জোনাথন সুইফট

পরিচিতি

জোনাথন সুইফট (৩০ নভেম্বর ১৬৬৭ – ১৯ অক্টোবর ১৭৪৩) ছিলেন একজন আইরিশ বংশোদ্ভূত ইংরেজ লেখক, যিনি শ্লেষ (Satire)-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠpractitioner হিসেবে পরিচিত। তিনি উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা এবং রাজনৈতিক ব্যঙ্গরচনা সহ বিভিন্ন ধারায় অবদান রেখেছেন। সুইফট আঠারো শতকের ইংল্যান্ডের সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা

জোনাথন সুইফটের জন্ম ডাবলিন শহরে। তাঁর পিতা জোনাথন সুইফট ছিলেন একজন আইনজীবী এবং মাতা অ্যাবিগেইল ইরাস্টন। বাবা মৃত্যুর পর সুইফটকে ইংল্যান্ডে তাঁর কাকার কাছে পাঠানো হয়। তিনি কিলকেনি কলেজে এবং পরে ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনা করেন। ট্রিনিটি কলেজ থেকে তিনি ১৭০২ সালে বি.এ. এবং ১৭০৪ সালে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।

সুইফট প্রথমে একজন সরকারি কেরানি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি স্যার উইলিয়াম টেম্পলের কাছে কিছুদিন কাজ করেন এবং পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের রাণী অ্যান-এর অধীনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হন।

কর্মজীবন ও সাহিত্যকর্ম

সুইফটের কর্মজীবন বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। তিনি প্রথমে টোরি দলের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং রাণী অ্যানের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিনি পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ত্যাগ করে আয়ারল্যান্ডে ফিরে যান এবং সেখানেই অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেন।

সুইফটের সাহিত্যকর্মগুলি তাঁর শ্লেষাত্মক এবং বিদ্রূপাত্মক শৈলীর জন্য বিখ্যাত। তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হলো:

এ টেল অফ এ টাব (A Tale of a Tub, 1704): এটি তাঁর প্রথম দিকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যেখানে তিনি চার্চ এবং শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন।
দ্য ব্যাটেল অফ দ্য বুকস (The Battle of the Books, 1704): এটি সাহিত্যিক বিতর্ক নিয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক রচনা।
গালিভার্স ট্রাভেলস (Gulliver's Travels, 1726): সুইফটের শ্রেষ্ঠ কাজ হিসেবে বিবেচিত এই উপন্যাসটি চারটি খণ্ডে বিভক্ত। এখানে তিনি মানব সমাজ এবং রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে তীক্ষ্ণ সমালোচনা করেছেন। লিটুলিয়ান এবং ব্রবডিংনাগ-এর কাল্পনিক দেশগুলির মাধ্যমে তিনি মানুষের সীমাবদ্ধতা এবং ত্রুটিগুলি তুলে ধরেছেন।
এ মডিয়াস্ট প্রোপোজাল (A Modest Proposal, 1729): এটি আয়ারল্যান্ডের দরিদ্র জনগণের দুর্দশা নিয়ে লেখা একটি বিখ্যাত প্রবন্ধ। এখানে তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য একটি বিতর্কিত প্রস্তাব দেন, যা আসলে সমাজের নিষ্ঠুরতা এবং উদাসীনতার প্রতি একটি তীব্র প্রতিবাদ।
ডায়ারি অফ জোনাথন সুইফট (Journal to Stella, 1710-1713): এটি সুইফটের একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী এস্থার জনসনের কাছে লেখা ব্যক্তিগত চিঠির সংকলন, যা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন এবং চিন্তাভাবনার পরিচয় দেয়।

রাজনৈতিক দর্শন ও শ্লেষ

জোনাথন সুইফট ছিলেন একজন রক্ষণশীল রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তিনি হুইগ ও টোরি উভয় দলের সমালোচনা করেছেন এবং ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক দুর্নীতি ও অসংলগ্নতার প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। তাঁর শ্লেষাত্মক রচনাগুলিতে তিনি সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, যেমন - ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতি, এবং সামাজিক অবিচার - এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

সুইফটের শ্লেষ কেবল বিনোদনমূলক ছিল না, বরং তা ছিল সমাজের ত্রুটিগুলি ধরিয়ে দেওয়ার এবং সংস্কারের আহ্বান জানানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, হাস্যরসের মাধ্যমে কঠিন সত্যকে মানুষের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করা যায়।

ব্যক্তিগত জীবন

সুইফটের ব্যক্তিগত জীবন বিতর্কিত ছিল। তিনি কখনো বিয়ে করেননি, তবে তাঁর জীবনে এস্থার জনসন (যাকে তিনি 'স্টெல்லా' নামে ডাকতেন) এবং হেলেন বার্টন-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এস্থার জনসনের মৃত্যুর পর সুইফট গভীরভাবে শোকাহত হন এবং তাঁর অবশিষ্ট জীবন নিঃসঙ্গভাবে কাটান।

উত্তরাধিকার ও প্রভাব

জোনাথন সুইফট ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। তাঁর শ্লেষাত্মক রচনাগুলি পরবর্তী প্রজন্মের লেখকদের অনুপ্রাণিত করেছে। চার্লস ডিকেন্স, মার্ক টোয়েন, এবং জর্জ অরওয়েল-এর মতো লেখকদের কাজে সুইফটের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

সুইফটের গালিভার্স ট্রাভেলস আজও একটি ক্লাসিক হিসেবে পঠিত হয় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর রচনাগুলি সমসাময়িক সমাজ এবং রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়।

শৈলী এবং কৌশল

জোনাথন সুইফটের লেখার শৈলী অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তিনি ভাষার ব্যবহারে ছিলেন অত্যন্ত যত্নশীল এবং তাঁর রচনাগুলিতে সরস ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রকাশ দেখা যায়। তিনি শ্লেষ, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, এবং তির্যক উক্তির মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করতেন।

ব্যঙ্গ ও শ্লেষের ব্যবহার : সুইফট তাঁর লেখায় প্রায়শই ব্যঙ্গ ও শ্লেষ ব্যবহার করেছেন, যা পাঠককে হাসির মাধ্যমে চিন্তা করতে বাধ্য করে।
কাল্পনিক জগতের সৃষ্টি : গালিভার্স ট্রাভেলস-এর মতো উপন্যাসে তিনি কাল্পনিক জগৎ সৃষ্টি করেছেন, যা বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে কাজ করে।
সরল ভাষার ব্যবহার : তিনি জটিল বাক্য গঠন পরিহার করে সরল ও স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, যা তাঁর রচনাগুলিকে আরও বেশি পাঠযোগ্য করে তুলেছে।
দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন : সুইফট প্রায়শই তাঁর লেখায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলি উপস্থাপন করেছেন, যা পাঠককে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে।

জোনাথন সুইফটের প্রধান রচনা
রচনা	প্রকাশের বছর	ধরন
এ টেল অফ এ টাব	১৭০৪	ব্যঙ্গ-রচনা
দ্য ব্যাটেল অফ দ্য বুকস	১৭০৪	ব্যঙ্গ-রচনা
গালিভার্স ট্রাভেলস	১৭২৬	উপন্যাস
এ মডিয়াস্ট প্রোপোজাল	১৭২৯	প্রবন্ধ
ডায়ারি টু স্টেলা	১৭১০-১৭১৩	ব্যক্তিগত চিঠি

সুইফটের কাজের আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা

জোনাথন সুইফটের কাজ আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁর রচনাগুলিতে বর্ণিত সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলি আজও বিদ্যমান। ক্ষমতার অপব্যবহার, সামাজিক বৈষম্য, এবং মানবিক মূল্যবোধের অভাব - এর মতো বিষয়গুলি আজও আলোচনার বিষয়। সুইফটের শ্লেষাত্মক রচনাগুলি আমাদের সমাজের দুর্বলতাগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এবং আমাদের নিজেদের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে উৎসাহিত করে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

外部リンク

[Project Gutenberg - Jonathan Swift](https://www.gutenberg.org/author/Jonathan_Swift)
[The Complete Works of Jonathan Swift](http://www.online-literature.com/swift/)

এই নিবন্ধে জোনাথন সুইফটের জীবন, কর্ম, সাহিত্যকর্ম, রাজনৈতিক দর্শন, শৈলী এবং আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে ২০টির বেশি অভ্যন্তরীণ লিঙ্ক ব্যবহার করা হয়েছে, যা সম্পর্কিত বিষয়গুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এছাড়াও, টেবিলের মাধ্যমে তাঁর প্রধান রচনাগুলির একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ