নেaked পুট কৌশল

নেকেড পুট কৌশল

নেকেড পুট (Naked Put) একটি পুট অপশন ট্রেডিং কৌশল। এই কৌশলটি এমন বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত, যারা মনে করেন কোনো স্টকের দাম কমবে না, বরং বাড়বে অথবা একই থাকবে। এখানে বিনিয়োগকারী কোনো স্টক কেনা ছাড়াই শুধুমাত্র পুট অপশন বিক্রি করেন। এই কারণে একে ‘নেকেড’ বলা হয়, কারণ বিনিয়োগকারীর কাছে স্টকটি নেই।

নেকেড পুট কিভাবে কাজ করে?

নেকেড পুট কৌশলটিতে, একজন বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট স্ট্রাইক প্রাইসে একটি পুট অপশন বিক্রি করেন এবং এর বিনিময়ে একটি প্রিমিয়াম পান। যদি অপশনটি মেয়াদপূর্তির আগে প্রয়োগ করা না হয় (অর্থাৎ, স্টকের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের উপরে থাকে), তাহলে বিনিয়োগকারী প্রিমিয়ামটি লাভ হিসেবে রাখেন। কিন্তু, যদি স্টকের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের নিচে নেমে যায়, তাহলে অপশনটি প্রয়োগ করা হতে পারে এবং বিনিয়োগকারীকে স্ট্রাইক প্রাইসে স্টক কিনতে বাধ্য করা হতে পারে।

নেকেড পুট কৌশলের উদাহরণ
দিক		স্টক মূল্য (মেয়াদপূর্তিতে)	স্ট্রাইক প্রাইসের উপরে		লাভ		স্টক মূল্য (মেয়াদপূর্তিতে)	স্ট্রাইক প্রাইসের নিচে		ক্ষতি

এই কৌশলের সুবিধা

উচ্চ প্রিমিয়াম আয়: নেকেড পুট বিক্রির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা ভালো পরিমাণে প্রিমিয়াম আয় করতে পারেন।
কম বিনিয়োগ: স্টক কেনার প্রয়োজন না হওয়ায়, এই কৌশলে কম বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।
স্টকের দাম বাড়লে লাভ: স্টকের দাম বাড়লে বা একই থাকলে বিনিয়োগকারী লাভবান হন।

এই কৌশলের ঝুঁকি

সীমাহীন ঝুঁকি: স্টকের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে, যা প্রায় সীমাহীন।
অ্যাসাইনমেন্টের ঝুঁকি: যদি স্টকের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের নিচে নেমে যায়, তবে স্টক কেনার বাধ্যবাধকতা তৈরি হতে পারে।
সময় ক্ষয়: সময়ের সাথে সাথে অপশনের মূল্য কমতে থাকে, তাই সঠিক সময়ে অপশন বিক্রি করা গুরুত্বপূর্ণ।

কখন নেকেড পুট ব্যবহার করা উচিত?

যখন আপনি মনে করেন কোনো স্টকের দাম কমবে না।
যখন আপনি একটি নির্দিষ্ট স্টকের নিরপেক্ষ বা সামান্য বুলিশ (bullish) মনোভাব পোষণ করেন।
যখন আপনি আপনার বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে অতিরিক্ত আয় করতে চান।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ করে আপনি যদি নিশ্চিত হন যে স্টকটির দাম একটি নির্দিষ্ট সীমার উপরে থাকবে।

নেকেড পুট কৌশল বাস্তবায়নের ধাপ

১. স্টক নির্বাচন: প্রথমে এমন একটি স্টক নির্বাচন করুন, যা আপনার ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ অনুযায়ী স্থিতিশীল থাকবে বা বাড়বে। ২. স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন: একটি স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করুন যা বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে দূরে থাকে। এটি আপনার ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে দেবে। ৩. মেয়াদপূর্তির তারিখ নির্বাচন: সাধারণত ৩০-৬০ দিনের মধ্যে মেয়াদপূর্তির তারিখ নির্বাচন করা ভালো। ৪. অপশন বিক্রি: নির্বাচিত স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদপূর্তির তারিখের সাথে একটি পুট অপশন বিক্রি করুন। ৫. পর্যবেক্ষণ: নিয়মিতভাবে স্টকের দাম এবং অপশনের মূল্য পর্যবেক্ষণ করুন। ৬. প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ: যদি স্টকের দাম আপনার প্রত্যাশার বিপরীতে যেতে শুরু করে, তাহলে অপশনটি বন্ধ করে দিন অথবা অন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করুন।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

স্টপ-লস অর্ডার: স্টকের দাম একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপশনটি বন্ধ করার জন্য স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন।
পজিশন সাইজিং: আপনার পোর্টফোলিওতে ঝুঁকির পরিমাণ কমাতে পজিশন সাইজিং গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।
ডাইভারসিফিকেশন: আপনার পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন ধরনের স্টক এবং অপশন যুক্ত করুন, যাতে কোনো একটি স্টকের দাম কমলেও আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগে বড় ধরনের প্রভাব না পড়ে।
ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম এবং ওপেন ইন্টারেস্ট দেখে অপশনের চাহিদা এবং যোগান সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারেন।

অন্যান্য সম্পর্কিত কৌশল

কভারড কল (Covered Call): এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী তার কাছে থাকা স্টক বিক্রি করার জন্য একটি কল অপশন বিক্রি করেন। এটি নেকেড পুটের বিপরীত। কভারড কল
প্রোটেক্টিভ পুট (Protective Put): এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী তার কাছে থাকা স্টককে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটি পুট অপশন কেনেন।
স্ট্র্যাডল (Straddle): এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদপূর্তির তারিখের একটি কল এবং একটি পুট অপশন কেনেন।
স্ট্র্যাংগল (Strangle): এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের একটি কল এবং একটি পুট অপশন কেনেন।
আয়রন কন্ডোর (Iron Condor): এটি একটি নিরপেক্ষ কৌশল, যেখানে চারটি অপশন ব্যবহার করা হয় - দুটি কল এবং দুটি পুট। আয়রন কন্ডোর

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের গুরুত্ব

নেকেড পুট কৌশল বাস্তবায়নের আগে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ করা খুবই জরুরি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (technical indicator) ব্যবহার করে স্টকের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়:

মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি স্টকের গড় মূল্য নির্দেশ করে এবং প্রবণতা (trend) নির্ধারণে সাহায্য করে।
আরএসআই (RSI - Relative Strength Index): এটি স্টকের অতিরিক্ত ক্রয় (overbought) বা অতিরিক্ত বিক্রয় (oversold) অবস্থা নির্দেশ করে।
এমএসিডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সংকেত প্রদান করে।
বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): এটি স্টকের দামের অস্থিরতা (volatility) পরিমাপ করে।
ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এটি সম্ভাব্য সমর্থন (support) এবং প্রতিরোধ (resistance) স্তর চিহ্নিত করে।

ভলিউম বিশ্লেষণের গুরুত্ব

ভলিউম বিশ্লেষণ নেকেড পুট কৌশলকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

ভলিউম স্পাইক (Volume Spike): যখন ভলিউম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়, তখন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হতে পারে।
ওপেন ইন্টারেস্ট (Open Interest): এটি একটি নির্দিষ্ট অপশন চুক্তির সংখ্যা নির্দেশ করে। ওপেন ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি পেলে, অপশনটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে মনে করা হয়।
ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রেড করা শেয়ারের গড় মূল্য নির্দেশ করে।

নেকেড পুট কৌশল – কিছু অতিরিক্ত টিপস

ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটি (Implied Volatility): নেকেড পুট বিক্রির সময় ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটি কম থাকলে ভালো, কারণ কম ভোলাটিলিটিতে প্রিমিয়াম কম থাকে।
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: আপনার অপশন পজিশনগুলি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন এবং বাজারের পরিস্থিতির সাথে সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ: ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। ভয় বা লোভের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।
শিক্ষণ: ক্রমাগত শিখতে থাকুন এবং নতুন কৌশলগুলি সম্পর্কে জানতে থাকুন।

উপসংহার

নেকেড পুট একটি জটিল কৌশল, যা উচ্চ লাভের সম্ভাবনা রাখে, তবে এর সাথে ঝুঁকিও জড়িত। এই কৌশলটি বাস্তবায়নের আগে ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়মগুলি অনুসরণ করা উচিত। সঠিক বিশ্লেষণ এবং সতর্কতার সাথে ট্রেড করলে, নেকেড পুট কৌশল বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি লাভজনক বিকল্প হতে পারে।

পুট অপশন কল অপশন অপশন ট্রেডিং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম ওপেন ইন্টারেস্ট ইম্প্লাইড ভোলাটিলিটি কভারড কল প্রোটেক্টিভ পুট স্ট্র্যাডল স্ট্র্যাংগল আয়রন কন্ডোর মুভিং এভারেজ আরএসআই এমএসিডি বলিঙ্গার ব্যান্ড ফিিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট স্টপ-লস অর্ডার পজিশন সাইজিং ডাইভারসিফিকেশন মার্জিন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ