ডেলিভারি ভলিউম
ডেলিভারি ভলিউম
ডেলিভারি ভলিউম একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা ফিনান্সিয়াল মার্কেট-এর গতিবিধি বুঝতে এবং ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। বিশেষ করে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, ডেলিভারি ভলিউম বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে, আমরা ডেলিভারি ভলিউম কী, এটি কীভাবে কাজ করে, এর তাৎপর্য, এবং কীভাবে এটি ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করা যায় তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
ডেলিভারি ভলিউম কী?
ডেলিভারি ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো অ্যাসেট-এর কতগুলো চুক্তি (contracts) ডেলিভারি করা হয়েছে তার সংখ্যা। অন্যভাবে বলা যায়, এটি একটি নির্দিষ্ট সময়কালে একটি বাজারের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হওয়া লেনদেনের পরিমাণ নির্দেশ করে। এই ভলিউম সাধারণত দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক হিসেবে পরিমাপ করা হয়। ডেলিভারি ভলিউম শুধুমাত্র শেয়ার বাজার বা কমোডিটি মার্কেট-এর জন্য প্রযোজ্য নয়, এটি ফরেক্স মার্কেট এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট-এর ক্ষেত্রেও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ডেলিভারি ভলিউমের তাৎপর্য
ডেলিভারি ভলিউম মার্কেটের তরলতা (liquidity) এবং আগ্রহের মাত্রা নির্দেশ করে। উচ্চ ডেলিভারি ভলিউম সাধারণত বাজারের শক্তিশালী প্রবণতা (trend) নির্দেশ করে, যেখানে অনেক ট্রেডার সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এর বিপরীতে, নিম্ন ডেলিভারি ভলিউম দুর্বল প্রবণতা বা বাজারের স্থবিরতা (consolidation) নির্দেশ করতে পারে।
- বাজারের প্রবণতা নিশ্চিতকরণ: যদি কোনো শেয়ারের দাম বাড়ছে এবং একই সাথে ডেলিভারি ভলিউমও বাড়ছে, তবে এটি একটি শক্তিশালী আপট্রেন্ড (uptrend) নির্দেশ করে।
- বিপরীত সংকেত: কখনও কখনও, ডেলিভারি ভলিউম দামের পরিবর্তনের বিপরীত সংকেত দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি দাম বাড়ছে কিন্তু ভলিউম কমছে, তবে এটি একটি দুর্বল আপট্রেন্ড হতে পারে এবং রিভার্সাল (reversal) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ব্রেকআউট সনাক্তকরণ: যখন কোনো শেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্যান্স লেভেল (resistance level) বা সাপোর্ট লেভেল (support level) ভেঙে যায় এবং ডেলিভারি ভলিউম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, তখন এটি একটি শক্তিশালী ব্রেকআউট (breakout) নির্দেশ করে।
- ঝুঁকি মূল্যায়ন: ডেলিভারি ভলিউম ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের ঝুঁকির মাত্রা মূল্যায়ন করতে পারে। উচ্চ ভলিউমে ট্রেড করা সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ হয়, কারণ এতে দ্রুত পজিশন (position) নেওয়া বা বন্ধ করা যায়।
ডেলিভারি ভলিউম এবং মূল্য
ডেলিভারি ভলিউম এবং দামের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক বিদ্যমান। সাধারণত, দাম বাড়লে ভলিউম বাড়ে এবং দাম কমলে ভলিউম কমে। তবে, এই সম্পর্ক সবসময় সরলরৈখিক হয় না।
- আপট্রেন্ডে ভলিউম: একটি শক্তিশালী আপট্রেন্ডে, সাধারণত দেখা যায় যে দাম বাড়ার সাথে সাথে ভলিউমও বাড়ছে। এর কারণ হলো নতুন ক্রেতারা বাজারে প্রবেশ করছে এবং দামকে আরও উপরে ঠেলে দিচ্ছে।
- ডাউনট্রেন্ডে ভলিউম: ডাউনট্রেন্ডের ক্ষেত্রে, দাম কমার সাথে সাথে ভলিউম বাড়তে পারে, কারণ বিক্রেতারা তাদের শেয়ার বিক্রি করতে চাইছে।
- ভলিউম স্প্রেড: ভলিউম স্প্রেড (Volume Spread) হলো একটি বিশেষ কৌশল, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভলিউমের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয়। এটি বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহ করে।
ডেলিভারি ভলিউম বিশ্লেষণের কৌশল
ডেলিভারি ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কৌশল আলোচনা করা হলো:
১. ভলিউম ট্রেন্ড (Volume Trend):
ভলিউম ট্রেন্ড হলো একটি নির্দিষ্ট সময়কালে ভলিউমের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা। যদি ভলিউম ক্রমাগত বাড়ছে, তবে এটি একটি শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে। অন্যদিকে, যদি ভলিউম কমতে থাকে, তবে এটি দুর্বল প্রবণতা বা বাজারের পরিবর্তন নির্দেশ করে।
২. অন ব্যালেন্স ভলিউম (On Balance Volume - OBV):
অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) একটি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে। এটি মূলত সংগৃহীত ভলিউম এবং বিতরণিত ভলিউমের মধ্যে ভারসাম্য দেখায়। OBV যদি দামের সাথে বাড়ছে, তবে এটি একটি বুলিশ সংকেত (bullish signal) এবং যদি কমছে, তবে এটি বিয়ারিশ সংকেত (bearish signal)।
৩. ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (Volume Weighted Average Price - VWAP):
ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) হলো একটি ট্রেডিং বেঞ্চমার্ক, যা একটি নির্দিষ্ট সময়কালে লেনদেনের গড় মূল্য নির্ধারণ করে। এটি সাধারণত দিনের মধ্যে ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করতে ব্যবহৃত হয়।
৪. অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন (Accumulation/Distribution Line):
এই লাইনটি বাজারের সংগ্রহ (accumulation) এবং বিতরণ (distribution) পর্যায়গুলি সনাক্ত করতে সাহায্য করে। যদি লাইনটি বাড়ছে, তবে এটি ইঙ্গিত করে যে ক্রেতারা বাজারে প্রবেশ করছে, এবং যদি কমছে, তবে বিক্রেতারা সক্রিয়।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ডেলিভারি ভলিউমের ব্যবহার
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ডেলিভারি ভলিউম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে কিছু উপায় আলোচনা করা হলো:
- কল/পুট অপশন নির্বাচন: ডেলিভারি ভলিউম বিশ্লেষণ করে, ট্রেডাররা কল (call) বা পুট (put) অপশন নির্বাচন করতে পারে। যদি ভলিউম বাড়ছে এবং দামও বাড়ছে, তবে কল অপশন লাভজনক হতে পারে। অন্যদিকে, যদি ভলিউম বাড়ছে এবং দাম কমছে, তবে পুট অপশন লাভজনক হতে পারে।
- এক্সপায়ারি সময় নির্ধারণ: ডেলিভারি ভলিউম ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের এক্সপায়ারি সময় (expiry time) নির্ধারণ করতে পারে। উচ্চ ভলিউমের সময়কালে ট্রেড করা সাধারণত বেশি লাভজনক হয়।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ডেলিভারি ভলিউম ট্রেডারদের তাদের ঝুঁকি পরিচালনা করতে সাহায্য করে। কম ভলিউমের সময়কালে ট্রেড করা এড়িয়ে যাওয়া উচিত, কারণ এতে অপ্রত্যাশিত মূল্য পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সংকেত নিশ্চিতকরণ: ডেলিভারি ভলিউম অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (technical indicator) থেকে প্রাপ্ত সংকেত নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
উদাহরণ
ধরা যাক, আপনি একটি নির্দিষ্ট শেয়ারের বাইনারি অপশন ট্রেড করতে চান। আপনি লক্ষ্য করলেন যে শেয়ারটির দাম বাড়ছে এবং ডেলিভারি ভলিউমও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, আপনি একটি কল অপশন কিনতে পারেন, কারণ এটি একটি শক্তিশালী আপট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয়।
অন্যদিকে, যদি আপনি দেখেন যে শেয়ারটির দাম কমছে এবং ডেলিভারি ভলিউমও বাড়ছে, তবে আপনি একটি পুট অপশন কিনতে পারেন।
সতর্কতা
ডেলিভারি ভলিউম একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল হলেও, এটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভুল নয়। ট্রেডারদের অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং মৌলিক বিশ্লেষণের (fundamental analysis) সাথে মিলিয়ে ডেলিভারি ভলিউম বিশ্লেষণ করা উচিত। শুধুমাত্র ডেলিভারি ভলিউমের উপর ভিত্তি করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
উপসংহার
ডেলিভারি ভলিউম ফিনান্সিয়াল মার্কেটের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি বাজারের গতিবিধি বুঝতে, ট্রেডিংয়ের সুযোগ খুঁজে বের করতে এবং ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, ডেলিভারি ভলিউম বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা ট্রেডারদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তাই, যেকোনো ট্রেডিংয়ের আগে ডেলিভারি ভলিউম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
আরও জানতে:
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
- ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি
- মোভিং এভারেজ
- আরএসআই (RSI)
- এমএসিডি (MACD)
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল
- ব্রেকআউট ট্রেডিং
- ডে ট্রেডিং
- সুইং ট্রেডিং
- পজিশন ট্রেডিং
- ডার্ক পুল
- অর্ডার ফ্লো
- লিকুইডিটি ট্র্যাপ
- ভলিউম প্রোফাইল
- টাইম অ্যান্ড সেলস ভলিউম
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
