নেকড পুট
নেকড পুট
নেকড পুট একটি অপশন ট্রেডিং কৌশল, যেখানে বিনিয়োগকারী কোনো অন্তর্নিহিত সম্পদ (Underlying Asset) বিক্রি না করেই শুধুমাত্র পুট অপশন বিক্রি করেন। এই কৌশলটি সাধারণত সেই বিনিয়োগকারীরা ব্যবহার করে যারা মনে করেন যে বাজারের দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সীমার উপরে থাকবে। এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল, তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ভাল লাভজনক হতে পারে।
নেকড পুট কী?
নেকড পুট (Naked Put) অপশন ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে, একজন বিনিয়োগকারী কোনো স্টক বা অন্য কোনো সম্পদ কেনা ছাড়াই শুধুমাত্র পুট অপশন বিক্রি করেন। পুট অপশন ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট দামে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদ বিক্রি করার অধিকার দেয়, কিন্তু কোনো বাধ্যবাধকতা দেয় না। যখন একজন বিনিয়োগকারী নেকড পুট বিক্রি করেন, তখন তিনি ক্রেতাকে এই অধিকার প্রদান করেন এবং এর বিনিময়ে একটি প্রিমিয়াম পান।
যদি অপশনটির মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখে অন্তর্নিহিত সম্পদের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের উপরে থাকে, তবে অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যায় এবং বিনিয়োগকারী প্রিমিয়ামটি লাভ হিসেবে রাখতে পারেন। কিন্তু যদি দাম স্ট্রাইক প্রাইসের নিচে নেমে যায়, তবে বিনিয়োগকারীকে লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়, কারণ তাকে স্ট্রাইক প্রাইসে সম্পদ কিনতে হতে পারে।
নেকড পুট কিভাবে কাজ করে?
নেকড পুট বোঝার জন্য, প্রথমে পুট অপশন সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। একটি পুট অপশন হলো একটি চুক্তি যা ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দামে কোনো সম্পদ বিক্রি করার অধিকার দেয়।
ধরুন, কোনো বিনিয়োগকারী XYZ কোম্পানির একটি পুট অপশন বিক্রি করলেন, যার স্ট্রাইক প্রাইস ৫০ টাকা এবং মেয়াদ ১ মাস। এর জন্য তিনি প্রতিটি অপশনের জন্য ২ টাকা প্রিমিয়াম পেলেন।
- যদি ১ মাস পর XYZ কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫০ টাকার উপরে থাকে, তাহলে অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যাবে এবং বিনিয়োগকারী ২ টাকা প্রিমিয়াম লাভ করবেন।
- যদি ১ মাস পর XYZ কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫০ টাকার নিচে নেমে যায়, তাহলে অপশনটির ক্রেতা ৫০ টাকায় শেয়ার বিক্রি করার অধিকার ব্যবহার করবে। সেক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীকে ৫০ টাকায় শেয়ার কিনতে হবে, যদিও বাজারের দাম কম। ফলে তার লোকসান হবে।
লোকসানের পরিমাণ নির্ভর করে শেয়ারের দাম কত নিচে নেমেছে তার উপর। উদাহরণস্বরূপ, যদি শেয়ারের দাম ৪০ টাকায় নেমে যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীর প্রতি শেয়ারে ১০ টাকা লোকসান হবে (৫০-৪০=১০)। তবে, এই লোকসান থেকে প্রিমিয়ামের ২ টাকা বাদ দিলে, প্রকৃত লোকসান হবে ৮ টাকা।
নেকড পুট ব্যবহারের সুবিধা
- প্রিমিয়াম আয়: নেকড পুট বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা প্রিমিয়াম আয় করতে পারেন।
- কম বিনিয়োগ: এই কৌশলটি প্রয়োগ করার জন্য বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না।
- বাজারের পূর্বাভাস: যাদের মনে হয় বাজারের দাম বাড়বে বা স্থিতিশীল থাকবে, তাদের জন্য এটি একটি ভাল কৌশল।
নেকড পুট ব্যবহারের অসুবিধা
- সীমাহীন ঝুঁকি: যদি বাজারের দাম অনেক কমে যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীর লোকসান সীমাহীন হতে পারে।
- মার্জিন প্রয়োজন: নেকড পুট বিক্রি করার জন্য ব্রোকারের কাছে মার্জিন জমা রাখতে হয়।
- সময় সংবেদনশীল: অপশনটির মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সময় চলে যায়, তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা জটিল: এই কৌশলে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করা বেশ কঠিন।
কখন নেকড পুট ব্যবহার করা উচিত?
নেকড পুট সাধারণত নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা উচিত:
- যখন আপনি মনে করেন যে কোনো স্টকের দাম বাড়বে বা স্থিতিশীল থাকবে।
- যখন আপনি প্রিমিয়াম আয় করতে চান।
- যখন আপনি বাজারের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকেন।
- আপনার যদি পর্যাপ্ত মার্জিন থাকে।
নেকড পুট কৌশল বাস্তবায়ন
নেকড পুট কৌশল বাস্তবায়নের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. স্টক নির্বাচন: প্রথমে, এমন একটি স্টক নির্বাচন করুন যা আপনি মনে করেন যে দাম বাড়বে বা স্থিতিশীল থাকবে। ২. স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন: এরপর, একটি স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করুন যা বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে কম। ৩. মেয়াদ নির্বাচন: অপশনের মেয়াদ নির্বাচন করুন। সাধারণত, স্বল্পমেয়াদী অপশনগুলিতে প্রিমিয়াম বেশি থাকে। ৪. অপশন বিক্রি: নির্বাচিত স্টক, স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ অনুযায়ী পুট অপশন বিক্রি করুন। ৫. পর্যবেক্ষণ: বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজনে পদক্ষেপ নিন।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
নেকড পুট একটি ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল, তাই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত:
- স্টপ-লস অর্ডার: স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে লোকসান সীমিত করা যেতে পারে।
- পজিশন সাইজিং: আপনার বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর একটি ছোট অংশ নেকড পুট-এ বিনিয়োগ করুন।
- বৈচিত্র্যকরণ: আপনার পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ রাখুন, যাতে কোনো একটি সম্পদের দাম কমলেও আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগে বড় ধরনের প্রভাব না পড়ে।
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস: বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করুন।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: অপশনের ভলিউম এবং ওপেন ইন্টারেস্ট বিশ্লেষণ করে বাজারের ধারণা পেতে পারেন।
উদাহরণ
ধরা যাক, একটি স্টকের বর্তমান বাজার মূল্য ৫০ টাকা। আপনি মনে করেন যে এই স্টকের দাম আগামী এক মাসে বাড়বে। তাই আপনি ৫২.৫ টাকা স্ট্রাইক প্রাইসের একটি পুট অপশন বিক্রি করলেন, যার প্রিমিয়াম হলো ১.৫ টাকা।
যদি এক মাস পর স্টকের দাম ৫২.৫ টাকার উপরে থাকে, তাহলে অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যাবে এবং আপনি ১.৫ টাকা প্রিমিয়াম লাভ করবেন।
কিন্তু যদি স্টকের দাম ৫২.৫ টাকার নিচে নেমে যায়, তাহলে আপনাকে ৫২.৫ টাকায় স্টক কিনতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার লোকসান হবে (৫২.৫ - স্টকের বাজার মূল্য) - ১.৫ টাকা (প্রিমিয়াম)।
যদি স্টকের দাম ৫০ টাকায় নেমে যায়, তাহলে আপনার লোকসান হবে (৫২.৫ - ৫০) - ১.৫ = ৮ টাকা।
অন্যান্য সম্পর্কিত কৌশল
- কভার্ড কল: এই কৌশলটিতে স্টক কেনা হয় এবং একই সাথে কল অপশন বিক্রি করা হয়।
- ডাবল পুট: এখানে দুটি ভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের পুট অপশন কেনা হয়।
- স্ট্র্যাডল: এই কৌশলটিতে একই স্ট্রাইক প্রাইসের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়।
- স্ট্র্যাংগল: এখানে বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের কল এবং পুট অপশন কেনা হয়।
- আয়রন কন্ডর: এটি একটি জটিল কৌশল, যেখানে চারটি অপশন ব্যবহার করা হয়।
- বাটারফ্লাই স্প্রেড: এটিও একটি জটিল কৌশল, যেখানে তিনটি অপশন ব্যবহার করা হয়।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং সূচক
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি বাজারের প্রবণতা নির্ধারণে সাহায্য করে।
- আরএসআই (Relative Strength Index): এটি অতিরিক্ত কেনা বা অতিরিক্ত বিক্রির পরিস্থিতি নির্দেশ করে।
- এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায়।
- বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): এটি বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে।
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এটি সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর সনাক্ত করে।
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রেডিং ভলিউমের উপর ভিত্তি করে গড় মূল্য দেখায়।
ভলিউম বিশ্লেষণ
- ওপেন ইন্টারেস্ট: এটি বাজারে থাকা সক্রিয় অপশন চুক্তির সংখ্যা নির্দেশ করে।
- ভলিউম: এটি একটি নির্দিষ্ট সময়কালে ট্রেড হওয়া অপশন চুক্তির সংখ্যা নির্দেশ করে।
- প্রাইস অ্যাকশন: এটি বাজারের দামের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে।
- অর্ডার ফ্লো: এটি বাজারের ক্রয় এবং বিক্রয়ের চাপ বিশ্লেষণ করে।
- ডিপথ অফ মার্কেট: এটি বিভিন্ন মূল্যে ক্রয় এবং বিক্রয়ের অর্ডারের পরিমাণ দেখায়।
নেকড পুট একটি শক্তিশালী ট্রেডিং কৌশল হতে পারে, তবে এটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। বিনিয়োগ করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করা এবং নিজের ঝুঁকি সহনশীলতা বিবেচনা করা উচিত।
| কৌশল | সুবিধা | অসুবিধা | ঝুঁকি |
|---|---|---|---|
| নেকড পুট | প্রিমিয়াম আয়, কম বিনিয়োগ | সীমাহীন ঝুঁকি, মার্জিন প্রয়োজন | উচ্চ |
| কভার্ড কল | প্রিমিয়াম আয়, ঝুঁকি হ্রাস | লাভের সম্ভাবনা সীমিত | মাঝারি |
| স্ট্র্যাডল | বাজারের দিকনির্দেশনা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা থাকলে লাভজনক | উচ্চ প্রিমিয়াম খরচ, সঠিক পূর্বাভাস প্রয়োজন | উচ্চ |
অপশন ট্রেডিং শেখার জন্য আরও অনেক রিসোর্স রয়েছে। এই কৌশলগুলি ব্যবহার করার আগে, একজন অভিজ্ঞ ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার-এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
