গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস

গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস (জিএসএম) হলো দ্বিতীয় প্রজন্মের (২জি) মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি। এটি ডিজিটাল সেলুলার প্রযুক্তি যা ১৯৯০-এর দশকে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত মোবাইল নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে অন্যতম। জিএসএম শুধু একটি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেম যা মোবাইল যোগাযোগকে উন্নত করেছে। এই নিবন্ধে জিএসএম-এর প্রযুক্তি, ইতিহাস, কার্যকারিতা, সুবিধা, অসুবিধা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ইতিহাস

১৯৮০-এর দশকে, প্রথম প্রজন্মের (১জি) অ্যানালগ মোবাইল নেটওয়ার্কগুলির সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করে ইউরোপীয় টেলিকমিউনিকেশন স্ট্যান্ডার্ডস ইনস্টিটিউট (ইটিএসআই) একটি নতুন ডিজিটাল স্ট্যান্ডার্ড তৈরির কাজ শুরু করে। এই উদ্যোগের ফলস্বরূপ ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে জিএসএম-এর প্রথম সংস্করণ আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯১ সালে ফিনল্যান্ডে প্রথম জিএসএম নেটওয়ার্ক চালু হয় এবং দ্রুত এটি ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

জিএসএম-এর প্রযুক্তি

জিএসএম মূলত টাইম ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস (টিডিএমএ) এবং ফ্রিকোয়েন্সি ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস (এফডিএমএ) প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত। এর মূল উপাদানগুলো হলো:

মোবাইল স্টেশন (এমএস): এটি ব্যবহারকারীর মোবাইল ফোন বা ডিভাইস।
বেস স্টেশন (বিএস): এটি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে মোবাইল স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করে।
বেস স্টেশন কন্ট্রোলার (বিএসসি): এটি একাধিক বেস স্টেশন নিয়ন্ত্রণ করে এবং কল ব্যবস্থাপনার কাজ করে।
মোবাইল সুইচিং সেন্টার (এমএসসি): এটি নেটওয়ার্কের মূল অংশ, যা কল রাউটিং এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে।
হোম লোকেশন রেজিস্টার (এইচএলআর): এটি গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ করে।
ভিজিটর লোকেশন রেজিস্টার (ভিএলআর): এটি বর্তমানে নেটওয়ার্কে থাকা গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ করে।

জিএসএম নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডগুলো হলো ৯০০ MHz, ১৮০০ MHz এবং ১৯০০ MHz। প্রতিটি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডকে আবার একাধিক চ্যানেলে ভাগ করা হয়, যা ব্যবহারকারীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে সাহায্য করে।

জিএসএম-এর কার্যকারিতা

জিএসএম নেটওয়ার্ক নিম্নলিখিত ধাপগুলোর মাধ্যমে কাজ করে:

১. মোবাইল স্টেশন (এমএস) বেস স্টেশনের (বিএস) সাথে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে। ২. বেস স্টেশন কন্ট্রোলার (বিএসসি) সিগন্যাল প্রক্রিয়া করে এবং মোবাইল সুইচিং সেন্টারে (এমএসসি) পাঠায়। ৩. এমএসসি কল রাউটিং করে এবং অন্য মোবাইল স্টেশনে বা পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্কে (পিএসটিএন) কলটি সংযোগ করে। ৪. ডাটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে, জিএসএম নেটওয়ার্ক সার্কিট সুইচড ডেটা (সিএসডি), প্যাকেট সুইচড ডেটা (পিএসডি) এবং এজ (এনহ্যান্সড ডেটা রেট ফর জিএসএম ইভোলিউশন) এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

জিএসএম-এর সুবিধা

উচ্চ গুণমান সম্পন্ন ভয়েস কল: জিএসএম ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে স্পষ্ট এবং নির্ভরযোগ্য ভয়েস কল নিশ্চিত করে।
আন্তর্জাতিক রোমিং: জিএসএম নেটওয়ার্ক বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত হওয়ায় ব্যবহারকারীরা আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
নিরাপত্তা: জিএসএম নেটওয়ার্কে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, যা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষা করে।
এসএমএস: জিএসএম নেটওয়ার্ক শর্ট মেসেজ সার্ভিস (এসএমএস) ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করে, যা দ্রুত এবং সহজে বার্তা আদান প্রদানে সহায়ক।
ডাটা পরিষেবা: জিএসএম নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সীমিত পরিমাণে ডাটা পরিষেবা পাওয়া যায়, যা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে।

জিএসএম-এর অসুবিধা

কম ডেটা স্পিড: জিএসএম নেটওয়ার্কের ডেটা স্পিড তুলনামূলকভাবে কম, যা দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয়।
নেটওয়ার্কের দুর্বল কভারেজ: প্রত্যন্ত অঞ্চলে জিএসএম নেটওয়ার্কের কভারেজ দুর্বল হতে পারে।
ব্যাটারি লাইফ: জিএসএম নেটওয়ার্কে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে।
পুরোনো প্রযুক্তি: বর্তমানে জিএসএম একটি পুরোনো প্রযুক্তি, তাই নতুন প্রজন্মের নেটওয়ার্কের তুলনায় এর কার্যকারিতা কম।

জিএসএম-এর আধুনিকীকরণ

জিএসএম প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য বিভিন্ন আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

এজ (EDGE): এনহ্যান্সড ডেটা রেট ফর জিএসএম ইভোলিউশন (এজ) জিএসএম নেটওয়ার্কের ডেটা স্পিড বৃদ্ধি করে।
জিPRS (GPRS): জেনারেল প্যাকেট রেডিও সার্ভিস (জিPRS) প্যাকেট সুইচড ডেটা ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দেয়।
৩জি (3G): জিএসএম নেটওয়ার্ককে তৃতীয় প্রজন্মের (৩জি) নেটওয়ার্কে আপগ্রেড করার মাধ্যমে উচ্চগতির ডেটা পরিষেবা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।
৪জি (4G): পরবর্তীতে জিএসএম নেটওয়ার্ককে চতুর্থ প্রজন্মের (৪জি) এলটিই (লং টার্ম ইভোলিউশন) নেটওয়ার্কে আপগ্রেড করা হয়েছে, যা আরও দ্রুতগতির ডেটা পরিষেবা প্রদান করে।

জিএসএম এবং অন্যান্য নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য

| বৈশিষ্ট্য | জিএসএম | সিডিএমএ | ওয়াইম্যাক্স | |---|---|---|---| | প্রযুক্তি | টিডিএমএ এবং এফডিএমএ | সিডিএমএ | আইইইই ৮0২.১৬ | | ফ্রিকোয়েন্সি | ৯০০/১৮০০/১৯০০ MHz | ৮০০/১৯০০ MHz | বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি | | ডেটা স্পিড | সীমিত | মাঝারি | উচ্চ | | কভারেজ | বিশ্বব্যাপী | আঞ্চলিক | সীমিত | | নিরাপত্তা | উচ্চ | মাঝারি | উচ্চ |

জিএসএম-এর ভবিষ্যৎ

বর্তমানে, জিএসএম প্রযুক্তি ধীরে ধীরে তার স্থান হারাচ্ছে। এর কারণ হলো নতুন প্রজন্মের নেটওয়ার্ক যেমন ৪জি এবং ৫জি-এর দ্রুত বিস্তার। তবে, অনেক উন্নয়নশীল দেশে জিএসএম এখনও বহুল ব্যবহৃত এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভবিষ্যতে, জিএসএম নেটওয়ার্ককে ৫জি নেটওয়ার্কের সাথে সমন্বিত করে আরও উন্নত পরিষেবা প্রদানের চেষ্টা করা হবে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে জিএসএম-এর সম্পর্ক

জিএসএম নেটওয়ার্কের উন্নতির সাথে সাথে মোবাইল ডেটার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অনলাইন ট্রেডিং-এর সুযোগ তৈরি করেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জনপ্রিয় অনলাইন ট্রেডিং পদ্ধতি, যেখানে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের দাম বাড়বে বা কমবে কিনা তা অনুমান করে ট্রেড করেন। দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগের কারণে জিএসএম নেটওয়ার্ক বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে কাজ করে।

এখানে কিছু কৌশল আলোচনা করা হলো যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ কাজে লাগে:

ট্রেন্ড অনুসরণ : বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ট্রেড করা।
সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল : গুরুত্বপূর্ণ মূল্যস্তর চিহ্নিত করে ট্রেড করা।
মোমেন্টাম : দামের পরিবর্তনের হার বিশ্লেষণ করে ট্রেড করা।
ভলিউম বিশ্লেষণ : ট্রেডিং ভলিউম পর্যবেক্ষণ করে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ বোঝা।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা : প্রতিটি ট্রেডে ঝুঁকির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা।

এছাড়াও, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয়, যেমন:

ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য, অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) এবং অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন ব্যবহার করা হয়।

উপসংহার

গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস (জিএসএম) মোবাইল যোগাযোগ প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখেছে। যদিও জিএসএম বর্তমানে নতুন প্রজন্মের নেটওয়ার্কের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে, তবুও এর অবদান অনস্বীকার্য।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ