ছোট এবং মাঝারি আকারের কোম্পানি

ছোট এবং মাঝারি আকারের কোম্পানি (Small and Medium Enterprises - SME) একটি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সকল কোম্পানি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মোট দেশজ উৎপাদন (GDP)-এ অবদান রাখা এবং উদ্ভাবন এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নিবন্ধে, ছোট ও মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলোর বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, গুরুত্ব, সমস্যা এবং বিকাশের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

সংজ্ঞা

ছোট এবং মাঝারি আকারের কোম্পানির সংজ্ঞা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। সাধারণত, বিনিয়োগের পরিমাণ, কর্মী সংখ্যা এবং বার্ষিক টার্নওভারের ওপর ভিত্তি করে এই কোম্পানিগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।

ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংজ্ঞা (উদাহরণ)
ভিত্তি	ছোট শিল্প
বিনিয়োগ	সাধারণত ৫০ লক্ষ টাকার কম
কর্মী সংখ্যা	৫০ জনের কম
বার্ষিক টার্নওভার	১০ কোটি টাকার কম

বাংলাদেশ-এর ক্ষেত্রে, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ (MSME) ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, শিল্পখাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ও কর্মীসংখ্যার ভিত্তিতে এই বিভাজন করা হয়।

প্রকারভেদ

ছোট এবং মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন প্রকারভেদ করা যায়। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রকার নিচে উল্লেখ করা হলো:

একক মালিকানা ব্যবসা (Sole Proprietorship): এই ধরনের ব্যবসায় একজন ব্যক্তি নিজের নামে ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং ব্যবসার সমস্ত লাভ ও লোকসানের জন্য তিনি নিজেই দায়ী থাকেন।
অংশীদারি ব্যবসা (Partnership): দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং লাভ ও লোকসান ভাগ করে নেন।
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি (Private Limited Company): এই ধরনের কোম্পানিতে সীমিত সংখ্যক শেয়ারহোল্ডার থাকেন এবং শেয়ারগুলো সাধারণভাবে জনগণের কাছে বিক্রি করা যায় না।
পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (Public Limited Company): এই ধরনের কোম্পানিতে শেয়ার সংখ্যায় কোনো সীমাবদ্ধতা নেই এবং শেয়ারগুলো স্টক এক্সচেঞ্জ-এ তালিকাভুক্ত করা যায়।
সমবায় সমিতি (Cooperative Society): এই ধরনের ব্যবসা সকলে মিলেমিশে পরিচালনা করে এবং এর উদ্দেশ্য হলো সদস্যদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা।

ছোট ও মাঝারি শিল্পের গুরুত্ব

কর্মসংস্থান সৃষ্টি: SME sector বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে, যা বেকারত্ব কমাতে সহায়ক। কর্মসংস্থান নীতি প্রণয়নে এই বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: এই খাতটি GDP-তে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে এবং জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।
উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: SME-রা প্রায়শই নতুন ধারণা এবং প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন: অনেক SME তাদের পণ্য ও সেবা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, যা দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে।
আঞ্চলিক উন্নয়ন: SME-রা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহায়ক।
শিল্পের বহুমুখীকরণ: এই খাত বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও সেবা সরবরাহ করে, যা অর্থনীতির বহুমুখীকরণ নিশ্চিত করে।

সমস্যাসমূহ

SME sector বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। এদের মধ্যে কিছু প্রধান সমস্যা নিচে উল্লেখ করা হলো:

মূলধন সংকট: SME-দের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন। জামানতের অভাব এবং উচ্চ সুদের হার এক্ষেত্রে প্রধান বাধা।
অবকাঠামোর অভাব: বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, রাস্তাঘাট, পরিবহন ইত্যাদি অবকাঠামোগত দুর্বলতা SME-দের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়।
প্রযুক্তির অভাব: আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কম होने के कारण SME-রা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকে।
বাজারজাতকরণ সমস্যা: SME-রা প্রায়শই তাদের পণ্য ও সেবা বাজারজাত করতে সমস্যায় পড়ে।
দক্ষ জনশক্তির অভাব: প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীর অভাব SME-দের একটি বড় সমস্যা।
নীতিগত সহায়তার অভাব: সরকারের নীতি ও সহায়তা অনেক সময় SME-দের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
কর এবং লাইসেন্স সংক্রান্ত জটিলতা: কর এবং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় SME-রা প্রায়শই হয়রানির শিকার হয়।

বিকাশের উপায়

SME sector-এর বিকাশের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

ঋণ সুবিধা বৃদ্ধি: SME-দের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার এবং ব্যাংকগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন এর ওপর জোর দেওয়া উচিত।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন: বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, রাস্তাঘাট, পরিবহন ইত্যাদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি।
প্রযুক্তিগত সহায়তা: SME-দের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাজারজাতকরণে সহায়তা: SME-দের জন্য বাজারজাতকরণ এবং প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহিত করতে হবে।
দক্ষ জনশক্তি তৈরি: বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে।
নীতিগত সহায়তা: SME-দের জন্য সহায়ক নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। শিল্পনীতি এবং বাণিজ্যনীতি SME-বান্ধব হওয়া উচিত।
কর এবং লাইসেন্স ব্যবস্থার সরলীকরণ: কর এবং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
গবেষণা এবং উন্নয়ন (R&D): SME-দের জন্য গবেষণা এবং উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে তারা নতুন পণ্য এবং পরিষেবা তৈরি করতে পারে।
মেন্টরিং প্রোগ্রাম: সফল উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তাদের মেন্টরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
ক্লস্টার ডেভেলপমেন্ট: একই ধরনের SME-দের একটি নির্দিষ্ট স্থানে একত্রিত করে ক্লস্টার তৈরি করতে হবে, যা তাদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং SME

যদিও বাইনারি অপশন ট্রেডিং সরাসরি SME-এর সাথে সম্পর্কিত নয়, SME-র মালিকরা তাদের ব্যবসার জন্য অতিরিক্ত বিনিয়োগের জন্য এই ধরনের আর্থিক উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। তবে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, এবং SME মালিকদের উচিত এটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে বুঝে তারপর বিনিয়োগ করা। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

কৌশলগত বিশ্লেষণ

SME-দের জন্য কৌশলগত বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কোম্পানি তার বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে। SWOT বিশ্লেষণ (Strengths, Weaknesses, Opportunities, Threats) এক্ষেত্রে একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি।

SWOT বিশ্লেষণ
উপাদান
শক্তি (Strengths)
দুর্বলতা (Weaknesses)
সুযোগ (Opportunities)
হুমকি (Threats)

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

SME-রা তাদের ব্যবসার ডেটা বিশ্লেষণ করে বাজারের প্রবণতা বুঝতে পারে। এই জন্য চার্ট এবং গ্রাফ ব্যবহার করা হয়।

ভলিউম বিশ্লেষণ

SME-রা তাদের পণ্যের চাহিদা এবং যোগান সম্পর্কে ধারণা পেতে ভলিউম বিশ্লেষণ করে।

উপসংহার

ছোট এবং মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই খাতটির বিকাশের জন্য সরকার, ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। SME-দের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারলে, তারা দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে।

উদ্যোক্তা উন্নয়ন শিল্প ঋণ ক্ষুদ্র ঋণ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাণিজ্য সংগঠন কোম্পানি আইন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি অধিকার গুণমান নিয়ন্ত্রণ পরিবেশগত সুরক্ষা সামাজিক দায়বদ্ধতা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অর্গানাইজেশন (ISO) মোট গুণমান ব্যবস্থাপনা (TQM) লি lean manufacturing সিক্স সিগমা Supply chain management বৈশ্বিকায়ন ডিজিটাল মার্কেটিং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং Content marketing Search engine optimization (SEO)

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ