গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম

ভূমিকা

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) হলো একটি স্যাটেলাইট ভিত্তিক навигация ব্যবস্থা। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ কর্তৃক তৈরি করা হয়েছে। এই সিস্টেমটি পৃথিবীর যেকোনো স্থানে অবস্থান নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। GPS মূলত তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত: মহাকাশ অংশ, নিয়ন্ত্রণ অংশ এবং ব্যবহারকারী অংশ। এটি ভূ-স্থানিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। আধুনিক জীবনে GPS এর ব্যবহার ব্যাপক। যোগাযোগ, পরিবহন, কৃষি, সামরিক বিজ্ঞান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

GPS এর ইতিহাস

GPS এর ধারণা ১৯৫০ এর দশকে শুরু হয়েছিল, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক卫星 উৎক্ষেপণ করে। স্পুটনিকের সংকেত ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অবস্থান নির্ণয় করার ধারণা পান। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ট্রানজিট নামক একটি স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম তৈরি করে, যা ১৯64 সালে প্রথম ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ট্রানজিট সিস্টেমটির কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। ১৯৮০ এর দশকে, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ GPS তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯৫ সালে GPS সম্পূর্ণরূপে চালু হয় এবং এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

GPS এর গঠন

GPS তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত:

• মহাকাশ অংশ: এই অংশে ২৯টি স্যাটেলাইট রয়েছে, যেগুলো পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে। এই স্যাটেলাইটগুলো অত্যন্ত নির্ভুল সময় এবং অবস্থান সম্পর্কে তথ্য প্রেরণ করে। প্রতিটি স্যাটেলাইট প্রায় ২০,২০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং প্রায় ১২ ঘণ্টার মধ্যে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।

• নিয়ন্ত্রণ অংশ: এই অংশে প্রধান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, মনিটরিং স্টেশন এবং ডেটা লিঙ্ক স্টেশন অন্তর্ভুক্ত। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্যাটেলাইটগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করে। মনিটরিং স্টেশনগুলো স্যাটেলাইট থেকে আসা সংকেত বিশ্লেষণ করে এবং ডেটা লিঙ্ক স্টেশনগুলো স্যাটেলাইটগুলোতে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠায়।

• ব্যবহারকারী অংশ: এই অংশে GPS রিসিভার অন্তর্ভুক্ত, যা স্যাটেলাইট থেকে আসা সংকেত গ্রহণ করে এবং ব্যবহারকারীর অবস্থান নির্ণয় করে। GPS রিসিভারগুলো বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসে ব্যবহার করা হয়, যেমন - স্মার্টফোন, নেভিগেশন ডিভাইস, গাড়ি এবং বিমান।

GPS স্যাটেলাইটগুলোর তালিকা

স্যাটেলাইট ব্লক

উৎক্ষেপণ বছর

সংখ্যা

বৈশিষ্ট্য

ব্লক I

১৯৭৮-১৯৮৫

১০

পরীক্ষামূলক

ব্লক II

১৯৮৯-১৯৯৭

৯

উন্নত নির্ভুলতা

ব্লক IIA

১৯৯০-২০০৫

৪

আরও উন্নত নির্ভুলতা

ব্লক IIF

২০০৭-২০১০

১২

আধুনিক সংকেত

ব্লক III

২০১৬-বর্তমান

১০

উচ্চ ক্ষমতা ও নির্ভুলতা

GPS কিভাবে কাজ করে

GPS রিসিভার অন্তত চারটি স্যাটেলাইট থেকে সংকেত গ্রহণ করে। প্রতিটি স্যাটেলাইট তার অবস্থান এবং সংকেত পাঠানোর সময় সম্পর্কে তথ্য পাঠায়। GPS রিসিভার এই তথ্য ব্যবহার করে ত্রিকোণমিতি (Trigonometry) পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর দূরত্ব নির্ণয় করে। চারটি স্যাটেলাইটের তথ্য ব্যবহার করে রিসিভার ত্রিমাত্রিকভাবে (three-dimensionally) ব্যবহারকারীর অবস্থান নির্ণয় করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায়, রিসিভার প্রতিটি স্যাটেলাইট থেকে আসা সংকেতের সময় পার্থক্য পরিমাপ করে এবং সেই অনুযায়ী দূরত্ব হিসাব করে।

• ত্রিকোণমিতি (Trigonometry): GPS রিসিভার ত্রিকোণমিতি ব্যবহার করে স্যাটেলাইট থেকে দূরত্ব মেপে নিজের অবস্থান নির্ণয় করে।
• সময় সিঙ্ক্রোনাইজেশন (Time Synchronization): GPS স্যাটেলাইটগুলোতে অত্যন্ত নির্ভুল পারমাণবিক ঘড়ি (Atomic Clock) ব্যবহার করা হয়। রিসিভার এই ঘড়ির সাথে সিঙ্ক্রোনাইজ করে সঠিক সময় জানতে পারে।
• ডপলার প্রভাব (Doppler Effect): স্যাটেলাইটের গতি এবং রিসিভারের আপেক্ষিক গতির কারণে সংকেতের ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন পরিমাপ করে রিসিভার তার গতি এবং দিক নির্ণয় করতে পারে।

GPS এর ব্যবহার

GPS এর ব্যবহার বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত। নিচে কয়েকটি প্রধান ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

• নেভিগেশন: GPS এর সবচেয়ে সাধারণ ব্যবহার হলো নেভিগেশন। এটি গাড়ি, বিমান, জাহাজ এবং পদযাত্রীদের পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। Google Maps, Waze এবং অন্যান্য নেভিগেশন অ্যাপ GPS প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

• জরিপ (Surveying): GPS ব্যবহার করে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে ভূমির জরিপ করা যায়। এটি ভূ-নকশা তৈরি এবং সম্পত্তি নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।

• কৃষি: GPS প্রযুক্তি কৃষিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন - জমির মানচিত্র তৈরি, ফসল পর্যবেক্ষণ এবং সার প্রয়োগের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ।

• সামরিক বিজ্ঞান: সামরিক ক্ষেত্রে GPS অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্ষেপণাস্ত্র গাইডেং, সৈন্যদের অবস্থান নির্ণয় এবং যুদ্ধক্ষেত্র ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়।

• দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: GPS দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা চিহ্নিত করতে এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

• বিজ্ঞান গবেষণা: GPS ভূমিকম্প, ভূ-চ্যুতি এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়।

• বিনোদন: জিওক্যাশিং এবং অন্যান্য আউটডোর বিনোদনমূলক কার্যক্রমে GPS ব্যবহৃত হয়।

GPS এর সীমাবদ্ধতা

GPS অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

• সংকেত বাধা: GPS সংকেত বিল্ডিং, পাহাড়, গাছ এবং ঘন কুয়াশা দ্বারা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

• আবহাওয়া: আবহাওয়ার খারাপ পরিস্থিতিতে GPS এর নির্ভুলতা কমে যেতে পারে।

• জ্যামিং (Jamming): ইচ্ছাকৃতভাবে GPS সংকেত জ্যাম করে দেওয়া হলে এটি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।

• স্পুফিং (Spoofing): ভুল সংকেত পাঠিয়ে GPS রিসিভারকে বিভ্রান্ত করা যায়, যার ফলে ভুল অবস্থান নির্ণয় হতে পারে।

• নির্ভুলতার সীমাবদ্ধতা: সাধারণ GPS রিসিভারের নির্ভুলতা কয়েক মিটার পর্যন্ত হতে পারে, যা কিছু অ্যাপ্লিকেশনের জন্য যথেষ্ট নয়।

GPS এর আধুনিকীকরণ

GPS সিস্টেমটিকে আরও উন্নত করার জন্য বিভিন্ন আধুনিকীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

• GPS III: এই নতুন প্রজন্মের স্যাটেলাইটগুলি আরও উন্নত সংকেত প্রদান করে এবং নির্ভুলতা বৃদ্ধি করে।
• গ্যালিলিও (Galileo): এটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক তৈরি একটি স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম, যা GPS এর বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
• গ্লোনাস (GLONASS): এটি রাশিয়া কর্তৃক তৈরি একটি স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম, যা GPS এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
• বেইডু (BeiDou): এটি চীন কর্তৃক তৈরি একটি স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম, যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিশেষভাবে কার্যকর।

এই আধুনিকীকরণ প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে GPS সিস্টেমের নির্ভুলতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং উপলব্ধতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে GPS এর সম্পর্ক

যদিও সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, GPS ডেটা আর্থিক বাজারে কিছু প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

• সরবরাহ চেইন (Supply Chain) পর্যবেক্ষণ: GPS ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন এবং সরবরাহ চেইন ট্র্যাক করা যায়। এই তথ্য commodities trading এবং stock market এ প্রভাব ফেলতে পারে।
• ভৌগোলিক চাহিদা (Geographical Demand): GPS ডেটা থেকে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের চাহিদা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, যা retail এবং real estate বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।
• পরিবহন খরচ (Transportation Costs): GPS ডেটা বিশ্লেষণ করে পরিবহন খরচ এবং দক্ষতা সম্পর্কে জানা যায়, যা logistics এবং shipping industry তে ব্যবহৃত হয়।

এই প্রভাবগুলো সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্কিত না হলেও, সামগ্রিক বাজারের গতিবিধি বুঝতে সহায়ক হতে পারে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ GPS ডেটার সরাসরি ব্যবহার না থাকলেও, টেকনিক্যাল এবং ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের পূর্বাভাস দেওয়া যায়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলো:

• মুভিং এভারেজ (Moving Average): এটি একটি জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর, যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য নির্ণয় করে বাজারের প্রবণতা বুঝতে সাহায্য করে।
• রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (RSI): এই ইন্ডিকেটরটি বাজারের অতিরিক্ত ক্রয় (overbought) বা অতিরিক্ত বিক্রয় (oversold) অবস্থা নির্দেশ করে।
• MACD (Moving Average Convergence Divergence): এটি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে সংকেত দেয়।
• ভলিউম (Volume): ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজারের লেনদেনের পরিমাণ এবং শক্তি বোঝা যায়।
• সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল (Support and Resistance Level): এই লেভেলগুলো বাজারের ঊর্ধ্বগতি এবং নিম্নগতির সীমা নির্ধারণ করে।
• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern): ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট ব্যবহার করে বাজারের সম্ভাব্য গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
• বলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands): এই ব্যান্ডগুলি বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করে এবং সম্ভাব্য ব্রেকআউট চিহ্নিত করে।
• ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): এই টুলটি বাজারের সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
• স্টোকাস্টিক অসিলেটর (Stochastic Oscillator): এটি একটি মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর, যা বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য রিভার্সাল পয়েন্ট চিহ্নিত করে।

এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে বাইনারি অপশন ট্রেডাররা বাজারের পূর্বাভাস দিতে এবং সঠিক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

উপসংহার

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) আধুনিক বিশ্বের একটি অপরিহার্য প্রযুক্তি। এর বহুমুখী ব্যবহার আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন এনেছে। GPS এর সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, ক্রমাগত আধুনিকীকরণ এবং নতুন প্রযুক্তির সংযোজন এটিকে আরও নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর করে তুলছে। যদিও বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে এর সরাসরি সম্পর্ক নেই, তবে GPS ডেটা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বাজারের গতিবিধি বুঝতে সহায়ক হতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ