ছোট ও মাঝারি শিল্প
ছোট ও মাঝারি শিল্প
ভূমিকা
ছোট ও মাঝারি শিল্প (Small and Medium Enterprises - SME) একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। এই শিল্পখাতটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মোট দেশজ উৎপাদনে (GDP) অবদান রাখা এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উন্নত দেশগুলোর মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এই খাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশেও শিল্পখাতের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ছোট ও মাঝারি শিল্প।
সংজ্ঞা
ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংজ্ঞা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হতে পারে, যা সাধারণত শিল্পের বিনিয়োগের পরিমাণ, কর্মীর সংখ্যা এবং বার্ষিক টার্নওভারের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশে, শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সংজ্ঞা অনুযায়ী:
- ছোট শিল্প: যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ ১ কোটি টাকার কম এবং কর্মীর সংখ্যা ৫০ জনের কম।
- মাঝারি শিল্প: যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার কম এবং কর্মীর সংখ্যা ১০০ জনের কম।
গুরুত্ব
ছোট ও মাঝারি শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে কয়েকটি প্রধান গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি: বৃহৎ শিল্পের তুলনায় ছোট ও মাঝারি শিল্প বেশি সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। কারণ এই শিল্পগুলো সাধারণত শ্রমঘন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কর্মসংস্থান নীতি প্রণয়নে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: জিডিপিতে এই খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য। এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও ভূমিকা রাখে।
- আঞ্চলিক উন্নয়ন: ছোট ও মাঝারি শিল্প সাধারণত দেশের গ্রামাঞ্চল এবং ছোট শহরগুলোতে বিকশিত হয়, যা আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে সহায়ক।
- উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন: এই খাত নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে।
- বৃহৎ শিল্পের সহায়ক: ছোট ও মাঝারি শিল্প অনেক সময় বৃহৎ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে।
প্রকারভেদ
ছোট ও মাঝারি শিল্প বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এদের মধ্যে কিছু প্রধান প্রকারভেদ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- manufacturing শিল্প: এই শিল্পে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হয়, যেমন - textile শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, চামড়া শিল্প ইত্যাদি।
- service শিল্প: এই শিল্পে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করা হয়, যেমন - কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিউটি পার্লার, অটোমোবাইল সার্ভিসিং ইত্যাদি।
- handicrafts শিল্প: এই শিল্পে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা হয়, যেমন - মৃৎশিল্প, তাঁত শিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ ইত্যাদি।
- agro-processing শিল্প: এই শিল্পে কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, যেমন - চাল কল, তেল কল, ডাল মিল ইত্যাদি।
সমস্যা
ছোট ও মাঝারি শিল্প বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। এদের মধ্যে কিছু প্রধান সমস্যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মূলধন সংকট: এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রায়শই পর্যাপ্ত ঋণ এবং বিনিয়োগ পেতে সমস্যা হয়। ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা একটি বড় সমস্যা।
- প্রযুক্তিগত দুর্বলতা: অনেক উদ্যোক্তা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পান না, যা তাদের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের অভাব এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
- marketing সমস্যা: ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোর সাধারণত নিজস্ব বিপণন এবং বিজ্ঞাপনয়ের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে না।
- অবকাঠামোগত দুর্বলতা: বিদ্যুৎ, পরিবহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব এই শিল্পের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
- সরকারি সহায়তা অভাব: অনেক সময় উদ্যোক্তারা সরকারি নীতি এবং সহায়তা সম্পর্কে অবগত থাকেন না বা সময়মতো তা পান না।
সমাধান
উপরোক্ত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কিছু প্রস্তাবনা নিচে দেওয়া হলো:
- মূলধন সরবরাহ বৃদ্ধি: সরকার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এই শিল্পের জন্য সহজ শর্তে ঋণ এবং বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং এঞ্জেল বিনিয়োগ উৎসাহিত করা যেতে পারে।
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: উদ্যোক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা প্রদান করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন করে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
- বিপণন সহায়তা: ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোর জন্য বিপণন এবং বিজ্ঞাপনয়ের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
- অবকাঠামো উন্নয়ন: বিদ্যুৎ, পরিবহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ)গুলোতে অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
- সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি: সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নীতি এবং সহায়তা সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের জানাতে হবে এবং সময়মতো তা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এক জানালা পরিষেবা (One-Stop Service) চালু করা যেতে পারে।
- দক্ষতা উন্নয়ন: উদ্যোক্তা এবং শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য vocational training এর ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকারের ভূমিকা
সরকার ছোট ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- নীতি প্রণয়ন: সরকার শিল্পখাতের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করেছে, যা এই শিল্পের বিকাশে সহায়ক। শিল্পনীতি এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
- ঋণ সহায়তা: সরকার বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই শিল্পের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে।
- প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: সরকার উদ্যোক্তা এবং শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
- অবকাঠামো উন্নয়ন: সরকার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে।
- প্রণোদনা: সরকার এই শিল্পে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশের ছোট ও মাঝারি শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। demographic dividend, অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে সুযোগ তৈরি হওয়ার কারণে এই শিল্পখাত আরও বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে, তথ্য প্রযুক্তি (IT) এবং textile শিল্পে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্ক, (যদিও সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবুও একটি সংযোগ স্থাপন করা হলো)
বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি আর্থিক বিনিয়োগ কৌশল। এই কৌশল ব্যবহার করে, একজন ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট সম্পদের (যেমন: স্টক, কমোডিটি, কারেন্সি পেয়ার) দাম ভবিষ্যতে বাড়বে নাকি কমবে, তা অনুমান করে বিনিয়োগ করতে পারে। ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের জন্য বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে, এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ, তাই অভিজ্ঞ ট্রেডারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার
ছোট ও মাঝারি শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এই শিল্পের বিকাশ দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের সঠিক নীতি ও সহায়তা, উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
| সমস্যা | সমাধান |
| মূলধন সংকট | সহজ শর্তে ঋণ ও বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা |
| প্রযুক্তিগত দুর্বলতা | আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান |
| বিপণন সমস্যা | বিপণন ও বিজ্ঞাপনয়ের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ |
| অবকাঠামোগত দুর্বলতা | বিদ্যুৎ, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি |
| সরকারি সহায়তা অভাব | সরকারি নীতি ও সহায়তা সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের অবহিত করা |
আরও দেখুন
- উদ্যোক্তা
- শিল্পনীতি
- অর্থনীতি
- কর্মসংস্থান
- মোট দেশজ উৎপাদন
- আঞ্চলিক উন্নয়ন
- শিল্প মন্ত্রণালয়
- বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (BSCIC)
- ভেঞ্চার ক্যাপিটাল
- এঞ্জেল বিনিয়োগ
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্ক
- ই-কমার্স
- বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ)
- ভোকেশনাল ট্রেনিং
- এক জানালা পরিষেবা
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- বিনিয়োগ কৌশল
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
- বৈদেশিক মুদ্রা
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
