পরিমাপের একক
পরিমাপের একক
ভূমিকা
পরিমাপ হলো কোনো ভৌত রাশির মান নির্ণয় করার জন্য ব্যবহৃত তুলনামূলক মান। এই মানগুলি আমাদের চারপাশের জগতকে বুঝতে এবং পরিমাণগতভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। পরিমাপের এককগুলি এই মানের ভিত্তি স্থাপন করে। বিভিন্ন ভৌত রাশি, যেমন - দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, তাপমাত্রা, বিদ্যুৎ প্রবাহ ইত্যাদি পরিমাপের জন্য বিভিন্ন একক ব্যবহার করা হয়। এই এককগুলি আন্তর্জাতিক একক ব্যবস্থা (International System of Units বা SI unit) দ্বারা নির্ধারিত এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
পরিমাপের প্রকারভেদ
পরিমাপকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
১. মৌলিক পরিমাপ (Fundamental Measurements): এই পরিমাপগুলি অন্য কোনো পরিমাপের উপর নির্ভরশীল নয়। দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, তাপমাত্রা, তড়িৎ প্রবাহ, আলোক তীব্রতা এবং পদার্থের পরিমাণ - এই সাতটি হলো মৌলিক পরিমাপ।
২. লব্ধ পরিমাপ (Derived Measurements): এই পরিমাপগুলি মৌলিক পরিমাপের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেমন - বেগ (দৈর্ঘ্য/সময়), ঘনত্ব (ভর/আয়তন), শক্তি (ভর x বেগ²) ইত্যাদি।
একক পদ্ধতির প্রকারভেদ
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার একক পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- ব্রিটিশ পদ্ধতি (British System): এটি মূলত যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হতো। এই পদ্ধতিতে ইঞ্চি, পাউন্ড, গ্যালন ইত্যাদি একক ব্যবহার করা হত।
- মেট্রিক পদ্ধতি (Metric System): এটি ফরাসি বিপ্লবের সময় উদ্ভাবিত হয় এবং বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এটি ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে মিটার, কিলোগ্রাম, সেকেন্ড ইত্যাদি একক ব্যবহার করা হয়।
- আন্তর্জাতিক একক ব্যবস্থা (SI Unit): এটি মেট্রিক পদ্ধতির একটি আধুনিক রূপ, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং ব্যবহৃত।
আন্তর্জাতিক একক ব্যবস্থা (SI Unit)
১৯৬৩ সালে General Conference on Weights and Measures কর্তৃক আন্তর্জাতিক একক ব্যবস্থা (SI Unit) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যবস্থায় সাতটি মৌলিক একক রয়েছে:
| ক্রমিক নং | রাশি | একক | প্রতীক | |
|---|---|---|---|---|
| ১ | দৈর্ঘ্য | মিটার | m | |
| ২ | ভর | কিলোগ্রাম | kg | |
| ৩ | সময় | সেকেন্ড | s | |
| ৪ | তড়িৎ প্রবাহ | অ্যাম্পিয়ার | A | |
| ৫ | তাপমাত্রা | কেলভিন | K | |
| ৬ | পদার্থের পরিমাণ | মোল | mol | |
| ৭ | আলোক তীব্রতা | ক্যান্ডেলা | cd |
লব্ধ একক এবং তাদের সম্পর্ক
মৌলিক এককগুলি থেকে অন্যান্য লব্ধ এককগুলি তৈরি করা হয়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লব্ধ একক এবং তাদের সম্পর্ক উল্লেখ করা হলো:
- ক্ষেত্রফল (Area): দৈর্ঘ্য x দৈর্ঘ্য = m²
- আয়তন (Volume): দৈর্ঘ্য x প্রস্থ x উচ্চতা = m³
- বেগ (Velocity): দূরত্ব / সময় = m/s
- ত্বরণ (Acceleration): বেগের পরিবর্তন / সময় = m/s²
- ঘনত্ব (Density): ভর / আয়তন = kg/m³
- শক্তি (Energy): কাজ (Work) = বল (Force) x দূরত্ব (Distance) = জুল (Joule) = kg m²/s²
- চাপ (Pressure): বল / ক্ষেত্রফল = প্যাসকেল (Pascal) = N/m²
- ক্ষমতা (Power): কাজ / সময় = ওয়াট (Watt) = J/s = kg m²/s³
বিভিন্ন প্রকার দৈর্ঘ্য পরিমাপক একক
দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য বিভিন্ন একক ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে কয়েকটির সম্পর্ক নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ১ মিটার (m) = ১০০ সেন্টিমিটার (cm)
- ১ সেন্টিমিটার (cm) = ১০ মিলিমিটার (mm)
- ১ কিলোমিটার (km) = ১০০০ মিটার (m)
- ১ ইঞ্চি (inch) = ২.৫৪ সেন্টিমিটার (cm)
- ১ ফুট (foot) = ১২ ইঞ্চি (inch) = ০.৩০৪ মিটার (m)
- ১ মাইল (mile) = ১.৬ কিলোমিটার (km)
বিভিন্ন প্রকার ভর পরিমাপক একক
ভর পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ একক হলো:
- ১ কিলোগ্রাম (kg) = ১০০০ গ্রাম (g)
- ১ গ্রাম (g) = ১০০০ মিলিগ্রাম (mg)
- ১ পাউন্ড (pound) = ০.৪৫৩ কিলোগ্রাম (kg)
- ১ আউন্স (ounce) = ২৮.৩৫ গ্রাম (g)
বিভিন্ন প্রকার সময় পরিমাপক একক
সময় পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত এককগুলি হলো:
- ১ মিনিট (minute) = ৬০ সেকেন্ড (second)
- ১ ঘণ্টা (hour) = ৬০ মিনিট (minute) = ৩৬০০ সেকেন্ড (second)
- ১ দিন (day) = ২৪ ঘণ্টা (hour)
- ১ সপ্তাহ (week) = ৭ দিন (day)
- ১ মাস (month) = প্রায় ৩০ দিন (day)
- ১ বছর (year) = ৩৬৫ দিন (day)
তাপমাত্রা পরিমাপের একক
তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য প্রধানত তিনটি স্কেল ব্যবহৃত হয়:
- সেলসিয়াস (°C)
- ফারেনহাইট (°F)
- কেলভিন (K)
তাদের মধ্যে সম্পর্কগুলো হলো:
- °C = (°F - 32) × 5/9
- K = °C + 273.15
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ পরিমাপের গুরুত্ব
বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি আর্থিক বিনিয়োগ প্রক্রিয়া, যেখানে বিনিয়োগকারীরা কোনো সম্পদের (যেমন - স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে। এখানে পরিমাপের এককগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১. সময়সীমা (Expiry Time): বাইনারি অপশনে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে, যার মধ্যে বিনিয়োগের ফলাফল নির্ধারিত হয়। এই সময়সীমা মিনিট, ঘণ্টা বা দিনের হতে পারে। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ-এর মাধ্যমে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।
২. স্ট্রাইক মূল্য (Strike Price): এটি সেই দাম, যার উপর ভিত্তি করে অপশনটি ইন-দ্য-মানি (In-the-Money) বা আউট-অফ-দ্য-মানি (Out-of-the-Money) হবে কিনা তা নির্ধারিত হয়।
৩. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য সঠিক পরিমাপ প্রয়োজন। ভলিউম বিশ্লেষণ এবং পজিশন সাইজিং কৌশলগুলি এখানে ব্যবহৃত হয়।
৪. লাভের হিসাব (Profit Calculation): বিনিয়োগের উপর লাভের পরিমাণ পরিমাপের একক দ্বারা নির্ধারিত হয়।
ট্রেডিং কৌশল এবং পরিমাপ
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের গড় দাম নির্দেশ করে।
- রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (RSI): এটি সম্পদের অতিরিক্ত ক্রয় (Overbought) বা অতিরিক্ত বিক্রয় (Oversold) অবস্থা নির্দেশ করে।
- বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): এটি দামের অস্থিরতা পরিমাপ করে।
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এটি সম্ভাব্য সমর্থন (Support) এবং প্রতিরোধ (Resistance) স্তর চিহ্নিত করে।
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern): এটি দামের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে।
ভলিউম বিশ্লেষণ এবং পরিমাপ
ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো সম্পদের কতগুলি ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে তার পরিমাণ। ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের গতিবিধি এবং প্রবণতা বোঝা যায়।
- অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): এটি ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে।
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রেডিং ভলিউমের উপর ভিত্তি করে গড় দাম নির্ণয় করে।
পরিমাপের একক রূপান্তর (Unit Conversion)
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন একক ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। তাই, এক একক থেকে অন্য এককে রূপান্তর করার পদ্ধতি জানা অপরিহার্য।
উদাহরণ:
- ১ মিটার = ৩.২৮ ফুট
- ১ কিলোগ্রাম = ২.২০ পাউন্ড
- ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস = ১.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট
পরিমাপের নির্ভুলতা এবং ত্রুটি
পরিমাপের সময় কিছু ত্রুটি (Error) থাকতে পারে। এই ত্রুটিগুলি পরিমাপের নির্ভুলতাকে প্রভাবিত করে। ত্রুটিগুলি দুই ধরনের হতে পারে:
- সিস্টেম্যাটিক ত্রুটি (Systematic Error): এটি নিয়মিতভাবে একই দিকে ঘটে।
- র্যান্ডম ত্রুটি (Random Error): এটি অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে এবং দিক পরিবর্তন করতে পারে।
পরিমাপের ভবিষ্যৎ প্রবণতা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে পরিমাপের একক এবং পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। ভবিষ্যতে আরও নির্ভুল এবং উন্নত পরিমাপ পদ্ধতি উদ্ভাবিত হবে বলে আশা করা যায়। কোয়ান্টাম পরিমাপ এবং ন্যানোটেকনোলজি এই ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
উপসংহার
পরিমাপের একক আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য অংশ। সঠিক পরিমাপ এবং এককের ব্যবহার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং উন্নত ফলাফল পেতে সহায়ক। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো আর্থিক বাজারেও এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
আরও জানতে:
- পরিমাপের ইতিহাস
- SI এককগুলির তালিকা
- ত্রুটি বিশ্লেষণ
- বৈজ্ঞানিক পরিমাপ
- স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস
- ঝুঁকি এবং রিটার্ন
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- অর্থনৈতিক সূচক
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
- প্যাটার্ন রিকগনিশন
- ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট
- অপশন ট্রেডিং
- ফিনান্সিয়াল ডেরিভেটিভস
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
