ডাবল কভারড কল

ডাবল কভারড কল একটি উন্নত অপশন ট্রেডিং কৌশল যা বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যারা তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের উপর থেকে অতিরিক্ত আয় তৈরি করতে চান। এই কৌশলটি বিশেষভাবে উপযোগী যখন বিনিয়োগকারীর মনে হয় যে শেয়ারের দাম স্বল্প মেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে বা সামান্য বাড়বে। এটি একটি কভারড কল কৌশলের একটি জটিল রূপ, যেখানে দুটি কল অপশন ব্যবহার করা হয়।

ডাবল কভারড কল কী?

ডাবল কভারড কল কৌশলটিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে:

বিনিয়োগকারীর কাছে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ার থাকতে হবে।
বিনিয়োগকারী একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের সাথে দুটি কল অপশন বিক্রি করেন।

এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য হল অপশন প্রিমিয়াম থেকে আয় তৈরি করা এবং একই সাথে শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলে ক্ষতির ঝুঁকি কমানো।

ডাবল কভারড কল কিভাবে কাজ করে?

ধরা যাক, একজন বিনিয়োগকারীর কাছে একটি কোম্পানির ১০০টি শেয়ার আছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫০ টাকা। বিনিয়োগকারী মনে করেন যে আগামী এক মাসে এই শেয়ারের দাম খুব বেশি বাড়বে না। এই পরিস্থিতিতে, তিনি নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারেন:

১. ১০০টি শেয়ার ধারণ করা: বিনিয়োগকারী কোম্পানির ১০০টি শেয়ার ধরে রাখেন।

২. দুটি কল অপশন বিক্রি করা: তিনি প্রতিটি অপশনে ৫০টি করে শেয়ারের জন্য দুটি কল অপশন বিক্রি করেন, যার স্ট্রাইক প্রাইস ৫৫ টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এক মাস পরে। প্রতিটি অপশনের জন্য তিনি প্রিমিয়াম হিসেবে ২ টাকা করে পান।

এখানে দুটি পরিস্থিতি আলোচনা করা হলো:

যদি শেয়ারের দাম ৫৫ টাকার নিচে থাকে: মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখে, শেয়ারের দাম ৫৫ টাকার নিচে থাকলে কল অপশনগুলি মূল্যহীন হয়ে যাবে। বিনিয়োগকারী অপশন প্রিমিয়াম (১০০ x ২ = ২০০ টাকা) সম্পূর্ণভাবে নিজের কাছে রাখতে পারবেন।

যদি শেয়ারের দাম ৫৫ টাকার উপরে চলে যায়: মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখে, শেয়ারের দাম ৫৫ টাকার উপরে চলে গেলে, বিনিয়োগকারীকে প্রতিটি অপশনের জন্য ৫০টি করে শেয়ার ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে হবে। যদিও তিনি লাভবান হবেন, তবে শেয়ারের দামের ঊর্ধ্বগতি থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে উপকৃত হতে পারবেন না।

ডাবল কভারড কল ব্যবহারের সুবিধা

অতিরিক্ত আয়: এই কৌশলের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী অপশন প্রিমিয়াম থেকে অতিরিক্ত আয় করতে পারেন।
ঝুঁকি হ্রাস: শেয়ারের দাম সামান্য বাড়লেও বিনিয়োগকারী লাভবান হন, কারণ তিনি প্রিমিয়াম আয় করেন।
পোর্টফোলিও সুরক্ষা: এটি পোর্টফোলিওকে বাজারের পতন থেকে আংশিকভাবে রক্ষা করতে পারে।

ডাবল কভারড কল ব্যবহারের অসুবিধা

সীমাবদ্ধ লাভ: শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লে, বিনিয়োগকারী অতিরিক্ত লাভ থেকে বঞ্চিত হন।
অ্যাসাইনমেন্টের ঝুঁকি: মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখে শেয়ারের দাম স্ট্রাইক প্রাইসের উপরে থাকলে, বিনিয়োগকারীকে শেয়ার বিক্রি করতে হতে পারে।
কমিশন খরচ: অপশন কেনাবেচার জন্য কমিশন দিতে হয়, যা লাভের পরিমাণ কমাতে পারে।

ডাবল কভারড কল এবং কভারড কলের মধ্যে পার্থক্য

ডাবল কভারড কল বনাম কভারড কল
ডাবল কভারড কল \| কভারড কল \|	দুটি কল অপশন বিক্রি করা হয় \| একটি কল অপশন বিক্রি করা হয় \|	কভারড কলের চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ \| ডাবল কভারড কলের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ \|	সীমিত, তবে স্থিতিশীল \| ডাবল কভারড কলের চেয়ে বেশি \|	বেশি \| কম \|	ঝুঁকি হ্রাস এবং স্থিতিশীল আয় \| অতিরিক্ত আয় তৈরি করা \|

ডাবল কভারড কল কৌশল প্রয়োগের নিয়মাবলী

শেয়ার নির্বাচন: এমন শেয়ার নির্বাচন করুন যেগুলির দাম স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা বেশি।
স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন: এমন একটি স্ট্রাইক প্রাইস নির্বাচন করুন যা বর্তমান বাজার মূল্যের থেকে সামান্য উপরে থাকে।
মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ: স্বল্প মেয়াদী অপশন নির্বাচন করুন, যেমন এক মাস বা তার কম।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: আপনার ঝুঁকির সহনশীলতা অনুযায়ী অপশন বিক্রি করুন।
বাজার পর্যবেক্ষণ: নিয়মিতভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কৌশল পরিবর্তন করুন।

উদাহরণসহ ডাবল কভারড কল

ধরা যাক, একটি বিনিয়োগকারীর কাছে XYZ কোম্পানির ২০০টি শেয়ার আছে। শেয়ারটির বর্তমান বাজার মূল্য ৬০ টাকা। বিনিয়োগকারী দুটি কল অপশন বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন, যার প্রতিটি অপশনের জন্য ১০০টি শেয়ারের ব্যবস্থা আছে, স্ট্রাইক প্রাইস ৬৫ টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এক মাস পরে। প্রতিটি অপশনের জন্য প্রিমিয়াম পাওয়া যায় ৩ টাকা।

মোট প্রিমিয়াম আয়: ২০০টি শেয়ার x ৩ টাকা = ৬০০ টাকা।

যদি মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখে XYZ কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬৫ টাকার নিচে থাকে, তবে বিনিয়োগকারী ৬০০ টাকা প্রিমিয়াম আয় করবেন এবং তার শেয়ারগুলি ধরে রাখতে পারবেন।

যদি শেয়ারের দাম ৬৫ টাকার উপরে চলে যায়, তবে বিনিয়োগকারীকে প্রতিটি অপশনের জন্য ১০০টি করে শেয়ার ৬৫ টাকায় বিক্রি করতে হবে। এই ক্ষেত্রে, তার লাভ হবে:

শেয়ার বিক্রির লাভ: (৬৫ - ৬০) x ২০০ = ১০০০ টাকা
মোট লাভ: ১০০০ + ৬০০ = ১৬০০ টাকা

এই উদাহরণে, বিনিয়োগকারী অপশন প্রিমিয়াম এবং শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে মোট ১৬০০ টাকা লাভ করতে পেরেছেন।

ডাবল কভারড কল এর জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি

যখন আপনি মনে করেন যে শেয়ারের দাম স্বল্প মেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে।
যখন আপনি আপনার পোর্টফোলিও থেকে অতিরিক্ত আয় তৈরি করতে চান।
যখন আপনি শেয়ারের দাম সামান্য বাড়লেও লাভবান হতে চান।
যখন আপনি বাজারের পতন থেকে আপনার পোর্টফোলিওকে আংশিকভাবে রক্ষা করতে চান।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

ডাবল কভারড কল কৌশল ব্যবহার করার সময় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:

স্টপ-লস অর্ডার: শেয়ারের দাম একটি নির্দিষ্ট স্তরের নিচে নেমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেয়ার বিক্রি করার জন্য স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন।
পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন: আপনার পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ অন্তর্ভুক্ত করুন, যাতে কোনো একটি সম্পদের দাম কমলেও আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগে বড় ধরনের ক্ষতি না হয়।
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: বাজারের গতিবিধি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার কৌশল পরিবর্তন করুন।
অপশন চেইন বিশ্লেষণ: অপশন চেইন বিশ্লেষণ করে স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নির্বাচন করুন।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ডাবল কভারড কল

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ডাবল কভারড কল কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যা ব্যবহার করা যেতে পারে:

মুভিং এভারেজ: শেয়ারের দামের গড় গতিবিধি জানতে মুভিং এভারেজ ব্যবহার করা হয়।
আরএসআই (Relative Strength Index): এটি শেয়ারের অতিরিক্ত ক্রয় বা অতিরিক্ত বিক্রয় পরিস্থিতি নির্দেশ করে।
এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সংকেত প্রদান করে।
বলিঙ্গার ব্যান্ডস: এটি শেয়ারের দামের অস্থিরতা পরিমাপ করে।

ভলিউম বিশ্লেষণ এবং ডাবল কভারড কল

ভলিউম বিশ্লেষণ আপনাকে বাজারের প্রবণতা এবং সম্ভাব্য মূল্য পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিতে পারে। ডাবল কভারড কল কৌশল প্রয়োগের সময় ভলিউম বিশ্লেষণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:

ভলিউম স্পাইক: যদি কোনো শেয়ারের ভলিউম হঠাৎ করে বেড়ে যায়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হতে পারে।
আপভলিউম এবং ডাউনভলিউম: আপভলিউমের সময় দাম বাড়লে এবং ডাউনভলিউমের সময় দাম কমলে, এটি একটি শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে।
অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): এটি ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং বাজারের প্রবণতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

অন্যান্য সম্পর্কিত অপশন কৌশল

কভারড কল: এটি একটি সাধারণ অপশন কৌশল, যেখানে বিনিয়োগকারী শেয়ারের উপর একটি কল অপশন বিক্রি করেন।
প্রোটেক্টিভ পুট: এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী শেয়ারের দাম কমে গেলে ক্ষতি কমানোর জন্য একটি পুট অপশন কেনেন।
স্ট্র্যাডল: এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী একই স্ট্রাইক প্রাইস এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের সাথে একটি কল এবং একটি পুট অপশন কেনেন।
স্ট্র্যাঙ্গল: এই কৌশলে, বিনিয়োগকারী বিভিন্ন স্ট্রাইক প্রাইসের সাথে একটি কল এবং একটি পুট অপশন কেনেন।
আয়রন কন্ডর: এটি একটি নিরপেক্ষ কৌশল, যা সীমিত ঝুঁকি এবং সীমিত লাভের সুযোগ প্রদান করে।

উপসংহার

ডাবল কভারড কল একটি শক্তিশালী অপশন ট্রেডিং কৌশল, যা বিনিয়োগকারীদের অতিরিক্ত আয় এবং ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এই কৌশলটি প্রয়োগ করার আগে বাজারের গতিবিধি, অপশন ট্রেডিংয়ের নিয়মাবলী এবং ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সঠিক পরিকল্পনা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, ডাবল কভারড কল আপনার বিনিয়োগ পোর্টফোলিওকে আরও লাভজনক করতে পারে।

অপশন ট্রেডিং শেয়ার বাজার বিনিয়োগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পোর্টফোলিও কভারড কল কৌশল টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ অপশন চেইন মুভিং এভারেজ আরএসআই এমএসিডি বলিঙ্গার ব্যান্ডস স্টপ-লস অর্ডার পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন প্রোটেক্টিভ পুট স্ট্র্যাডল স্ট্র্যাঙ্গল আয়রন কন্ডর শেয়ারের দাম মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ প্রিমিয়াম

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ