গ্যাপ
গ্যাপ ট্রেডিং : বাইনারি অপশন এর জন্য একটি সম্পূর্ণ গাইড
ভূমিকা গ্যাপ ট্রেডিং ফিনান্সিয়াল মার্কেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি মূলত কোনো শেয়ারের আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইস এবং পরের দিনের ওপেনিং প্রাইসের মধ্যেকার পার্থক্য নির্দেশ করে। এই গ্যাপগুলো টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস-এর মাধ্যমে বোঝা যায় এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিতে পারে। এই নিবন্ধে, গ্যাপ ট্রেডিংয়ের বিভিন্ন দিক, প্রকারভেদ, কারণ এবং বাইনারি অপশনে এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
গ্যাপ কী? গ্যাপ হলো কোনো শেয়ারের চার্ট-এ দেখা যাওয়া একটি শূন্য স্থান, যেখানে শেয়ারের দাম সরাসরি উপরে বা নিচে লাফ দেয় এবং এর মাঝে কোনো ট্রেডিং হয় না। এটি সাধারণত তখনই ঘটে যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর বা ঘটনার প্রেক্ষিতে মার্কেটে দ্রুত পরিবর্তন আসে।
গ্যাপের প্রকারভেদ গ্যাপ সাধারণত চার ধরনের হয়ে থাকে:
১. ব্রেকওয়ে গ্যাপ (Breakaway Gap): এই ধরনের গ্যাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্যান্স বা সাপোর্ট লেভেল ভেঙে যাওয়ার সময় দেখা যায়। এটি সাধারণত নতুন ট্রেন্ডের শুরু নির্দেশ করে।
২. রানওয়ে গ্যাপ (Runaway Gap) বা কনটিনিউয়েশন গ্যাপ: যখন একটি শেয়ার একটি নির্দিষ্ট ট্রেন্ডে শক্তিশালী মুভমেন্ট করে, তখন এই ধরনের গ্যাপ দেখা যায়। এটি ট্রেন্ডের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে। ট্রেন্ড লাইন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
৩. এক্সহস্টশন গ্যাপ (Exhaustion Gap): এই গ্যাপ ট্রেন্ডের শেষে দেখা যায় এবং দুর্বলতা নির্দেশ করে। এটি সাধারণত ট্রেন্ডের বিপরীত দিকে মুভমেন্টের পূর্বাভাস দেয়। রিভার্সাল প্যাটার্ন চিহ্নিত করতে এটি সাহায্য করে।
৪. কমোন গ্যাপ (Common Gap): এই ধরনের গ্যাপগুলো সাধারণত কম গুরুত্বপূর্ণ হয় এবং খুব দ্রুত পূরণ হয়ে যায়। এগুলোর তেমন কোনো তাৎপর্য নেই। ভলিউম কম থাকলে এই ধরনের গ্যাপ দেখা যায়।
গ্যাপ কেন হয়? গ্যাপ হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে:
- অর্থনৈতিক ঘোষণা: কোনো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ডেটা প্রকাশিত হলে, যেমন জিডিপি, বেকারত্বের হার বা মুদ্রাস্ফীতি-র ঘোষণা মার্কেটে বড় ধরনের গ্যাপ তৈরি করতে পারে।
- কোম্পানির খবর: কোনো কোম্পানির আয় বিবরণী, লভ্যাংশ ঘোষণা বা অন্য কোনো বড় খবর শেয়ারের দামে গ্যাপ তৈরি করতে পারে।
- রাজনৈতিক ঘটনা: রাজনৈতিক অস্থিরতা বা নীতি পরিবর্তন মার্কেটে অনিশ্চয়তা তৈরি করে, যার ফলে গ্যাপ দেখা যেতে পারে।
- অপ্রত্যাশিত ঘটনা: কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা মার্কেটে গ্যাপ তৈরি করতে পারে।
- নিউজ ও গুজব: অনেক সময় শুধুমাত্র গুজবের কারণেও শেয়ারের দামে গ্যাপ দেখা যায়।
বাইনারি অপশনে গ্যাপ ট্রেডিং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে গ্যাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গ্যাপগুলো সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগ তৈরি করতে পারে। নিচে কয়েকটি কৌশল আলোচনা করা হলো:
১. ব্রেকওয়ে গ্যাপ ট্রেডিং: যখন কোনো শেয়ার ব্রেকওয়ে গ্যাপ তৈরি করে, তখন এটি একটি শক্তিশালী বুলিশ বা বেয়ারিশ ট্রেন্ডের শুরু হতে পারে। বাইনারি অপশনে, গ্যাপের দিকে ট্রেড করা যেতে পারে। যদি গ্যাপটি বুলিশ হয়, তাহলে কল অপশন এবং বেয়ারিশ হলে পুট অপশন কেনা যেতে পারে।
২. রানওয়ে গ্যাপ ট্রেডিং: রানওয়ে গ্যাপগুলো সাধারণত ট্রেন্ডের ধারাবাহিকতা নির্দেশ করে। এই ক্ষেত্রে, আপনি ট্রেন্ডের দিকেই ট্রেড করতে পারেন। বুলিশ ট্রেন্ডে কল অপশন এবং বেয়ারিশ ট্রেন্ডে পুট অপশন নির্বাচন করতে পারেন।
৩. এক্সহস্টশন গ্যাপ ট্রেডিং: এক্সহস্টশন গ্যাপগুলো ট্রেন্ডের শেষ নির্দেশ করে। এই ক্ষেত্রে, আপনি ট্রেন্ডের বিপরীত দিকে ট্রেড করতে পারেন। বুলিশ ট্রেন্ডের শেষে পুট অপশন এবং বেয়ারিশ ট্রেন্ডের শেষে কল অপশন কিনতে পারেন।
৪. গ্যাপ ফিলিং ট্রেডিং: অনেক সময় গ্যাপগুলো দ্রুত পূরণ হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে, আপনি গ্যাপ ফিল হওয়ার দিকে ট্রেড করতে পারেন। যদি গ্যাপটি উপরের দিকে হয়, তাহলে পুট অপশন এবং নিচের দিকে হলে কল অপশন কিনতে পারেন।
গ্যাপ ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি গ্যাপ ট্রেডিংয়ের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে:
- ফলস ব্রেকআউট: অনেক সময় শেয়ারের দাম গ্যাপ তৈরি করার পরে আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে। একে ফলস ব্রেকআউট বলা হয়।
- অপ্রত্যাশিত মুভমেন্ট: গ্যাপের পরে শেয়ারের দাম অপ্রত্যাশিতভাবে মুভ করতে পারে, যার ফলে আপনার ট্রেডটি লোকসানে যেতে পারে।
- সময়সীমা: বাইনারি অপশনে ট্রেড করার সময় সময়সীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভুল সময়সীমা নির্বাচন করলে আপনার ট্রেডটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
গ্যাপ বিশ্লেষণ করার পদ্ধতি গ্যাপ বিশ্লেষণ করার জন্য কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে:
- ভলিউম বিশ্লেষণ: গ্যাপের সাথে ভলিউম বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি গ্যাপের সময় ভলিউম বেশি থাকে, তাহলে এটি একটি শক্তিশালী সংকেত হতে পারে। ভলিউম ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে এটি বোঝা যায়।
- চার্ট প্যাটার্ন: গ্যাপের সাথে চার্ট প্যাটার্নগুলো পর্যবেক্ষণ করুন। বিভিন্ন ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন গ্যাপের পরে গঠিত হতে পারে, যা ভবিষ্যতের মুভমেন্টের পূর্বাভাস দিতে পারে।
- সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল: গ্যাপগুলো সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেলগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। এই লেভেলগুলো চিহ্নিত করে ট্রেড করা যেতে পারে।
- মুভিং এভারেজ: মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে গ্যাপের প্রবণতা বোঝা যায়।
কিছু অতিরিক্ত টিপস
- স্টপ লস ব্যবহার করুন: গ্যাপ ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে স্টপ লস ব্যবহার করা খুবই জরুরি। এটি আপনার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
- ডেমো অ্যাকাউন্ট দিয়ে অনুশীলন করুন: রিয়েল ট্রেডিং করার আগে ডেমো অ্যাকাউন্টে গ্যাপ ট্রেডিংয়ের অনুশীলন করুন।
- মার্কেট নিউজ অনুসরণ করুন: মার্কেটের খবরাখবর নিয়মিত অনুসরণ করুন। এটি আপনাকে গ্যাপ তৈরির কারণ বুঝতে সাহায্য করবে।
- পোর্টফোলিওDiversify করুন: আপনার পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন ধরনের শেয়ার রাখুন। এটি আপনার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
উপসংহার গ্যাপ ট্রেডিং বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই নিবন্ধে, গ্যাপের বিভিন্ন প্রকারভেদ, কারণ, ট্রেডিং কৌশল এবং ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, এই তথ্যগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে সবসময় ঝুঁকি থাকে, তাই সতর্কতার সাথে ট্রেড করুন এবং নিজের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল অনুসরণ করুন।
আরও জানতে:
- ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- আরএসআই (RSI)
- এমএসিডি (MACD)
- বোলিঙ্গার ব্যান্ড
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- মানি ম্যানেজমেন্ট
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস
- বাইনারি অপশন প্ল্যাটফর্ম
- অপশন ট্রেডিং
- চার্ট প্যাটার্ন
- ভলিউম স্প্রেড অ্যানালাইসিস
- ইম্প্যাক্ট অফ নিউজ ইভেন্টস
- গ্যাপ ফিলিং স্ট্র্যাটেজি
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
- সুইং ট্রেডিং
- ডে ট্রেডিং
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
