দ্বিতীয়িক বাজার
দ্বিতীয়িক বাজার
ভূমিকা
দ্বিতীয়িক বাজার হল এমন একটি বাজার যেখানে বিনিয়োগকারীরা পূর্বে ইস্যু করা সিকিউরিটিজ কেনাবেচা করে। এই বাজার প্রাথমিক বাজারের (প্রাথমিক বাজার) বিপরীত, যেখানে নতুন সিকিউরিটিজ প্রথমবার জনসাধারণের কাছে বিক্রি করা হয়। দ্বিতীয়িক বাজার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তারল্য সরবরাহ করে, যা বিনিয়োগকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এই বাজারে শেয়ার, বন্ড, এবং অন্যান্য আর্থিক উপকরণগুলির কেনাবেচা হয়।
দ্বিতীয়িক বাজারের প্রকারভেদ
দ্বিতীয়িক বাজার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. স্টক এক্সচেঞ্জ: স্টক এক্সচেঞ্জ হল দ্বিতীয়িক বাজারের সবচেয়ে পরিচিত রূপ। এখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির শেয়ার কেনাবেচা করা হয়। যেমন - ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE)।
২. ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) বাজার: এই বাজারে সিকিউরিটিজগুলি সরাসরি দুটি পক্ষের মধ্যে বিনিময় করা হয়, কোনো এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে নয়। এটি সাধারণত অListed কোম্পানি বা বিশেষ ধরনের সিকিউরিটিজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৩. তৃতীয় বাজার: তৃতীয় বাজার হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে ব্রোকার-ডিলাররা একে অপরের সাথে সিকিউরিটিজ কেনাবেচা করে, যা এক্সচেঞ্জের বাইরে সম্পন্ন হয়।
৪. চতুর্থ বাজার: চতুর্থ বাজারে সিকিউরিটিজগুলি সরাসরি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইলেকট্রনিক ট্রেডিং সিস্টেমের মাধ্যমে কেনাবেচা করা হয়।
দ্বিতীয়িক বাজারের কার্যাবলী
দ্বিতীয়িক বাজার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে:
- তারল্য প্রদান: বিনিয়োগকারীরা সহজেই তাদের সিকিউরিটিজ বিক্রি করে নগদ অর্থে রূপান্তর করতে পারে।
- মূল্য নির্ধারণ: বাজারের চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে সিকিউরিটিজের মূল্য নির্ধারিত হয়।
- তথ্য সরবরাহ: বাজারের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক।
- বিনিয়োগের সুযোগ: বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করে তাদের পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারে।
- বাজার দক্ষতা বৃদ্ধি: বাজারের লেনদেন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকরী করে তোলে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য দ্বিতীয়িক বাজারের গুরুত্ব
বিনিয়োগকারীদের জন্য দ্বিতীয়িক বাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কয়েকটি কারণ হলো:
- বিনিয়োগের সুযোগ: বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার এবং বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়।
- তারল্য সুবিধা: প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিয়োগ বিক্রি করে নগদ অর্থ পাওয়া যায়।
- পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য: বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনা যায়, যা ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
- মূলধন লাভ: শেয়ারের দাম বাড়লে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারে।
- নিয়মিত আয়: ডিভিডেন্ড এবং সুদের মাধ্যমে নিয়মিত আয়ের সুযোগ থাকে।
দ্বিতীয়িক বাজারের অংশগ্রহণকারী
দ্বিতীয়িক বাজারে বিভিন্ন ধরনের অংশগ্রহণকারী থাকে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- বিনিয়োগকারী: ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, মিউচুয়াল ফান্ড, এবং পেনশন ফান্ড সহ বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারী এখানে অংশগ্রহণ করে।
- ব্রোকার-ডিলার: এরা বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সিকিউরিটিজ কেনাবেচা করে কমিশন লাভ করে।
- মার্কেট মেকার: এরা বাজারে ক্রমাগত ক্রয়-বিক্রয় প্রস্তাব দিয়ে তারল্য সরবরাহ করে।
- নিয়ন্ত্রক সংস্থা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) এর মতো সংস্থাগুলি বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে।
বাজারের সূচক এবং বিশ্লেষণ
দ্বিতীয়িক বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য বিভিন্ন ধরনের সূচক ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো:
- মূল্য সূচক: ডিএসইএক্স (DSEX) এবং সিএসইএক্স (CSE)। এই সূচকগুলি বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেয়।
- ভলিউম সূচক: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কত সংখ্যক শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, তা নির্দেশ করে।
- সেক্টর সূচক: বিভিন্ন খাতের (যেমন - ব্যাংকিং, বীমা, ফার্মাসিউটিক্যালস) সূচকগুলি সেই খাতের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: ঐতিহাসিক মূল্য এবং ভলিউমের ডেটা ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
- চার্ট প্যাটার্ন: বিভিন্ন ধরনের চার্ট (যেমন - ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট, লাইন চার্ট) ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা চিহ্নিত করা।
- মুভিং এভারেজ: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য হিসাব করে বাজারের দিকনির্দেশনা বোঝা।
- রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (RSI): অতিরিক্ত ক্রয় বা বিক্রয়ের পরিস্থিতি চিহ্নিত করা।
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট: সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর নির্ধারণ করা।
ভলিউম বিশ্লেষণ: লেনদেনের পরিমাণ বিশ্লেষণ করে বাজারের শক্তি এবং দুর্বলতা বোঝা যায়।
- অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): মূল্য এবং ভলিউমের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা।
- অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন: বাজারের গতিবিধি এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাব বোঝা।
ঝুঁকি এবং সতর্কতা
দ্বিতীয়িক বাজারে বিনিয়োগের কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মনে রাখতে হবে:
- বাজার ঝুঁকি: বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি খারাপ হলে বিনিয়োগের মূল্য কমে যেতে পারে।
- কোম্পানি ঝুঁকি: কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে তার শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে।
- তারল্য ঝুঁকি: কিছু সিকিউরিটিজের বাজারে চাহিদা কম থাকায় দ্রুত বিক্রি করা কঠিন হতে পারে।
- অর্থনৈতিক ঝুঁকি: মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার, এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার এর পরিবর্তন বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
সতর্কতা:
- বিনিয়োগ করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করুন।
- আপনার ঝুঁকির সহনশীলতা বিবেচনা করুন।
- পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনুন।
- দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করুন।
- অভিজ্ঞ আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নিন।
দ্বিতীয়িক বাজারের ভবিষ্যৎ
প্রযুক্তি এবং বিশ্বায়নের সাথে সাথে দ্বিতীয়িক বাজার আরও আধুনিক হচ্ছে। অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম, অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং, এবং ফিনটেক (FinTech) এই বাজারের গতিশীলতা বৃদ্ধি করছে। ভবিষ্যতে এই বাজার আরও স্বচ্ছ, কার্যকরী এবং বিনিয়োগবান্ধব হবে বলে আশা করা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক
- শেয়ার বাজার
- বন্ড বাজার
- মিউচুয়াল ফান্ড
- পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- প্রাথমিক বাজার
- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
- চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ
- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- চার্ট প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- অন ব্যালেন্স ভলিউম
- অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন
- ফিনটেক
- অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং
- বিনিয়োগ
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
