গ্যাস টারবাইন

গ্যাস টারবাইন একটি টারবাইন ইঞ্জিন যা গ্যাসের গতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘূর্ণন শক্তি উৎপাদন করে। এই ঘূর্ণন শক্তি পরবর্তীতে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন, উড়োজাহাজের প্রপালশন এবং শিল্পক্ষেত্রে পাম্প বা কম্প্রেসার চালানো। গ্যাস টারবাইন আধুনিক পাওয়ার জেনারেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

কার্যপ্রণালী

গ্যাস টারবাইনের মূল কার্যপ্রণালী ব্রেইটন চক্রের (Brayton Cycle) উপর ভিত্তি করে গঠিত। এই চক্রে চারটি প্রধান প্রক্রিয়া রয়েছে:

১. বাতাস গ্রহণ ও সংকোচন (Intake & Compression): প্রথমে, বাতাস ফিল্টার হয়ে টারবাইনে প্রবেশ করে। এরপর কম্প্রেসারের মাধ্যমে বাতাসকে উচ্চ চাপে সংকুচিত করা হয়। কম্প্রেসারটি টারবাইনের সাথে একটি শ্যাফটের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। ২. দহন (Combustion): সংকুচিত বাতাস দহন কক্ষে (Combustion Chamber) প্রবেশ করে, যেখানে জ্বালানি (সাধারণত প্রাকৃতিক গ্যাস, ডিজেল, বা কেরোসিন) স্প্রে করা হয় এবং প্রজ্বলিত করা হয়। এই দহন প্রক্রিয়ার ফলে উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপের গ্যাস উৎপন্ন হয়। ৩. টারবাইন সম্প্রসারণ (Turbine Expansion): উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপের গ্যাস টারবাইনের ব্লেডগুলোর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যার ফলে টারবাইন ঘুরতে শুরু করে। এই ঘূর্ণন শক্তি শ্যাফটের মাধ্যমে কম্প্রেসার এবং জেনারেটরের সাথে যুক্ত থাকে। ৪. নির্গমন (Exhaust): টারবাইন থেকে নির্গত গ্যাস পরিবেশে নির্গত হয়। এই গ্যাসের তাপ পুনরুদ্ধার করে বাষ্প উৎপাদন টারবাইনের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে (Combined Cycle Power Plant)।

গ্যাস টারবাইনের কার্যপ্রণালী
পর্যায়	বর্ণনা	প্রক্রিয়া
বাতাস গ্রহণ ও সংকোচন	বাতাস ফিল্টার হয়ে টারবাইনে প্রবেশ করে এবং কম্প্রেসার দ্বারা সংকুচিত হয়	আইসেন্ট্রপিক কম্প্রেশন
দহন	সংকুচিত বাতাসের সাথে জ্বালানি মিশ্রিত করে প্রজ্বলন করা হয়	আইসোবারিক দহন
টারবাইন সম্প্রসারণ	উচ্চ তাপমাত্রার গ্যাস টারবাইনের ব্লেডের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টারবাইন ঘোরায়	আইসেন্ট্রপিক সম্প্রসারণ
নির্গমন	টারবাইন থেকে নির্গত গ্যাস পরিবেশে নির্গত হয়	постійна тиск

প্রকারভেদ

গ্যাস টারবাইন বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, তাদের গঠন এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে:

সরল চক্র গ্যাস টারবাইন (Simple Cycle Gas Turbine): এটি সবচেয়ে সাধারণ প্রকার, যেখানে শুধুমাত্র একটি কম্প্রেসার, দহন কক্ষ এবং টারবাইন থাকে।
সম্মিলিত চক্র গ্যাস টারবাইন (Combined Cycle Gas Turbine): এই ধরনের টারবাইনে গ্যাস টারবাইনের সাথে একটি বাষ্প টারবাইন যুক্ত থাকে। গ্যাস টারবাইন থেকে নির্গত তাপ বাষ্প তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যা বাষ্প টারবাইন ঘুরিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এটি টারবাইনের সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে এটি বহুল ব্যবহৃত।
অ্যারোডিরাইভড গ্যাস টারবাইন (Aeroderivative Gas Turbine): এই টারবাইনগুলো মূলত বিমানের জেট ইঞ্জিন থেকে উদ্ভূত, যা স্থলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এগুলি সাধারণত দ্রুত চালু এবং বন্ধ করা যায়।
শিল্প গ্যাস টারবাইন (Industrial Gas Turbine): এই টারবাইনগুলো শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমন পাম্প, কম্প্রেসার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি চালানো।

উপাদানসমূহ

একটি গ্যাস টারবাইনের প্রধান উপাদানগুলো হলো:

কম্প্রেসার (Compressor): বাতাসকে সংকুচিত করে। এটি অ্যাক্সিয়াল বা সেন্ট্রিফিউগাল ডিজাইনের হতে পারে। কম্প্রেসার ডিজাইন দক্ষতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ।
দহন কক্ষ (Combustion Chamber): এখানে জ্বালানি এবং বাতাস মিশ্রিত হয়ে দহন ঘটে।
টারবাইন (Turbine): গ্যাসের শক্তিকে ঘূর্ণন শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
নজেল (Nozzle): গ্যাসের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে টারবাইনের ব্লেডের উপর সঠিক দিকে প্রবাহিত করে।
জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা (Fuel Supply System): টারবাইনে জ্বালানি সরবরাহ করে।
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Control System): টারবাইনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
শুরু করার ব্যবস্থা (Starting System): টারবাইন চালু করতে ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহারক্ষেত্র

গ্যাস টারবাইনের ব্যবহারক্ষেত্রগুলি বহুমুখী। নিচে কয়েকটি প্রধান ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

বিদ্যুৎ উৎপাদন (Power Generation): গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রধান উৎস। বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়াতে এর ভূমিকা অপরিহার্য।
বিমান প্রপালশন (Aircraft Propulsion): জেট ইঞ্জিনগুলিতে গ্যাস টারবাইন ব্যবহৃত হয়, যা বিমানকে উড্ডয়ন করতে সাহায্য করে। জেট ইঞ্জিনের কার্যকারিতা গ্যাস টারবাইনের উপর নির্ভরশীল।
শিল্প অ্যাপ্লিকেশন (Industrial Applications): পাম্প, কম্প্রেসার এবং অন্যান্য শিল্প যন্ত্রপাতি চালাতে গ্যাস টারবাইন ব্যবহৃত হয়।
তেল ও গ্যাস শিল্প (Oil and Gas Industry): গ্যাস টারবাইন তেল ও গ্যাস উত্তোলনে এবং প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হয়।
নৌপরিবহন (Marine Propulsion): কিছু জাহাজ এবং নৌযানে গ্যাস টারবাইন ব্যবহার করা হয়।

সুবিধা এবং অসুবিধা

গ্যাস টারবাইনের কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে:

সুবিধা:

উচ্চ ক্ষমতা-থেকে-ওজন অনুপাত (High Power-to-Weight Ratio): গ্যাস টারবাইন ছোট আকারের জন্য বেশি শক্তি উৎপাদন করতে পারে।
দ্রুত চালু এবং বন্ধ করা যায় (Fast Start-up and Shutdown): এটি পিক লোড চাহিদা মেটাতে সহায়ক।
কম নির্গমন (Low Emissions): আধুনিক গ্যাস টারবাইনগুলো কম ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত করে।
নির্ভরযোগ্যতা (Reliability): গ্যাস টারবাইন সাধারণত নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।

অসুবিধা:

উচ্চ জ্বালানি খরচ (High Fuel Cost): গ্যাস টারবাইনের জ্বালানি খরচ বেশি হতে পারে।
তাপমাত্রা সংবেদনশীলতা (Temperature Sensitivity): উচ্চ তাপমাত্রা টারবাইনের উপাদানগুলোর ক্ষতি করতে পারে।
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ (Maintenance Cost): গ্যাস টারবাইনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলনামূলকভাব

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ