কোরান্ডাম
কোরান্ডাম
কোরান্ডাম হলো অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের (Al₂O₃) একটি পলিমরফ বা বহুরূপ। এটি একটি অত্যন্ত কঠিন, রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় এবং ঘর্ষণ-প্রতিরোধী স্ফটিকাকার উপাদান। কোরান্ডামের সবচেয়ে পরিচিত রূপ হলো রুবি এবং নীলা (স্যাফায়ার)। এই দুটি রত্ন পাথর তাদের আকর্ষণীয় রঙের জন্য বিখ্যাত। তবে, কোরান্ডামের ব্যবহার রত্নপাথরের বাইরেও বিস্তৃত। শিল্প এবং প্রযুক্তিতে এর বহুবিধ প্রয়োগ রয়েছে।
গঠন ও বৈশিষ্ট্য
কোরান্ডামের স্ফটিক কাঠামো হেক্সাগোনাল ক্রিস্টাল সিস্টেমের অন্তর্গত। এর রাসায়নিক গঠন অ্যালুমিনিয়াম এবং অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত। কোরান্ডামের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- কঠিনতা: কোরান্ডাম মোহস স্কেলে ৯ এর কঠোরতা সম্পন্ন, যা এটিকে হীরা এর পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কঠিন পদার্থ করে তুলেছে। এই উচ্চ কঠোরতার কারণে এটি ঘর্ষণ প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
- রাসায়নিক নিষ্ক্রিয়তা: কোরান্ডাম অধিকাংশ অ্যাসিড এবং ক্ষারকের সাথে বিক্রিয়া করে না। এটি এটিকে রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল করে তোলে।
- উচ্চ গলনাঙ্ক: এর গলনাঙ্ক প্রায় ২০৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৭৪১ ডিগ্রি ফারেনহাইট), যা এটিকে উচ্চ তাপমাত্রার অ্যাপ্লিকেশনের জন্য উপযুক্ত করে।
- বৈদ্যুতিক অন্তরক: কোরান্ডাম বিদ্যুৎ অপরিবাহী।
- তাপ পরিবাহিতা: এটি তাপের সুপরিবাহী।
- বিভিন্ন রঙ: কোরান্ডামের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ধাতব আয়ন (যেমন ক্রোমিয়াম, আয়রন, টাইটানিয়াম) উপস্থিত থাকলে এর রঙ ভিন্ন হতে পারে।
| বৈশিষ্ট্য | মান | কঠোরতা (মোহস স্কেল) | ৯ | ঘনত্ব | ৩.৯৫ - ৪.০৫ গ্রাম/সেমি³ | গলনাঙ্ক | ২০৭২ °C (৩৭৪১ °F) | প্রতিসরণ সূচক | ১.৭৬২ - ১.৭৭৮ | স্ফটিক গঠন | হেক্সাগোনাল |
উৎপত্তি ও আহরণ
কোরান্ডাম সাধারণত আগ্নেয় শিলা এবং রূপান্তর শিলা-তে পাওয়া যায়। এটি ন deposit এবং নদী তল থেকেও সংগ্রহ করা হয়। প্রধান কোরান্ডাম উৎপাদনকারী দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কোরান্ডাম আহরণের পর, এটিকে পরিশোধন করা হয় এবং বিভিন্ন আকারের স্ফটিক বা পাউডার তৈরি করা হয়।
ব্যবহার
কোরান্ডামের বহুমুখী ব্যবহারের কয়েকটি উদাহরণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ঘর্ষণকারী: কোরান্ডামের উচ্চ কঠোরতার কারণে এটি ঘর্ষণকারী হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি স্যান্ডপেপার, গ্রাইন্ডিং হুইল এবং অন্যান্য কাটিং সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- ঘড়ি তৈরি: কোরান্ডাম ঘড়ির কাঁচ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল যন্ত্রাংশের সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি সহজে স্ক্র্যাচ পড়ে না।
- LED উৎপাদন: স্যাফায়ার (কোরান্ডামের একটি রূপ) LED (Light Emitting Diode) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর তাপ পরিবাহিতা এবং রাসায়নিক স্থিতিশীলতা LED-এর কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ইলেকট্রনিক্স শিল্প: কোরান্ডাম সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে সাবস্ট্রেট হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
- লেজার: রুবি লেজার তৈরিতে কোরান্ডাম ব্যবহৃত হয়।
- দাঁতের চিকিৎসা: অর্থোডন্টিক ব্র্যাকেট তৈরিতে কোরান্ডাম ব্যবহৃত হয়।
- বর্ম: কিছু উন্নত বর্ম তৈরিতে কোরান্ডাম ব্যবহার করা হয়, যা বুলেটপ্রুফিং-এর জন্য কার্যকর।
- রং শিল্প: কোরান্ডাম পিগমেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
- জুয়েলারি: রুবি ও নীলা রত্ন হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
রুবি ও নীলা
কোরান্ডামের সবচেয়ে মূল্যবান দুটি রূপ হলো রুবি এবং নীলা।
- রুবি: রুবি হলো কোরান্ডামের লাল রূপ। এর লাল রঙ ক্রোমিয়ামের উপস্থিতির কারণে হয়। রুবি মূল্যবান রত্নপাথর হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি জুয়েলারিতে বহুল ব্যবহৃত।
- নীলা: নীলা হলো কোরান্ডামের নীল রূপ। এর নীল রঙ আয়রন এবং টাইটানিয়ামের উপস্থিতির কারণে হয়। নীলাও একটি মূল্যবান রত্নপাথর এবং এটি রুবি এর মতোই অলঙ্কার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
| রত্ন | রঙ | রাসায়নিক উপাদান | রুবি | লাল | ক্রোমিয়াম (Cr) | নীলা | নীল | আয়রন (Fe) ও টাইটানিয়াম (Ti) |
কোরান্ডামের প্রকারভেদ
রঙ এবং রাসায়নিক উপাদানের ভিন্নতার কারণে কোরান্ডামের বিভিন্ন প্রকারভেদ দেখা যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- স্টার রুবি ও স্টার স্যাফায়ার: এই রত্নগুলির মধ্যে একটি তারকা-সদৃশ আভা দেখা যায়, যা রুটাইল নামক একটি খনিজ পদার্থের কারণে তৈরি হয়।
- প্যাডো parade sapphire: এটি একটি বিরল ধরনের নীলা, যার মধ্যে কমলা বা গোলাপী আভা দেখা যায়।
- কালার্ড স্যাফায়ার: নীল ছাড়াও, কোরান্ডাম বিভিন্ন রঙে পাওয়া যায়, যেমন সবুজ, হলুদ, গোলাপী, এবং বেগুনি।
প্রক্রিয়াকরণ
কোরান্ডামকে বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রক্রিয়া হলো:
- কাটিং এবং পলিশিং: রত্নপাথর হিসেবে ব্যবহারের জন্য কোরান্ডামকে প্রথমে কাটা হয় এবং পরে পালিশ করা হয়।
- পাউডার তৈরি: ঘর্ষণকারী হিসাবে ব্যবহারের জন্য কোরান্ডামকে সূক্ষ্ম পাউডারে পরিণত করা হয়।
- স্ফটিক উৎপাদন: বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃত্রিম কোরান্ডাম স্ফটিক তৈরি করা হয়, যা ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
- সিন্থেটিক কোরান্ডাম: পরীক্ষাগারে কোরান্ডাম তৈরি করা যায়, যা প্রাকৃতিক কোরান্ডামের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়া ভার্নুইল পদ্ধতি (Vernuil process) নামে পরিচিত।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
কোরান্ডামের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে এর ব্যবহার আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। বিশেষ করে, ন্যানোটেকনোলজি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, এবং মহাকাশ শিল্পে কোরান্ডামের ব্যবহার ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও, উন্নত উপকরণ বিজ্ঞান এবং রাসায়নিক প্রকৌশল -এর অগ্রগতি কোরান্ডামের নতুন প্রয়োগক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।
ক্রিস্টালোগ্রাফি খনিজবিদ্যা অ্যালুমিনিয়াম অক্সিজেন রাসায়নিক বন্ধন স্ফটিক কাঠামো মোহস স্কেল রত্নপাথর জুয়েলারি ডিজাইন ঘর্ষণ উপকরণ বিজ্ঞান ন্যানোটেকনোলজি সেমিকন্ডাক্টর শিল্প LED প্রযুক্তি লেজার প্রযুক্তি রাসায়নিক প্রকৌশল ভার্নুইল পদ্ধতি তাপমাত্রা পরিমাপ বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা শিল্প উৎপাদন আগ্নেয়গিরি রূপান্তর প্রক্রিয়া নদী বিজ্ঞান ভূ-তত্ত্ব
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ট্রেডিং কৌশল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগ
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
