কম্প্রেসার

কম্প্রেসার একটি বহুল ব্যবহৃত টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং অন্যান্য ফিনান্সিয়াল মার্কেট-এ ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত বাজারের ভোলatility পরিমাপ করে এবং বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দেয়। কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরটি ডনচিয়ান চ্যানেল এবং বোলিঙ্গার ব্যান্ডস-এর ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এই নিবন্ধে, কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরের গঠন, ব্যবহার, সুবিধা, অসুবিধা এবং ট্রেডিং কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কম্প্রেসারের গঠন

কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরটি দুটি লাইনের সমন্বয়ে গঠিত। এই লাইন দুটি বাজারের মূল্যের ওঠানামার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।

আপার ব্যান্ড (Upper Band): এটি সাধারণত বাজারের সর্বোচ্চ মূল্যের উপরে অবস্থান করে এবং একটি প্রতিরোধক স্তর হিসেবে কাজ করে।
লোয়ার ব্যান্ড (Lower Band): এটি সাধারণত বাজারের সর্বনিম্ন মূল্যের নিচে অবস্থান করে এবং একটি সমর্থন স্তর হিসেবে কাজ করে।

এই দুটি ব্যান্ডের মধ্যে বাজারের মূল্য যখন সংকুচিত হয়, তখন এটিকে কম্প্রেসড মার্কেট হিসেবে ধরা হয়। অন্যদিকে, যখন ব্যান্ড দুটি প্রসারিত হয়, তখন এটিকে এক্সপ্যান্ডেড মার্কেট হিসেবে ধরা হয়।

কম্প্রেসার কিভাবে কাজ করে?

কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরটি মূলত পরিসংখ্যানের একটি নির্দিষ্ট সূত্র ব্যবহার করে গণনা করা হয়। এই সূত্রটি বাজারের মূল্য এবং স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশনের উপর ভিত্তি করে তৈরি। কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরের মূল ধারণা হলো, যখন বাজারের ভোলatility কম থাকে, তখন ব্যান্ড দুটি কাছাকাছি আসে এবং যখন ভোলatility বেশি থাকে, তখন ব্যান্ড দুটি দূরে সরে যায়।

কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরের গণনা পদ্ধতি:

কম্প্রেসার গণনা পদ্ধতি
আপার ব্যান্ড	= মিডল ব্যান্ড + (স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন * গুণক)
লোয়ার ব্যান্ড	= মিডল ব্যান্ড - (স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন * গুণক)
মিডল ব্যান্ড	= সাধারণত সিম্পল মুভিং এভারেজ (SMA)

এখানে, গুণকের মান সাধারণত ২ অথবা ৩ ধরা হয়। এই মান পরিবর্তন করে ট্রেডাররা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ইন্ডিকেটরের সংবেদনশীলতা বাড়াতে বা কমাতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ কম্প্রেসারের ব্যবহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:

ট্রেডিং সংকেত তৈরি করা: যখন কম্প্রেসার ব্যান্ড সংকুচিত হয়, তখন এটি একটি ব্রেকআউটের সংকেত দেয়। ব্রেকআউট আপট্রেন্ড বা ডাউনট্রেন্ড যেকোনো দিকে হতে পারে। ট্রেডাররা এই সংকেত ব্যবহার করে কল অপশন বা পুট অপশন-এ ট্রেড করতে পারে।
ভোলatility পরিমাপ করা: কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরটি বাজারের ভোলatility পরিমাপ করতে সাহায্য করে। কম ভোলatility-এর সময় ট্রেড করা সাধারণত কম ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ বাজারের গতিবিধি স্থিতিশীল থাকে।
সাপোর্ট এবং রেজিস্টেন্স স্তর নির্ধারণ করা: কম্প্রেসারের আপার এবং লোয়ার ব্যান্ডগুলি সাপোর্ট এবং রেজিস্টেন্স স্তর হিসেবে কাজ করে। ট্রেডাররা এই স্তরগুলি ব্যবহার করে এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণ করতে পারে।
ট্রেড নিশ্চিতকরণ: অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে কম্প্রেসার ব্যবহার করে ট্রেডিং সংকেত নিশ্চিত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আরএসআই বা এমএসিডি-এর সাথে কম্প্রেসার ব্যবহার করে আরও নির্ভরযোগ্য ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

কম্প্রেসারের সুবিধা

সহজ ব্যবহার: কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরটি ব্যবহার করা খুব সহজ এবং এটি সহজেই যেকোনো ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম-এ পাওয়া যায়।
কার্যকর সংকেত: এটি বাজারের সম্ভাব্য ব্রেকআউট এবং ভোলatility পরিবর্তন সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সংকেত প্রদান করে।
বহুমুখী ব্যবহার: কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরটি বিভিন্ন ধরনের ফিনান্সিয়াল মার্কেট এবং টাইমফ্রেম-এ ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঝুঁকি হ্রাস: বাজারের ভোলatility পরিমাপ করে ট্রেডারদের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

কম্প্রেসারের অসুবিধা

মিথ্যা সংকেত: কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরটি মাঝে মাঝে মিথ্যা সংকেত দিতে পারে, বিশেষ করে যখন বাজার সাইডওয়েজ মুভমেন্টে থাকে।
সংবেদনশীলতা: ইন্ডিকেটরের সংবেদনশীলতা বেশি হলে এটি অপ্রয়োজনীয় সংকেত দিতে পারে, যা ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যান্য ইন্ডিকেটরের উপর নির্ভরশীলতা: শুধুমাত্র কম্প্রেসারের উপর নির্ভর করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে মিলিয়ে এটি ব্যবহার করা উচিত।
টাইমফ্রেমের প্রভাব: কম্প্রেসারের সংকেত বিভিন্ন টাইমফ্রেম-এ ভিন্ন হতে পারে। তাই, সঠিক টাইমফ্রেম নির্বাচন করা জরুরি।

কম্প্রেসার ভিত্তিক ট্রেডিং কৌশল

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ কম্প্রেসার ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে কিছু জনপ্রিয় ট্রেডিং কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. ব্রেকআউট কৌশল: যখন কম্প্রেসার ব্যান্ড সংকুচিত হয় এবং তারপর একটি নির্দিষ্ট দিকে ব্রেকআউট হয়, তখন সেই দিকে ট্রেড করা যেতে পারে। যদি আপার ব্যান্ড ব্রেক হয়, তবে কল অপশন এবং যদি লোয়ার ব্যান্ড ব্রেক হয়, তবে পুট অপশন নির্বাচন করা উচিত।

২. রিভার্সাল কৌশল: যখন বাজারের মূল্য কম্প্রেসার ব্যান্ডের বাইরে গিয়ে আবার ভেতরে ফিরে আসে, তখন এটি একটি রিভার্সালের সংকেত দেয়। এই ক্ষেত্রে, যদি মূল্য আপার ব্যান্ড থেকে নিচে নেমে আসে, তবে পুট অপশন এবং যদি লোয়ার ব্যান্ড থেকে উপরে উঠে যায়, তবে কল অপশন নির্বাচন করা যেতে পারে।

৩. ভোলatility ট্রেডিং কৌশল: কম্প্রেসার ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে বাজারের ভোলatility পরিমাপ করে ট্রেড করা যায়। যখন ভোলatility কম থাকে, তখন রেঞ্জ-বাউন্ড ট্রেডিং কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে এবং যখন ভোলatility বেশি থাকে, তখন ব্রেকআউট ট্রেডিং কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. কম্বিনেশন কৌশল: কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরকে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করে ট্রেডিং সংকেত আরও নিশ্চিত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, এমএসিডি এবং কম্প্রেসার একসাথে ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের নির্ভুলতা বাড়ানো যেতে পারে।

কম্প্রেসারের বিকল্প ইন্ডিকেটর

কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরের পাশাপাশি আরও কিছু টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর রয়েছে যা বাজারের ভোলatility পরিমাপ করতে এবং ট্রেডিং সংকেত তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি বিকল্প ইন্ডিকেটর উল্লেখ করা হলো:

বোলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): এটি একটি জনপ্রিয় ভোলatility ইন্ডিকেটর যা বাজারের মূল্যের ওঠানামা পরিমাপ করে।
এভারেজ ট্রু রেঞ্জ (ATR): এটি বাজারের গড় পরিসর পরিমাপ করে এবং ভোলatility সম্পর্কে ধারণা দেয়।
স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন (Standard Deviation): এটি বাজারের মূল্যের বিচ্ছুরণ পরিমাপ করে এবং ভোলatility নির্ধারণ করে।
ডনচিয়ান চ্যানেল (Donchian Channel): এটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মূল্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় এবং ব্রেকআউট সংকেত প্রদান করে।
প্যারাবলিক সার (Parabolic SAR): এটি বাজারের সম্ভাব্য রিভার্সাল পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।

উপসংহার

কম্প্রেসার ইন্ডিকেটরটি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং অন্যান্য ফিনান্সিয়াল মার্কেট-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল। এটি বাজারের ভোলatility পরিমাপ করে এবং ট্রেডিং সংকেত তৈরি করতে সাহায্য করে। তবে, শুধুমাত্র এই ইন্ডিকেটরের উপর নির্ভর করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস-এর সাথে মিলিয়ে এটি ব্যবহার করা উচিত। সঠিক ট্রেডিং কৌশল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কম্প্রেসার ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ট্রেডাররা তাদের লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ