ডেলিভারিবল ফিউচার্স
ডেলিভারিবল ফিউচার্স: একটি বিস্তারিত আলোচনা
ডেলিভারিবল ফিউচার্স চুক্তি হল ডেরিভেটিভ বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি এমন একটি চুক্তি যেখানে ক্রেতা এবং বিক্রেতা একটি নির্দিষ্ট ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট তারিখে বা তার আগে একটি সম্পদ (যেমন পণ্য, মুদ্রা, বা স্টক) একটি নির্দিষ্ট মূল্যে কেনা বা বিক্রি করতে সম্মত হয়। এই ধরনের চুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল চুক্তির মেয়াদপূর্তিতে সম্পদটির প্রকৃত ডেলিভারি প্রদান করা হয়। এই নিবন্ধে, আমরা ডেলিভারিবল ফিউচার্সের বিভিন্ন দিক, এর কার্যকারিতা, সুবিধা, অসুবিধা, এবং ট্রেডিং কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ডেলিভারিবল ফিউচার্স কি?
ডেলিভারিবল ফিউচার্স হল একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড চুক্তি, যা ফিউচার্স এক্সচেঞ্জ-এর মাধ্যমে কেনাবেচা করা হয়। এই চুক্তিতে, বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ একটি পূর্বনির্ধারিত মূল্যে ক্রয় বা বিক্রয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। মেয়াদপূর্তির তারিখে, বিক্রেতা সম্পদটি সরবরাহ করতে এবং ক্রেতা তা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন বিনিয়োগকারী যদি মনে করেন যে আগামীতে সোনার দাম বাড়বে, তবে তিনি সোনার ফিউচার্স চুক্তি কিনতে পারেন। মেয়াদপূর্তির তারিখে, যদি সোনার দাম বাড়ে, তবে তিনি চুক্তিটি লাভজনকভাবে নিষ্পত্তি করতে পারবেন। অন্যথায়, তিনি লোকসান সম্মুখীন হতে পারেন।
ডেলিভারিবল ফিউচার্সের প্রকারভেদ
ডেলিভারিবল ফিউচার্স বিভিন্ন ধরনের সম্পদ নিয়ে গঠিত হতে পারে। এদের মধ্যে কিছু প্রধান প্রকার নিচে উল্লেখ করা হলো:
- পণ্য ফিউচার্স: এই ধরনের ফিউচার্স চুক্তিগুলি পণ্য যেমন - সোনা, রূপা, তামা, অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ভুট্টা, সয়াবিন, চিনি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।
- মুদ্রা ফিউচার্স: মুদ্রা ফিউচার্স বিভিন্ন মুদ্রা জোড়ার (যেমন - ইউএসডি/আইএনআর, ইউরো/ডলার) উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।
- স্টক ফিউচার্স: এই ফিউচার্স চুক্তিগুলি নির্দিষ্ট স্টক বা স্টক সূচকের (যেমন - নিফটি ৫০, সেনসেক্স) উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।
- সুদের হার ফিউচার্স: এই চুক্তিগুলি সুদের হার এবং বন্ডের মূল্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।
ডেলিভারিবল ফিউচার্স কিভাবে কাজ করে?
ডেলিভারিবল ফিউচার্স চুক্তির কার্যকারিতা কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:
1. চুক্তি শুরু: প্রথমে, ফিউচার্স এক্সচেঞ্জে একটি নতুন চুক্তি তালিকাভুক্ত করা হয়। এই চুক্তিতে সম্পদের প্রকার, পরিমাণ, মেয়াদপূর্তির তারিখ, এবং মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়। 2. ট্রেডিং: বিনিয়োগকারীরা এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ফিউচার্স চুক্তি কেনা বা বিক্রি করতে পারেন। ফিউচার্সের দাম সরবরাহ এবং চাহিদা-র উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। 3. মার্জিন: ফিউচার্স ট্রেডিংয়ের জন্য বিনিয়োগকারীদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মার্জিন জমা দিতে হয়। এটি হলো চুক্তির ঝুঁকির একটি অংশ। 4. নিয়মিত নিষ্পত্তি: ফিউচার্সের দাম প্রতিদিনের বাজারের পরিস্থিতির সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনগুলি প্রতিদিন নিষ্পত্তি করা হয়, যা "মার্ক-টু-মার্কেট" নামে পরিচিত। 5. মেয়াদপূর্তি: চুক্তির মেয়াদপূর্তির তারিখে, বিক্রেতা সম্পদটি সরবরাহ করতে এবং ক্রেতা তা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে। যদি কোনো পক্ষ তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে না পারে, তবে জরিমানা ধার্য করা হয়।
| বৈশিষ্ট্য | |
| সম্পদ | |
| চুক্তির পরিমাণ | |
| মেয়াদপূর্তির মাস | |
| মূল্য | |
| মার্জিন |
ডেলিভারিবল ফিউচার্সের সুবিধা
ডেলিভারিবল ফিউচার্স ট্রেডিংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে:
- ঝুঁকি হ্রাস: ফিউচার্স চুক্তি ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতের দামের অনিশ্চয়তা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন।
- মূলধন বৃদ্ধি: সঠিকভাবে ট্রেড করতে পারলে, ফিউচার্স থেকে উল্লেখযোগ্য লাভ করা সম্ভব।
- তারল্য: ফিউচার্স বাজার সাধারণত অত্যন্ত তরল হয়, অর্থাৎ সহজে কেনা-বেচা করা যায়।
- স্বচ্ছতা: ফিউচার্স এক্সচেঞ্জগুলি বাজারের সমস্ত তথ্য প্রকাশ করে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
- হেজিং: হেজিং এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওকে বাজারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে।
ডেলিভারিবল ফিউচার্সের অসুবিধা
কিছু সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, ডেলিভারিবল ফিউচার্স ট্রেডিংয়ের কিছু ঝুঁকি এবং অসুবিধা রয়েছে:
- উচ্চ ঝুঁকি: ফিউচার্স ট্রেডিংয়ে উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে লিভারেজের কারণে।
- জটিলতা: ফিউচার্স চুক্তিগুলি জটিল হতে পারে এবং এদের কার্যকারিতা বোঝা কঠিন হতে পারে।
- মার্জিন কল: বাজারের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন কল সম্মুখীন হতে হতে পারে, যেখানে তাদের অতিরিক্ত অর্থ জমা দিতে হতে পারে।
- ডেলিভারি ঝুঁকি: মেয়াদপূর্তির তারিখে সম্পদ সরবরাহ বা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
- সময়সীমা: ফিউচার্স চুক্তির একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে, তাই বিনিয়োগকারীদের সময়সীমার মধ্যে তাদের অবস্থান নিষ্পত্তি করতে হয়।
ডেলিভারিবল ফিউচার্স ট্রেডিং কৌশল
ডেলিভারিবল ফিউচার্স ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু জনপ্রিয় কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ট্রেন্ড ফলোয়িং: এই কৌশলে, বিনিয়োগকারীরা বাজারের ট্রেন্ড অনুসরণ করে ট্রেড করেন। যদি দাম বাড়তে থাকে, তবে তারা কেনেন, এবং যদি দাম কমতে থাকে, তবে তারা বিক্রি করেন। মুভিং এভারেজ এবং আরএসআই এর মতো টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে এই কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- ব্রেকআউট ট্রেডিং: এই কৌশলে, বিনিয়োগকারীরা বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন এবং প্রতিরোধ স্তরগুলি চিহ্নিত করে ট্রেড করেন। যখন দাম এই স্তরগুলি ভেঙে যায়, তখন তারা ট্রেড প্রবেশ করেন।
- রেঞ্জ ট্রেডিং: এই কৌশলে, বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট মূল্যের মধ্যে বাজারের ওঠানামা থেকে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন।
- স্কাল্পিং: এই কৌশলে, বিনিয়োগকারীরা খুব অল্প সময়ের জন্য ট্রেড করে ছোট ছোট লাভ অর্জন করেন।
- পজিশন ট্রেডিং: এই কৌশলে, বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ফিউচার্স চুক্তি কেনেন এবং ধরে রাখেন।
ভলিউম বিশ্লেষণ এবং ডেলিভারিবল ফিউচার্স
ভলিউম বিশ্লেষণ ফিউচার্স ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বাজারের গতিবিধি এবং প্রবণতা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে।
- ভলিউম বৃদ্ধি: যখন ভলিউম বাড়ে, তখন এটি একটি শক্তিশালী প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।
- ভলিউম হ্রাস: যখন ভলিউম কমে যায়, তখন এটি একটি দুর্বল প্রবণতা বা সম্ভাব্য রিভার্সালের ইঙ্গিত দেয়।
- অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): এই সূচকটি মূল্য এবং ভলিউমের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে।
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): এই সূচকটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্যের হিসাব করে, যেখানে ভলিউমকে বিবেচনা করা হয়।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ডেলিভারিবল ফিউচার্স
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ফিউচার্স ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল সূচক নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মুভিং এভারেজ (MA): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য দেখায় এবং প্রবণতা নির্ধারণে সাহায্
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
