ট্রিগার এবং বাইন্ডিং

ট্রিগার এবং বাইন্ডিং

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, "ট্রিগার" এবং "বাইন্ডিং" শব্দ দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি বিষয় ট্রেডারদের সঠিক সময়ে ট্রেড ওপেন করতে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এই নিবন্ধে, আমরা ট্রিগার এবং বাইন্ডিংয়ের ধারণা, এদের প্রকারভেদ, ব্যবহার এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এদের গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ট্রিগার কী?

ট্রিগার হলো সেই সংকেত বা শর্ত যা একজন ট্রেডারকে একটি নির্দিষ্ট অ্যাসেটের উপর বাইনারি অপশন ট্রেড ওপেন করার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এটি মূলত একটি নির্দেশক যা মার্কেটের পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেয় এবং ট্রেডিংয়ের সুযোগ তৈরি করে। ট্রিগারগুলো টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ যেমন - মুভিং এভারেজ, আরএসআই, এমএসিডি, সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল অথবা ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ যেমন - অর্থনৈতিক ডেটা প্রকাশ, রাজনৈতিক ঘটনা অথবা কোম্পানির উপার্জনের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি হতে পারে।

ট্রিগারের প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের ট্রিগার ব্যবহার করা হয়, তাদের মধ্যে কয়েকটি প্রধান ট্রিগার নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. টেকনিক্যাল ট্রিগার: এই ট্রিগারগুলো চার্ট প্যাটার্ন এবং টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরগুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। যেমন:

• মুভিং এভারেজ ক্রসওভার: যখন একটি স্বল্পমেয়াদী মুভিং এভারেজ দীর্ঘমেয়াদী মুভিং এভারেজকে অতিক্রম করে, তখন এটিকে বুলিশ ট্রিগার হিসেবে ধরা হয়। (মুভিং এভারেজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন)
• আরএসআই (Relative Strength Index): যদি আরএসআই ৭০-এর উপরে যায়, তবে এটিকে ওভারবট (Overbought) হিসেবে ধরা হয় এবং বিক্রয়ের সংকেত হিসেবে কাজ করে। (আরএসআই বিস্তারিত)
• এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): এমএসিডি লাইন সিগন্যাল লাইনের উপরে গেলে বুলিশ এবং নিচে গেলে বেয়ারিশ ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। (এমএসিডি বিস্তারিত)
• সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স ব্রেকআউট: যখন মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট লেভেল ভেঙে নিচে নেমে যায় অথবা রেজিস্ট্যান্স লেভেল ভেঙে উপরে উঠে যায়, তখন এটি একটি শক্তিশালী ট্রিগার হতে পারে। (সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে বিস্তারিত)
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিভিন্ন ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, যেমন - ডজি, বুলিশ এনগালফিং, বিয়ারিশ এনগালফিং ইত্যাদি ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। (ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন বিস্তারিত)

২. ফান্ডামেন্টাল ট্রিগার: এই ট্রিগারগুলো অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক খবরের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। যেমন:

• বেকারত্বের হার: বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেলে সাধারণত মার্কেটে পতন দেখা যায়।
• জিডিপি (GDP) ডেটা: জিডিপি’র ডেটা ভালো হলে মার্কেটে বুলিশ প্রবণতা দেখা যায়। (জিডিপি সম্পর্কে বিস্তারিত)
• সুদের হার: সুদের হার পরিবর্তন হলে বিভিন্ন অ্যাসেটের দামে প্রভাব পড়ে।
• রাজনৈতিক ঘটনা: রাজনৈতিক অস্থিরতা বা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা মার্কেটে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

৩. ভলিউম ট্রিগার: এই ট্রিগারগুলো ট্রেডিং ভলিউমের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।

• ভলিউম স্পাইক: যখন কোনো অ্যাসেটের ভলিউম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়, তখন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রিগার হতে পারে। (ভলিউম বিশ্লেষণ বিস্তারিত)
• ভলিউম কনফার্মেশন: মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে যদি ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তবে সেই প্রবণতা শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বাইন্ডিং কী?

বাইন্ডিং হলো একটি ট্রেডকে একটি নির্দিষ্ট শর্তের সাথে আবদ্ধ করা। এটি সাধারণত স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট অর্ডারের মাধ্যমে করা হয়। বাইন্ডিং ট্রেডারদের ঝুঁকি কমাতে এবং লাভের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, বাইন্ডিংয়ের মাধ্যমে ট্রেডাররা তাদের প্রত্যাশিত রিটার্ন এবং ঝুঁকির পরিমাণ আগে থেকেই নির্ধারণ করে দিতে পারে।

বাইন্ডিংয়ের প্রকারভেদ

বাইন্ডিং সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে:

১. স্টপ-লস বাইন্ডিং: স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করতে পারে। যদি মার্কেটের মূল্য ট্রেডারের প্রত্যাশার বিপরীতে চলে যায়, তবে স্টপ-লস অর্ডার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেডটি বন্ধ করে দেয়, যা বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। (স্টপ-লস অর্ডার সম্পর্কে বিস্তারিত)

২. টেক-প্রফিট বাইন্ডিং: টেক-প্রফিট অর্ডার ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের প্রত্যাশিত লাভ নিশ্চিত করতে পারে। যখন মার্কেটের মূল্য ট্রেডারের নির্ধারিত লাভের লক্ষ্যে পৌঁছায়, তখন টেক-প্রফিট অর্ডার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেডটি বন্ধ করে দেয়, যা লাভ নিশ্চিত করে। (টেক-প্রফিট অর্ডার সম্পর্কে বিস্তারিত)

ট্রিগার এবং বাইন্ডিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক

ট্রিগার এবং বাইন্ডিং একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। ট্রিগার হলো ট্রেড ওপেন করার সংকেত, এবং বাইন্ডিং হলো ট্রেডটিকে সুরক্ষিত রাখার উপায়। একটি কার্যকর ট্রেডিং কৌশল তৈরি করার জন্য এই দুটি বিষয়কে সমন্বিতভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন।

উদাহরণস্বরূপ, একজন ট্রেডার যদি দেখেন যে একটি অ্যাসেটের মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট লেভেল থেকে বাউন্স ব্যাক করছে (ট্রিগার), তবে তিনি একটি কল অপশন কিনতে পারেন। একই সাথে, তিনি একটি স্টপ-লস অর্ডার সাপোর্ট লেভেলের নিচে এবং একটি টেক-প্রফিট অর্ডার একটি নির্দিষ্ট লাভের লক্ষ্যে সেট করতে পারেন (বাইন্ডিং)।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ট্রিগার এবং বাইন্ডিংয়ের ব্যবহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ট্রিগার এবং বাইন্ডিংয়ের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:

১. ট্রেন্ড ট্রেডিং: যদি কোনো অ্যাসেট একটি আপট্রেন্ডে থাকে, তবে ট্রেডাররা মুভিং এভারেজ ক্রসওভার বা ব্রেকআউট ট্রিগার ব্যবহার করে কল অপশন কিনতে পারেন। একই সাথে, তারা স্টপ-লস অর্ডার সাম্প্রতিক সুইং লো-এর নিচে সেট করতে পারেন। (ট্রেন্ড ট্রেডিং বিস্তারিত)

২. রেঞ্জ ট্রেডিং: যদি কোনো অ্যাসেট একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে ঘোরাফেরা করে, তবে ট্রেডাররা সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল থেকে বাউন্স ব্যাক করার ট্রিগার ব্যবহার করে পুট বা কল অপশন কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে, স্টপ-লস অর্ডার রেঞ্জের বাইরে সেট করা যেতে পারে। (রেঞ্জ ট্রেডিং বিস্তারিত)

৩. নিউজ ট্রেডিং: গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ডেটা প্রকাশের সময়, ট্রেডাররা নিউজ ট্রিগার ব্যবহার করে দ্রুত ট্রেড ওপেন করতে পারেন। তবে, এক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা খুব জরুরি। (নিউজ ট্রেডিং বিস্তারিত)

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

ট্রিগার এবং বাইন্ডিং ব্যবহার করে হলেও, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকি থাকে। ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে দেওয়া হলো:

• ছোট আকারের ট্রেড: প্রথমে ছোট আকারের ট্রেড দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে ট্রেডের আকার বাড়ান।
• স্টপ-লস ব্যবহার: প্রতিটি ট্রেডে স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন, যাতে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যায়।
• ডাইভারসিফিকেশন: আপনার পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন অ্যাসেট যুক্ত করুন, যাতে কোনো একটি অ্যাসেটের উপর বেশি নির্ভরতা না থাকে। (পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন বিস্তারিত)
• মানসিক শৃঙ্খলা: ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন এবং শুধুমাত্র আপনার ট্রেডিং কৌশলের উপর নির্ভর করুন। (মানসিক শৃঙ্খলা বিস্তারিত)
• বাজার বিশ্লেষণ: ট্রেড করার আগে ভালোভাবে বাজার বিশ্লেষণ করুন এবং বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করুন। (বাজার বিশ্লেষণ বিস্তারিত)

অতিরিক্ত কিছু কৌশল

• পিন বার (Pin Bar) কৌশল: পিন বার হলো একটি ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন যা সম্ভাব্য রিভার্সাল নির্দেশ করে। (পিন বার কৌশল বিস্তারিত)
• এলিট ওয়েভ (Elliott Wave) তত্ত্ব: এই তত্ত্ব অনুযায়ী, মার্কেটের মূল্য একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে ওঠানামা করে। (এলিট ওয়েভ তত্ত্ব বিস্তারিত)
• ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স এরিয়া চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। (ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট বিস্তারিত)
• ইচিওয় ক্লাউড (Ichimoku Cloud): ইচিওয় ক্লাউড একটি জটিল টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যা মার্কেটের ট্রেন্ড এবং মোমেন্টাম বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। (ইচিওয় ক্লাউড বিস্তারিত)
• বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): বলিঙ্গার ব্যান্ড মার্কেটের ভোলাটিলিটি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। (বলিঙ্গার ব্যান্ড বিস্তারিত)

উপসংহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ সফল হতে হলে ট্রিগার এবং বাইন্ডিংয়ের সঠিক ব্যবহার জানা জরুরি। এই দুটি বিষয় ট্রেডারদের সময়মতো ট্রেড ওপেন করতে, ঝুঁকি কমাতে এবং লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং মানসিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা একটি সফল ট্রেডিং ক্যারিয়ারের জন্য অপরিহার্য।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ