ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি

নেশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি

পরিচিতি

নেশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি (NIST) হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের একটি সংস্থা। এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মান উন্নয়ন এবং পরিমাপের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। NIST এর প্রধান কাজ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়তা করা। এটি ১৮০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর সদর দপ্তর মেরিল্যান্ডের গাথার্সবার্গে অবস্থিত।

ইতিহাস

NIST এর যাত্রা শুরু হয় ১৮০৭ সালে, যখন এটিকে "অফিস অফ স্ট্যান্ডার্ডস" নামে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। শুরুতে এর কাজ ছিল বিভিন্ন ওজনের এবং পরিমাপের স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা, যা বাণিজ্য এবং বিজ্ঞানকে সহজতর করতো। সময়ের সাথে সাথে এই প্রতিষ্ঠানের পরিধি বাড়তে থাকে এবং এটি আধুনিক NIST-এ পরিণত হয়। বিংশ শতাব্দীতে, NIST দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে রাডার এবং অন্যান্য সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়নে। এরপর থেকে, NIST ক্রমাগতভাবে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং স্ট্যান্ডার্ড তৈরিতে অবদান রেখে আসছে।

NIST-এর কার্যাবলী

NIST বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলী সম্পাদন করে, যা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যক। এর প্রধান কার্যাবলীগুলো হলো:

মান উন্নয়ন ও পরিমাপ : NIST বিভিন্ন ভৌত, রাসায়নিক এবং অন্যান্য পরিমাপের মান তৈরি করে এবং বজায় রাখে। এই মানগুলো বিজ্ঞান ও শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। পরিমাপের একক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
গবেষণা ও উন্নয়ন : NIST বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে, যার মধ্যে রয়েছে ন্যানোটেকনোলজি, তথ্য প্রযুক্তি, উন্নত উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং পরিবেশ সুরক্ষার প্রযুক্তি। ন্যানোপ্রযুক্তি এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে পারেন।
স্ট্যান্ডার্ড ও গাইডলাইন তৈরি : NIST বিভিন্ন শিল্প এবং প্রযুক্তির জন্য স্ট্যান্ডার্ড ও গাইডলাইন তৈরি করে, যা পণ্যের গুণগত মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। গুণমান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন।
প্রযুক্তিগত সহায়তা : NIST অন্যান্য সরকারি সংস্থা, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে।
সাইবার নিরাপত্তা : NIST সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড এবং প্রযুক্তি তৈরি করে, যা কম্পিউটার সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। সাইবার নিরাপত্তা এবং এর গুরুত্ব নিয়ে আরও জানুন।
ফরেনসিক বিজ্ঞান : NIST ফরেনসিক বিজ্ঞানীদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে, যা অপরাধ তদন্তে সাহায্য করে। ফরেনসিক বিজ্ঞান এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারেন।

NIST-এর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহ

NIST বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজ করে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র আলোচনা করা হলো:

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি : NIST কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা করে, যেমন - কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা বিজ্ঞান, এবং ক্লাউড কম্পিউটিং। এটি সাইবার নিরাপত্তা এবং ডেটা প্রাইভেসি সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল : NIST পদার্থ বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক গবেষণা পরিচালনা করে। এর মধ্যে রয়েছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স, উপাদান বিজ্ঞান, এবং সারফেস সায়েন্স। এই গবেষণা নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সাহায্য করে।
রাসায়নিক বিজ্ঞান ও প্রকৌশল : NIST রাসায়নিক বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিমাপ মান তৈরি করে এবং রাসায়নিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে। রাসায়নিক বিশ্লেষণ এবং এর পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন।
জীববিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান : NIST জীববিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা করে, যেমন - জিনোমিক্স, প্রোটিনোমিক্স, এবং বায়োইনফরমেটিক্স। এটি রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে সাহায্য করে।
উন্নত উৎপাদন : NIST উন্নত উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে, যা পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে সাহায্য করে। লিন ম্যানুফ্যাকচারিং এবং সিক্স সিগমা কৌশলগুলো উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

NIST এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং

যদিও NIST সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সাথে জড়িত নয়, তবে এর উন্নয়ন করা প্রযুক্তি এবং স্ট্যান্ডার্ডগুলো এই ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। NIST এর সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক গাইডলাইনগুলি অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলোকে হ্যাকিং এবং অন্যান্য সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, NIST এর ডেটা নিরাপত্তা স্ট্যান্ডার্ডগুলি নিশ্চিত করে যে ট্রেডারদের ব্যক্তিগত এবং আর্থিক তথ্য সুরক্ষিত রয়েছে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। NIST এর তৈরি করা বিভিন্ন মডেল এবং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলো ঝুঁকির পূর্বাভাস দিতে এবং তা কমাতে পারে। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস, ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস, এবং ভলিউম অ্যানালাইসিস এর মাধ্যমে ট্রেডাররা বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে।

NIST-এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

NIST ভবিষ্যতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

কোয়ান্টাম প্রযুক্তি : কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কোয়ান্টাম সেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে গবেষণা বৃদ্ধি করা। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ভবিষ্যতে কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক এবং সামাজিক প্রভাবগুলো বিবেচনা করে নতুন স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা। মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিং এর ব্যবহার আরও বাড়ানো।
সাইবার নিরাপত্তা : সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা এবং ডেটা সুরক্ষার নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। ব্লকচেইন প্রযুক্তি সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা। পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি এবং টেকসই উন্নয়ন এর উপর জোর দেওয়া।
স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন : স্বাস্থ্যখাতে নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন নিয়ে আসা, যা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করবে। টেলিমেডিসিন এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্য ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

NIST-এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সংস্থা

NIST বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সংস্থার সাথে সহযোগিতা করে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংস্থা হলো:

আন্তর্জাতিক ওজন ও পরিমাপ সংস্থা (BIPM) : এটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিমাপের মান নির্ধারণ করে।
আন্তর্জাতিক মান সংস্থা (ISO) : এটি বিভিন্ন শিল্পের জন্য আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ (DOC) : NIST এই বিভাগের অধীনে কাজ করে।
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (NSF) : এটি বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা funding প্রদান করে।
এনার্জি ডিপার্টমেন্ট (DOE) : এটি শক্তি সংক্রান্ত গবেষণা এবং উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।

উপসংহার

নেশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি (NIST) বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এর গবেষণা, স্ট্যান্ডার্ড উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে NIST নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোতেও এর প্রযুক্তিগত অবদান নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

NIST এর কিছু উল্লেখযোগ্য স্ট্যান্ডার্ড
স্ট্যান্ডার্ডের নাম	বিবরণ	ব্যবহারের ক্ষেত্র
FIPS 140-2	ক্রিপ্টোগ্রাফিক মডিউলের নিরাপত্তা স্ট্যান্ডার্ড	সাইবার নিরাপত্তা, ডেটা সুরক্ষা
SP 800-53	ফেডারেল তথ্য সিস্টেমের নিরাপত্তা কন্ট্রোল	সরকারি সংস্থা, তথ্য প্রযুক্তি
CSRC Cybersecurity Framework	সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কাঠামো	শিল্প প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা
NIST 800-63	ডিজিটাল আইডেন্টিটি নির্দেশিকা	অনলাইন নিরাপত্তা, পরিচয় যাচাইকরণ
X9.82	আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা স্ট্যান্ডার্ড	ব্যাংকিং, ফিনান্স

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ