দারিদ্র্য সূচক

দারিদ্র্য সূচক

ভূমিকা দারিদ্র্য একটি জটিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। এটি শুধু অভাব নয়, বরং সুযোগের অভাব, দুর্বল স্বাস্থ্য, সীমিত শিক্ষা এবং জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষমতাকেও বোঝায়। দারিদ্র্য পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের দারিদ্র্য পরিমাপক ব্যবহার করা হয়, যা পরিস্থিতি বুঝতে এবং নীতি নির্ধারণে সহায়ক। এই নিবন্ধে দারিদ্র্য সূচক, এর প্রকারভেদ, ব্যবহার এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

দারিদ্র্য সূচক কী? দারিদ্র্য সূচক হলো একটি পরিসংখ্যানিক পরিমাপক, যা কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং দারিদ্র্যের মাত্রা নির্ধারণ করে। এটি সাধারণত আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং জীবনযাত্রার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এই সূচকগুলি দারিদ্র্যের গভীরতা এবং ব্যাপকতা বুঝতে সাহায্য করে।

দারিদ্র্য সূচকের প্রকারভেদ বিভিন্ন সংস্থা ও অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন ধরনের দারিদ্র্য সূচক ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি হলো:

১. মাথাপিছু আয় দারিদ্র্য রেখা: এটি সবচেয়ে সরল দারিদ্র্য পরিমাপক। একটি নির্দিষ্ট আয়সীমার নিচে বসবাস করা মানুষ দরিদ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আয়সীমা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটি পরিবর্তন করা হয়। আয় বৈষম্য এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

২. মানব উন্নয়ন সূচক (HDI): মানব উন্নয়ন সূচক শুধুমাত্র আয় নয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকেও বিবেচনা করে। এটি একটি যৌগিক সূচক, যা গড় আয়ু, শিক্ষার স্তর এবং মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।

৩. বহু-মাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (MPI): বহু-মাত্রিক দারিদ্র্য সূচক দারিদ্র্যের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে, যেমন – স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং জীবনযাত্রার মান। এটি শুধুমাত্র আয়ের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানকে গুরুত্ব দেয়।

৪. সম্পদ সূচক: এই সূচক মানুষের মালিকানাধীন সম্পদের পরিমাণ বিবেচনা করে। জমি, বাড়ি, গবাদি পশু, এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ এক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত।

৫. ভোগ দারিদ্র্য রেখা: ভোগ দারিদ্র্য রেখা মানুষের ভোগের পরিমাণকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এটি খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, এবং স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।

৬. জেন্ডার স্পেসিফিক দারিদ্র্য সূচক: লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে এই সূচক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি নারী ও পুরুষের মধ্যে দারিদ্র্যের পার্থক্য নির্ণয় করে এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নীতি নির্ধারণে সাহায্য করে।

দারিদ্র্য সূচকের ব্যবহার দারিদ্র্য সূচকগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়:

• নীতি নির্ধারণ: সরকার এবং অন্যান্য নীতি নির্ধারকরা দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য পরিকল্পনা ও কর্মসূচি তৈরি করতে এই সূচকগুলি ব্যবহার করেন।
• প্রোগ্রাম মূল্যায়ন: দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য এই সূচকগুলি ব্যবহার করা হয়।
• গবেষণা: দারিদ্র্য নিয়ে গবেষণা করার জন্য গবেষকরা এই সূচকগুলি ব্যবহার করেন।
• আন্তর্জাতিক তুলনা: বিভিন্ন দেশের দারিদ্র্যের মাত্রা তুলনা করার জন্য এই সূচকগুলি ব্যবহার করা হয়।
• লক্ষ্য নির্ধারণ: জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs)-এর মতো আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এই সূচকগুলি সহায়ক।

উদাহরণস্বরূপ, ব্রাজিল-এর 'বোলা ফ্যামিলিয়া' প্রোগ্রাম দারিদ্র্য বিমোচনে সফল হয়েছে, যার মূল্যায়নে দারিদ্র্য সূচক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গুরুত্বপূর্ণ দারিদ্র্য সূচক এবং তাদের গঠন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন দারিদ্র্য সূচক ব্যবহার করে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সূচক এবং তাদের গঠন আলোচনা করা হলো:

১. বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্য রেখা: বিশ্বব্যাংক দৈনিক ১.৯ মার্কিন ডলারের নিচে বসবাস করা মানুষকে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বিবেচনা করে। এই হিসাবটি ক্রয়ক্ষমতার সমতা (PPP) ব্যবহার করে নির্ধারণ করা হয়।

২. জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (UNDP) মানব উন্নয়ন সূচক (HDI): HDI তিনটি প্রধান মাত্রা নিয়ে গঠিত:

   *   স্বাস্থ্য: গড় আয়ু দ্বারা পরিমাপ করা হয়।
   *   শিক্ষা: বিদ্যালয়ে গড় বছর এবং প্রত্যাশিত বছর দ্বারা পরিমাপ করা হয়।
   *   আয়: মাথাপিছু জাতীয় আয় (GNI) দ্বারা পরিমাপ করা হয়।

৩. অক্সফোর্ড দারিদ্র্য ও মানব উন্নয়ন উদ্যোগের (OPHI) বহু-মাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (MPI): MPI তিনটি প্রধান মাত্রা এবং দশটি নির্দেশক ব্যবহার করে দারিদ্র্য পরিমাপ করে:

   *   স্বাস্থ্য: পুষ্টি, শিশু মৃত্যুহার।
   *   শিক্ষা: বিদ্যালয়ে ভর্তির হার, শিক্ষার স্তর।
   *   জীবনযাত্রার মান: জ্বালানি, স্যানিটেশন, পানি, বাসস্থান, সম্পদ।

দারিদ্র্য সূচকের সীমাবদ্ধতা দারিদ্র্য সূচকগুলি দারিদ্র্য পরিমাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

• আয়-ভিত্তিক সূচক: শুধুমাত্র আয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা সূচকগুলি দারিদ্র্যের সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরতে পারে না।
• ডেটা সংগ্রহ: নির্ভরযোগ্য ডেটা সংগ্রহ করা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে।
• সাংস্কৃতিক পার্থক্য: বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মান ভিন্ন হওয়ায় একটি সার্বজনীন সূচক তৈরি করা কঠিন।
• অপ্রতুলতা: সূচকগুলি প্রায়শই দারিদ্র্যের কারণগুলি বিবেচনা করে না।
• মাপার একক: মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রার বিনিময় হারের পরিবর্তন সূচকের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।

দারিদ্র্য নিরসনের কৌশল দারিদ্র্য নিরসনের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:

• অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
• শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক।
• কর্মসংস্থান সৃষ্টি: নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা দারিদ্র্য কমানোর জন্য জরুরি।
• সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী: দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী চালু করা।
• সুশাসন: সুশাসন নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি কমানো।
• ক্ষুদ্রঋণ: ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম দরিদ্রদের স্বনির্ভর করতে সাহায্য করে।
• ভূমি সংস্কার: ভূমি সংস্কার দরিদ্র কৃষকদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
• প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ দারিদ্র্য সম্পর্কিত অর্থনৈতিক মডেলিং এবং পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য টেকনিক্যাল এবং ভলিউম বিশ্লেষণের ধারণাগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

১. টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: ঐতিহাসিক ডেটা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের প্রবণতা নির্ণয় করা। ২. ভলিউম বিশ্লেষণ: বাজারের গতিবিধি এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বোঝার জন্য লেনদেনের পরিমাণ বিশ্লেষণ করা। ৩. রিগ্রেশন বিশ্লেষণ: বিভিন্ন চলকের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে দারিদ্র্যের কারণ নির্ণয় করা। ৪. টাইম সিরিজ বিশ্লেষণ: সময়ের সাথে সাথে দারিদ্র্য সূচকের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা। ৫. জিআইএস (GIS) ম্যাপিং: দারিদ্র্যের ভৌগোলিক বিতরণ এবং হটস্পট চিহ্নিত করা। ৬. ডেটা মাইনিং: বিশাল ডেটাসেট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করা। ৭. ইকোনোমেট্রিক মডেলিং: অর্থনৈতিক তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে দারিদ্র্যের মডেল তৈরি করা। ৮. সেন্সিটিভিটি অ্যানালাইসিস: মডেলের ফলাফলের স্থিতিশীলতা পরীক্ষা করা। ৯. মন্টি কার্লো সিমুলেশন: সম্ভাব্য ফলাফলের পরিসর নির্ধারণ করা। ১০. ডিসিশন ট্রি অ্যানালাইসিস: দারিদ্র্যের কারণগুলো শ্রেণিবদ্ধ করা। ১১. ক্লাস্টার অ্যানালাইসিস: দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা। ১২. সাপোর্ট ভেক্টর মেশিন (SVM): দারিদ্র্য পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী অ্যালগরিদম। ১৩. নিউরাল নেটওয়ার্ক: জটিল ডেটা থেকে দারিদ্র্যের প্যাটার্ন সনাক্ত করা। ১৪. বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স: দারিদ্র্য সম্পর্কিত বিশাল ডেটা বিশ্লেষণ করে নতুন অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করা। ১৫. সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ: দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক এবং সমর্থন ব্যবস্থা বোঝা।

উপসংহার দারিদ্র্য একটি বহু-আয়ামিক সমস্যা, যার পরিমাপ এবং নিরসন উভয়ই জটিল। সঠিক দারিদ্র্য সূচক নির্বাচন এবং উপযুক্ত কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। নীতি নির্ধারকদের উচিত দারিদ্র্যের কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলা যায়।

দারিদ্র্য অর্থনীতি উন্নয়ন মানব উন্নয়ন জাতিসংঘ বিশ্বব্যাংক UNDP OPHI আয় বৈষম্য ক্রয়ক্ষমতার সমতা লিঙ্গ বৈষম্য জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ব্রাজিল মুদ্রাস্ফীতি সুশাসন ক্ষুদ্রঋণ ভূমি সংস্কার

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ