থ্রিলার জঁর

থ্রিলার একটি সাহিত্য এবং চলচ্চিত্র জঁর যা পাঠকদের বা দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা, উদ্বেগ এবং উত্তেজনার অনুভূতি তৈরি করার উদ্দেশ্যে লেখা হয়। এই জঁর সাধারণত দ্রুত গতির প্লট, অপ্রত্যাশিত মোড় এবং উচ্চ stakes-এর উপর নির্ভরশীল। থ্রিলার জঁরটি রহস্যকাহিনী এবং হরর জঁর-এর সাথে সম্পর্কিত, তবে এটি সাধারণত মানসিক চাপ এবং সাসপেন্সের উপর বেশি মনোযোগ দেয়, যেখানে রহস্যকাহিনী যুক্তির মাধ্যমে সমাধানের উপর এবং হরর ভয়ের উপর বেশি জোর দেয়।

থ্রিলারের ইতিহাস

থ্রিলারের উৎস উনিশ শতকের গোথিক উপন্যাস এবং এডগার অ্যালান পো-র মতো লেখকদের কাজের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, আধুনিক থ্রিলার জঁরটি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ড্যাফনে ডু মৌরিয়ার-এর "রেবেকা" (Rebecca, ১৯৩৮) এবং আলফ্রেড হিচকক-এর চলচ্চিত্রগুলি থ্রিলার জঁরকে জনপ্রিয় করে তোলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, জন লে কারে-র মতো গুপ্তচর থ্রিলার লেখকদের কাজ এই জঁরকে আরও পরিচিত করে তোলে।

থ্রিলারের উপাদান

একটি থ্রিলার উপন্যাসের কিছু মৌলিক উপাদান রয়েছে যা এটিকে অন্যান্য জঁর থেকে আলাদা করে তোলে:

সাসপেন্স (Suspense): এটি থ্রিলারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। লেখক ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করে বা বিলম্বিত করে পাঠকদের মধ্যে কৌতূহল এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করেন।
উচ্চ stakes: থ্রিলারে প্রায়শই চরিত্রদের জন্য গুরুতর পরিণতি জড়িত থাকে, যেমন জীবন-মৃত্যু, ন্যায়বিচার, বা ব্যক্তিগত ক্ষতি।
দ্রুত গতির প্লট: থ্রিলারগুলি সাধারণত দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়, যেখানে প্রচুর ঘটনা ঘটে এবং চরিত্ররা ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।
অপ্রত্যাশিত মোড়: থ্রিলার প্লটে প্রায়শই অপ্রত্যাশিত মোড় থাকে যা পাঠকদের অবাক করে এবং গল্পটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
চরিত্রের জটিলতা: থ্রিলারের চরিত্ররা প্রায়শই জটিল এবং ত্রুটিপূর্ণ হয়, যাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য এবং গোপনীয়তা রয়েছে।
মানসিক চাপ: থ্রিলারগুলি চরিত্র এবং পাঠকদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, যা গল্পের উত্তেজনা বাড়ায়।

থ্রিলারের প্রকারভেদ

থ্রিলার জঁরটি বিভিন্ন উপশ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে, যার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

মানসিক থ্রিলার (Psychological Thriller): এই ধরনের থ্রিলারে চরিত্রদের মানসিক অবস্থা এবং তাদের মধ্যেকার জটিল সম্পর্কগুলোর উপর বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়। শাইনিং (The Shining) এই ধরণের একটি উদাহরণ।
অপরাধ থ্রিলার (Crime Thriller): এই থ্রিলারগুলোতে অপরাধ, তদন্ত এবং অপরাধীদের ধরার প্রক্রিয়া দেখানো হয়। সাত (Se7en) একটি জনপ্রিয় অপরাধ থ্রিলার।
গুপ্তচর থ্রিলার (Spy Thriller): এই থ্রিলারগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তি, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়। জেমস বন্ড চলচ্চিত্রগুলি এই ধরণের উদাহরণ।
বৈজ্ঞানিক থ্রিলার (Scientific Thriller): এই থ্রিলারগুলোতে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার এবং এর সম্ভাব্য বিপদগুলো তুলে ধরা হয়। জুরাসিক পার্ক (Jurassic Park) এই ধরণের একটি উদাহরণ।
আইনগত থ্রিলার (Legal Thriller): এই থ্রিলারগুলোতে আদালত, আইনজীবী এবং আইনি প্রক্রিয়াগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করে। এ ফিউ গুড মেন (A Few Good Men) একটি পরিচিত আইনগত থ্রিলার।
রাজনৈতিক থ্রিলার (Political Thriller): এই থ্রিলারগুলোতে রাজনৈতিক ক্ষমতা, দুর্নীতি এবং ষড়যন্ত্রের বিষয়গুলো দেখানো হয়। অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন (All the President's Men) একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক থ্রিলার।
ডমেস্টিক থ্রিলার (Domestic Thriller): এই থ্রিলারগুলোতে সাধারণত পারিবারিক সম্পর্ক, গোপনীয়তা এবং বিশ্বাসঘাতকতাকে কেন্দ্র করে গল্প আবর্তিত হয়। গন গার্ল (Gone Girl) এই ধরণের একটি উদাহরণ।

থ্রিলার এবং অন্যান্য জঁর

থ্রিলার জঁর অন্যান্য কয়েকটি জঁর-এর সাথে ওভারল্যাপ করতে পারে:

রহস্যকাহিনী (Mystery): উভয় জঁরই অপরাধ এবং অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, তবে থ্রিলার সাসপেন্স এবং উত্তেজনার উপর বেশি জোর দেয়, যেখানে রহস্যকাহিনী যুক্তির মাধ্যমে সমাধানের উপর বেশি মনোযোগ দেয়। শার্লক হোমস রহস্যকাহিনীর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
হরর (Horror): থ্রিলার এবং হরর উভয় জঁরই ভয় এবং উদ্বেগের অনুভূতি তৈরি করে, তবে হরর সাধারণত অতিপ্রাকৃত বা গ্রাফিক সহিংসতার উপর বেশি নির্ভর করে, যেখানে থ্রিলার মানসিক চাপ এবং বাস্তবসম্মত বিপদের উপর বেশি মনোযোগ দেয়। স্টিভেন কিং হরর জঁর-এর একজন বিখ্যাত লেখক।
অ্যাকশন (Action): থ্রিলার এবং অ্যাকশন উভয় জঁরেই শারীরিক কার্যকলাপ এবং বিপদ থাকে, তবে থ্রিলার প্লটের জটিলতা এবং মানসিক চাপের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়, যেখানে অ্যাকশন সাধারণত দ্রুতগতির এবং উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যের উপর বেশি জোর দেয়। মিশন ইম্পসিবল অ্যাকশন জঁর-এর একটি উদাহরণ।
সায়েন্স ফিকশন (Science Fiction): বৈজ্ঞানিক থ্রিলার প্রায়শই সায়েন্স ফিকশন উপাদান ব্যবহার করে, তবে সায়েন্স ফিকশন সাধারণত বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং ভবিষ্যতের সমাজের উপর বেশি মনোযোগ দেয়, যেখানে থ্রিলার ব্যক্তিগত বিপদ এবং মানসিক চাপের উপর বেশি জোর দেয়। ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন সায়েন্স ফিকশন জঁর-এর একটি উদাহরণ।

থ্রিলারে ব্যবহৃত কৌশল

থ্রিলার লেখকরা পাঠকদের আকৃষ্ট করতে এবং সাসপেন্স তৈরি করতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেন:

রেড হেরিং (Red Herring): ভুল পথে চালিত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর সূত্র বা তথ্য উপস্থাপন করা।
ফোরশ্যাডোইং (Foreshadowing): ভবিষ্যতের ঘটনাগুলোর ইঙ্গিত দেওয়া।
ক্লিফহ্যাঙ্গার (Cliffhanger): গল্পের উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে শেষ করা, যাতে পাঠকরা পরবর্তী অংশে জানতে আগ্রহী হন।
পেইসিং (Pacing): গল্পের গতি নিয়ন্ত্রণ করা, যা সাসপেন্স তৈরি করতে সহায়ক।
পয়েন্ট অফ ভিউ (Point of View): গল্পের বর্ণনা কোন চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে করা হচ্ছে, তা পরিবর্তন করে পাঠকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করা।
ডায়ালগ (Dialogue): সংলাপের মাধ্যমে চরিত্রদের উদ্দেশ্য এবং গোপনীয়তা প্রকাশ করা।

চলচ্চিত্র এবং টিভি থ্রিলার

থ্রিলার জঁরটি চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিছু উল্লেখযোগ্য থ্রিলার চলচ্চিত্র এবং টিভি সিরিজ হলো:

সাইকো (Psycho) (১৯৬০): আলফ্রেড হিচকক পরিচালিত একটি ক্লাসিক থ্রিলার।
দ্য সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস (The Silence of the Lambs) (১৯৯১): একটি বিখ্যাত অপরাধ থ্রিলার।
সেভেন (Se7en) (১৯৯৫): ডেভিড ফিঞ্চার পরিচালিত একটি অন্ধকার এবং গ্রাফিক থ্রিলার।
মি: আই (M:I) সিরিজ: টম ক্রুজ অভিনীত জনপ্রিয় গুপ্তচর থ্রিলার সিরিজ।
শার্প অবজেক্টস (Sharp Objects) (২০১৮): একটি মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার টিভি সিরিজ।
ইউ (You) (২০১৮-বর্তমান): একটি জনপ্রিয় সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার সিরিজ।

থ্রিলার লেখার টিপস

একটি শক্তিশালী প্লট তৈরি করুন: থ্রিলারের মূল ভিত্তি হলো একটি আকর্ষণীয় এবং জটিল প্লট।
চরিত্রগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করুন: চরিত্ররা যত বেশি বাস্তবসম্মত হবে, পাঠকরা তাদের সাথে তত বেশি সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
সাসপেন্স তৈরি করুন: ধীরে ধীরে তথ্য প্রকাশ করুন এবং পাঠকদের মধ্যে কৌতূহল ধরে রাখুন।
অপ্রত্যাশিত মোড় যোগ করুন: গল্পটিকে আকর্ষণীয় রাখতে অপ্রত্যাশিত মোড় যুক্ত করুন।
গল্পের গতি বজায় রাখুন: দ্রুত গতির প্লট পাঠকদের ধরে রাখতে সহায়ক।
ডিটেইলস-এর দিকে মনোযোগ দিন: ছোটখাটো ডিটেইলস গল্পটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারে।

উপসংহার

থ্রিলার জঁরটি উত্তেজনা, সাসপেন্স এবং অপ্রত্যাশিত মোড়ের সমন্বয়ে গঠিত। এটি পাঠকদের বা দর্শকদের মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মধ্যে রাখে, যা এই জঁরকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তোলে। বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে থ্রিলার লেখকরা তাদের গল্পকে আরও আকর্ষণীয় এবং স্মরণীয় করে তুলতে পারেন। লিঙ্গুইস্টিক বিশ্লেষণ এবং নন্দনতত্ত্ব-এর প্রয়োগের মাধ্যমে থ্রিলার জঁরটিকে আরও গভীরভাবে বোঝা যেতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ