – ধ্যান, প্রাণায়াম, এবং তপস্যা ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে।
  • vibration পাদ : এই অধ্যায়ে যোগিক ক্ষমতার (সিদ্ধি) বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা সাধনার ফলে অর্জিত হতে পারে।
  • কাইবল্য পাদ : চূড়ান্ত মুক্তি বা কাইবল্য লাভের স্বরূপ এবং সেই অবস্থায় পুরুষ-এর স্বরূপ কেমন হয়, তা এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

অষ্টাঙ্গ যোগ

পতঞ্জলি যোগ সূত্রের মূল বিষয় হলো অষ্টাঙ্গ যোগ। এই আটটি অঙ্গ হলো:

অষ্টাঙ্গ যোগ
ক্রমিক নং অঙ্গের নাম বিবরণ
1 যম নৈতিক বিধি-নিষেধ (যেমন - অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য, অপরিগ్రహ)
2 নিয়ম ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন - শৌচ, সন্তোষ, তাপস, স্বাধ্যায়, ঈশ্বরপ্রাণিধান)
3 আসন যোগিক поза (শারীরিক স্থিতিশীলতা ও মানসিক একাগ্রতা)
4 প্রাণায়াম শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ (প্রাণশক্তির অনুশীলন)
5 প্রত্যাহার ইন্দ্রিয় সংযম (বাহ্যিক বস্তুর প্রতি আকর্ষণ হ্রাস)
6 ধারণা মনোযোগ একাগ্রতা (মনের স্থিরতা)
7 ধ্যান ধ্যানের মাধ্যমে গভীর একাগ্রতা (বস্তুর উপর মনের নিরন্তর অভিনিবেশ)
8 সমadhi পরম মুক্তি (চিত্তের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি এবং পরমাত্মার সাথে মিলন)

যম ও নিয়ম

যম হলো সামাজিক আচরণবিধি, যা অন্যদের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধকে নির্দেশ করে। নিয়ম হলো ব্যক্তিগত অনুশীলন, যা আমাদের নিজেদের প্রতি দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে। এই দুটি হলো যোগের ভিত্তি।

আসন

আসন শুধুমাত্র শারীরিক ব্যায়াম নয়, এটি মেরুদণ্ড ও শরীরের অন্যান্য অংশের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করে, যা প্রাণশক্তির প্রবাহকে অবাধ করে এবং মানসিক স্থিরতা বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন ধরনের আসন রয়েছে, যা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক চাহিদার জন্য উপযুক্ত।

প্রাণায়াম

প্রাণায়াম হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ। এটি চিত্তকে শান্ত করে, মানসিক চাপ কমায় এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন প্রকার প্রাণায়াম যেমন – অনুলোম বিলোম, ভस्त्रিকা, কপালভাতি ইত্যাদি রয়েছে।

প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমadhi

প্রত্যাহার হলো ইন্দ্রিয়গুলোকে বাহ্যিক বস্তু থেকে সরিয়ে অন্তর্মুখী করা। ধারণা হলো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোযোগ স্থির করার ক্ষমতা। ধ্যান হলো সেই মনোযোগকে আরও গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন করা। এবং সমadhi হলো ধ্যানের চূড়ান্ত পরিণতি, যেখানে চিত্ত সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং সত্ত্ব প্রকৃতির প্রকাশ ঘটে।

চিত্ত ও চিত্তের বৃত্তিসমূহ

পতঞ্জলি যোগ সূত্রে চিত্তকে মনের ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে বৃত্তি বা মানসিক তরঙ্গগুলো উৎপন্ন হয়। এই বৃত্তিগুলোই আমাদের দুঃখ ও কষ্টের কারণ। যোগ সাধনার মাধ্যমে এই বৃত্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে চিত্তকে শান্ত করা যায়।

পুরুষ ও প্রকৃতি

পতঞ্জলি যোগ সূত্র অনুসারে, পুরুষ হলো বিশুদ্ধ চেতনা বা আত্মা, যা শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয়। প্রকৃতি হলো বস্তুগত জগৎ, যা পরিবর্তনশীল ও ক্ষণস্থায়ী। যোগ সাধনার উদ্দেশ্য হলো পুরুষকে প্রকৃতি থেকে আলাদা করা এবং কাইবল্য লাভ করা।

যোগিক ক্ষমতা (সিদ্ধি)

যোগ সাধনার মাধ্যমে অর্জিত অলৌকিক ক্ষমতাগুলোকে সিদ্ধি বলা হয়। এই সিদ্ধিগুলো যোগ পথের অন্তরায়ও হতে পারে, তাই যোগীরা সাধারণত এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হন না।

কাইবল্য

কাইবল্য হলো যোগের চূড়ান্ত লক্ষ্য, যা পুরুষ (আত্মা)-এর প্রকৃতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি লাভ। এই অবস্থায় যোগী পরম শান্তি ও আনন্দ অনুভব করেন।

আধুনিক জীবনে যোগ সূত্রের প্রাসঙ্গিকতা

আজকের দ্রুতগতির জীবনে যোগ আমাদের মানসিকশারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পতঞ্জলি যোগ সূত্র-এর শিক্ষাগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করে আমরা মানসিক চাপ কমাতে, মনোযোগ বাড়াতে এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারি। যোগ শুধুমাত্র একটি শারীরিক অনুশীলন নয়, এটি একটি জীবনধারা যা আমাদের আত্ম-উপলব্ধির পথে পরিচালিত করে।

যোগ ও অন্যান্য দর্শন

যোগ দর্শন অন্যান্য ভারতীয় দর্শনের সাথে সম্পর্কিত। বিশেষ করে সাংখ্য দর্শনের সাথে এর গভীর যোগ রয়েছে। সাংখ্য দর্শন জগৎ ও জীবের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে, যেখানে যোগ দর্শন সেই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে চিত্ত-কে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বাতলে দেয়।

যোগের প্রকারভেদ

যোগ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যেমন – কর্ম যোগ, জ্ঞান যোগ, ভক্তি যোগ এবং রাজ যোগ। পতঞ্জলি যোগ সূত্র মূলত রাজ যোগ নিয়ে আলোচনা করে, যা ধ্যানসমadhi-এর মাধ্যমে মুক্তি লাভের পথ দেখায়।

উপসংহার

পতঞ্জলি যোগ সূত্র একটি অমূল্য গ্রন্থ, যা মানব জীবনের উদ্দেশ্য ও মুক্তির পথ দেখায়। এই সূত্রের শিক্ষাগুলো অনুসরণ করে আমরা আমাদের মানসিক, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করতে পারি এবং একটি সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারি।

আরও জানতে সহায়ক লিঙ্ক

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

Баннер