জোন ওয়েইন

জোন ওয়েইন (ইংরেজি: John Wayne; জন্ম: ম্যারিয়ন রবার্ট মর্টন, মে ২৬, ১৯০৭ – জুন ১১, ১৯৭৯) ছিলেন একজন মার্কিন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক। তিনি পশ্চিমা ঘরানার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। প্রায় ৫০ বছরের কর্মজীবনে ওয়েইন ১৪০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং হলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হন।

প্রাথমিক জীবন ও কর্মজীবন শুরু

ম্যারিয়ন রবার্ট মর্টন ১৯০৭ সালের ২৬ মে আইওয়া অঙ্গরাজ্যের উইন্টারসেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ক্ল্যারেন্স মর্টন ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট, যিনি পরে তেল ব্যবসায় যুক্ত হন। জোন ওয়েইনের আসল নাম ছিল ম্যারিয়ন, কিন্তু ছোটবেলায় তিনি ‘ডিউই’ নামে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ‘জোন’ নামে পরিচিত হন। ১৯১৬ সালে পরিবার ক্যালিফোর্নিয়ার গ্লেন্ডেলে চলে আসে। সেখানে ওয়েইন গ্লেন্ডেল হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং অ্যাথলেটিক্সের সাথে যুক্ত ছিলেন।

ওয়েইন ১৯২৭ সালে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন, কিন্তু পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তিনি চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং স্টুডিওতে বিভিন্ন কাজ শুরু করেন। প্রথমে তিনি ফক্স ফিল্ম কর্পোরেশনের কাছে প্রপস হিসেবে কাজ করতেন এবং ধীরে ধীরে স্টান্টম্যান হিসেবে চলচ্চিত্রে সুযোগ পান।

১৯২৯ সালে ওয়েইন প্রথমবার ‘দ্য বিগ ট্রেইল’ চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তিনি বেশ কয়েকটি পশ্চিমা চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন।

সফলতা ও তারকাখ্যাতি

১৯৩৭ সালে ওয়েইন ‘স্টেজকোচ’ চলচ্চিত্রে প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন এবং এটি তার কর্মজীবনের প্রথম বড় সাফল্য নিয়ে আসে। এরপর ১৯৩৮ সালে জন ফোর্ড পরিচালিত ‘ড্রামস অ্যালং দ্য মোহawk’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।

ওয়েইন এবং জন ফোর্ডের মধ্যেকার সহযোগিতা তাকে পশ্চিমা ঘরানার চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তারা একসাথে ‘ইয়ং মিস্টার লিনcoln’ (১৯৩৮), ‘দ্য লং ভয়েজ হোম’ (১৯৪০), ‘স্টেজকোচ’ (১৯৩৭), ‘দ্য সার্চার্স’ (১৯৫৬) এবং ‘দ্য ম্যান হু শট লিবার্টি ভ্যালান্স’ (১৯৬০) এর মতো কালজয়ী চলচ্চিত্র তৈরি করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওয়েইন চলচ্চিত্রে অভিনয় করা বন্ধ করে দেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য পেন্টাগনের সাথে কাজ করেন।

যুদ্ধ শেষে ওয়েইন আবার চলচ্চিত্রে ফিরে আসেন এবং ‘রেড রিভার’ (১৯৪৮) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে পুনরায় দর্শকদের মন জয় করেন। ১৯৫০-এর দশকে তিনি ‘দ্য আফ্রিকান কুইন’ (১৯৫১), ‘শেন’ (১৯৫৩), এবং ‘দ্য সার্চার্স’ (১৯৫৬) এর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

পশ্চিমা ঘরানার চলচ্চিত্র এবং অবদান

জোন ওয়েইন পশ্চিমা ঘরানার চলচ্চিত্রের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তার অভিনীত চরিত্রগুলো প্রায়শই সাহসী, দৃঢ়চেতা এবং নীতিবান হতো। তিনি পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং আমেরিকান আদর্শের প্রতিচ্ছবি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। ওয়েইনের চলচ্চিত্রে প্রায়শই frontier life, আইন ও শৃঙ্খলা, এবং মানুষের নৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো তুলে ধরা হতো।

ওয়েইন শুধু একজন অভিনেতা ছিলেন না, তিনি একজন পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘ওয়েইন-ফার্নান্দেজ প্রোডাকশনস’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

জোন ওয়েইন ছিলেন একজন রক্ষণশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক ছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। ওয়েইন ভিয়েতনাম যুদ্ধের সমর্থক ছিলেন এবং কমিউনিস্ট বিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন।

ওয়েইনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ তাকে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ তার রক্ষণশীল মতামতকে সমালোচনা করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

জোন ওয়েইন তিনবার বিবাহ করেন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন জোসেফিন সুলিভান, যাদের সাথে ১৯৩২ সালে বিবাহ হয় এবং ১৯৪৮ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তাদের চারটি সন্তান ছিল। এরপর তিনি ১৯৪৮ সালে পিলগ্রিম ল্যান্ডিসের সাথে বিবাহ করেন, যা ১৯৫২ সালে শেষ হয়। ১৯৫৪ সালে তিনি পিয়েতা টোরেসের সাথে বিবাহ করেন এবং তাদের তিনটি সন্তান ছিল।

স্বাস্থ্য সমস্যা ও মৃত্যু

জোন ওয়েইন দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং ১৯৭৯ সালের ১১ জুন ৭২ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার নিউপোর্ট বিচ শহরে মারা যান।

চলচ্চিত্রের তালিকা

জোন ওয়েইন ১৪০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্র হলো:

দ্য বিগ ট্রেইল (১৯২৯)
স্টেজকোচ (১৯৩৭)
ড্রামস অ্যালং দ্য মোহawk (১৯৩৮)
ইয়ং মিস্টার লিনcoln (১৯৩৮)
দ্য লং ভয়েজ হোম (১৯৪০)
রেড রিভার (১৯৪৮)
দ্য আফ্রিকান কুইন (১৯৫১)
শেন (১৯৫৩)
দ্য সার্চার্স (১৯৫৬)
দ্য ম্যান হু শট লিবার্টি ভ্যালান্স (১৯৬০)
হাউ দ্য ওয়েস্ট ওয়াজ ওন (১৯৬২)
ডন'ট কাম ইনটু মাই রুড (১৯৬৪)
ট্রু গ্রিট (১৯৬৯)
দ্য আউটলজ (১৯৭০)

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

জোন ওয়েইন তার কর্মজীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে একাডেমি পুরস্কার (অস্কার) জিতেছেন ‘ট্রু গ্রিট’ (১৯৬৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য। এছাড়াও তিনি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার এবং সিবিএস মুভি ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৭৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার তাকে প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম প্রদান করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা।

ঐতিহ্য ও প্রভাব

জোন ওয়েইন পশ্চিমা ঘরানার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার অভিনয় এবং ব্যক্তিত্ব আজও দর্শকদের অনুপ্রাণিত করে। ওয়েইনের চলচ্চিত্রগুলো পশ্চিমা সংস্কৃতি, আমেরিকান আদর্শ এবং মানুষের নৈতিকতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি হলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

আরও দেখুন

জোন ওয়েইনের চলচ্চিত্রের তালিকা
বছর	চলচ্চিত্র	ভূমিকা
১৯২৯	দ্য বিগ ট্রেইল	স্টান্টম্যান
১৯৩৭	স্টেজকোচ	র‍্যাঞ্চার
১৯৩৮	ড্রামস অ্যালং দ্য মোহawk	কলিন পিচ
১৯৪০	দ্য লং ভয়েজ হোম	পিটার ওয়েলস
১৯৪৮	রেড রিভার	ডুনসন
১৯৫১	দ্য আফ্রিকান কুইন	চার্লস অলনবি
১৯৫৩	শেন	শেন
১৯৫৬	দ্য সার্চার্স	ইথান এডওয়ার্ডস
১৯৬০	দ্য ম্যান হু শট লিবার্টি ভ্যালান্স	র‍্যাঞ্চার হল
১৯৬৯	ট্রু গ্রিট	রুস্টার কগবার্ন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ