টমাস জেফারসন

টমাস জেফারসন (এপ্রিল ১৩, ১৭৪৩ – জুলাই ৪, ১৮২৬) ছিলেন একজন আমেরিকান রাষ্ট্রপতি, দার্শনিক, আইনজীবী, অভিযাত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং প্রতিষ্ঠাতা জনক। তিনি ১৭৭৬ সালের স্বাধীনতা ঘোষণা-এর প্রধান লেখক হিসেবে সুপরিচিত। জেফারসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি (১৮০১-১৮০৯) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভার্জিনিয়ার একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং গণতন্ত্র ও ব্যক্তি স্বাধীনতার ধারণাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

টমাস জেফারসন ১৭৪৩ সালের এপ্রিলে ভার্জিনিয়ার শ্যাডওয়েল নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পিটার জেফারসন ছিলেন একজন সফল প্ল্যান্টার এবং ভূমি জরিপকারী। মা জেন র‍্যান্ডলফ জেফারসন ছিলেন উইলিয়াম র‍্যান্ডলফ এর কন্যা। টমাস ছোটবেলা থেকেই অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

জেফারসন প্রথমে স্থানীয় স্কুলে এবং পরে উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি কলেজ-এ পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি আইন, ভাষা, ইতিহাস এবং দর্শন সহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। ১৭৬৭ সালে তিনি আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

রাজনৈতিক জীবন

জেফারসনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ভার্জিনিয়ার আইনসভায় যোগদানের মাধ্যমে। তিনি খুব দ্রুত একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের নীতির বিরোধিতা করেন এবং আমেরিকান উপনিবেশের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হন।

স্বাধীনতা ঘোষণা:

জেফারসন ১৭৭৬ সালে দ্বিতীয় Continental Congress-এর সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্বাধীনতা ঘোষণার খসড়া প্রণয়ন করার জন্য একটি কমিটির প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। তার লেখা স্বাধীনতা ঘোষণা আমেরিকান বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি জন লক-এর প্রাকৃতিক অধিকারের ধারণার উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছিল, যেখানে জীবন, স্বাধীনতা এবং সুখের অধিকারের কথা বলা হয়েছে।

ভার্জিনিয়ার গভর্নর:

আমেরিকান বিপ্লবের সময় (১৭৭৯-১৭৮১) জেফারসন ভার্জিনিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি ব্রিটিশ সৈন্যদের আক্রমণ থেকে রাজ্যকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন।

ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত:

১৭৮৫ সালে জেফারসন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি পাঁচ বছর ফ্রান্সে ছিলেন এবং সেখানকার সংস্কৃতি ও রাজনীতি সম্পর্কে গভীর ধারণা লাভ করেন। ফ্রান্সে থাকাকালীন তিনি ফরাসি বিপ্লবের সংস্পর্শে আসেন এবং এর আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব:

জর্জ ওয়াশিংটনের অধীনে জেফারসন প্রথম পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৭৯০-১৭৯৩)। এই সময়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন

জেফারসন ১৮০১ সালে জন অ্যাডামস-কে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৮০৯ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

লুইসিয়ানা ক্রয়:

জেফারসনের প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লুইসিয়ানা ক্রয় (১৮০৩)। তিনি ফ্রান্সের কাছ থেকে লুইসিয়ানা অঞ্চলটি কিনেছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছিল। এই ক্রয় যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমward expansion-এর পথ খুলে দেয়।

নৌবাহিনী গঠন:

জেফারসন মার্কিন নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। বার্বারি জলদস্যুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি আমেরিকান বণিক জাহাজগুলোকে সুরক্ষা প্রদান করেন।

অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন:

জেফারসন অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের উপর জোর দেন এবং রাস্তাঘাট, খাল খননসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেন।

দর্শনিক চিন্তাধারা

টমাস জেফারসন ছিলেন একজন প্রভাবশালী দার্শনিক এবং চিন্তাবিদ। তার রাজনৈতিক দর্শন উদারতাবাদ এবং গণতন্ত্র-এর উপর ভিত্তি করে গঠিত।

প্রাকৃতিক অধিকার:

জেফারসন বিশ্বাস করতেন যে প্রত্যেক মানুষের কিছু প্রাকৃতিক অধিকার আছে, যেমন জীবন, স্বাধীনতা এবং সুখের অধিকার। এই অধিকারগুলো সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নয়, বরং জন্মগতভাবে মানুষের প্রাপ্য।

সীমিত সরকার:

তিনি একটি সীমিত সরকারের পক্ষে ছিলেন, যা জনগণের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি মনে করতেন যে সরকারের ক্ষমতা কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত হওয়া উচিত এবং জনগণের উপর এর নিয়ন্ত্রণ কম হওয়া উচিত।

জনগণের সার্বভৌমত্ব:

জেফারসন জনগণের সার্বভৌমত্বের ধারণাকে সমর্থন করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সরকারের চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত হওয়া উচিত এবং জনগণই তাদের নেতা নির্বাচন করার অধিকার রাখে।

শিক্ষার গুরুত্ব:

জেফারসন শিক্ষার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন যে একটি শিক্ষিত নাগরিক সমাজ একটি সফল গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। তিনি ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন এবং সম্মানজনক বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজনৈতিক মতাদর্শ

জেফারসন ছিলেন ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান পার্টি-র প্রতিষ্ঠাতা। এই দলটি ফেডারেলিস্ট পার্টি-র বিরোধিতা করত এবং জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার উপর বেশি জোর দিত।

টমাস জেফারসনের রাজনৈতিক অবস্থান
বিষয়	অবস্থান
সরকার	সীমিত সরকার, জনগণের সার্বভৌমত্ব	অর্থনীতি	কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, মুক্ত বাণিজ্য	শিক্ষা	সার্বজনীন শিক্ষা, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ	ধর্ম	ধর্মীয় স্বাধীনতা, চার্চ ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ	বৈদেশিক নীতি	ফ্রান্সের সাথে মিত্রতা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা

ব্যক্তিগত জীবন

টমাস জেফারসন দুইবার বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন মারথা ওয়েলস স্কেলটন। তাদের কোনো সন্তান ছিল না। মারথার মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। তবে তার Sally Hemings নামের একজন ক্রীতদাসীর সাথে সম্পর্ক ছিল বলে ধারণা করা হয় এবং তাদের কয়েকজন সন্তান ছিল।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

টমাস জেফারসন ১৮২৬ সালের ৪ঠা জুলাই, তার ৮৩তম জন্মদিনে ভার্জিনিয়ার মন্টিকেলো estate-এ মারা যান। তার মৃত্যুর পর তাকে মন্টিকেলোতে সমাহিত করা হয়।

টমাস জেফারসন আমেরিকার ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা লেখার মাধ্যমে আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশ পরিচালনা করেন। তার দার্শনিক চিন্তাধারা এবং রাজনৈতিক আদর্শ আজও আমেরিকান রাজনীতি ও সমাজে প্রভাব ফেলে।

ঐতিহ্য এবং স্বীকৃতি

টমাস জেফারসনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তার জন্মদিন, ৪ঠা জুলাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
মন্টিকেলো, তার ঐতিহাসিক বাড়ি, একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
অনেক শহর, রাস্তা, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে।
আমেরিকান সংস্কৃতিতে তিনি গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

আরও দেখুন

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়

যদিও টমাস জেফারসন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তার কিছু ধারণা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। নিচে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হলো:

ঝুঁকি মূল্যায়ন (Risk Assessment): জেফারসন বিশ্বাস করতেন যে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষার জন্য ঝুঁকি নিতে হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়েও ঝুঁকি মূল্যায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগকারীকে তার ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করতে হয় এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করতে হয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Decision Making): জেফারসন একজন দক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ছিলেন। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
সুযোগ সন্ধান (Opportunity Seeking): লুইসিয়ানা ক্রয়ের মাধ্যমে জেফারসন আমেরিকার জন্য একটি বিশাল সুযোগ তৈরি করেছিলেন। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়েও সুযোগ সন্ধান করা জরুরি। বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে লাভজনক ট্রেড খুঁজে বের করতে হয়। মার্কেট সেন্টিমেন্ট বোঝা এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা (Long-Term Planning): জেফারসন ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতেন। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়েও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকা উচিত। শুধুমাত্র একটি ট্রেডের উপর নির্ভর না করে একটি সামগ্রিক কৌশল তৈরি করা প্রয়োজন। পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতা (Independence & Self-Reliance): জেফারসন ব্যক্তি স্বনির্ভরতার ওপর জোর দিতেন। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়েও একজন ট্রেডারকে স্বাধীনভাবে ট্রেড করতে হয় এবং নিজের সিদ্ধান্তের জন্য নিজেকেই দায়ী থাকতে হয়। ডিসিপ্লিন এবং মানসিক স্থিতিশীলতা এক্ষেত্রে জরুরি।

এই বিষয়গুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও, জেফারসনের জীবন ও দর্শন থেকে কিছু মূল্যবান শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে যা ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ