জাতিসংঘের সিরিয়া পর্যবেক্ষণ মিশন
জাতিসংঘ সিরিয়া পর্যবেক্ষণ মিশন
জাতিসংঘ সিরিয়া পর্যবেক্ষণ মিশন (United Nations Supervision Mission in Syria বা UNSMIS) ছিল সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রেরিত একটি শান্তিরক্ষী মিশন। ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই মিশনটি সিরিয়ার সংঘাত পর্যবেক্ষণ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। এই নিবন্ধে, মিশনের পটভূমি, উদ্দেশ্য, কার্যক্রম, সীমাবদ্ধতা এবং চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পটভূমি
২০১১ সালের মার্চ মাসে আরব বসন্ত-এর ঢেউয়ে প্রভাবিত হয়ে সিরিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বাশার আল-আসাদের শাসনের কঠোর প্রতিক্রিয়া এবং বিক্ষোভকারীদের উপর দমন-পীড়ন দ্রুতই একটি গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই সংকট সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় এবং সিরিয়ায় একটি পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই প্রেক্ষাপটে, ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল জাতিসংঘের বিশেষ দূত কফি আনান-এর প্রস্তাবের ভিত্তিতে UNSMIS গঠিত হয়।
মিশনের উদ্দেশ্য
UNSMIS-এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল:
- সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করা এবং সংঘর্ষের তীব্রতা হ্রাস করা।
- সহিংসতা বন্ধে সহায়তা করা এবং মানবিক সহায়তার পরিবেশ তৈরি করা।
- জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ-এর резолюция ২০২০ (২০১২) বাস্তবায়ন করা।
- সিরিয়ায় রাজনৈতিক সংলাপের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা।
- মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ ও নথিভুক্ত করা।
মিশনের কাঠামো ও সদস্য সংখ্যা
UNSMIS-এ সামরিক পর্যবেক্ষক, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং সহায়ক কর্মীসহ প্রায় ৩০০ জন সদস্য ছিলেন। মিশনের সামরিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত ছিল। মিশনের প্রধান ছিলেন নরওয়ের জেনারেল রবার্ট মুড।
| সদস্যের বিবরণ | | ||||
| প্রায় ২৫০ জন | | প্রায় ৩০ জন | | প্রায় ১০ জন | | প্রায় ১০ জন | | প্রায় ৩০০ জন | |
কার্যক্রম
UNSMIS-এর কার্যক্রম মূলত তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে বিভক্ত ছিল:
- পর্যবেক্ষণ: মিশনের সামরিক পর্যবেক্ষকরা সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন থেকে সংঘর্ষের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেন। তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন, সামরিক বাহিনীর চলাচল এবং বেসামরিক জনগণের উপর সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করতেন।
- মধ্যস্থতা: মিশনের রাজনৈতিক উপদেষ্টারা সিরিয়ার সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ স্থাপনের চেষ্টা করেন। তারা স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে শান্তি আলোচনার জন্য উৎসাহিত করেন।
- মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ: মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা সিরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ ও নথিভুক্ত করতেন। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সাক্ষাৎকার নিতেন এবং নিরপেক্ষভাবে তথ্য সংগ্রহ করতেন।
মিশনটি সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে যেমন দামেস্ক, হোমস, ইদলিব এবং আলেপ্পো-তে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের সুবিধার্থে কাজ করে।
চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা
UNSMIS বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়েছিল:
- সহিংসতার তীব্রতা: সিরিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় পর্যবেক্ষকদের জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রায়শই তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে বাধ্য হতেন।
- সরকারের অসহযোগিতা: সিরিয়ার সরকার মিশনের কার্যক্রমে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের অবাধে চলাচলের অনুমতি এবং তথ্য প্রাপ্তিতে বাধা দেওয়া হতো।
- বিরোধী দলের বিভেদ: সিরিয়ার বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয়ের অভাব ছিল। বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হতো, যা শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করত।
- জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন: সিরিয়ার সমাজে বিদ্যমান জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলেছিল।
- আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের অভাব: নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়া নিয়ে একটি সুস্পষ্ট ঐকমত্যের অভাব ছিল। রাশিয়া এবং চীন-এর মতো দেশগুলো সিরিয়ার সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল, যা মিশনের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলেছিল।
ফলাফল ও মূল্যায়ন
UNSMIS সীমিত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। মিশনের প্রধান অর্জনগুলো হলো:
- সহিংসতা হ্রাস: মিশন চলাকালীন সময়ে সিরিয়ায় সহিংসতার তীব্রতা কিছুটা হ্রাস পায়। তবে, এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল।
- মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথি: মিশন সিরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনার নথি সংগ্রহ করে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
- রাজনৈতিক সংলাপের প্রচেষ্টা: মিশন সিরিয়ার সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের জন্য কিছু প্রচেষ্টা চালায়, যদিও তা সফল হয়নি।
তবে, সামগ্রিকভাবে UNSMIS তার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। মিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সিরিয়ায় সংঘাত আরও তীব্র হয় এবং দেশটিতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়।
মিশন বাতিলের কারণ
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ২০১২ সালের আগস্ট মাসে UNSMIS-এর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এর প্রধান কারণ ছিল সিরিয়ার সরকার এবং বিরোধী উভয় পক্ষই শান্তি প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে অনীহা প্রকাশ করা। এছাড়াও, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাবও মিশন বাতিলের পেছনে ভূমিকা রাখে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
UNSMIS বাতিলের পর জাতিসংঘ সিরিয়ায় নতুন করে কোনো পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠায়নি। তবে, সিরিয়ার মানবিক সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করে আসছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (UNHCR) সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (WFP) সিরিয়ার অভ্যন্তরে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক (রূপক আলোচনা)
যদিও UNSMIS একটি শান্তিরক্ষী মিশন, এর কার্যক্রম এবং ফলাফলকে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ধারণার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, একজন ট্রেডার একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের মূল্য বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে। UNSMIS-এর ক্ষেত্রে, জাতিসংঘ সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি "অপশন" নিয়ে কাজ করছিল।
- ঝুঁকি মূল্যায়ন: UNSMIS-এর কার্যক্রম শুরু করার আগে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ার পরিস্থিতি এবং মিশনের ঝুঁকির মাত্রা মূল্যায়ন করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ যেমন ট্রেডাররা ঝুঁকির মূল্যায়ন করে, তেমনি জাতিসংঘও মিশনের সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করে।
- বিনিয়োগ: UNSMIS-এ সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পদ বিনিয়োগ করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ যেমন ট্রেডাররা অর্থ বিনিয়োগ করে, তেমনি জাতিসংঘও সম্পদ বিনিয়োগ করে।
- ফলাফল: UNSMIS-এর ফলাফল ছিল মিশ্র। কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য এলেও, সামগ্রিকভাবে মিশন ব্যর্থ হয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এও ট্রেডাররা লাভ বা ক্ষতি সম্মুখীন হতে পারে।
- সময়সীমা: UNSMIS-এর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এও প্রতিটি ট্রেডের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে।
- বাজারের অস্থিরতা: সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত অস্থির। এই অস্থিরতা মিশনের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এও বাজারের অস্থিরতা ট্রেডিংয়ের ফলাফলকে প্রভাবিত করে।
এই তুলনাটি সম্পূর্ণরূপে রূপক, তবে এটি UNSMIS-এর কার্যক্রমকে একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে সাহায্য করে।
আরও দেখুন
- সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ
- জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ
- কফি আনান
- জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার
- ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম
- আরব বসন্ত
- দামেস্ক
- হোমস
- ইদলিব
- আলেপ্পো
- জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী মিশন
- রাজনৈতিক বিশ্লেষন
- ভূ-রাজনৈতিক কৌশল
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
- মানবাধিকার
- যুদ্ধবিরতি
- মধ্যস্থতা
- সামরিক পর্যবেক্ষণ
- জাতিগত সংঘাত
- ধর্মীয় সংঘাত
তথ্যসূত্র
- United Nations. (2012). *United Nations Supervision Mission in Syria (UNSMIS)*. Retrieved from [1](https://www.un.org/en/peacekeeping/missions/unsmis/)
- Al Jazeera. (2012). *UN monitors end Syria mission*. Retrieved from [2](https://www.aljazeera.com/news/middleeast/2012/08/201283113310301319.html)
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
