গুগলের ইতিহাস

সূচনা

গুগল হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ইন্টারনেট ভিত্তিক পরিষেবা এবং পণ্য সরবরাহ করে।搜索引擎 (সার্চ ইঞ্জিন), অনলাইন বিজ্ঞাপন, ক্লাউড কম্পিউটিং, সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার—সবকিছুতেই গুগলের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এই নিবন্ধে গুগলের প্রতিষ্ঠা, বিকাশ এবং বর্তমান অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক পর্যায় (১৯৯৬-১৯৯৮)

গুগলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির দুজন পিএইচডি ছাত্র ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিন-এর হাত ধরে। তারা দু’জন মিলে "ব্যাকRub" নামে একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেন। ব্যাকRub ছিল একটি জটিল অ্যালগরিদম যা ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু এবং অন্যান্য ওয়েবসাইটের সাথে তার সংযোগের ওপর ভিত্তি করে ফলাফল প্রদর্শন করত। এই অ্যালগরিদমটি ওয়েবপেজগুলোর র‍্যাঙ্কিং নির্ধারণ করত।

১৯৯৭ সালে, ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিন তাদের সার্চ ইঞ্জিনটির নাম পরিবর্তন করে গুগল রাখেন। "গুগল" শব্দটি "googol" থেকে এসেছে, যার অর্থ ১ এর পরে ১০০টি শূন্য। এই নামটি তারা তাদের সার্চ ইঞ্জিনের বিশাল তথ্য ধারণক্ষমতা বোঝানোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন।

১৯৯৮ সালে গুগল আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছর তারা ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্ক-এ তাদের প্রথম অফিস খোলে।

বিকাশ ও জনপ্রিয়তা (১৯৯৮-২০০৪)

গুগলের দ্রুত বিকাশের পেছনে প্রধান কারণ ছিল এর উন্নত সার্চ ইঞ্জিন প্রযুক্তি। অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলোর তুলনায় গুগল অনেক দ্রুত এবং নির্ভুল ফলাফল দিতে পারত। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গুগল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

২০০০ সালে গুগল অ্যাডওয়ার্ডস (AdWords) চালু করে, যা বিজ্ঞাপনদাতাদের গুগলের সার্চ ফলাফলে বিজ্ঞাপন দেখানোর সুযোগ করে দেয়। এটি গুগলের রাজস্বের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ায়।
২০০১ সালে গুগল ইমেজ সার্চ (Image Search) চালু করে, যা ব্যবহারকারীদের ছবি দিয়ে অনুসন্ধান করার সুযোগ দেয়।
২০০২ সালে গুগল নিউজ (News) চালু করে, যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর একত্রিত করে উপস্থাপন করে।
২০০৪ সালে গুগল জিমেল (Gmail) চালু করে, যা বিনামূল্যে ইমেল পরিষেবা প্রদান করে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য বিশাল স্টোরেজ সুবিধা নিয়ে আসে।

নতুন দিগন্ত (২০০৪-২০১৫)

২০০৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গুগল তাদের ব্যবসার পরিধি অনেক বাড়িয়ে তোলে। এই সময়কালে গুগল বেশ কিছু নতুন পণ্য এবং পরিষেবা চালু করে।

২০০৫ সালে গুগল গুগল ম্যাপস (Google Maps) এবং গুগল আর্থ (Google Earth) চালু করে, যা ব্যবহারকারীদের মানচিত্র এবং পৃথিবীর ত্রিমাত্রিক চিত্র দেখার সুযোগ দেয়।
২০০৬ সালে গুগল ইউটিউব (YouTube) কিনে নেয়, যা বিশ্বের বৃহত্তম ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম।
২০০৭ সালে গুগল অ্যান্ড্রয়েড (Android) অপারেটিং সিস্টেম চালু করে, যা স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট কম্পিউটারের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
২০০৮ সালে গুগল ক্রোম (Chrome) ওয়েব ব্রাউজার চালু করে, যা দ্রুত এবং নিরাপদ ব্রাউজিং অভিজ্ঞতার জন্য পরিচিত।
২০১০ সালে গুগল গুগল টিভি (Google TV) চালু করে, যা টেলিভিশন এবং ইন্টারনেটের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
২০১১ সালে গুগল গুগল প্লাস (Google Plus) সামাজিক নেটওয়ার্কিং পরিষেবা চালু করে, যদিও এটি পরবর্তীতে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০১৪ সালে গুগল ফিটবিট (Fitbit) অধিগ্রহণ করে, যা পরিধানযোগ্য ফিটনেস ট্র্যাকার তৈরি করে।

অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড (২০১৫-বর্তমান)

২০১৫ সালে গুগল একটি বড় ধরনের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। গুগল তাদের সমস্ত ব্যবসা একটি নতুন হোল্ডিং কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসে, যার নাম দেওয়া হয় অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড (Alphabet Inc.)। এই পুনর্গঠনের ফলে গুগল তার মূল ব্যবসা—যেমন সার্চ, বিজ্ঞাপন এবং ইউটিউব—এর ওপর বেশি মনোযোগ দিতে পারে। একই সাথে, অন্যান্য নতুন এবং উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলো অ্যালফাবেটের অধীনে পরিচালিত হতে থাকে।

অ্যালফাবেটের অধীনে গুগলের বিভিন্ন বিভাগগুলো হলো:

গুগল (Google): সার্চ ইঞ্জিন, বিজ্ঞাপন, ম্যাপস, জিমেইল, ড্রাইভ, ইত্যাদি।
ওয়ে (Waymo): স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তি।
ভারিলি (Verily): জীবন বিজ্ঞান গবেষণা এবং উন্নয়ন।
ক্যালিকো (Calico): বার্ধক্য এবং বয়স-সম্পর্কিত রোগের গবেষণা।
গুগল ফাইবার (Google Fiber): উচ্চগতির ইন্টারনেট পরিষেবা।

গুগলের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন

গুগল সবসময় নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তাদের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি হলো:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence - AI): গুগল এআই গবেষণা এবং উন্নয়নে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। তাদের তৈরি করা এআই প্রযুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন—স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ, ছবি শনাক্তকরণ এবং ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট।
মেশিন লার্নিং (Machine Learning): গুগল মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে তাদের পণ্য এবং পরিষেবাগুলোকে উন্নত করে।
ডিপ লার্নিং (Deep Learning): ডিপ লার্নিং হলো মেশিন লার্নিংয়ের একটি উন্নত রূপ, যা গুগল তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহার করে।
ক্লাউড কম্পিউটিং (Cloud Computing): গুগল ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম (Google Cloud Platform) ব্যবসা এবং ডেভেলপারদের জন্য ক্লাউড পরিষেবা প্রদান করে।
ব্লকচেইন (Blockchain): গুগল ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে এবং এর ব্যবহারিক প্রয়োগের চেষ্টা করছে।

গুগলের ব্যবসায়িক মডেল

গুগলের প্রধান ব্যবসায়িক মডেল হলো বিজ্ঞাপন। গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিন, ইউটিউব এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করে। এছাড়াও, গুগল ক্লাউড পরিষেবা, হার্ডওয়্যার বিক্রি এবং অন্যান্য উৎস থেকেও আয় করে।

গুগলের আয়ের উৎস
উৎস	শতকরা হার (%)
বিজ্ঞাপন	প্রায় ৮০%	গুগল ক্লাউড	প্রায় ১৫%	হার্ডওয়্যার	প্রায় ৫%	অন্যান্য	প্রায় ১০%

গুগলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

গুগল বর্তমানে বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তি এবং প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:

স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তি: ওয়ে (Waymo) স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতে উদ্ভাবন: ভারিলি (Verily) স্বাস্থ্যখাতে নতুন প্রযুক্তি এবং পরিষেবা নিয়ে কাজ করছে, যেমন—রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন: গুগল এআই প্রযুক্তির উন্নয়নে আরও বেশি বিনিয়োগ করবে এবং এটিকে তাদের পণ্য এবং পরিষেবাগুলোতে আরও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করবে।
ক্লাউড কম্পিউটিং-এর বিস্তার: গুগল ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের (Google Cloud Platform) ব্যবহার আরও বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।

গুগলের সমালোচনা

গুগল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সমালোচনা হলো:

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা (Privacy): গুগল ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যবহারের বিষয়ে সমালোচিত হয়েছে।
একচেটিয়া আধিপত্য (Monopoly): গুগল সার্চ ইঞ্জিন এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের অভিযোগ রয়েছে।
কর ফাঁকি (Tax Evasion): গুগল কর ফাঁকির অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে।
কন্টেন্ট সেন্সরশিপ (Content Censorship): গুগল কিছু নির্দিষ্ট কন্টেন্ট সেন্সর করার অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে।

উপসংহার

গুগল একটি প্রভাবশালী প্রযুক্তি কোম্পানি, যা ইন্টারনেট এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, শক্তিশালী ব্যবসায়িক মডেল এবং ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে গুগল தொடர்ந்து উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, একচেটিয়া আধিপত্য এবং কর ফাঁকির মতো বিষয়গুলোতে গুগলের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ